লর্ডসভা ও কমন্সসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক

লর্ডসভা কমন্সসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক

Constitutional Relation between the House of Lords and the House of Commons

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। এর উচ্চ কক্ষের নাম লর্ডসভা এবং নিম্নকক্ষের নাম কমন্সসভা। গণতান্ত্রিক আদর্শ ও প্রতিষ্ঠানের বিকাশের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে দুটি কক্ষের সাংবিধানিক সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান শতাব্দিতে দুটি কক্ষের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ নতুন রূপ লাভ করেছে। একদিকে যেমন লর্ডসভার ক্ষমতা ও প্রভাব হ্রাস পেয়েছে অন্যদিকে কমগসভার ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা ও মর্যাদাগত বিচারে কমন্সসভাই উচ্চতর স্থানের অধিকারী। লর্ডসভার মতো উত্তরাধিকারভিত্তিক কক্ষের অস্তিত্ব গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বলতে এখন কেবল কমন্সসভাকেই বোঝান। যাই হোক নিয়ে লর্ডসভা ও কমনসভার মধ্যকার সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :

ক. গঠনগত পার্থক্য : লর্ডসভার সদস্যগণ উত্তরাধিকার সূত্রে, বংশানুক্রমিকভাবে বা মনোনয়ন নীতি অনুযায়ী সদস্যপদ লাভ করেন। সুতরাং লর্ডসভার গঠন ব্যবস্থা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের বিরোধী এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক। সদস্য সংখ্যার দিক থেকে লর্ডসভা কমন্সসভা অপেক্ষা বৃহত্তর। অপরদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কমন্সসডাকে জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক কক্ষ বলা হয়। এ কক্ষের সদস্যগণ সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। ১৮ বছর বয়স্ক নাগরিকগণ সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। ২১ বছর বয়স্ক নাগরিকগণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।

খ. কার্যকালগত পার্থক্য : লর্ডসভার সদস্যদের কোনো নির্দিষ্ট কার্যকাল নেই। এই কক্ষের সদস্যগণ আজীবন লর্ডসভার সদস্য থাকেন। এটি একটি স্থায়ী কক্ষ। এ কক্ষকে ভেঙে দেয়া যায় না। কোনো কাজের জন্য জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না। কিন্তু কমন্সসভার সদস্যদের কার্যকাল নির্দিষ্ট। কমন্সসভার সদস্যগণ ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। কার্যকালের মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর ….মর্শক্রমে রাজা বা রানী কমন্সসভা ভেঙে দিতে পারেন এবং নতুন সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

গ. সরকার গঠনের ক্ষেত্রে পার্থক্য : সরকার গঠনের ক্ষেত্রে লর্ডসভার কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। কিন্তু প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর কমথসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলই সরকার গঠন করে । লর্ডসভায় কোনো দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা না থাকার উপর মন্ত্রিসভা গঠন নির্ভর করে না। কমন্সসভার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে রাজা বা রানী প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজা বা রানী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন এবং তাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। বর্তমানে প্রথাগত বিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে কমন্সসভার সদস্য হতে হয়।

ঘ. সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে পার্থক্য : লর্ডসভার সদস্যগণ বর্তমানে সরকারকে নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন না। লর্ডসভার হাতে মন্ত্রিসভার কার্যকাল নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতা নেই। লর্ডসভার সদস্যদের আস্থা- অনাস্থা ভোট মন্ত্রিসভার কার্যকালকে প্রভাবিত করে না। লর্ডসভার কোনো বিষয়ে সরকার পক্ষের পরাজয় ঘটলেও মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয় না। অপরদিকে কমন্সসভা নিন্দাসূচক প্রস্তাব, মূলতবি প্রস্তাব, দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব এবং অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে মন্ত্রিসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কমন্সসভায় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়।

৫. দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে পার্থক্য : লর্ডসভার সদস্যগণ তাদের নীতি ও কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়িত্বশীল নয়। গর্ডসভা হলো একটি অ-নির্বাচিত স্থায়ী কক্ষ, তাছাড়া লর্ডসভার কাছে মন্ত্রিসভার কোনোরূপ ব্যক্তিগত ও যৌথ দায়বদ্ধতা নেই। অপরদিকে, কম সভার সদস্যগণ নিজেদের কার্যनর জন্য নিজ নিজ নির্বাচকমণীর কাছে দায়িত্বশীল থাকেন। হাজিগণ ব্যক্তিগত এবং যৌথভাবে কমথসভার কাছে দায়িত্বশীল। কমনসভার কোনো মন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবের পরাজয়কে মন্ত্রিসভার পরাজয় হিসেবে গণ্য করা হয়।

চ. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে পার্থক্য আধারণ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের সমান ক্ষমতা স্বীকৃত হলেও চূড়ান্তভাবে কমলসতার প্রাধান্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেননা ১৯১১ এবং ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট আইন প্রণীত হওয়ার পর সাধারণ বিল নাসের ক্ষেত্রে লর্ডসভার ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট আইন অনুযায়ী কোনো বিল কনসভায় যদি একাদিক্রমে তিনটি অধিবেশনে গৃহীত হয় এবং প্রথম অধিবেশনে দ্বিতীয় পাঠ এবং দ্বিতীয় অধিবেশনে বিলের তৃতীয় পার হয্যে যদি দু বছর অতিক্রান্ত হয় তাহলে লর্ডসভার সম্মতি ছাড়াই সংশ্লিষ্ট বিশটি রাজা বা রানীর সম্মতির জন্য প্রেরিত হয়। Jash সালের পার্লামেন্ট আইন অনুযায়ী লর্ডসভার বিল বিলম্বিত করার ক্ষমতা হ্রাস করে এক বছর করা হয়েছে। সুতরাং বর্তমানে কোনো সাধারণ বিলকে লর্ডসভা সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না।

ছ. সরকারের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পার্থক্য। সরকারি আয়-ব্যয় নিয়গুণের ক্ষেত্রে বর্ডসভা অপেক্ষা কমলসভার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কমন্সসভার অনুমোদন ছাড়া সরকার কোনো কর ধার্য করতে, করের হার পরিবর্তন করতে বা কোনো কর বাতিল করতে পারে না। ব্রিটেনের সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়ের জন্যও কাগসভার অনুমোদন লাগে। লর্ডসভা কোনো অর্থবিল প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। লর্ডসভা এক মাসের মধ্যে অর্থবিল সম্পর্কে মতামত না জানালে কাপসভা ধরে নেবে, লর্ডসভা ঐ বিল অনুমোদন করেছে এবং বিলটি রাজা বা রানীর সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয়।

জ. শাসন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিকার : কমন্সসভা শাসন বিভাগের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগের প্রতিবিধানের ব্যবস্থা করতে পারে। ১৯৬৭ সালের পার্লামেন্টের কমিশনার আইন অনুযায়ী পার্লামেন্টারি কমিশনের নামে কমণসভায় একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্রিটেনের যে কোনো ব্যক্তি শাসন বিভাগের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের সদস্যদের কাছে অভিযোগ পেশ করতে পারে। যৌক্তিক মনে করলে তিনি পার্লামেন্টারী কমিশনারের কাছে সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি উত্থাপন করতে পারেন। কমিশনার অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান পূর্বক তার প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হারভে ও হ্যাজার (Harvey and Bather) বলেছেন, “He investigates complains of personal injustice or of maladrninstration by the central government brought by MPs at the instance of individuals or compaines.” সুতরাং জনগণের অভিযোগের প্রতিকার বিষয়ে লর্ডসভার তেমন কোনো ভূমিকা নেই ৷

ঝ. আলোচনা বিতর্ক : সাধারণত অবিতর্কিত বিলসমূহ লর্ডসভায় উত্থাপিত হয়। লর্ডসভার সদস্যগণ দীর্ঘসময় যাবৎ আলোচনা ও বিতর্কের অবকাশ পান। সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতার জন্য কোনো কোনো বিষয়ে লর্ডসভার আলোচনা অধিকতর উচ্চমানের হয়ে থাকে। অপরদিকে কমন্সসভা ব্রিটেনের বৃহত্তম ও প্রভাবশালী বিতর্ক মঞ্চ হিসেবে সুপরিচিত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই কক্ষে আলোচনা ও বিতর্ক চলে। এই কারণে কমন্সসভার বিতর্ক ও আলোচনার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। লর্ডসভার আলোচনা নিষ্প্রাণ ও ধীর গতিতে চলে।

ঞ. সংবিধান আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে ক্ষমতা : সংবিধান ও আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে লর্ডসভা এবং কমন্সসভা সমান ক্ষমতার অধিকারী। সংবিধান ও আইন সংশোধনের কোনো প্রস্তাব যেকোনো কক্ষে উত্থাপন করা যায়। ব্রিটেনের সংবিধান সুপরিবর্তনীয় প্রকৃতির। এখানে সাধারণ আইন প্রণয়ন, সংশোধন এবং সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতির মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না এই কারণে লর্ডসভা সংবিধান এবং আইন সংশোধন সংক্রান্ত কোনো বিলের উপর মতামত না জানিয়ে অন্যান্য সাধারণ বিলের মতো তা একবছর আটকে রাখতে পারে। তবে চূড়ান্ত বিচারে সংবিধান ও আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে কমপসভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ।

ট. প্রতিনিধিত্বমূলক ক্ষমতার ক্ষেত্রে পার্থক্য : লর্ডসভার সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন। তাই সভাকে প্রতিনিধিত্বমূলক কক্ষ বলা যায় না। জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। ভোটদাতাদের কাছে নিজেদের কার্যাবলির বিবরণ তাঁদের পেশ করতে হয় না। কিন্তু কমন্সসভার সদস্যগণ সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন । এজন্য কমন্সসভাবে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কক্ষ বলা হয়। তাঁরা তাদের নীতি ও কার্যাবলির জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করে থাকেন। সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করা তাদের অন্যতম দায়িত্ব।

ঠ. বিরোধী দলের ভূমিকাগত পার্থক্য : লর্ডসভার অভ্যন্তরে কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্ব থাকে না। লর্ডসভার সদস্যগণ একই স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই এখানে বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত ও গুরুত্বহীন। অপরদিকে, কান্সসভার সদস্যদের দ্বারা গঠিত সরকার যেমন রাজা বা রানীর সরকার, তেমনি বিরোধী দলত রাজা বা রানীর বিরোধী দল। একদিকে যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মন্ত্রিসভা আছে অপরদিকে তেমনি বিরোধী দলের ছায়া মন্ত্রিসভা (Shadow Cabinet) আছে।

ড. বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা। ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় কেবল বিচার বিভাগীয় ক্ষেত্রে পর্ডসভা কমপসভার থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার অধিকারী, লর্ডসতা হলো ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সর্বোচ্চ আপীল আদালত। অবশ্য পর্ডসভার আশীলের শুনানীর সময় কেবল আইনড লর্ডগণই উপস্থিত থাকেন। অন্যদিকে, কমন্সসভার হাতে বিচার সংক্রান্ত এ ধরনের ক্ষমতা অর্পিত হয় নি। লর্ডসভার মূল ও আপীল উভয় প্রকার এলাকাই আছে। লর্ডসভা মূল এলাকার কমপসভা কর্তৃক আনীত যাবতীয় অভিযোগের বিচার করে।

চ. রাজনৈতিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পার্থক্য : লর্ডসভা সাধারণভাবে সামন্ততান্ত্রিক এবং কায়েমি ও শ্রেণি স্বার্থের প্রতিভূ। এটি হলো বিত্তশালীদের আত্মাস্বার্থ রক্ষার দুর্গ। তাই এখানে সমাজের সকল শ্রেণির রাজনৈতিক মতামত ও মূল্যবোধ প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ পাওয়া যায় না। অপরদিকে, কমথসভা ইংরেজ জাতির রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতীক, কমপসভার বিভিন্ন দলের বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে সমাজের বিভিন্ন মতামত প্রকাশের সুযোগ পায় ।

পরিশেষে বলা যায়, সামন্ততান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে লর্ডসভা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। ক্রমান্বয়ে সামন্ত প্রথার প্রাধান্য খর্ব এবং পুঁজিবাদের বিকাশের ফলে লর্ডসভার ক্ষমতা ও প্রভাব হ্রাস পেয়েছে। গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধের বিকাশের ফলে কমন্সসভার ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। জনপ্রতিনিধিত্বমলক কক্ষ হিসেবে কমন্সসভা হলো জাতীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ।

 

কমন্সসভার স্পিকার
Speaker of the House of Commons

ব্রিটেনে কমন্সসভার কর্মচারীদের মধ্যে স্পিকারের পদ সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কমন্সসভার সভাপতিকে স্পিকার (Speaker) বলা হয়। ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার স্পিকারের পদটি ঐতিহ্যমণ্ডিত, মর্যাদাসম্পন্ন এবং তাৎপর্যপূর্ণ। অধ্যাপক ডাইসি (Diecy) মন্তব্য করেছেন যে, স্পিকার ছাড়া অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ সংবিধানের যথার্থ স্বরূপ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে না। (No institution expresses more faithfully the spirit of the constitution) স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings) এর মতে, স্পিকার পদের মর্যাদা ব্রিটিশ সংবিধানের মহত্ত্বকে স্পষ্টভাবে এবং ইংরেজ জাতির যুক্তিবাদী মনোভাবকে নিখুঁতভাবে ব্যক্ত করেছে।

স্পিকার পদের উদ্ভব : অতি প্রাচীনকালে রাজার কাছে আবেদন জানাবার জন্য কমন্সসভা একজন মুখপাত্র (Spokesman) মনোনয়ন করত। সেই থেকেই স্পিকার নামের উৎপত্তি হয়েছে। অগ ও জিংক (Ogg & Zink) বলেছেন, “He get his title from being the spokes man of the House in its dealing with the crown-from speaking for, not to his fellow members.” ১৩৭৭ সালে প্রথম স্পিকারের পদ সৃষ্টি হয়। স্যার টমাস হাঙ্গার ফোর্ড (Sir Thomas Hunger Ford) হলেন ব্রিটেনের প্রথম স্পিকার।

স্পিকার পদের ক্রমবিবর্তন : পূর্বে রাজা প্রকৃতপক্ষে স্পিকার নিয়োগ করতেন এবং রাজার অনুচর হিসেবে স্পিকার কাজ করতেন। রাজা বা রানী অনেক সময় কমন্সসভার সদস্য নন এমন ব্যক্তিকেও স্পিকার পদে নিয়োগ দিতেন। রানী এলিজাবেথের শাসনামলে স্পিকারের মর্যাদা অত্যন্ত উন্নত ছিল। রাজকোষ থেকে তাঁকে ভাতা দেওয়া হতো। তিনি রানীর ইচ্ছানুযায়ী কমন্সসভার আলোচনা ও বিতর্ক পরিচালনা করতেন। প্রথাগত বিধান অনুযায়ী এখনও কমসসভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার পূর্বে কমন্সসভার নব-নির্বাচিত স্পিকার রাজা বা রানীর অনুমতি প্রার্থনা করেন। তবে রাজশক্তির ক্ষমতা হ্রাস এবং কমন্সসভার শক্তি বৃদ্ধির ফলে স্পিকার যথার্থ বিচারে কমন্সসভার মুখপাত্রে পরিণত হন। উনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত স্পিকার সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতেন। রানী অ্যানের শাসনামলে হারলি (Harley) একইসঙ্গে স্পিকার এবং স্বরাষ্ট্র সচিব  (Secratary of state) হিসেবে কার্য পরিচালনা করতেন। দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভবের ফলে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে, স্পিকার দলীয় রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকলে তিনি নিজ দলের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবেন। তাই ১৭২৭ সালে অনস্লো (Onslow) স্পিকার পদে নিযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে তাঁর নিরপেক্ষতা প্রমাণ করার জন্য ট্রেজারার অব দ্যা নেভি (Treasurer of the Navry) পদটি ত্যাগ করেন। আবের ক্রোমবির সময়ে সর্বপ্রথম কমন্সসভার বিতর্কে স্পিকারের অংশগ্রহণ না করার রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী স্পিকার ‘শ’ লেফিভার (Shaw Lefever-1839-57) সভার ভিতরে এবং বাইরে স্পিকারের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার নীতি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

স্পিকারের নির্বাচন : প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর নবগঠিত কান্সসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতে সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে থেকে একজনকে স্পিকার হিসেবে নির্বাচন করেন। স্পিকার সাধারণভাবে কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যদের মধ্য থেকেই মনোনীত হন। সাধারণত সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে স্পিকার নির্বাচন করা হয়। সরকারি দলের পক্ষ থেকে একজন সদস্য স্পিকার পদের জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যের নাম প্রস্তাব করেন এবং বিরোধী দলের সদস্য এই প্রস্তাব সমর্থন করেন।

সাধারণত প্রাক্তন স্পিকার সক্ষম ও সুস্থ ও ঐ পদে বহাল থাকতে আগ্রহী থাকলে তাঁকেই স্পিকারের পদে ‘পুননির্বাচন করা হয়। অধ্যাপক ফাইনার (Finer) বলেছেন, “Once elected he will be reelected as often as he cares to stand, without competition.” তবে স্পিকার নিয়োগের পর রাজা বা রানীর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

বেতন ভাতা : স্পিকার বার্ষিক ১৩,০০০ পাউন্ড বেতন পান। তাছাড়া ৩,০০০ পাউন্ড অতিরিক্ত ভাতা পান। স্পিকারের জন্য ওয়েস্টমিনস্টারে বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসভবন রয়েছে। তিনি অবসরকালীন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। অবসর গ্রহণের পর তাঁকে পিয়ার উপাধিতে ভূষিত করে লর্ডসভার সদস্যপদ প্রদান করা হয়। ব্রিটেনের সঞ্চিত তহবিল (Consolidated Fund) থেকে তার বেতন দেওয়া হয় এবং ঐ বেতন আয়করমুক্ত।

কার্যকাল : স্পিকারের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর। তবে নতুন স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকেন। সাধারণ নির্বাচনের পর স্পিকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য রাজা বা রানী একজনকে স্পিকার প্রোটেম (Speaker Protem) হিসেবে নিয়োগ করেন। সাধারণত কমন্সসভার নব নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকে প্রবীণতম ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ করা হয়।

স্পিকারের যোগ্যতা : কমন্সসভার স্পিকার পদের জন্য কোনো বিশেষ যোগ্যতার দরকার নেই। এমনকি তাকে তেমন অভিজ্ঞ হতে হয় না। স্পিকারকে কমন্সসভার সাধারণ সদস্যদরেই একজন হতে হয়। বাস্তবিকই তিনি কমন্সসভার পিছনের সারির সদস্য । তার যোগ্যতা সম্পর্কে বলা যায় যে, “He is one who knows nothing and whom nobody knows.” স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings ) বলেছেন, “স্পিকারের জন্য কোনো বিশেষ গুণাবলির প্রয়োজন হয় না। এই পদের সম্মান এত বেশি এবং তার নিরপেক্ষতা ও কর্তৃত্ব রক্ষার্থে রাজনৈতিক দলগুলো এত যত্নবান যে, যে কোনো বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি উক্ত পদে অতিসহজেই সাফল্য লাভ করেন।” (The qualities required of a speaker are not really very high So great is the prestige of the office and so careful are all parties to maintain his independence and authority that any responsible man can make a success of the office) [Ivor Jennings Parliament p-65]

স্পিকারের নিরপেক্ষতা : কমন্সসভার কোনো সদস্য স্পিকার পদে নিযুক্ত হওয়ার পর দলীয় সদস্যপদ ত্যাগ করেন। নিজ দলের সাথে তিনি সকল সম্পর্ক ত্যাগ করেন। পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে তিনি তাঁর নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রেখে চলেন । তিনি কোনো দলীয় সভায় উপস্থিত থাকেন না এবং দলীয় সমস্যা সম্পর্কে কোনো মতামত দেন না। তিনি কমন্সসভার আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন না, তবে ভোটাভুটির সময় কোনো বিষয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে সমানসংখ্যক ভোট পড়লে অচলাবস্থার নিরসনের জন্য তিনি একটি নির্ণায়ক ভোট (Casting vote) দেন। স্পিকারের দল নিরপেক্ষতা সম্পর্কে সাবেক স্পিকার ক্লিফটন ব্রাউন (Clifton Brown) বলেন, “স্পিকার হিসেবে আমি সরকারি দলের লোক নই বিরোধী দলের লোকও নই। আমি সম্পূর্ণভাবে কমন্সসভার লোক এবং আমার মতে, সর্বোপরি আমি সভার পিছনের সারির সদস্যদের লোক।” (As speaker, I am not the governments man, nor the oppositions man. I am the House of Common’s man and I believe, above all, the backbencher’s man.)

স্পিকারের মর্যাদা : কমন্সসভার স্পিকার একজন অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি সর্বাধিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন বলে সবচেয়ে বেশি সম্মান পান। কোনো কোনো সময় বিরোধী দল ক্ষমতাসীন হয়েও পুরনো স্পিকারকে বহাল রাখে। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings ) বলেছেন, The speakers authority is greater than his power. The House takes great care to maintain and even to enhance his prestige. ১৮৫৭ সাল থেকে স্পিকার একটি সরকারি বাসভবন পেয়ে আসছেন। ওয়েস্টমিনিস্টার প্রাসাদের উত্তর অংশে তিনি বসবাস করেন। ১৯১৯ সালে পদক্রম নীতি অনুযায়ী তিনি হলেন সপ্তম ব্যক্তি, অবসরগ্রহণের পর তাঁকে অবসরভাতা এবং লর্ডসভার আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়।

 

স্পিকারের ক্ষমতা কার্যাবলি
Powers and Functions of the Speaker

কমপসভার স্পিকার কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেন। এসব কাজের মধ্যে কতকগুলো প্রচলিত প্রথাভিত্তিক, কতকগুলো লিখিত আইন নির্ভর এবং কতকগুলো সভার স্থায়ী নিয়মাবলি (Standing orders) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। স্পিকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো :

ক. অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা : কমন্সসভায় কিার প্রথম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা। স্পিকার হলেন কমন্সসভার সভাপতি। এ ক্ষমতা বলে তিনি কমন্সসভার সভাপতিত্ব করেন। এই কাজ তিনি সর্বাধিক নিরপেক্ষতার সাথে করেন। অগ এবং জিঙ্ক (Ogg and Zink) এর মতে, “The speaker must still be a man of parts-able, vigilant, imperturable, tactful. All these qualities and more he will requrie in the discharge of his onerous and delicate duties.”

খ. আলোচ্য সূচি সময়সীমা নির্ধারণ : সুষ্ঠুভাবে কমন্সসভার কার্য পরিচালনার গুরুদায়িত্ব স্পিকারের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। তিনি কমন্সসভার প্রতিদিনের আলোচ্য সূচি এবং বিভিন্ন বিষয় আলোচনার সময়সীমা নির্ধারণ করেন। এই বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেতার সাথে পরামর্শ করেন। কমন্সসভার প্রত্যেক দলের সদস্য সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রত্যেক দলের আলোচনার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তিনি সভার সদস্যদের বক্তৃতার ক্রমপর্যায় নির্ধারণ করে দেন। তিনি সদস্যদের কথা বলার অনুমতি দেন। কোনো প্রস্তাব সংশোধন করতে বলতে পারেন। তবে তিনি নিজে আলোচনা বা বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন না ।

গ. সভায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা : স্পিকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সভার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিয়মকানুন অনুযায়ী সভাকে পরিচালনা করা, কমন্সসভার সদস্যগণ স্পিকারকে সম্বোধন করে বক্তব্য পেশ করেন। তিনি উঠে দাঁড়ালে সদস্যগণ দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বসলে সদস্যগণ নিজ নিজ আসন গ্রহণ করেন। সভাত্যাগ করার সময় স্পিকারকে সম্মান দেখাতে হয়। সভায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে স্পিকার শৃঙ্খলা আনার নির্দেশ দেন। তিনি সভার শৃঙ্খলা বিরোধী আচরণের জন্য যেকোনো সদস্যকে কক্ষ ত্যাগের নির্দেশ দিতে পারেন। গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে স্পিকার যে কোনো সদস্যকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাস্তি দিতে পারেন। চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে স্পিকার সভার কার্য মূলতবি ঘোষণা করেন।

ঘ. সভার নিয়ম কানুন ব্যাখ্যা বলবৎ করা : কমন্সসভার পরিচালনার জন্য কতকগুলো নিয়মকানুন আছে। সভার কার্যপরিচালনার নিয়মকানুন ও অন্যান্য আইন স্পিকার ব্যাখ্যা ও বলবৎ করেন। তিনি এক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম এবং অতীতের নজীর অনুসরণ করে থাকেন। জেনিংস (Sir Ivor Jennings) বলেছেন- If the precedents are not clear, the speaker leaves the matter to the House. সভার নিয়মকানুনের মধ্যে থেকে সকল সদস্যকে কাজ করতে হয়। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারে না। তিনি বৈধতার প্রশ্নসমূহের মীমাংসা করেন। তাঁর সকল সিদ্ধান্তই আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings) বলেছেন, The ordinary interpretation of the rules and customs of the House is the function of the speaker himself, except on a formal motion.

ঙ. কমন্সসভার সদস্যদের অধিকার সুযোগ-সুবিধা রক্ষা করা : কমন্সসভার স্পিকার সদস্যদের অধিকার ও সুযোগ- সুবিধা রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেন। তার কাছে একজন মন্ত্রী ও সাধারণ সদস্যদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তিনি

চ. সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা : স্পিকার কমন্সসভার সংখ্যালঘু সদস্যের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করেন। সংখ্যালঘু দল- গুলোর অধিকার ও স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। তিনি লক্ষ রাখেন কোনো প্রস্তাব সঠিকভাবে উত্থাপিত হয়েছে কিনা। সংখ্যালঘুদের স্বার্থের হানিকর না হলে তিনি সে প্রস্তাব ভোটাভুটির জন্য দেন।

ছ. অর্থবিল নির্ধারণ : ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট আইন অনুযায়ী কোনো বিল অর্থ বিল কিনা তা নির্ধারণ করার অধিকার স্পিকারের। এ বিষয়ে কোনো সংশয় বা বিভ্রান্তি দেখা দিলে স্পিকারের মতকে চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে হবে। তাছাড়া কোনো অর্থবিল যখন কমন্সসভার পাস হওয়ার পর লর্ডসভা ও রাজা বা রানীর সম্মতির জন্য পাঠানো হয় তখন কমন্সসভার স্পিকারকে একটি সার্টিফিকেট দিতে হয় যে, সংশ্লিষ্ট বিলটি অর্থবিল। ফাইনার (Herman Finer) বলেছেন, “He has the very important power of certifying money bills.”

জ. নির্ণায়ক ভোট প্রদান : কমন্সসভার স্পিকার কোনো আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন না। তিনি কোনো প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেন না। তবে কোনো প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সমানসংখ্যাক ভোট পড়লে তিনি একটি নির্ণায়ক ভোট (Casting Vote) দেন। এক্ষেত্রে তিনি এমনভাবে ভোট দেন যাতে প্রশ্নটির চূড়ান্ত মীমাংসা না হয় এবং কমন্সসভা বিষয়টি সম্পর্কে পুনর্বিবেচনার সুযোগ পায় ।

ঝ. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা : কমন্সসভার স্পিকারের কিছু কিছু বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা আছে। কোনো সদস্য কমসসভার মর্যাদাহানির কাজ করলে স্পিকারের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে কমন্সসভায় হাজির করা হয়। কমন্সসভা তাকে তিরস্কার করে মুক্তি দিতে পারে বা তাকে শাস্তি দিতে পারে ।

ঞ. কমন্সসভা রাজা বা রানীর মধ্যে যোগসূত্র : স্পিকার কমন্সসভা ও রাজা বা রানীর মধ্যে সংযোগসাধনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। তিনি কমন্সসভার পক্ষে রাজা বা রানীর কাছে আবেদনপত্রাদি পেশ করেন। আবার তিনি রাজা বা রানীর বক্তব্য কমন্সসভায় উপস্থাপন করেন। কমন্সসভার কার্যবিবরণী তিনি রাজা বা রানীর কাছে পেশ করেন ।

ট. কমন্সসভার মুখপাত্র তথা কার্য পরিচালক হিসেবে কাজ : কমন্সসভার মুখপাত্র তথা কার্য পরিচালক হিসেবে স্পিকারকে কাজ করতে হয়। কমন্সসভার সকল সিদ্ধান্ত ও নির্দেশকে স্পিকার কার্যকর করেন। তিনি সভার পক্ষে হুকুমনামা (Warrant) জারি করতে পারেন। কমন্সসভার কোনো আসন কোনো কারণে শূন্য হলে তা পূর্ণ করার জন্য নির্বাচনের নির্দেশনামা স্পিকারের নামে জারি করা হয়। তাছাড়া কমন্সসভার গ্রন্থাগারিক, করণিক, সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস বেসরকারি বিলের পরীক্ষক প্রমুখ কর্মচারী তার অধীনে থেকে তারই নির্দেশে কার্যাদি সম্পাদন করেন।

ঠ. কমিটিগুলোর সভাপতিদের নিয়োগ : স্পিকার বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিদের নিয়োগ দেন। বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির মধ্যে বিল বণ্টনের দায়িত্বও তার হাতে ন্যস্ত। স্পিকার এবং সহকারী স্পিকারের অবর্তমানে সভার কাজ পরিচালনার জন্য স্পিকার সভাপতিদের একটি তালিকা প্রণয়ন করেন ।

ড. কমন্সসভার প্রতিনিধি : স্পিকার হলেন কমন্সসভার এক নম্বর সদস্য। তিনি সভার প্রতিনিধি। বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্পিকার কমন্সসভার প্রতিনিধিত্ব করেন। বাইরের আক্রমণ থেকে কমন্সসভাকে আগলে রাখার ব্যাপারে তিনি হলেন একজন প্রকৃত অভিভাবক। ১৬৪২ সাল রাজা প্রথম চার্লস ৫ জন সদস্যকে যখন গ্রেপ্তার করতে আসেন এবং সেই ৫ জনের পরিচয় জানাবার জন্য স্পিকারকে নির্দেশ দেন। তখন তৎকালীন স্পিকার লেন্থাল (Lenthall) বলেছিলেন, “Sir, I have neither eyes to see, nor tongue to speak in this place, but as the House is pleased to direct me, whose servant I am here.”

পরিশেষে বলা যায় কমন্সসভার সভাপতি হিসেবে স্পিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও মর্যাদার অধিকারী। তাঁর ক্ষমতা ও দায়িত্ব বহুবিধ, ব্যাপক এবং বিস্তৃত। এজন্য স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings ) বলেছেন, “কেবল স্পিকারের কার্যাবলি বর্ণনার মাধ্যমে তাঁর পদমর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ তাঁর পদের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবকে কখনই যথাযথ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।” তবে এই পদের মর্যাদা বহুলাংশে পদাধিকারীর চারিত্রিক গুণাবলি, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল।

 

কমন্সসভার কমিটি ব্যবস্থা
Committee System of the House of Commons

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ব্রিটেনেও দীর্ঘদিন থেকে কমিটি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Milly বলেছেন, একটি বৃহৎ আইনসভার পক্ষে কোনো বিষয় যথাযথভাবে আলোচনা করা সম্ভব নয়। বর্তমানে রাষ্ট্রের কার্যাবলি সম্প্রসারিত হয়েছে। তাই কমলসভাকে বহুবিদ কার্য সম্পাদন করতে হয়। তাছাড়া আইন প্রণয়ন করা একটি জটিল ব্যাপার। আইন প্রণয়নের জন্য যে কলাকৌশলগত জ্ঞানের দরকার কমপসভার অধিকাংশ সদস্যের সেই ान থাকে না। ত প্রণয়ন করার কাজে কমনসভাকে সাহায্য করার জন্য ব্রিটেনের কমিটিগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধ্যাপক ফাইনার (Finer)-এর মতে, ব্রিটিশ কমিটি ব্যবস্থার জন্ম ১৮৮৫ সালে, কমথসভার উপর আইন প্রণয়নের চাপ অনাগত বুদ্ধি পাওয়ায় কমিটি ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়।

কমিটি ব্যবস্থার গুরুত্ব বা উপযোগিতা

Importance or Utility of the Committee System

ব্রিটেনে বিভিন্ন কারণে কমিটি ব্যবস্থার গুরুত্ব বা উপযোগিতা রয়েছে। কমিটি ব্যবস্থার পক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তির অবতারণা করা যায়। ক. আইন প্রণয়নের পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে জটিল হয়ে পড়েছে। আইনসভার বিভিন্ন কার্য পরিচালনার জন্য বিশেষ দক্ষতা ও নৈপুণ্যের প্রয়োজন । আইনসভার অভিজ্ঞ সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠিত হলে বিভিন্ন বিষয়ে এ কমিটির পর্যালোচনা ও সুচিন্তিত মতামত আইনসভার দক্ষতা ও নৈপুণ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।

খ. বহু সদস্য বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে সকল বিষয় বিস্তৃতভাবে আলোচনার পর সহজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অসম্ভব হে পড়ে। পার্লামেন্টে প্রত্যেক সদস্যের পক্ষে নিজ বক্তব্য পেশের সুযোগ থাকে না। কমিটির সদস্য সংখ্যা কম থাকার ফে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়ে ওঠে। প্রত্যেক সদস্যের মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্র তৈরি হয়।

গ. কমিটি ব্যবস্থা কমন্সসভার কাজ-কর্ম ও দায়িত্বের ভার লাঘব করে। তাই কমপসভা কমিটি ব্যবস্থার মাধ্যমে আইন তৈরি করে। সুতরাং কমিটি ব্যবস্থা কমন্সসভার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

ঘ. আইনসভার অধিবেশন বছরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বসে। কিন্তু কমিটিসমূহ সারা বছর নিজ নিজ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং সমস্যা আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এভাবে কমিটিসমূহের মাধ্যমে অধিবেশন স্থগিত থাকা কালে আইনসভার কাজ-কর্ম অব্যাহতভাবে চলে ।

ঙ. আইনসভার কমিটিসমূহে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা থাকায় এবং কোথাও কোথাও কমিটির সভাপতি পদে বিরোধী দলের কোনো সদস্যকে নিয়োগের রীতি থাকায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে ওঠে।

চ. আইনসভার কমিটিসমূহ উভয় দলের সদস্যদের রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসার একটি মাধ্যমরূপে কাজ করে। আইন সভায় দলীয় নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ফলে রাজনৈতিক বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। কমিটিসমূহে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্যের অবসান ঘটে।

ছ. কমিটিসমূহ আইনসভা, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারী এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ফলে প্রণীত আইন গণ-অসন্তোষ সৃষ্টি করে না ।

কমন্সসভার কমিটিসমূহ এবং এদের কার্যাবলি
Committees in the House of Commons and their Functions

বর্তমানে ব্রিটিশ কমন্সসভার পাঁচটি কমিটি আছে। যথা-

ক. সমগ্র কক্ষ কমিটি (Committee of the whole House);

খ. স্থায়ী কমিটি (Standing committee);

গ. সিলেক্ট কমিটি (Select committee);

ঘ. বেসরকারি বিল কমিটি (Private Bills committee); ৫. যৌথ কমিটি (Joint committee)।

 সকল সদস্যদের অধিকার ও স্বার্থ সমভাবে রক্ষা করেন। তিনি হলেন ন্যায়ের প্রতীক। সভার অবমাননা বা কোনো সদস্যের অধিকার ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে স্পিকার অভিযুক্ত সদস্য বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

১. সমগ্র কক্ষ কমিটি (Committe of the whole House) : সমগ্র কমথসভা যখন একটি কমিটি হিসেবে কাজ করে তখন তাকে সমগ্র কক্ষ কমিটি বলে। কমন্সসভার সকল সদস্য নিয়ে এ কমিটি গঠিত হয়। ব্রিটেনে কমপসভার কমিটিসমূহের মধ্যে সমগ্র কক্ষ কমিটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। স্টুয়ার্ট রাজাদের আমল থেকেই এই কমিটি সূত্রপাত ঘটেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে সমগ্র কক্ষ কমিটি ও কম সভার মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যথা- ক. সমগ্র কক্ষ কমিটিতে স্পিকার সভাপতিত্ব করেন না। স্পিকার তাঁর নির্দিষ্ট আসনে বসেন না। খ. স্পিকারের ক্ষমতার প্রতীক দত্ত টিকে (The Mace ) টেবিলের নিচে রাখা হয়। গ. স্পিকারের পরিবর্তে ওয়েজ ও মিনস (Ways and Means) কমিটির সভাপতি সমগ্ন কক্ষ কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি সভার করণিকের আসনে বসেন। ঘ. বক্তৃতা বা আলোচনার বিধি নিয়মগুলো শিথিল করা হয়। ৫. এই কমিটির সদস্যগণ একাধিকবার বক্তব্য পেশ করতে পারেন। চ. আলোচনা বন্ধ করার জন্য ক্লোজার, গিলোটিন প্রভৃতি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না; (ছ) একজনের উত্থাপিত কোনো প্রস্তাব অন্যজন কর্তৃক সমর্থিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না, বাজেট ও অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তাব সমগ্র কক্ষ কমিটিতে প্রেরিত হয়। তবে যেকোনো বিলের দ্বিতীয় পাঠের পর কনন্সসভার যেকোনো সদস্য পুরো বিলটি বা বিলের অংশ বিশেষকে এই কমিটিতে পেশ করার প্রস্তাব তুলতে পারেন।

সমগ্র কক্ষ কমিটির প্রকারভেদ : সমগ্র কক্ষ কমিটি আবার বিভিন্ন প্রকার হতে পারে: যেমন-

ক. সরকারি ব্যয়ের হিসাব মঞ্জুর করার জন্য গঠিত হয় সরবরাহ কমিটি (The committee of supply)।

খ. মঞ্জুরিকৃত ব্যয়ের জন্য রাজস্ব সংগ্রহের প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনার জন্য গঠিত হয় উপায় নির্ধারণী কমিটি। (The committee of ways and means ) । গ. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় বিল সম্পর্কে আলোচনা করে সমগ্র কক্ষ সাধারণ কমিটি (The ordinary committee of the whole House ) ।

২. স্থায়ী কমিটি (Standing Committee) : কমন্সসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হলো স্থায়ী কমিটি। সাধারণভাবে বিলের দ্বিতীয় পাঠের পর অধিকাংশ বিল স্থায়ী কমিটির বিবেচনার জন্য প্রেরিত হয়। স্থায়ী কমিটির সংখ্যা প্রয়োজন অনুযায়ী বৃদ্ধি করা যায়। বর্তমানে এ কমিটির সংখ্যা ৭। কমিটির সদস্যগণ কমন্সসভার অধিবেশনের শুরুতে মনোনয়ন কমিটি (The committee of selection) কর্তৃক নিযুক্ত হয়। ১১ জন সদস্য নিয়ে এই মনোনয়ন কমিটি গঠিত।

কেবল স্কটিশ কমিটি ও গ্র্যান্ড কমিটি ছাড়া অন্যান্য স্থায়ী কমিটিকে এ, বি, সি, ডি, ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। প্রতিটি কমিটিতে ১৬ থেকে ৫০ জন সদস্য থাকতে পারেন। স্পিকার প্রত্যেক কমিটির তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে একজন সভাপতি নিযুক্ত করেন।

স্থায়ী কমিটির অধিবেশন সাধারণত সকালে বসে। এক-তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম হয়। অর্থ বিল এবং সাময়িক আদেশ (Provisional order) অনুমোদন সংক্রান্ত বিল ছাড়া অন্যান্য সরকারি বিলকে দ্বিতীয় পাঠের পর একটি স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। একই কমিটিতে বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত বিলের বিচার-বিবেচনা হতে পারে। কমিটি প্রতিটি বিল সম্পর্কে কমন্সসভার কাছে রিপোর্ট পেশ করে।

বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামরিক দপ্তর সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি আছে। তাছাড়া দি স্কটিশ স্থায়ী কমিটি ও দি ওয়েলস স্থায়ী কমিটি আছে। আনুমানিক ব্যয় কমিটিও অন্যতম স্থায়ী কমিটি। কমন্সসভার অভিজ্ঞ সদস্যদের নিয়ে স্থায়ী কমিটি গঠন করার রীতি এখনও চালু আছে।

৩. সিলেক্ট কমিটি (Select Committee) : কমন্সসভায় কতকগুলো সিলেক্ট কমিটি রয়েছে। সিলেক্ট কমিটি গঠিত হয় অনধিক ১৫ জন সদস্য নিয়ে। এই কমিটির সদস্যরাও কমন্সসভার অধিবেশনের শুরুতে মনোনয়ন কমিটির মাধ্যমে নিযুক্ত হন। প্রত্যেক সিলেক্ট কমিটির একজন সভাপতি থাকেন। সদস্যগণ পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করেন। সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার পায় ।

বিল পর্যালোচনা, তদন্ত এবং তদারকীর কাজ পরিচালনার জন্য কমন্সসভা সিলেক্ট কমিটিসমূহ গঠন করে। কমন্সসড়া এই কমিটির হাতে বিশেষ ক্ষমতাও অর্পণ করতে পারে। সভাপতির আদেশ অনুযায়ী এই কমিটি কোনো সাক্ষীকে আহ্বান করতে পারে। প্রয়োজনীয় দলিল এবং সরকারি নথিপত্র পেশের দাবি করতে পারে। হারভে এবং ব্যাথার (Harvey and Bather ) বলেছেন, “Select committees are appointed by the House to consider occasional Bills, conduct enquiries and

 

একক ভোটার এলাকা থেকে প্রাপ্ত বয়স্কদের উত্তরাধিকার লর্ড, আজীবন লর্ড, স্কটল্যান্ড ও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত

আয়ারল্যন্ডের প্রতিনিধিত্বমূলক লর্ডদের নিয়ে লর্ডসভা গঠিত।

১. ১৯৫৭ সালের কমন্সসভার অযোগ্যতা সংক্রান্ত ১. আইন অনুসারে বিদেশি, উন্মাদ, দেউলিয়া, দুর্নীতিসহ নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত ও কারারুদ্ধ ব্যক্তি, ধর্মযাজক, বিচারক, আইরিশ পিয়ারগণ ব্যতীত অন্যান্য পিয়ারগণ, সরকারি কর্মচারি, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিগণ কমন্সসভার সদস্য হতে পারবেন না ।

২. ১৭০৫ সালের রাজপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী রাজার অধীনে অর্থকরী পদে নিযুক্ত ব্যক্তি

কমন্সসভার সদস্য হতে পারবেন না।

কমপক্ষে ২১ বছর বয়স্ক হতে হবে।

যে কোনো ধর্ম বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সাধারণ আনুগত্যের শপথ নিতে হবে।

বিদেশি, উন্মাদ, দেউলিয়া, দুর্নীতিসহ নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত ও কারারুদ্ধ ব্যক্তিকে লর্ডসভার সদস্য করা যাবে না ।

প্রতি ৫ বছর পর ভেঙে যায় এবং নতুন নির্বাচনের স্থায়ীসভা। মাধ্যমে গঠন করা হয়।

৫ বছর (যুদ্ধ বা কোনো জরুরি অবস্থায় এর স্থায়ী। মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায়)।

উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

মাসিক ৪,৫০০ পাউন্ড করযোগ্য বেতন পান। তাছাড়া প্রত্যেক সদস্য টেলিফোন, চিঠিপত্র, যাতায়াত ভাতা প্রবৃত্তি বাবদ করমুক্ত ১০৫০ পাউন্ড পান ।

বিশেষ নির্বাচন বা রাজ্যের গভর্নর কর্তৃক অস্থায়ীভাবে নিয়োগের মাধ্যমে।

 

অধিবেশন (নিয়মিত)

 

বছরে অন্তত একবার অধিবেশন বসে। রাজা বা রাজা বা রানী কমন্সসভার সহিত একই সাথে রানী রাজকীয় ঘোষণার মাধ্যমে অধিবেশন পর্ডসভার অধিবেশন আহ্বান করেন। যদিও একই সঙ্গে লর্ডসভার অধিবেশন মূলতবি ঘোষিত হয় আহ্বান বা স্থগিত করেন।

লর্ড চ্যান্সেলর। সাধারণত পিয়ার সদস্যদের মধ্য হতে লর্ড চ্যান্সেলর নিয়োগ করা হয়। চ্যান্সেলর আসনকে ‘উপস্যাক’ বলা হয়। ১. গ্রেট ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সর্বোচ্চ, আপীল আদালত হিসেবে ভূমিকা পালন

করে।

২. লর্ডসভা আইরিশ পিয়ারদের বৈধতা যাচাই করে।

৩. পার্লামেন্টের সদস্য নন এমন ব্যক্তিকে লর্ড উপাধি দিয়ে মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে পারে।

অর্থ বিল ও বাজেট প্রণয়নে কমন্সসভা একক অর্থ বিল ও বাজেট প্রণয়নে লর্ডসভার কোনো ক্ষমতার অধিকারী।

1.

ক্ষমতা নেই ।

বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে কমসসভার গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে লর্ডসভার কোনো ভূমিকা ভূমিকা রয়েছে ।

নেই ৷

কমন্সসভার কমিটি ব্যবস্থা রয়েছে এবং লর্ডসভার কোনো কমিটি ব্যবস্থা নেই। কমিটিগুলো খুবই শক্তিশালী।

১. বাক-স্বাধীনতা ও বিতর্কে অংশগ্রহণের ১. লর্ডসভার সদস্যগণ কক্ষের মধ্যে অবাধ

স্বাধীনতা;

২. গ্রেপ্তার না হওয়ার স্বাধীনতা;

৩. জুরি বা সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির না হওয়ার স্বাধীনতা;

৪. অবমাননার জন্য দণ্ড বিধানের অধিকার;

বক্তৃতা প্রদানের স্বাধীনতা ভোগ করনে।

২. পার্লামেন্টের অধিবেশন বসার ৪০ দিন পূর্বে

কিংবা ৪০ দিন পর কোনো লর্ডকে কোনো

দেওয়ানী অপরাধের জন্য আটক করা যায় না ।

৫. সাধারণ নাগরিককে কক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ | ৩. সভার অবমাননা করার অপরাধে লর্ডসভা করার অধিকার।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

গ্রহণ করতে পারে । অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন সময়েও লর্ডসভার এই অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে ।

৪. লর্ডসভার ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আপীল আদালত হিসেবে কাজ করে ।

কমন্সসভার সদস্যগণ জনপ্রতিনিধি। অর্থাৎ, তারা লর্ডসভার সদস্যগণ জনপ্রতিনিধি নন। কেননা, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন।

তারা জনগণের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হয়ে বরং উত্তরাধিকার সূত্রে নির্বাচিত হন।

 

আরস্কিন মে (Erskin May) বলেছেন যে, “ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট স্বার্থ বা উপকারের বাড়তি কিছু দেওয়া হলো প্রাইভেট বিলের লক্ষ।” (Bills for the particular interest or benefit of any person or persons) অনেক সময় ानীয় কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে এই বিল আনা হয়। পার্লামেন্টের বাইরের গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আবেদন ক্রমে বিশেষ স্ব সম্পর্কিত ি উৎপত্তি হয়েছে, বিশেষ স্বার্থ সম্পর্কিত বিলও দু ধরনের। যথা- বেসরকারি বিল এবং অন্যান্য বিল।

৩. মিশ্র বিল বা দ্বি-জাতীয় বিল (IHybrid Bill) : যখন কোনো একটি বিলের মধ্যে সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কিত এবং বিশেষ স্বার্থ সম্পর্কিত বিলের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তখন তাকে মিশ্র বিল বা দ্বি-জাতীয় বিল বলে। স্যার আইভর জেনিং (Sir Ivor Jennings) এর মতে, “But a public bill which affects the rights of a particular person or group of persons even it introduced by government is regarded as a Hybrid.” মিশ্র বিলের আইন প্রণয়ন স্থায়ী নির্দেশের আওতায় আসে। উদাহরণস্বরূণ ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্টে স্কোয়ার ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট (Parliament Square Improvement Act), ১৯৪ সালের ব্রিটিশ মিউজিয়াম অ্যাক্ট (British Museum Act) ইত্যাদি খসড়া মিশ্র কফি জাতীয় বিল হিসেবে পরিচিত। তাছা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের জাতীয়করণ, লন্ডন যাত্রী পরিবহন বিল ইত্যাদিও মিশ্র বিলের অন্তর্ভুক্ত।

সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কিত বিল পাসের পদ্ধতি

Procedure of Passing the Public Bills

সাধারণ স্বার্থ সংক্রান্ত অধিকাংশ বিল হলো সরকারি বিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কার্যক্ষেত্রে বেসরকারি বিল উত্থাপন করেন। খসড়া প্রস্তুত হয়ে যাবার পর বিলটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সবুজপত্র (Green paper) প্রস্তুত করে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। বিভিন্ন পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বিল সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করা হয়। এরপর সরকার শ্বেতপত্রের (White Paper) মাধ্যমে আইনের নির্দিষ্ট প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাব নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক চলে। যে কোনো পাবলিক বিলকে আইনে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য মূলত সাতটি স্তর বা পর্যায় অতিক্রম করতে হয়।

ক. প্রথম পর্যায়, বিল উত্থাপন প্রথম পাঠ : যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিল এবং অধিকাংশ পাবলিক বিল কমসসভাতেই উত্থাপন করা হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাবলিক বিল উত্থাপানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বিল উত্থাপনের নোটিশ দিতে হয়। নোটিশ দেওয়ার পর নির্দিষ্ট দিনে স্পিকার বিলটি উত্থাপনের জন্য আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিল কিংবা শিরোনাম সম্বলিত বিলের ডামি (Dummy) কর্মসচিবের কাছে জমা দেন। কর্মসচিব বিলটির সংক্ষিপ্ত শিরোনামটি সদস্যদের পড়ে শোনান। এভাবে বিলের প্রথম পাঠ শেষ হয়ে যায়। বিলের প্রথম পাঠটি সম্পূর্ণরূপে আনুষ্ঠানিক। স্পিকারের সম্মতিক্রমে এ পর্যায়ে বিলটির দ্বিতীয় পাঠের দিন ধার্য করা হয় ৷

খ. দ্বিতীয় পর্যায় : দ্বিতীয় পাঠ : দ্বিতীয় পাঠ হলো বিলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পূর্ব নির্দিষ্ট দিনে মন্ত্রী কমন্সসভার বিলটি পেশ করে এর পটভূমি, উদ্দেশ্য ও নানা দিক ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা করেন। বিলের সাধারণ নীতি, উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু নিয়ে এই সময় সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এই সময় বিরোধী পক্ষ হতে বিলটি স্থগিত রাখার অথবা কোনো কোনো অংশ সংশোধনের প্রস্তাব আসতে পারে। ভোটাভুটিতে বিরোধীদের সংশোধনী বাতিল এবং বিলটির সাধারণ নীতিগুলো সভা কর্তৃক অনুমোদিত হলে স্পিকার বিলটির দ্বিতীয় পাঠের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় পাঠের পর মূল বিল সম্পর্কে সংশোধন পেশ করা যায়। এই প্রস্তাব কমিটি পর্যায়ে বিবেচিত হয়।

গ. তৃতীয় পর্যায়, কমিটি স্তর : তৃতীয় পর্যায়ে বিলটিকে যেকোনো একটি কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা ও সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়, সমগ্র কক্ষ কমিটি, স্থায়ী কমিটি ও সিলেক্ট কমিটির যে কোনো একটি কমিটিতে বিলটি যায়। তবে সাধারণত স্পিকারে নির্দেশে বিলগুলো স্থায়ী কমিটিতেই প্রেরিত হয়। কমিটিতে বিলের ধারা ও উপধারা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়। প্রয়োজন হলে কমিটি বিলের কোনো অংশ সংশোধনের জন্য সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু বিলের মূলনীতি ও উদ্দেশ্যসমূহকে সংশোধন করার জন্য সুপারিশ করার কোনো ক্ষমতা কমিটির নেই। হার্ডে এবং ব্যাথার (Harvey and Bather) বলেছেন, The committee cannot amend the bill so that it main principles are destroyed as these have already been agreed upon by the House in second reading. সুতরাং যে কক্ষ থেকে বিলটি পাঠানো হয়েছিল বিচার-বিবেচনার পর সেটিকে সংশ্লিষ্ট কক্ষে ফেরত পাঠানো হয়।

৪. পার্লামেন্ট রাজস্ব সংগ্রহ ও বায়ের দানি সংক্রান্ত বিষয়গুলো ঠিক করে দেয় এবং সরকারি অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হচ্ছে কি না সেদিকে লক্ষ রাখে এবং তদারক করে।

৫. সরকারি দাবি না জানালে পার্লামেন্ট কোনো অর্থ মঞ্জুর করতে পারে না।

৬. মন্ত্রিগণ উত্থাপন না করলে কমন্সসভা নিজের উদ্যোগে এরূপ কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারবে না।

৭. কোনো বিল অর্থ বিল কিনা সে বিষয়ে কমথসভায় স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

৮. অর্থ বিল পাসের ক্ষেত্রে কমথসভার একক প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কমথসভা কর্তৃক গৃহীত অর্থবিল বাতিল করার কোনো ক্ষমতা লর্ডসভার নেই। আরস্কিন মে (Erskin May) বলেছেন, “রাজশক্তি অর্থ দাবি করে, কমপসভা তা মঞ্জুর করে এবং লর্ডসভা তাতে সম্মতি জানায়।” তাঁর ভাষায় “The crown demands money, the Commons grant it and the Lords assent to the grant; but the Commons do not vote the money unless it is required by the crown, nor do they impose taxes unless such taxations be necessary for public services as declared by the crown through its constitutional advision.”

কমগসভার অর্থ বিল প্রণয়ন ও পাসের পদ্ধতিকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। অর্থাৎ ক. ব্যয় বরাদ্দ মঞ্জুর এবং খ. রাজস্ব অনুমোদন ।

ক. ব্যয় বরাদ্দ মঞ্জুর : সরকারি ব্যয় বরাদ্দকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক. সঞ্চিত তহবিল থেকে স্থায়ী ব্যয় (Consolidated fund standing service) এবং (২) বাৎসরিক অনুমোদন সাপেক্ষ ব্যয় (The supply services )

১. সঞ্চিত তহবিলের উপরে ধার্য ব্যয় : সঞ্চিত তহবিল থেকে স্থায়ী ব্যয় পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট থাকে। এজন্য পার্লামেন্টকে প্রতি বছর আইন পাস করতে হয় না। এ ধরনের ব্যয়ের উদাহরণ হলো রাজা বা রানীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ব্যয়, জাতীয় ঋণ পরিশোধ বাবদ ব্যয়, বিচারকদের বেতন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতন ইত্যাদি ।

২. বাৎসরিক অনুমোদনের সাপেক্ষ ব্যয় : বাৎসরিক অনুমোদন সাপেক্ষ ব্যয়ের জন্য প্রতিবছর পার্লামেন্টকে আইন প্রণয়ন করতে হয়। সরকারের আর্থিক বছর শুরু হয় ১ এপ্রিল থেকে। তাই চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকে অর্থ দপ্তর পরবর্তী বছরের আনুমানিক ব্যয় প্রস্তাব প্রস্তুত করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরকে নির্দেশ দেয়। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর তাদের আনুমানিক ব্যয়ের হিসাব অর্থ দপ্তরের কাছে পেশ করে। ব্যয়ের আনুমানিক হিসাবগুলো কতকগুলো প্রধান খাতে ভাগ করা হয়। এগুলো ভোট (Vote) নামে পরিচিত। প্রতিটি ভোটকে আবার কতকগুলি উপখাত ( Sub-heads) এবং দফায় (Items) বিভক্ত করা হয়। বাৎসরিক ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত করার পর কেবিনেটের কাছে তা পেশ করা হয়। কেবিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর তা কমপসভায় উত্থাপন করা হয়।

রাজা বা রানী কমন্সসভার অধিবেশনের শুরুতে একটি বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতার মাধ্যমে সরকারি ব্যয় বরাদ্দের দাবি পেশ করা হয়। এই ব্যয়ের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য সরবরাহ কমিটি (The committee of supply) এবং উপায় নির্ধারণী কমিটি (The committee of ways and means )-তে প্রেরণ করা হয়। এই দুটি কমিটি সমগ্র কক্ষ কমিটি (The committee of the whole Ilouse)-এর দুটি শাখা মাত্র। সরকারের বাৎসরিক ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব পর্যালোচনা করা এবং তা অনুমোদন করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হলো সরবরাহ কমিটির কাজ। আর সরবরাহ কমিটির দ্বারা অনুমোদিত ব্যয়ের জন্য ব্রিটেনের সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করা হলো উপায় নির্ধারণ কমিটির কাজ ।

ব্যয় মঞ্জুরি বিল : সরবরাহ কমিটিতে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর কমন্সসভায় সে সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করা হয়। তখন কমন্সসভায় উপায় নির্ধারণী কমিটিতে রূপান্তরিত হয় এবং সরবরাহ কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ব্যয়ের জন্য সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থ তোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদানের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করে। সরবরাহ কমিটি ও উপায় নির্ধারণী কমিটির প্রস্তাবসমূহ ব্যয় মঞ্জুরি বিল (Appropriation Bill)-এ পরিণত হয়। এই বিল আলোচনার জন্য কমন্সসভার ২৯ দিন সময় ধার্য থাকে এবং ৫ আগস্টের পূর্বে এই কাজ শেষ করতে হয়। কোন কোন দাবিকৃত ব্যয়ের উপর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে তা বিরোধী দলই নির্ধারণ করে।

গণনানুদান : ব্যয় বরাদ্দের দাবি পার্লামেন্টে পাস হতে আগস্ট মাস শেষ হয়ে যায়, তাই এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য আনুমানিক ব্যয় মঞ্জুরের প্রস্তাব গ্রহণ করতে হয়। এই ব্যয়কে গণনানুদান ( Votes of Account) বলে।

 

অনুপূরক ব্যয়ের হিসাব ও প্রত্যয়ানুদান : অনেক সময় কোনো বিভাগে মঞ্জুর করা অর্থ থেকে অধিক অর্থ ব্যয় করতে হয়। একে অনুপূরক ব্যয়ের হিসাব (Supplementary Estimates) বলে। আবার যুদ্ধ কিংবা অন্য কোনো আপৎকালীন অবস্থার জন্য সরকারের হাতে একটি বড় অংকের তহবিল থাকে। একে প্রত্যয়ানুদান ( Votes or credit) বলে ।

খ. রাজস্ব ও বাজেট অনুমোদন : আগামী আর্থিক বছরের জন্য সরকার কর্তৃক প্রণীত সরকারি আয়-ব্যয়ের খসড়াকে বাজেট (Budget) বলে। অর্থমন্ত্রী ৩১ মার্চের মধ্যে কমথসভায় একটি বাজেট পেশ করেন। বাজেটে নতুন কর ব্যবস্থার পরিবর্তন, আমদানি-রপ্তানি ও অন্তঃশুল্ক প্রভৃতি বিষয়ে প্রস্তাব থাকে। বাজেট প্রণয়নের মূল দায়িত্ব অর্থ দপ্তরের। এই দপ্তরের কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড আছে। অর্থমন্ত্রী বা চ্যান্সেলর অব দি এক্সচেকার হলেন এই বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা। এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে অর্থমন্ত্রী কমন্সসভার উপায় নির্ধারণী কমিটিতে বাজেট সম্পর্কে বক্তৃতা করেন। অর্থমন্ত্রী বাজেট সংক্রান্ত বক্তৃতাদানের পর উপায় নির্ধারণী কমিটিতে বাজেট-প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা চলে এবং কমিটি সে সম্পর্কে প্রস্তাব গ্রহণ করে। উপায় নির্ধারণী কমিটি কর ধার্য সম্পর্কে যেসব প্রস্তাব করে সেগুলোকে রাজস্ব বিল (Revenue Bill)-এর আকারে কমন্সসভায় পেশ করতে হয়।

অর্থ বিল পাসের পদ্ধতি : কমন্সসভায় ব্যয় মঞ্জুরি বিল ও রাজস্ব বিল পাবলিক বিল পাসের পদ্ধতিতে গৃহীত হয়। কমন্সসভায় গৃহীত হওয়ার পর এর প্রথম পাঠ শেষ হয়। তারপর দ্বিতীয় পাঠের সময় বিস্তারিত ভাবে তর্ক-বিতর্ক চলে। এই সময় বিল নীতিগতভাবে গৃহীত হলে তা ফিন্যান্স কমিটিতে (Finance committee) পাঠানো হয়। কমন্সসভার ৫০ জন সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়। বিস্তারিতভাবে বিচার-বিবেচনার পর কমিটি বিলটি সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করে। তারপর তৃতীয় পাঠের দিন ধার্য করা হয়। এ সময় বিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সীমাবদ্ধ বিতর্ক হয়। এভাবে কমন্সসভায় বিলটি গৃহীত হয়।

ব্যয় বরাদ্দ বিল এবং রাজস্ব বিল কমন্সসভায় পাস হওয়ায় পরে স্পিকার সেগুলোকে অর্থ বিল (Finance Bill) হিসেবে সার্টিফিকেট প্রদান করে লর্ডসভায় প্রেরণ করেন। লর্ডসভা কোনো অর্থ বিলকে সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না। এরূপ বিলকে লর্ডসভা সর্বাধিক ১ মাস আটকে রাখতে পারে। লর্ডসভার অনুমোদন না করলে এক মাস পরে অর্থবিল রাজা বা রানীর সম্মতিক্রমে আইনে পরিণত হয়।

Leave a Reply