সংসদীয় সরকারের সাফল্যের শর্তাবলি

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সাফল্যের শর্তাবলি Pre-requisities to Success of Parliamentary Government

 

সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা একটি কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ সরকারকে সাফল্যমণ্ডিত করতে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। নিম্নে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সাফল্যের পূর্বশর্তসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ সরকারের সফলতার জন্য একজন নিয়মতান্ত্রিক বা উপাধি সর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান থাকা আবশ্যক। শাসন ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে তার নিকট ন্যস্ত থাকলেও প্রকৃত বা নির্বাহী ক্ষমতার মালিক হন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপ্রধান তথা রাষ্ট্রপতির নামে রাষ্ট্রপরিচালনার যাবতীয় ক্ষমতা চর্চা করেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ, আইনসভার অধিবেশন আহ্বান এর ন্যায় আনুষ্ঠানিক কার্য পরিচালনা করবেন।

২. প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্ব : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ সরকারের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দক্ষ ও বলিষ্ঠ হাতে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে। কেননা, তাঁর অধীনেই মন্ত্রিসভা শাসন ক্ষমতা বাস্তবায়ন করে এবং সরকার গতিশীল ও শক্তিশালী হয়। তিনিই মন্ত্রিসভা ও আইনসভার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপন করেন। কাজেই এ ধরনের সুব্রকার ব্যবস্থার সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর গুণগত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড মোরলি (L. Morley)-এর ভাষায়, “Prime Minister is the keystone of the cabinet arch.”

৩. সংগঠিত রাজনৈতিক দল : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ সরকারের সফলতার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী ও সুসংগঠিত  দলব্যবস্থা। এরূপ সলব্যবস্থায় সরকারি দল যেমন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হবে, তেমনি আবার আইনসভায় বিরোধী দলের অবস্থান শক্তিশালী থাকলে সরকারকে সঠিক পথে কাজ করতে বাধ্য করা যায়। সংসদীয় ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল প্রাণশক্তি যোগায়।

৪. শক্তিশালী বিরোধী দল : বিরোধী দলের অস্তিত্ব ও শক্তিশালী অবস্থান সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ সরকারের সফলতার জন্য একটি বিশেষ পূর্বশর্ত। কেননা, বিরোধী দলের ন্যায়সঙ্গত ও গঠনমূলক সমালোচনা ক্ষমতাসীন বা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের স্বেচ্ছাচার রোধে একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ, এ ধরনের সরকারের সফলতার অন্যতম শর্ত হলো “Agreement to differ”। স্যার আইভর জেনিংস (Ivor Jennings)-এর ভাষায়, “The opposition is at once the alternative to the government and a focus to the discontent of the people. If there be no opposition, there is no democracy.”

৫. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা : দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা সংসদীয় সরকারের সাফল্যের একটি অন্যতম পূর্বশর্ত। কারণ বহুদলীয় শাসনব্যবস্থায় প্রায়ক্ষেত্রেই কোনো একটি দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না বিধায় কয়েকটি দল মিলে সরকার গঠন করে। এ ধরনের কোয়ালিশন সরকার তেমন কার্যকর বা স্থিতিশীল হয় না। কিন্তু দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় যে কোনো একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয় বিধায় সরকার গঠন সহজ হয়। অধিকন্তু দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় অপর দলটি গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে ।

৬. সুযোগ্য নেতৃত্ব : যোগ্য নেতৃত্ব সংসদীয় ব্যবস্থাকে সাফল্যমণ্ডিত করেন বিধায় সুযোগ্য নেতৃত্ব সংসদীয় ব্যবস্থার সফলতার অন্যতম কারণ। নেতা যদি সংসদীয় গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন এবং সংসদীয় আচার- আচরণকে সমুন্নত রাখেন তবে এর সাফল্য নিশ্চিত। ইংল্যাণ্ডে সংসদীয় ব্যবস্থার সাফল্য এর যোগ্য নেতৃত্বের ফল। এ প্রসঙ্গে বেঞ্জামিন ডিজরেইলি, গ্লাডস্টোন, উইনস্টোন চার্চিল প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

৭. দায়িত্বশীলতা : সংসদীয় সরকারের সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো আইনসভার নিকট মন্ত্রিপরিষদের ব্যক্তিগত ও যৌথ দায়িত্বশীলতা। তারা নিজ নিজ কর্মকাণ্ডের জন্য একক ও সম্মিলিতভাবে আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন। যে কারণে আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিদেরকে পদত্যাগ করতে হয়। ব্রিটেনের ক্যাবিনেটের যৌথ দায়িত্বশীলতা আছে। ক্যাবিনেট একটি ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করে। ফ্রিম্যানের অভিমত অনুসারে যৌথ দায়িত্বশীলতার অর্থই হলো ক্যাবিনেটের সকল সদস্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকবেন। কার্টারের ভাষায়, ব্রিটেনের ক্যাবিনেটের বহু ক্ষমতা আছে সত্য কিন্তু তার সাথে সাথে জবাবদিহিও করতে হয় ।

৮. সুদৃঢ় সংখ্যাগরিষ্ঠতা : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ সরকারের সফলতার জন্য একটি আবশ্যিক শর্ত হলো সুদৃঢ় সংখ্যাগরিষ্ঠতা। কারণ শক্তিশালী বিরোধীদলের সামনে সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা আবশ্যক। তাছাড়া আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সংসদীয় সরকারের সবচেয়ে মারাত্মক ত্রুটি ও ব্যর্থতার মূল কারণ সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা। কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে কয়েকটি দল সম্মিলিতভাবে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে, যা সাধারণত স্থায়ী হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্রিটেনে ১৭৮৩ সালে গঠিত সম্মিলিত সরকারের পতন ঐ সালেই ঘটে। পুনরায় ১৯৩৫ সালে গঠিত সম্মিলিত সরকারের পতন ১৯৩৭ সালে ঘটে।

৯. রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসারতা : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ সরকারের সফলতার জন্য রাজনৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য। কেননা, রাজনৈতিকভাবে সচেতন জনগোষ্ঠী নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে। তারা সংসদীয় সরকারের রীতি চর্চায় উৎসাহ বোধ করে। রাজনৈতিক শিক্ষা সংসদীয় সরকারের সফলতার পথ উন্মুক্ত করে। যে কারণে রাজনৈতিক শিক্ষা সংসদীয় সরকারের সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে ।

১০. রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা : রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিষ্ণুতা থাকা একান্ত আবশ্যক। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদল অতি সামান্য কারণে একে অপরের সমালোচনা করবে না। যদি সমালোচনা করতেই হয় তবে তা হবে গঠনমূলক। অসহিষ্ণু অমূলক আচরণ বা অশ্লীল বাক্য ব্যয় অপরাধজনক এবং নিন্দনীয় কাজ বিধায় তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক । ব্রিটেনের স্পিকার লর্ড ওয়েদরিলের মন্তব্য অনুসারে সংসদীয় সরকার কার্যকরী করার জন্য সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে অবশ্যই মিল থাকতে হবে। তিনি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থাকে বাদ্যযন্ত্রের দলের সাথে তুলনা করেছেন। কোনো একটি যন্ত্রের বিকলতা যেমন ছন্দ পতন ঘটায়, তেমনি বিরোধী দলের সহযোগিতা না পেলে সরকারে ব্যর্থতা আসবে। লাস্কি মন্ত -ব্য করেছেন, সংসদীয় সরকারকে সর্বদা বিরোধীদলের সমালোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। তবে বিরোধী  দলকেও সমালোচনা করতে হবে শিক্ষা প্রদানের নিমিত্তে, অহেতুক সমালোচনা করে তিক্ততা সৃষ্টির জন্য নয়।

১১. মানসিক প্রস্তুতি : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ সরকারের সফলতার জন্য জনগণের মানসিক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন । আর এই লক্ষ্যে জনগণকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সংসদীয় প্রকৃতির সরকার প্রতিষ্ঠা ও এর   সফলতার জন্য ত্যাগ স্বীকার না করলে তা কার্যকরী হতে পারে না। এখানে গণসচেতনতাই সরকারের সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে। A. H. Birch-এর মতে, ব্রিটেনে যে সংসদীয় সরকার কার্যকরী আছে তা কেবল জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কারণে নয়, এর জন্য জনগণের মানসিক প্রস্তুতিও লক্ষণীয় ।

১২. স্পিকারের নিরপেক্ষতা : সংসদীয় সরকারের সফলতার জন্য স্পিকারকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পাপন করতে হবে। তিনি নিরপেক্ষ না হলে সংসদ উত্তপ্ত হতে বাধ্য। স্পিকারের ভূমিকা দলীয় হবে না। তিনি সকলের সাথে সমান আচরণ করবেন। স্পীকার যদি নিরপেক্ষ না হন তবে সংসদীয় সরকার চলতে পারে না। স্পিকারের নিরপেক্ষ চরিত্রের উপর পার্লামেন্টারী শাসনের সফলতা ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। ব্রিটেনের সাবেক স্পিকার ক্লিফটন ব্রাউন নিরপেক্ষতার নিদর্শনস্বরূপ বলেছিলেন, “স্পিকার হিসেবে আমি সরকারের লোক নই, বিরোধীদলের নই, আমি হলাম কপসভার লোক।” স্পিকারকে শুধু কমগসভার সভাপতি হিসেবেই মনে হয় না, এর অভিভাবক হিসেবে মান্য করা হয়। ১৬৪২ সালে ব্রিটেনের রাজা পার্লামেন্ট কক্ষে ঢুকে কয়েকজন সদস্যকে বন্দী করতে চাইলে স্পিকার বলেছিলেন, তিনি হাউজের ঢাকর, তাই তিনি হাউজের অনুমতি ব্যতীত কিছু করতে পারবেন না।

১৩. জনমতের প্রতিফলন : সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিশেষত জনমতের উপর নির্ভরশীল বিধায় জনমতের প্রতিফলন সংসদীয় ব্যবস্থার সাফল্যের জন্য একটি অন্যতম পূর্বশর্ত। যে কারণে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় বেতার, টেলিভিশন, সংবাদপ প্রভৃতি প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন। এসকল প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটে। জনমতের প্রতিফলন ঘটলে সংসদীয় সরকার যথার্থভাবে কাজ করে।

১৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : সংসদীয় সরকারের সাফল্যের একটি বিশেষ শর্ত হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হলে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক লাকি (Prof, Laski) -এর ভাষায়, “The independence of the judiciary is essential to freedom of justice and parliamentary government work best.”

১৫. সাংবিধানিক ব্যবস্থা : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সফলতার জন্য সাংবিধানিক বা আইনি ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরকারি দল ও বিরোধীদলের সদস্যদের বেতন-ভাতা, সংসদে তাদের নিয়মিত উপস্থিতি, আলোচনায় অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ সম্বলিত সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া সংসদীয় নিয়ম-নীতির প্রতি সরকার ও বিরোধী দলকে অনুগত থাকতে হবে।

১৬. মন্ত্রিসভার আয়তন : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সফলতার জন্য মন্ত্রিসভার আকার বিশাল না হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধিক সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা হলে সমন্বয় সাধনে অসুবিধা হয়। তাছাড়া ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে। এতে করে সরকার পরিচালনার খরচ বৃদ্ধি পায়। এদিক থেকে চিন্তা করলে মন্ত্রিসভার আয়তন ক্ষুদ্র হওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষত বাংলাদেশের ন্যায় অনুন্নত দেশে বিশাল আকারের মন্ত্রিসভা গঠন অনুচিত।

১৭. কেবিনেটের নেতৃত্ব : কেবিনেটের নেতৃত্বের উপর সংসদীয় সরকারের সাফল্য নির্ভরশীল। সংসদীয় সরকারকে কেবিনেট সরকার বলে আখ্যায়িত করা হয়। যে কারণে এ ধরনের সরকারের সাফল্যের জন্য মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব অপরিহার্য। মন্ত্রিসভার নেতৃত্বের প্রেক্ষিতে এবং আইনসভা ও মন্ত্রিসভার মধ্যে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ অপরিহার্য।

১৮. সংসদীয় ঐতিহ্য রীতি-নীতি : সংসদীয় ব্যবস্থার সাফল্যের অন্যতম দিক হলো সংসদীয় ঐতিহ্য ও রীতি-নীতির উপস্থিতি। ইংল্যান্ডে সংসদীয় সরকারের সফলতার কারণও হলো সেখানকার সংসদীয় ঐতিহ্য ও রীতি-নীতির উপস্থিতি। সে দেশে দীর্ঘ বিবর্তনের মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১৯. সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন : রাজনীতিকে কলুষমুক্ত রাখার মাধ্যম হলো নির্বাচন। এ নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়। এ ধরনের সংকটে সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে সংসদীয় সরকারের পতন ঘটায়। পাকিস্তান এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে সংসদীয় সরকারের পরিসমাপ্তি ঘটায়।

২০. সামরিক হস্তক্ষেপ রোধ : সামরিক হস্তক্ষেপ সংসদীয় সরকারের সফলতার পথে অন্যতম বাধা। সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে অনেক দেশে সংসদীয় সরকারের ‘বিপর্যয় ঘটেছে। যে কারণে সংসদীয় সরকারকে রক্ষা করতে হলে সামরিক হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে। তা না হলে সংসদীয় সরকারের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যাবে না। তবে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা হ্রাস করেছে। এটা সংসদীয় ব্যবস্থার বিকাশে আশার আলো সঞ্চার করেছে।

 ২১. মৌলিক অধিকারের সংরক্ষণ : নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ সরকারের একটি মৌলিক দায়িত্ব। সংসদীয় সরকারের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হলে ঐ সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিপরীতে জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব হলে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। এরূপ অবস্থায় সরকার বিপাকে পড়ে। তাই সংসদীয় সরকারের কার্যকারিতার জন্য জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ আবশ্যক।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারকে সাফল্যমণ্ডিত করা বেশ জটিল কাজ। তবে উল্লিখিত শর্তাবলি পালনের মাধ্যমে এ ধরনের সরকারকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এসব শর্তের মধ্যে সহনশীলতা, রাজনৈতিক সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি অপরিহার্য। এগুলো গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। আর গণতন্ত্র শক্তিশালী হলে সংসদীয় ব্যবস্থা আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ হবে।

Leave a Reply