সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিভাগ

সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিভাগ আলোচনার পূর্বে আধুনিক যুগ সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। আর এ প্রসঙ্গে বলা যায়, যে যুগে সনাতন বা গতানুগতিক পদ্ধতির চিন্তা থেকে স্বতন্ত্র এবং বর্তমানের ধ্যান-ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাই আধুনিক যুগ নামে সমধিক পরিচিত। তদ্রূপ সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিভাগ হলো এমনই এক শ্রেণিবিভাগ যা সনাতন বা গতানুগতিক সরকারের শ্রেণিকরণ থেকে আলাদা। যে সমস্ত আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ম্যারিয়ট (A. R. Marriot), লিকক (Prof. Leacock), মন্টেস্কু (Montesquie), ম্যাকিয়াভেলী (Machiavelli), বডিন (Bodin), রুশো (Rousseau) ও হবস (Hobbes) প্রমুখ ।

ক ম্যারিয়ট-এর সরকারের শ্রেণিবিভাগ Classification of Government of A. R. Marriot

সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিভাগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যারিয়ট (Marriot)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেননা, ম্যারিয়ট-এর শ্রেণিবিভাগ আধুনিক ও বিস্তৃত। তিনি মূলত তিনটি নীতির ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। নিম্নে এসকল শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. ক্ষমতার বণ্টন অনুসারে (According to Distribution of Power) : ম্যারিয়ট সরকারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনায় ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং ক্ষমতার আধুনিক বণ্টনের বিচারে ম্যারিয়ট সরকারকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন । যথা :

ক. এককেন্দ্রিক সরকার (Unitary Government) : এককেন্দ্রিক সরকার আধুনিক সরকারের একটি অন্যতম রূপ। এরূপ সরকারের কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বিভক্ত করা হয় না। বরং সকল ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে কুক্ষিগত থাকে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের অস্তিত্ব এবং স্বাতন্ত্র্য কেন্দ্রের উপরই নির্ভরশীল। অধ্যাপক ডাইসী (Prof. Diecy)-এর ভাষায়— “Unitarism is the habitual exercise of supreme legislative authority by one central power.”

খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার (Federal Government) : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হচ্ছে আধুনিক সরকারের অন্যতম একটি ধরন বা রূপ। এরূপ সরকারে সংবিধান অনুসারে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজন করে দেয়া হয়। উভয় প্রকার সরকারই আইনগতভাবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে। এতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। কে.সি. হুইয়ার (K. C. Wheare)-এর ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্রে সরকারি সকল ক্ষমতা সমগ্র দেশের সরকার এবং দেশের অঞ্চলসমূহের সরকারের মধ্যে এমনভাবে বণ্টন করা হয় যাতে উভয় ধরনের সরকার নিজ নিজ ক্ষেত্রে আইনগতভাবে স্বাধীন থাকতে পারে।”

২. সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি অনুসারে (According to Amendment of Constitution) : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যারিয়ট দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সরকারকে দু’ ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :

ক. সুপরিবর্তনীয় সরকার ( Flexible Government) : সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের ভিত্তিতে গঠিত হয় সুপরিবর্তনীয় সরকার। যে সংবিধান সহজে পরিবর্তনীয় ও বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ নিষ্প্রয়োজন তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। আর এতে করে সুপরিবর্তনীয় সরকার প্রয়োজনে সহজেই সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারে। অধ্যাপক গেটেল ( Prof. Gettell )-এর ভাষায়, “If a constitution may be easily amended by the ordinary law making body and procedure, it may classed as flexible.”

খ. দুষ্পরিবর্তনীয় সরকার (Rigid Government) : দুষ্পরিবর্তনীয় সরকার হলো সুপরিবর্তনীয় সরকারের বিপরীতধর্মী একটি সরকার। দুষ্পরিবর্তনীয় ও লিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে গঠিত সরকারই দুষ্পরিবর্তনীয় সরকার। যে সংবিধান সহজে পরিবর্তনীয় নয়, বরং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। আর এতে করে দুষ্পরিবর্তনীয় সরকার সহজে সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারে না ।

৩. আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ (According to relationship of legislature and Executive) : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যারিয়ট রাষ্ট্রের আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকারকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :

ক. স্বৈরতান্ত্রিক সরকার (Despotic Government ) : যে সরকার আদর্শ, ন্যায়-নীতি ও আইনের শাসন উপেক্ষা করে জনসাধারণের উপর নির্যাতন, শোষণ ও অত্যাচার চালায় তাই হলো স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। এ ধরনের সরকার শাসন বিভাগকে প্রাধান্য দেয় এবং জনগণকে শোষণ-শাসনে ব্যস্ত থাকে। এরিস্টটল Aristotle-এর ভাষায়- “If sovereignty resides in one person that is abused, it is monarchy.”

খ. সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার (Parliamentary Government) : যে সরকারে মন্ত্রিপরিষদ তাঁদের কাজ- কর্মের জন্য সংসদের কাছে যৌথভাবে দায়ী এবং সংসদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় তাই সংসদীয় সরকার। এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে।

গ. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার (Presidential Government) : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যারিয়ট প্রদত্ত আধুনিক সরকারের অপর রূপ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। এরূপ সরকারের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন রাষ্ট্রপতি। কেননা, এরূপ সরকার ব্যবস্থায় সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এখানে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিকট দায়ী না থাকলেও সরকার পরিচালনায় কার্যকর সম্পর্ক বহাল থাকে।

সীমাবদ্ধতা : ম্যারিয়ট কর্তৃক প্রদত্ত সরকারের শ্রেণিবিভাগও সম্পূর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, তিনি গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র প্রভৃতি সরকারের কথা বলেন নি।


 ড. স্টিফেন লীকক-এর সরকারের শ্রেণিবিভাগ
Dr. Stephen Leacock’s Classification of Government

সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে ড. স্টিফেন লিকক (Dr. Stephen Leacock) প্রদত্ত প্রকারভেদ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ম্যারিয়টকে অনুসরণ করে সরকারের যে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান। সরকারের শ্রেণিবিন্যাসকরণে প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লীকক কতগুলো “নীতি” অনুসরণ করেছেন। যেমন : সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান, সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহারকারীর সংখ্যা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতা লাভের পদ্ধতি, আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্ক এবং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ ও ক্ষমতা বণ্টন নীতি প্রভৃতি। নিম্নে সরকারের এসকল শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান বা প্রকৃতি অনুসারে (According to position or nature of Sovereign power) : ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লীকক (Leacock) প্রকৃতি অনুসারে বা সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থানের ভিত্তিতে সরকারকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন । যথা :

ক. গণতন্ত্র (Democracy) :

খ. একনায়কতন্ত্র (Dictatorship)।

ক. গণতন্ত্র (Democracy) অধ্যাপক লীকক প্রদত্ত আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিভাগের মধ্যে গণতন্ত্র হলো অন্যতম। যে শাসন বা সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী তাকে গণতন্ত্র বলে। এধরনের সরকার ব্যবস্থায় “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”। যেমন: বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি রাষ্ট্রের সরকার। গণতন্ত্রকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র (Direct Democracy) : যে শাসনব্যবস্থায় সরকার প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত ও পরিচালিত হয় তাই প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র। অন্যভাবে বলা যায়, যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের জনগণ প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে তাকেপ্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলে।

পরোক্ষ গণতন্ত্র (Indirect Democracy) : পরোক্ষ গণতন্ত্র হলো প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের বিপরীত রূপ। রাষ্ট্রের জনগণ যখন পরোক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে তাই পরোক্ষ গণতন্ত্র। লীকক পরোক্ষ গণতান্ত্রিক সরকারকে আরও দু’ভাগে ভাগ

করেছেন। যথা

  1. নিয়মতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক রাজতন্ত্র (Constitutional Monarchy ) : নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র হলো এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা বংশগতভাবে একজনের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং ঐ ব্যক্তি সাংবিধানিক- ভাবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে। অধ্যাপক গার্নার (Dr. Garner)-এর ভাষায়, “in absolute monarchy people have no share in the government.”
  2. সাধারণতন্ত্র/ প্রজাতন্ত্র (Repuplic ) : সাধারণতন্ত্র বা প্রজাতন্ত্র হলো এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতা লাভ করেন। এটি জনসাধারণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সরকার এরূপ সরকারের উদাহরণ।

খ. একনায়কতন্ত্র (Dictatorship) : যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে তাকে একনায়কতন্ত্র বলে। এটি হচ্ছে গণতন্ত্রের বিপরীত অবস্থা। লীকক একে স্বৈরাচারি সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি প্রভৃতি দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে (According to distribution of power) : ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে সরকারকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

ক. এককেন্দ্রিক সরকার (Unitary Government) : যে শাসনব্যবস্থায় সরকারের শাসনক্ষমতা একটিমাত্র কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকে অর্থাৎ, কেন্দ্র থেকে সরকারের যাবতীয় ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে পরিচালিত হয় তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে। অধ্যাপক ডাইসী ( Prof. Diecy)-এর ভাষায়, “Unitarism is the habitual exercise of supreme legislative authority by one central power.” ব্রিটেন, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে এককেন্দ্রিক সরকার প্রচলিত আছে।

খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার (Federal Government) : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হলো এমন এক ধরনের সরকার যে সরকার ব্যবস্থায় সংবিধান অনুসারে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেয়া হয়। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মন্টেস্কু (Montesquice)-এর ভাষায়, “Federal government is a convention by which several similar states agree to becorne members of a large one.” এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় দু’ধরনের সরকার থাকে। একটি হলো কেন্দ্রিয় সরকার, আর অন্যটি হলো প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকার।

৩. ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে (According to the policy of seperation of power) : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পীকক ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে আধুনিক বিশ্বে প্রচলিত সরকারসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :

ক. সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ( Parliamentary Government ) : বর্তমান বিশ্বে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার একটি উৎকৃষ্ট সরকার। আইনসভাকে কেন্দ্র করে সংসদীয় সরকারের সূত্রপাত ঘটে। সংসদীয় সরকার হলো এমন এক ধরনের সরকার যে সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ তাঁদের কর্মকাণ্ডের জন্য সংসদ বা আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। অধ্যাপক গার্নার (Dr. Garner)-এর ভাষায়, “A parliamentary government is a responsible government in which the cabinet enjoys the real powers of the government and it is under the control of parliament.”

. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ( Presidential Government ) : যে শাসনব্যবস্থায় সরকারের সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলে। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান উভয় দায়িত্ব পালন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

স্টিফেন লীকক প্রদত্ত আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিভাগ নিম্নের ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো :

একনায়কতন্ত্র

এককেন্দ্রিক

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র

সীমিত রাজতন্ত্র

সরকার

যুক্তরাষ্ট্রীয়

এককেন্দ্রিক

গণতন্ত্র

পরোক্ষ গণতন্ত্র

প্রজাতন্ত্র

যুক্তরাষ্ট্রীয়

মন্ত্রিপরিষদ শাসিত

রাষ্ট্রপতি শাসিত মন্ত্রিপরিষদ শাসিত

রাষ্ট্রপতি শাসিত

মন্ত্রিপরিষদ শাসিত

রাষ্ট্রপতি শাসিত

মন্ত্রিপরিষদ শাসিত

রাষ্ট্রপতি শাসিত

উপরিউক্ত আলোচনার নিরিখে একথা বলা যায় যে, লীকক সরকারের যে শ্রেণিবিভাগ করেছেন তা প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রেই প্রচলিত আছে। কেননা, আধুনিক বিশ্বের যেদিকেই দৃষ্টি নিবন্ধ করা হোক না কেন সেখানে একনায়কতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, এককেন্দ্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় কিংবা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করা যাবে।

আধুনিক সরকারের সমালোচনা
Criticism of Modern Government

ম্যারিয়ট ও লীক প্রদত্ত আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিভাগ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। এধরনের সরকার ব্যবস্থায় কতিপয় ত্রুটি বিদ্যমান। যা নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. সমালোচকদের মতে, লীকক প্রদত্ত সরকারের শ্রেণিবিভাগ ভ্রান্ত ধারণার সামিল। কেননা, এককেন্দ্রিককে তিনি স্বৈরসরকার বলে অভিহিত করেছেন। আসলে তা নয়। কারণ এককেন্দ্রিক সরকার সর্বদা স্বৈর সরকার নয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো চীনের সমাজতান্ত্রিক সরকার।

২. বিশিষ্ট চিন্তাবিদ লীকক রাজতান্ত্রিক সরকারের কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বে রাজতান্ত্রিক সরকার প্রায় অচল। রাজতন্ত্র জনপ্রিয় সরকার ব্যবস্থা নয় বিধায় অধিকাংশ দেশ রাজতন্ত্রকে উপেক্ষা করছে।

৩. নামে আধুনিক হলেও আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিভাগে প্রাচীন ধ্যান-ধারণার উপস্থিতি লক্ষণীয়। একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র প্রাচীন আদর্শের ভিত্তিতে রচিত। যে কারণে বলা যায় এ সরকার ব্যবস্থা সনাতন প্রকৃতির ।

৪. ডেভিড ইস্টনের ন্যায় খ্যাতনামা ব্যক্তির অভিযোগ হলো আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের প্রদত্ত সরকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার (শ্রেণিকরণের) উপর বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছে।

৫. আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ভিত্তি উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক ভিত্তি ব্যতীত সরকার অচল। কেননা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত সরকারের উন্নয়ন অসম্ভব ।

৬. আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিভাগ অসম্পূর্ণতার দোষে দুষ্ট। সমালোচকদের মতে, আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিভাগে অর্থনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক ভিত্তির প্রতিফলন ঘটেনি। যদিও অর্থনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক ভিত্তি ব্যতীত কোনো সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক সরকারের শ্রেণিবিন্যাসে কতিপয় ত্রুটি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও ম্যারিয়ট ও লীকক প্রদত্ত সরকারের শ্রেণিবিন্যাসে আধুনিকতার প্রতিফলন ঘটেছে।

Leave a Reply