মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট ও কেবিনেটের উদ্ভব আলোচনা কর ।

Table of Contents

মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট ও কেবিনেটের উদ্ভব আলোচনা কর ।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট ও কেবিনেটের উদ্ভব আলোচনা কর ।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট

The Presidential Cabinet of U.S.A

মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে তাঁর শাসনকার্য পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসকল প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান সেগুলোর মধ্যে কেবিনেট বা রাষ্ট্রপতির মন্ত্রিসভা অন্যতম। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কেবিনেট ব্যবস্থার কোনো উল্লেখ নেই। তবে মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ এই সত্যটি যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, এককভাবে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শাসন বিভাগীয় কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করার জন্য এমন কিছু দক্ষ ব্যক্তির প্রয়োজন যারা তাঁর অধীনে থেকেই কার্যাবলি সম্পাদন করবেন। যে কারণে সংবিধানে কেবলমাত্র একথাই বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন বিভাগের কর্তব্য ও কর্মসম্বন্ধীয় যে কোনো বিষয়ে সেই বিভাগের কার্যনির্বাহ সমিতির প্রধান কর্মচারীর নিকট থেকে লিখিত মতামত দাবি করতে পারবেন। | মার্কিন সংবিধানের ২(১) উপধারা)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেবিনেট ব্যবস্থার কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকলেও বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মতো সেখানেও প্রথার উপর ভিত্তি করে কেবিনেট ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

 

কেবিনেটের উদ্ভব
Origin of the Cabinet

মার্কিন কেবিনেট হলো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যার কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। মার্কিন কেবিনেট সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যবস্থা ও পদ্ধতি ক্রমশ গড়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনকেই মার্কিন কেবিনেট প্রথার স্রষ্টা হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাঁর আমলেই কেবিনেট প্রথার সূত্রপাত হয়। তিনি আশা করেছিলেন যে, প্রয়োজন হলে শাসনকার্য পরিচালনা বিষয়ে তিনি কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেটের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবেন এবং সিনেটও তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে কুণ্ঠিত হবে না। তাঁর এই চিন্তার পেছনে ছিল সংবিধান, যা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, “সিনেটের পরামর্শ ও সম্মতিক্রমে’ (by and with the advice and consent of the Senate) রাষ্ট্রপতি চুক্তি সম্পাদন ও নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারবেন। কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে সিনেটের পরামর্শ চাইলেও সিনেট রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে দ্বিধাবোধ করে। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান কর্মচারীদের সাথে পরামর্শ করতে শুরু করেন এবং ১৭৯১ সাল থেকে তিনি ঐসব কর্মচারীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ছাড়াও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক নীতিসমূহ সম্পর্কে নিয়মিত আলোচনা করতে থাকেন। ১৭৯৩ সাল থেকে রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা ঐসব বিভাগীয় প্রধানকে কেবিনেট বলে আখ্যা দেয়া হতে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৮০৩ সালে মারবারি বনাম ম্যাডিসনের মামলায় প্রধান বিচারপতি মার্শাল ‘কেবিনেট’ শব্দটি ব্যবহার করেন। যাই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেবিনেটকে আমরা ‘প্রথা ও ঐতিহ্য’ (Custom and tradition) এর সন্তান বলে অভিহিত করতে পারি।

 

কেবিনেট গঠন
Composition of the Cabinet

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শাসন বিভাগীয় দপ্তর এবং এজেন্সিসমূহের কর্মকর্তা অর্থাৎ, কর্মসচিবদের নিয়ে সাধারণত মার্কিন কেবিনেট গঠিত হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট সাধারণত স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, শ্রমসচিব, বাণিজ্য- সচিব, পরিবহন সচিব, খাদ্য, শিক্ষা ও জনকল্যাণ বিভাগের সচিব, ডাক-বিভাগের সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাজে ব্যুরোর ডিরেক্টর প্রমুখ পদাধিকারী ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভাগীয় মন্ত্রিগণ ‘সচিব’ (Secretary) নামে পরিচিত। মার্কিন প্রশাসনের ১৩টি বিভাগের সচিবগণ হলেন কেবিনেটের সদস্য। তাছাড়া বিশেষ পাঁচজন পদাধিকারীকে কেবিনেটের সদস্য করা হয় এরা হলেন উপরাষ্ট্রপতি, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপদেষ্টা, হোয়াইট হাউসের কর্মচারীদের প্রধান, সি.আই.এ.-র ডিরেক্টর এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। কেবিনেটের সদস্যদের নিয়োগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাই চূড়ান্ত। তবে এ নিয়োগ কার্যকর করার জন্য সিনেটের অনুমোদন আবশ্যক। কেবিনেটের সদস্যগণ কংগ্রেসের সদস্য নন এবং কংগ্রেসের নিকট তাদের কোনো দায়বদ্ধতাও নেই। রাষ্ট্রপতি সাধারণত নিজ দলের সদস্যদের মধ্যে থেকেই

 

কেবিনেট সদস্য নিয়োগ করেন। তবে রাষ্ট্রপতি সর্বদা তা নাও করতে পারেন। রিপাবলিকান দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্ট এবং টাফট উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যকে সমর-সচিব নিযুক্ত করেছিলেন। রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি হুভার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক দলের জনৈক বিশিষ্ট সদস্যকে নিযুক্ত করেছিলেন। ডেমোক্র্যাটিক দলের রাষ্ট্রপতি কেনেডি রিপাবলিকান দলের দু’জন ডগলাস ডিলন ও রবার্ট ম্যাকনামারা-কে যথাক্রমে প্রতিরক্ষা সচিব ও রাজস্ব সচিব এর পদ দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি নিক্সনও নিজ দলের বাহিরের ব্যক্তিকে কেবিনেটের সদস্যপদে নিয়োগ দিয়েছিলেন ।

রাষ্ট্রপতির নির্বাচনি সাফল্যের পিছনে যাদের অবদান থাকে কেবিনেট সদস্য হিসেবে তাঁদের নামও বিবেচনা করা হয়। কেবিনেট সদস্য মনোনয়নের সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব এবং নিজ দলের বিভিন্ন উপদলের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে সাধ্যমতো বিচার-বিবেচনা করে থাকেন। তবে সাম্প্রতিককালে সরকারি কাজ-কর্মের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কথা কেবিনেটের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে থেকেই কৃষি-সচিব নিযুক্ত হওয়া প্রয়োজন । আবার বাণিজ্য সচিবের বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে অভিজ্ঞতা বাঞ্ছনীয় ।

কেবিনেটের সদস্য নিয়োগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষ হলেও সাধারণত কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে না। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, এ বিষয়টি সিনেটের সৌজন্যবিধির আওতায় আসে না । আবার রাষ্ট্রপতি এক্ষেত্রে একেবারে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করেন না। কংগ্রেস যদি অনুমোদন না করে তবে কোনো প্রশাসনিক এজেন্সির প্রধানকে রাষ্ট্রপতি কেবিনেটে সদস্য হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন না। ফেডারেল সিকিউরিটি এজেন্সিকে রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান একটি কেবিনেট দপ্তরে রূপান্তরিত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন বটে তবে মার্কিন কংগ্রেস এই উদ্যোগকে সফল হতে দেয়নি। অথচ রাষ্ট্রপতির আইসেনহাওয়ারের এ প্রস্তাবকে কংগ্রেস অনুমোদন করেছে। এতদসত্ত্বেও কেবিনেটের সদস্য মনোনয়নের ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী। কেবিনেটের সদস্যদেরকে অপসারণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য ।

 

কেবিনেট প্রকৃতি
Nature of the Cabinet

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির কেবিনেট সম্পর্কিত যাবতীয় প্রথা ও পদ্ধতি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। মার্কিন কেবিনেটের যৌথ কার্যভারও নেই, যৌথ দায়িত্বও নেই। কেবিনেটের কোনো যৌথ নীতিও নেই। প্রত্যেক কেবিনেট সদস্য রাষ্ট্রপতির উপর নির্ভরশীল এবং তাঁর নিকট পৃথকভাবে দায়িত্বশীল। রাষ্ট্রপতি তাদেরকে নিয়োগ করেন এবং অপসারণ ক্ষমতাও তার উপর ন্যস্ত। রাষ্ট্রপতির অধস্তন কর্মচারী হিসেবে কেবিনেট সদস্যগণ রাষ্ট্রপতির নীতিকেই বাস্তবে রূপায়িত করেন। রাষ্ট্রপতি নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে তাদের সাথে পরামর্শ করলেও সেই পরামর্শ গ্রহণ করার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি বাধ্য নন। তিনি কেবিনেট সদস্যদের সাথে পরামর্শ করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন একবার কেবিনেট বৈঠকে বলেছিলেন, “আমার হ্যাঁ-র বিরুদ্ধে আট জন না বলেছেন জিত ‘হ্যাঁ’র দলের”। রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ও উইলসন কেবিনেট সদস্যদের প্রশাসক হিসেবেই গণ্য করতেন। আবার ট্রুম্যান ও আইসেনহাওয়ার কেবিনেটের সাপ্তাহিক বৈঠকের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতেন। আইসেনহাওয়ার কেবিনেট সচিবের একটি পদ সৃষ্টি করেছিলেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপতি কেনেডি কেবিনেট বৈঠককে অনাবশ্যক ও সময়ের অপচয় বলে মনে করতেন। তিনি স্পষ্টত কেবিনেট বৈঠকের গুরুত্ব হ্রাস করেন। রাষ্ট্রপতি রিগান আইজেনহাওয়ারের রীতি পদ্ধতির অনুগামী। রিগান সকলের মতামত ও সুপারিশ মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। তারপর নিজে বিচার-বিশ্লেষণ করে যা যুক্তিযুক্ত মনে করতেন সেইমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রপতি রিগানের দুটি ‘ক্ষুদ্র মন্ত্রণা পরিষদ’ ছিল। একটি হলো ‘অর্থনীতি সংক্রান্ত নীতি নির্ধারক পরিষদ’ (Economic Policy Council) এবং অপরটি হলো ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ের নীতি নির্ধারক পরিষদ’ (Domestic Policy Council)। প্রতি সপ্তাহে এসব পরিষদের সাথে তিনি বৈঠক করতেন। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন কেবিনেট হলো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এর কোনো আইনগত স্বীকৃতি নেই । মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য অনুসারে এর প্রভাব ও গুরুত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। অনেকের মতে, মার্কিন কেবিনেট রাষ্ট্রপতির দীর্ঘায়িত ছায়ামাত্র ।

 

মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেবিনেটের সকল সদস্যকে সমান সম্মান ও ক্ষমতা দেন না। কেবিনেট সদস্যদের মধ্যে থেকে কয়েকজন অধিক দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব পেয়ে থাকেন। তাছাড়া, রাষ্ট্রপতি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করেন। সাধারণত ২-৩ জন কেবিনেট সদস্যকে নিয়ে এ পরিষদ গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি কেবিনেট সদস্যদের মধ্যে এরকম বিশিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে নিবিড় ও নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেন। কেবিনেটের এসব সদস্যদের নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের একটি ‘Inner Cabinet’ কাজ করে।

মার্কিন কেবিনেটে সব সময় এমন দু’একজন সদস্য থাকেন যাদের প্রভাব প্রতিপত্তি অন্যদের তুলনায় অধিক। অর্থাৎ কেবিনেটের সকল সদস্য সমানভাবে প্রভাবশালী হতে পারেন না। সদস্যদের প্রভাব ও মর্যাদা রাজনৈতিক অবস্থা, দপ্তর এবং সর্বোপরি সদস্যদের ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান প্রতিরক্ষা সচিব জর্জ মার্শালকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। জনসন জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে রবার্ট ম্যাকনামারা এবং ডীন রাক্স-এর উপর বিশেষভাবে নির্ভর করতেন। নিক্সনের সময় হেনরি কিসিঞ্জারের প্রভাব প্রতিপত্তি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল।

 

কেবিনেট বৈঠক
Mettings of the Cabinet

মার্কিন কেবিনেট সাধারণত সপ্তাহে একবার হোয়াইট হাউসে সভায় মিলিত হয়। রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে কেবিনেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন উপ-রাষ্ট্রপতি কেবিনেট সভায় যোগ দেন। অনেক সময় রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি কেবিনেট সভার সভাপতিত্ব করেন। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিক্সন রাষ্ট্রপতি আইসেনহাওয়ারের অনুপস্থিতিতে কেবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করতেন। কেবিনেট সভায় সাধারণত শাসন বিভাগের তেরোটি দপ্তরের প্রধানগণ অংশগ্রহণ করেন। তবে বিভাগ বা দপ্তরের মর্যাদা পায়নি এমন সংস্থার প্রধানকেও কেবিনেট সভায় ডাকা হতে পারে। রাষ্ট্রপতি আইসেনহাওয়ার কেবিনেট সভার গুরুত্ব বিবেচনা করে একজন কেবিনেট সচিব এর পদ সৃষ্টি করেন। কেবিনেট সচিবের দায়িত্ব ছিল কেবিনেট সভার কর্মসূচি নির্ধারণ এবং সভার কার্যবিবরণী সংরক্ষণ। তাছাড়া কেবিনেটের সিদ্ধান্ত কতটা প্রয়োগ করা হয়েছে সে বিষয়েও তিনি তথ্যাদি সংগ্রহ করতেন। বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি কেবিনেট সভায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করেন ।

 

কেবিনেটের কার্যাবলি
Functions of the Cabinet

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেবিনেটকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করতে হয়। এগুলো হলো :

১. সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নীতি সম্পর্কে কেবিনেট সদস্যগণ আলোচনা করেন এবং রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান করেন। অবশ্য কেবিনেটের পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির নিজের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে । কিন্তু একথা সত্য যে, কেবিনেটের আলোচনা থেকে রাষ্ট্রপতি যেসব খবরাখবর জানতে পারেন, নীতি নির্ধারণের সময় তা তাকে বিশেষভাবে সহায়তা ও প্রভাবিত করে। মার্কিন শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবে কেবিনেট ভূমিকা পালন করে বলেই রাষ্ট্রপতি প্রতি সপ্তাহে একবার কেবিনেট সদস্যদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। তাছাড়া, রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে কেবিনেটের জরুরি সভাও আহবান করতে পারেন ।

২. শাসন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যাবলির মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য এমনকি বিরোধও দেখা দিতে পারে। এই মতপার্থক্য ও বিরোধ দূর করতে না পারলে শাসনকার্যে ব্যর্থতা প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা থাকে। রাষ্ট্রপতি যেহেতু শাসন বিভাগের প্রধান এবং শাসন বিভাগের যাবতীয় কার্যাবলির জন্য তাকেই যেহেতু সামগ্রিকভাবে জনসাধারণের নিকট দায়িত্বশীল থাকতে হয় সেজন্য বিভিন্ন দপ্তরের কার্যাবলির মধ্যে বিরোধ দূর করে সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব তাঁকেই পালন করতে হয়। বলাবাহুল্য, কেবিনেট সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ কেবিনেট সভায় মিলিত হন বিধায় পারস্পরিক আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে এসব বিরোধ নিষ্পত্তি করা সহজসাধ্য হয়ে ওঠে। তাছাড়া, কেবিনেট সভাগুলো প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। বস্তুত রাষ্ট্রপতি তথা শাসন বিভাগের সাফল্য যেহেতু বিভিন্ন দপ্তরের সুষ্ঠু কার্য সম্পাদনের উপর নির্ভরশীল সেহেতু ঐসব দপ্তরের প্রধানদের নিয়ে গঠিত কেবিনেটের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

 

রাষ্ট্রপতির সাথে কেবিনেটের সম্পর্ক মার্কিন রাষ্ট্রপতি
Relation between the President and the Cabinet

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করার জন্য একটি কেবিনেট রয়েছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজের ইচ্ছানুসারে কেবিনেট গঠন করেন। তবে সাধারণত তিনি নিজ দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে কেবিনেট সদস্য নিয়োগ দেন। কেবিনেট সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা ও বিবেচনাই হলো চূড়ান্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতির এ নিয়োগকে সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। রাষ্ট্রপতির ইচ্ছানুসারেই কেবিনেট সদস্যগণ স্বীয় পদে আসীন থাকেন। তাঁদের নিয়োগ, দপ্তর বণ্টন, কার্যকাল ও অপসারণ প্রভৃতি রাষ্ট্রপতির উপর নির্ভরশীল। ব্রোগানের মতে, মার্কিন কেবিনেট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র। তিনি বলেছেন “An American Cabinet, unlike a British, is purely the creation and

creature of its chief.”

কেবিনেট সদস্যগণ কংগ্রেসের সদস্য নন। যে কারণে কংগ্রেসের নিকট তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। কেবিনেটের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রপতির উপর নির্ভরশীল এবং তাঁদের কার্যক্রমের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট দায়িত্বশীল। তবে এ দায়িত্বশীলতা কেবিনেট সদস্যগণের ব্যক্তিগত, যৌথ নয় ।

মার্কিন কেবিনেট সদস্যগণ রাষ্ট্রপতির সহকর্মী নন বরং অধীনস্থ কর্মচারী মাত্র। শাসন সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ কিংবা দেশ পরিচালনার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কেবিনেটের সাথে পরামর্শ করেন বটে, তবে সেই পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাধীন বিষয়। তিনি কেবিনেট সদস্যদের সাথে কোনো পরামর্শ না করেই দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারেন। মার্কিন প্রশাসনের নীতি নির্ধারণ এবং তা প্রয়োগের যাবতীয় দায়দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। এ ব্যাপারে কেবিনেট সদস্যদের কোনো যৌথ দায়দায়িত্ব নেই ।

কেবিনেটের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অবিসংবাদিত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অনুসারে কেবিনেট সদস্যদেরকে কাজ করতে হয়। কেবিনেট সদস্যগণ রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অমান্য করতে পারেন না। অধ্যাপক লাস্কির মতানুসারে, “In general the American Cabinet minister lives and moves and has his being in the context of presidential thought. The Cabinet is the body of advisers to the president; it is not a council of collegues with whom he has to work and upon whose approval he depends.”

প্রকৃতপক্ষে মার্কিন কেবিনেট হলো একটি প্রথাগত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতায় আসীন রাষ্ট্রপতির দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য অনুসারে কেবিনেটের গুরুত্ব ও মর্যাদার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। রাষ্ট্রপতি লিংকন কেবিনেটের বৈঠক খুব বেশি ডাকতেন না। আবার সর্বদা তিনি বৈঠকে উপস্থিতও থাকতেন না। গৃহযুদ্ধের সময় কেবিনেটের সভা আহবান না করেই তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। রুজভেল্ট ও উইলসন কেবিনেট সদস্যদের প্রশাসক হিসেবেই গণ্য করতেন। ট্রম্যান ও আইজেনহাওয়ার কেবিনেটের সাপ্তাহিক বৈঠকের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করতেন। আইজেনহাওয়ার একজন কেবিনেট সচিবের পদ সৃষ্টি করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি কেনেডি স্পষ্টতই কেবিনেটের গুরুত্ব হ্রাস করেন। তিনি কেবিনেট বৈঠককে অপ্রয়োজনীয় ও সময়ের অপব্যয় বলে মনে করতেন। অর্থাৎ, মার্কিন কেবিনেটের গুরুত্ব ও প্রভাব রাষ্ট্রপতিদের মনোভাবের উপর নির্ভরশীল। যে কারণে মার্কিন কেবিনেট রাষ্ট্রপতির দীর্ঘায়িত ছায়া ব্যতীত কিছুই নয়। মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কেবিনেটের ভূমিকা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিত্ব, কর্মকুশলতা, জনপ্রিয়তা প্রভৃতি গুণগত যোগ্যতার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। একজন যথার্থ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দক্ষ প্রশাসক রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হলে কেবিনেট তাঁর আজ্ঞাবহ ভৃত্যে পরিণত হবে, এটাই স্বাভাবিক। অপরদিকে, প্রশাসনিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ঘাটতি থাকলে কেবিনেটের উপর তিনি অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন ।

 

ব্রিটিশ মার্কিন কেবিনেটের মধ্যে তুলনা
Comparative study between the British Cabinet and the American Cabinet

ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পদ্ধতির ভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেও উভয় দেশেই একটি কেবিনেট রয়েছে। কিন্তু গঠন রীতি, স্বরূপ ও প্রকৃতি, মর্যাদা, ক্ষমতা ও কার্যাবলির দিক হতে এদের মধ্যে সাদৃশ্যের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে এ সম্পর্কে একটি তুলনামূলক আলোচনা করা হলো :

 

সাদৃশ্যসমূহ

Similarities

 

ব্রিটিশ কেবিনেট এবং মার্কিন কেবিনেটের মধ্যে নিম্নলিখিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় ।

ক. মার্কিন ও ব্রিটিশ কেবিনেট উভয়েই প্রথাগত রীতিনীতির ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আলোচ্য দুটি রাষ্ট্রের কোনোটির কেবিনেটই সাংবিধানিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি।

খ. ব্রিটিশ কেবিনেট সদস্যগণ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজা বা রানী কর্তৃক নিযুক্ত হন। মার্কিন কেবিনেটের সদস্যগণ ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন।

গ. উভয় দেশেই ক্ষমতাসীন তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যগণ কেবিনেট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষেত্রে নিজ দলের বাইরে থেকেও কেবিনেট সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। রুজভেন্ট, নিক্সন প্রমুখ রাষ্ট্রপতি অন্য দলের সদস্যদের কেবিনেটে স্থান দিয়েছিলেন।

ঘ. যে সকল উপাদান কেবিনেট সদস্যদের নিয়োগকে প্রভাবিত করে সেগুলো উভয় দেশেই অভিন্ন।

৫. সাধারণত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কে, নেট সদস্য নিয়োগের রীতি থাকলেও উভয় দেশেই অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাকে সর্বদাই অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। কেননা, অনেক সময় ব্যক্তিগত প্রভাব ও শাসক প্রধানের আস্থা কেবিনেটের সদস্যভুক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

চ. উভয় দেশেই সাধারণ নির্বাচনের পর কেবিনেট গঠিত হয়। ব্রিটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট সদস্যদের মনোনীত করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কেবিনেট সদস্যদের মনোনীত করেন।

ছ. ব্রিটেনে শাসক প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসক প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি কেবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন ।

জ. উভয় রাষ্ট্রেই প্রশাসনকে কয়েকটি দপ্তরে ভাগ করে একেকটি দপ্তরের দায়িত্ব একেকজন কেবিনেট সদস্যের উপর ন্যস্ত করা হয়।

ঝ. উভয় দেশেই কেবিনেট সদস্যদের কার্যকালের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ব্রিটেনের কমন্সসভা অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে বা প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং কেবিনেট সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতিও যে কোনো সময় কেবিনেট সদস্যদের পদচ্যুত করে নতুন সদস্য মনোনয়ন দিতে পারেন ।

ঞ. ব্রিটিশ কেবিনেট ব্যবস্থায় যেমন প্রধানমন্ত্রী, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেবিনেট ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব বিশেষভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ব্রিটিশ কেবিনেটের মধ্যমণি হলেন প্রধানমন্ত্রী; তাঁকে কেন্দ্র করেই কেবিনেট পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে তিনি সমপর্যায়ভুক্ত সদস্যদের মধ্যে প্রথম। অবশ্য কেবিনেটের কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠত্বই স্বীকৃত হয়ে থাকে । অনুরূপভাবে, আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি কেবিনেটের মধ্যমণি ও সর্বাধিনায়ক।

 

বৈসাদৃশ্যসমূহ

Dissimilarities

ব্রিটিশ ও মার্কিন কেবিনেটের মধ্যে উপরোক্ত সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে পার্থক্যও ব্যাপক। বস্তুত ব্রিটেনের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় কেবিনেট বলতে আমরা যা বুঝি তার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার কেবিনেটের কোনো সাদৃশ্য নেই। অধ্যাপক লাস্কির মতে, “ইউরোপে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থায় কেবিনেট বলতে আমরা যা বুঝি, তার সঙ্গে মার্কিন কেবিনেটের কোনো মিল নেই বললেই চলে।” তিনি বলেছেন, “The American Cabinet

hardly corresponds to the classic idea of a cabinet to which representative government in Europe has accustomed.” কেননা, ক্ষমতা, পদমর্যাদা, আইন বিভাগের সাথে সম্পর্ক প্রভৃতি কোনো বিষয়েই ব্রিটিশ কেবিনেটের

 

সাথে মার্কিন কেবিনেটের কোনো সম্পর্ক নেই। মার্কিন ও ব্রিটিশ কেবিনেটের মধ্যেকার বৈসাদৃশ্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ক. গঠনগত পার্থক্য : গঠনগত দিক থেকে ব্রিটিশ ও মার্কিন কেবিনেটের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কমন্সসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সে দলের সদস্যদের মধ্য থেকে ব্রিটিশ কেবিনেট গঠিত হয়। অর্থাৎ ব্রিটিশ কেবিনেটের সদস্যগণ একই রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি সাধারণত নিজ দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে কেবিনেট সদস্যদের নিযুক্ত করেন। তবে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে অন্য দলের সদস্যদের মধ্যে থেকেও কেবিনেট সদস্যদের নিযুক্ত করেন। রুজভেল্ট, ট্যাফট, নিক্সন প্রমুখ রাষ্ট্রপতিবৃন্দ অন্য দলের সদস্যদের কেবিনেটে স্থান দিয়েছিলেন। ব্রিটেনে কিন্তু জরুরি অবস্থায় কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা ব্যতীত বিভিন্ন দলের সদস্যদের নিয়ে এরকম মন্ত্রিসভা গঠিত হয় না ।

খ. মনোনয়নের ক্ষেত্রে : কেবিনেটের সদস্য মনোনয়ন প্রধানত নির্ভর করছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন রাষ্ট্রপতির উপর । তবে এক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ব্যাপক স্বাধীনতা রয়েছে ।

গ. আইনসভার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হওয়ায় মার্কিন কেবিনেটের সদস্যগণ কংগ্রেসের সদস্য নন। কংগ্রেসের নিকট তাঁদের কোনো দায়দায়িত্বও নেই। তাদের একমাত্র দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির নিকট। এ দায়িত্ব আবার নেহায়েত ব্যক্তিগত, যৌথ নয় ।

কিন্তু ব্রিটেনে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত না হওয়ায় ব্রিটিশ কেবিনেটের প্রত্যেক সদস্য পার্লামেন্টের সদস্য । কোনো ব্যক্তি পার্লামেন্টের সদস্য না হয়ে ছয় মাসের বেশি মন্ত্রী হিসেবে থাকতে পারেন না। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্যদের ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে পার্লামেন্টের নিকট দায়ী থাকতে হয়। পার্লামেন্টের অনাস্থা প্রস্তাবে সম্মিলিতভাবে কেবিনেটের পতন ঘটে।

ঘ. আইনসভার অনুমোদনের ক্ষেত্রে : কেবিনেট গঠনের পর আইনসভার অনুমোদনের ক্ষেত্রে উভয় দেশের কেবিনেটের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট সদস্যদের নিযুক্তি সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। যদিও সিনেট সাধারণত অসম্মতি জ্ঞাপন করেন না। কিন্তু, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে কেবিনেট সভায় স্থান দেন তাদের নিয়োগ পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয় না ।

ঙ. শাসক প্রধানের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে : শাসক প্রধান হিসেবে মার্কিন কেবিনেটের উপর মার্কিন রাষ্ট্রপতি যে ধরনের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী শাসক প্রধান হিসেবে ব্রিটিশ কেবিনেটের উপর সে ধরনের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন না। ব্রিটিশ কেবিনেটে প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য থাকলেও কেবিনেট সদস্যগণ হলেন তাঁর সহকর্মী, অধীনস্থ কর্মচারী নন। প্রধানমন্ত্রী হলেন সহকর্মীদের নেতামাত্র। বলা হয়ে থাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হলেন ব্রিটিশ কেবিনেটের সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য (Primus inter pares or First among equals)। ব্রিটিশ কেবিনেটকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এককভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না বা সরকারি কার্য সম্পাদন করতে পারেন না ।

অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি হলেন মার্কিন কেবিনেটের প্রভু। কেননা, মার্কিন কেবিনেটের সদস্যগণ রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সাহায্যকারী। তাঁরা রাষ্ট্রপতির সহকর্মী নন, অধস্তন কর্মচারী মাত্র। রাষ্ট্রপতি কেবিনেটের সাথে পরামর্শ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। কেবিনেটের পরামর্শ মানতেও তিনি বাধ্য নন ।

চ. আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে : ব্রিটিশ কেবিনেটের সদস্যগণ আইনসভার সদস্য বিধায় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেবিনেট সদস্যদের ভূমিকা রয়েছে। পার্লামেন্টের অধিকাংশ বিল কেবিনেট সদস্যগণই উত্থাপন করেন। নিজ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে কেবিনেট সদস্যগণ তাদের উত্থাপিত বিলকে সহজেই পাস করিয়ে নেন।

কিন্তু, মার্কিন কেবিনেটের সাথে আইনসভার কোনো সম্পর্ক নেই। কেবিনেট সদস্যগণ মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য নন বিধায় তাঁরা আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন না ।

ছ. প্রশাসনিক ভূমিকার ক্ষেত্রে পার্থক্য : ব্রিটেনের কেবিনেট ব্যবস্থা প্রশাসনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেবিনেট ব্যতীত ব্রিটিশ প্রশাসন সম্পর্কে ভাবা যায় না। তত্ত্বগতভাবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাতে শাসনক্ষমতা ন্যস্ত থাকলেও বাস্তবে তা পরিচালিত হয় কেবিনেটের মাধ্যমে ।

 

কিন্তু মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কেবিনেট প্রশাসনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়। কেবিনেট সদস্যদের পরামর্শ প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে বটে তবে এ ধরনের পরামর্শ গ্রহণ বা বর্জন সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির মর্জির উপর নির্ভর করে।

জ. কেবিনেট সভার কার্য প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে : প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কেবিনেটের ভূমিকার গুরুত্ব সুবিদিত। ব্রিটিশ কেবিনেটের প্রতিটি সভায় প্রতিটি আলোচনা লিপিবদ্ধ হয়। ফলে ব্রিটিশ কেবিনেটের সিদ্ধান্তসমূহ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড বিশেষ ।

কিন্তু, এদিক থেকে মার্কিন কেবিনেটের ভূমিকার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। যে কারণে মার্কিন কেবিনেট সভার আলোচনা লিপিবদ্ধ করার তেমন কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় না ।

ঝ. মর্যাদাগত পার্থক্য : ব্রিটেনের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় কেবিনেট অত্যন্ত শক্তিশালী ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। যে কারণে ব্রিটেনে কেবিনেটের সদস্যপদ প্রাপ্তিকে রাজনৈতিক জীবনের একটি বহু কাঙ্ক্ষিত বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে ব্রিটিশ কেবিনেটের সদস্যপদে আসীন অধিকাংশই হলেন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ ।

এদিক থেকে মার্কিন কেবিনেটের প্রকৃতি ভিন্ন। কেননা, মার্কিন কেবিনেট হলো রাষ্ট্রপতির একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। মার্কিন কেবিনেটের নিজস্ব স্বাধীনতা বা তেমন কোনো মর্যাদা নেই। যে কারণে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের মধ্যে মার্কিন কেবিনেটের সদস্য হওয়ার তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেবিনেটের সদস্যপদ অপেক্ষা সিনেটের সদস্যপদ অনেক বেশি মর্যাদাযুক্ত ও অভিপ্রেত। অধ্যাপক মুনরোর মতে, “In the United States………….cabinet office is not looked upon as a career.”

ঞ. কেবিনেটের পরিধির ক্ষেত্রে : ব্রিটিশ কেবিনেট আয়তনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেবিনেট অপেক্ষা বৃহৎ। ব্রিটিশ কেবিনেটের সদস্য সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হলেও মার্কিন কেবিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি হয় না।

ট. অপসারণের ক্ষেত্রে : মার্কিন রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে কেবিনেট সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন। কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন তিনি হন না। তাঁদের নিযুক্তি ও অপসারণ করার ক্ষমতা তিনি ভোগ করেন ।

কিন্তু ব্রিটেনে কোনো কেবিনেট সদস্যকে পদচ্যুত করা খুব কষ্টসাধ্য। পদচ্যুতি দলের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, অপসারিত সদস্য কোনো সমস্যার উদ্ভব ঘটাবে কি-না প্রভৃতি বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে সচেতনতার সাথে চিন্তা করতে হয়। গুরুতর অন্যায় বা চরম অপরাধ না করলে কোনো কেবিনেট সদস্যকে পদচ্যুত করা দুস্কর ।

মার্কিন কেবিনেট ও ব্রিটিশ কেবিনেটের তুলনামূলক আলোচনা শেষে আমরা বলতে পরি যে, আনুষ্ঠানিক দিক থেকে মার্কিন কেবিনেটের তুলনায় ব্রিটিশ কেবিনেটের ক্ষমতা ও মর্যাদা অনেক বেশি। অধ্যাপক লাস্কি বলেন, “ব্রিটিশ কেবিনেট দেশের শাসন ক্ষমতার প্রকৃত অধিকারী, কিন্তু মার্কিন কেবিনেটের কোনো প্রকৃত ক্ষমতা নেই।” অনেকে বলেন, মার্কিন কেবিনেট ব্রিটিশ কিংবা ফ্রান্সের কেবিনেটের সাথে ততটা তুলনীয় নয়, যতটা তুলনীয় হলো কোনো জার বা সুলতান বা কনস্টান্টাইন বা জাস্টিনিয়ানের মতো রোম সম্রাটের মন্ত্রীদের সাথে ।

 

মার্কিন রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক
Relation between the President and the Congress

মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির উপস্থিতির কারণে রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক বিশেষভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুযায়ী মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের সদস্য নন। আবার রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও মার্কিন রাষ্ট্রপতি ব্রিটেনের রাজা বা রানীর ন্যায় আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে, স্থগিত রাখতে বা আইনসভার নিম্নকক্ষকে ভেঙে দিতে পারেন না। তিনি কংগ্রেসের নিকট দায়িত্বশীলও নন। ফলে তত্ত্বগতভাবে মনে হতে পারে যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। তবে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি প্রযুক্ত হওয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই বা একে অপরের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত— এ কথা ঠিক নয় ৷

 বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে, রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের আইন প্রণয়ন ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগ ‘শক্তিমান রাষ্ট্রপতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ (Institutionalization of the Strong President) নামে পরিচিত। এ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়ার ফলে কংগ্রেসের সদস্যগণ এমন একটি অবস্থায় উপনীত হয়েছেন যে, সেখানে রাষ্ট্রপতির কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা নিজেদের কার্যাবলি স্থির এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তথাপি অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতিকে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ রাষ্ট্রপতি যেমন কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তেমনি কংগ্রেসও রাষ্ট্রপতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

 

কংগ্রেসের উপর রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণ
Presidential Control over the Congress

মার্কিন রাষ্ট্রপতি সাধারণত দুটি উপায়ে কংগ্রেসের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সক্ষম হন। উপায় দুটি হলো

ক. সাংবিধানিক বা আনুষ্ঠানিক (Constitutional or Formal Method) এবং

খ. অনানুষ্ঠানিক (Informal Method)

ক. আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি (Formal Method) : মার্কিন রাষ্ট্রপতি সংবিধান স্বীকৃত যেসকল পন্থা বা উপায় ব্যবহার করে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন সেসব পন্থা বা উপায়কে আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি বলা হয়। এ সকল আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

১. কংগ্রেসে বাণী প্রেরণ : মার্কিন সংবিধানের ২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে কংগ্রেসের নিকট বাণী প্রেরণ করতে পারেন। এ জাতীয় বাণীর মাধ্যমে তিনি দেশের অবস্থা ও কী কী বিষয়ের উপর আইন প্রণয়ন প্রয়োজন তা কংগ্রেসকে অবহিত করেন। ১৯২৩ সালে রাষ্ট্রপতি মুনরো প্রেরিত বাণীর মধ্যে ‘মুনরো মতবাদ বা ডকট্রিন’ এর কথা, কিংবা ১৯৪১ সালে রুজভেল্টের বাণীর মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূল বক্তব্য ব্যক্ত হয়েছিল। এ জাতীয় বাণী লিখিত, মৌখিক কিংবা নিজে উপস্থিত হয়ে কংগ্রেসের সভায় ভাষণ দানের মাধ্যমে করতে পারেন। প্রয়োজনীয় আইন পাসের সুপারিশ সম্বলিত রাষ্ট্রপতির এসকল বাণীকে কংগ্রেস অগ্রাহ্য করতে পারে না বিধায় রাষ্ট্রপতির সুপারিশ মোতাবেক আইন প্ৰণয়নে কংগ্রেস বিশেষভাবে প্রভাবিত হন ।

২. কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহবান : মার্কিন রাষ্ট্রপতি সাধারণভাবে কংগ্রেসের অধিবেশন আহবান করতে না পারলেও জরুরি ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিশেষ অধিবেশন আহবান করতে পারেন। যদিও ১৯৩৯ সালের পর থেকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহবানের সংখ্যা বিশেষভাবে হ্রাস পেয়েছে। আবার অধিবেশন মূলতবি করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের উভয়কক্ষ ঐকমত্যে উপনীত হতে না পারলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

৩. শাসন বিভাগীয় আদেশ জারি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ‘অধ্যাদেশ’ (Oridnance) বা ‘শাসন বিভাগীয় আদেশ’ (executive orders) জারি করতে পারেন। এই আদেশ আইনের মতোই কার্যকরী হয়। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি কিংবা কংগ্রেস কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রশাসকগণ (administrators) এই আদেশ জারি করতে পারেন। আইনের সংখ্যা ও জটিলতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কংগ্রেসের পক্ষে পরিপূর্ণভাবে প্রতিটি আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না। তাই কংগ্রেস কর্তৃক আইনের মূলনীতিসমূহ নির্ধারণের পর সেগুলোকে পূর্ণতা দানের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হস্তে অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি সেসব আদেশের ফাঁক পূরণের জন্য শাসন বিভাগীয় আদেশ জারি করে থাকেন। এসকল শাসন বিভাগীয় আদেশ জারির মাধ্যমেও রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকেন।

৪. ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা : মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের জন্য কোনো বিল প্রত্যক্ষভাবে কংগ্রেসে উত্থাপন করতে না পারলেও কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত সংবিধান সংশোধনী বিল ব্যতীত অন্য যে কোনো বিল তাঁর অনুমোদনের জন্য প্রেরিত হয়। কংগ্রেস কর্তৃক পাসকৃত কোনো বিলে যদি রাষ্ট্রপতি সম্মতি প্রদানে অস্বীকার করেন তবে সেই বিলটি আইনে পরিণত হতে পারে না। রাষ্ট্রপতি কোনো বিলে সম্মতি জানাতে অস্বীকার করতে পারেন, অর্থাৎ ‘ভেটো’ (Veto) প্রয়োগ করতে পারেন। এরূপ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে যে কক্ষ থেকে বিলটি তাঁর নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল ১০ দিনের মধ্যে আপত্তিসহ সেই কক্ষে ফেরত পাঠাতে হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিলটি যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কংগ্রেস কর্তৃক পুনরায় গৃহীত হয় তবে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীতই আইনে পরিণত হয়। কংগ্রেস কর্তৃক পাসকৃত কোনো বিলে স্বাক্ষর না করে রাষ্ট্রপতি সেটি আটকে রাখতে মৃত্যু পারেন। এরূপ বিল প্রেরণের ১০ দিনের মধ্যে যদি কংগ্রেসের অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে তবে সংশ্লিষ্ট বিলটির স্বাভাবিক ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় বিল নাকচ করাকে ‘পকেট ভেটো’ (Pocket Veto) বলা হয়। এভাবে ‘ভেটো’ ক্ষমতা ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির এ ভেটো ক্ষমতাই কার্যত রাষ্ট্রপতিকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের তৃতীয় কক্ষে পরিণত করেছে।

খ. অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি (Informal Method) : মার্কিন রাষ্ট্রপতি যদি সংবিধান বহির্ভূত পন্থা বা কৌশল অবলম্বন করে কংগ্রেসকে প্রভাবিত করতে উদ্যোগী হন তবে একে অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি বলে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণের সংবিধান বহির্ভূত উপায় ব৷ অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. কংগ্রেসকে ভয় প্রদর্শন : মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে ভয় দেখিয়ে তার প্রয়োজনীয় আইনসমূহ প্রণয়নে বাধ্য করার মাধ্যমে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত তিনটি উপায় অবলম্বন করেন :

ক. বিল পাসের ব্যাপারে তিনি কংগ্রেসকে পূর্বেই অবহিত করেন যে, যদি তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী বিল পাস করা না হয় তবে তিনি তাতে সম্মতি প্রদান করবেন না। এভাবে কংগ্রেস কর্তৃক বিল পাস হবার পূর্বেই তিনি তাঁর সূত্রপাত করতে পারেন।

খ. যদি সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যগণ রাষ্ট্রপতির সমর্থিত আইন পাস করতে সম্মত না হন তবে তিনি তাদের পৃষ্ঠপোষকতার আবেদনের প্রতি কোনো প্রকার ভ্রূক্ষেপ না করে তাদেরকে তাদের নির্বাচনি এলাকা হতে পদচ্যুত করতে পারেন এবং পুনর্বিবেচনার পথ বন্ধ করে দিতে পারেন ।

গ. রাষ্ট্রপতির দলীয় সদস্যগণ যারা তাঁর অনুগত নীতি সমর্থন করেন না, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা না করে কিংবা কোনো কোনো সময় খোলাখুলি বিরোধিতা করে তাদের পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হবার আশা ভঙ্গ করতে পারেন।

২. কংগ্রেসকে তোষামোদ করা : যদিও প্রথাগত বিধান অনুযায়ী কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিক বাণী প্রেরণ ব্যতীত মার্কিন রাষ্ট্রপতির আর কোনো ক্ষমতা নেই তথাপি তিনি ইচ্ছা করলে যে কোনো নীতি বা বিধানের ব্যাপারে সদস্যদের সাথে আলাপ- আলোচনা করতে পারেন। এধরনের তোষামোদের (Persuation) মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইন পাস করে নিতে পারেন ।

৩. জনমত গঠন : মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট সময়ান্তর সংবাদপত্র ও প্রচার মাধ্যমগুলোর নিকট রাষ্ট্রের নীতি ও শাসনকার্য সম্পর্কে প্রেস কনফারেন্স কিংবা বেতার-টেলিভিশনের মাধ্যমে যেসকল বক্তৃতা বিবৃতি প্রদান করেন সেগুলো জনমত গঠনে সহায়ক হয়। কংগ্রেসের পক্ষে এধরনের জনমত উপেক্ষা করা কিছুতেই সম্ভব হয় না। এসকল প্রচেষ্টায় যদি রাষ্ট্রপতি অকৃতকার্য হন তবে তিনি প্রত্যক্ষভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জাতির নিকট আবেদন জানাতে পারেন। ফলে জনসমর্থন হারাবার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবার জন্য কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির নির্দেশ… আইনে রূপ দিতে বাধ্য হন। তবে এটি অতি সংকটাপন্ন সময়ে এবং কদাচিৎ গ্রহণ করা হয়। অত্যধিক গুণসম্পন্ন রাষ্ট্রপতি ব্যতীত এ কাজে কেউ অবতীর্ণ হতে পারে না।

৪. কংগ্রেস সদস্যদেরকে ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত করা : রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের ব্যাপারে কংগ্রেসের যে কোনো সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় তিনি কংগ্রেস সদস্যদেরকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন অথবা প্রলোভন দেখিয়ে কাজ আদায় করে নিতে পারেন।

৫. রাষ্ট্রপতির লবি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কর্মচারীগণ রাষ্ট্রপতির লবি নামে অভিহিত। এসকল লবি রাষ্ট্রপতির নীতি ও কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জনগণ ও কংগ্রেসের সাথে প্রয়োজনমতো যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। এভাবে শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি তাঁর লবির মাধ্যমে কংগ্রেসকে প্রভাবিত করতে পারেন।

৬. রাষ্ট্রপতির জাতীয় নেতৃত্ব : কংগ্রেসের কোনো একজন সদস্যের পক্ষে যা করা সম্ভব নয় জাতীয় নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতির পক্ষে এককভাবে সেই কর্মসূচি ও পরিকল্পনা জাতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব। রাষ্ট্রপতি সরাসরি তার নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনের জন্য জনসাধারণের নিকট আবেদন করতে পারেন। বিংশ শতকের অনেক রাষ্ট্রপতি ই এই নীতি অনুসরণ করেছেন ।

 

৭. অন্যান্য কারণ : কংগ্রেসের উপর রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণের অন্য যেসব কারণ রয়েছে সেগুলো হলো :

ক. সমগ্র শাসন বিভাগের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব এককভাবে রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত হওয়ায় তিনি দ্রুত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু কংগ্রেস সদস্যগণ এককভাবে রাষ্ট্রপতির ন্যায় সমগ্র দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না ।

খ. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির জটিলতা, যুদ্ধের আশংকা, অর্থনৈতিক সংকট প্রভৃতি ক্ষেত্রে মার্কিন জনগণ কংগ্রেসের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির উপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয় যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিভিন্নভাবে কংগ্রেসের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। যে কারণে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় প্রধান প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতির আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

 

রাষ্ট্রপতির উপর কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ

Congressional Control over the President

মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদটি সাংবিধানিকভাবে যত ক্ষমতার অধিকারী হোক না কেন কিংবা নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি যতই ব্যক্তিত্ববান ও দৃঢ়চেতা হোক না কেন কংগ্রেসের সহযোগিতা ব্যতীত তিনি তার দায়িত্ব ও ক্ষমতা চর্চার ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবেন। কেননা, কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেমন :

ক. রাষ্ট্রপতি বাজেট তৈরি করতে পারেন, কিন্তু কংগ্রেসের সম্মতি ব্যতীত তা কার্যকর হয় না।

খ. বাজেট অনুমোদন ছাড়াও যে কোনো প্রকার প্রশাসনিক ব্যয় বরাদ্দের জন্য রাষ্ট্রপতিকে কংগ্রেসের উপর নির্ভর করতে হয়। অধিকন্তু রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের নিকট যে পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দের দাবি পেশ করেন তা মেনে নিতে কংগ্রেস বাধ্য নয়। কংগ্রেস অনেক সময়ই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পেশকৃত ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ হ্রাস করে ।

গ. কংগ্রেসের নিকট রাষ্ট্রপতিকে বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক কিংবা আরও সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাঁর ক্ষমতার ব্যবহার সম্পর্কিত, বিশদ বিবরণী পেশ করতে হয় ।

ঘ. রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসে বাণী প্রেরণের সময় যে সকল আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন সেসব আইন প্রণয়ন করার জন্য কংগ্রেসকে তিনি বাধ্য করতে পারেন না ।

ঙ. কংগ্রেস কর্তৃক নিয়োগকৃত বিভিন্ন কমিশনের কার্যাবলিকে তিনি প্রভাবিত কিংবা নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন না । চ. রাষ্ট্রপতি সিনেটের অনুমোদন ব্যতীত শাসন বিভাগীয় কর্মচারী, যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতসমূহের বিচারপতি এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের নিযুক্ত করতে পারেন না। সিনেট অনুমোদন না করলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্পাদিত নিয়োগ বাতিল হয়ে যাবে।

ছ. কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত কোনো বিলে রাষ্ট্রপতি অসম্মতি জ্ঞাপন করলে তার কারণ জানিয়ে ১০ দিনের মধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট কক্ষে বিলটি ফেরত পাঠাতে বাধ্য। এরপর কংগ্রেস দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সেই বিলটি পুনরায় গ্রহণ করলে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ব্যতীতই আইনে পরিণত হয়। রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ভেটোকে নাকচ করে কংগ্রেস ‘যুদ্ধ ক্ষমতা সংক্রান্ত আইন’ (War powers act) প্রণয়ন করে। ফলে বিদেশে সৈন্য প্রেরণ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বহুলাংশে ক্ষুণ্ন হয়। সুতরাং বলা যায় যে, রাষ্ট্রপতির ভেটো প্রয়োগ কোনো প্রকার আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কার্যকরীভাবে কোনো বাধা প্রদান করতে পারে না ।

জ. মার্কিন রাষ্ট্রপতি কোনো আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সম্মতি ব্যতীত তা কার্যকর হয় না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসন কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘ভার্সাই সন্ধিপত্র’-কে সিনেট অনুমোদন না করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন জাতিপুঞ্জে (Legue of Nations) যোগদান করতে পারেনি।

ঝ. কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতীত রাষ্ট্রপতি যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন না ।

ঞ. কংগ্রেস প্রয়োজন মনে করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিসংশন পদ্ধতি দ্বারা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারীর নায়ক রাষ্ট্রপতি নিক্সনকে অভিসংশনের ভয়েই ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

উপরোক্ত আলোচনা পরবর্তীতে কংগ্রেস ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সম্পর্কের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বলা যায় যে, তাদের মধ্যে মতানৈক্যের চিরন্তন উৎস হলো রাষ্ট্রপতি সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কিন্তু কংগ্রেস কেবল অংশের প্রতিনিধি। কংগ্রেসের কোনো অংশই সামগ্রিকভাবে জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না। তথাপি বলা যায় যে, রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমেই রাষ্ট্রব্যবস্থার সাফল্য সুনিশ্চিত করা সম্ভব।

 

মার্কিন রাষ্ট্রপতির শাসন বিভাগীয় দপ্তর
Executive Office of the American President

মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে একটি বিরাট প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রধানরূপে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর এ ব্যাপক প্ৰশাসনিক ব্যবস্থাকে কার্যকর রূপে পরিচালিত করতে হলে উপযুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। কেবিনেটের সদস্যগণ রাষ্ট্রপতিকে প্রাত্যহিক কাজ-কর্মে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করলেও রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার লাঘব হয় না। কারণ বিভিন্ন বিভাগের কাজের ব্যাপকতা, জটিলতা ও প্রয়োজনীয়তা এত বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বিভাগীয় প্রশাসন পরিচালনা করা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার কিছু দিনের মধ্যেই কেন্দ্রিয় প্রশাসন পরিচালনার এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থা সম্পর্কে সুপারিশ করার জন্য ‘প্রশাসন পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতির কমিটি’ (The Presidential Committee on Administrative Management) নামক একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটির সুপারিশ এবং ১৯৩৯ সালের ‘রি-অর্গানাইজেশন’ অ্যাক্ট’ (Re-organization Act) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির শাসন বিভাগীয় দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দপ্তরের মূল ঘোষণা হলো রাষ্ট্রপতির সাহায্য দরকার (The President needs help) এবং মূল লক্ষ হলো, রাষ্ট্রপতির প্রশাসনিক কাজ-কর্মের ভার লাঘব করার জন্য সক্রিয়ভাবে এবং প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব বহন করা । নিম্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার কাঠামো একটি রেখাচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো :

হোয়াইট হাউস অফিস

অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাণ্ড বাজেট

কাউন্সিল অব ইকনমিক অ্যাডভাইসারস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল

রাষ্ট্রপতি (President )

উপ-রাষ্ট্রপতি (Vice President )

রাষ্ট্রপতির শাসন বিভাগীয় দপ্তর

অফিস অব দি স্পেশাল রিপ্রেজেনটিটিভস ফর ট্রেড নিগোশিয়েশন

কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক পলিসি ডোমেসটিকস পলিসি স্টাফ

অফিস অব টেলিকমিউনিকেশন পলিসি

কাউন্সিল অন ওয়েজ অ্যান্ড প্রাইস পলিসি

অফিস অব সায়েন্স অ্যাণ্ড টেকনোলজি পলিসি

কাউন্সি অব এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি অফিস অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন

১. ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট

২. ডিপার্টমেন্ট অব দ্যা ট্রেজারি

৩. ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স

৪. ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস

  •  

৫. ডিপার্টমেন্ট অব দ্যা ইন্টেরিয়র

৬. ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার

৭. ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স

৮. ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি

৯. ডিপার্টমেন্ট অব লেবার

ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ, এডুকেশন অ্যাণ্ড ওয়েলফেয়ার

১১. ডিপার্টমেন্ট অব হাউসিং অ্যাণ্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট

১২. ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন

১৩. ইন্ডিপেন্ডেন্ট এজেন্সি

 

রাষ্ট্রপতির প্রশাসনিক দপ্তর ৭টি সংস্থা নিয়ে গঠিত। যথা : হোয়াইট হাউস, বাজেট ব্যুরো, অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা পরিষদ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, জরুরি পরিকল্পনা শাখা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শাখা, জাতীয় বিমান চালনা ও মহাকাশ সম্পর্কিত পরিষদ । নিম্নে এদের বর্ণনা দেয়া হলো:

ক. রাষ্ট্রপতির ০৭টি দপ্তরের মধ্যে হোয়াইট হাউস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত সচিব, রাষ্ট্রপতি সচিব এবং কর্মচারীদের নিয়ে এ অফিস গঠিত।

খ. ১৯২১ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত বাজেট ব্যুরো অর্থ বিভাগের অধীন ছিল। ১৯৩৯ সালের পর এই দপ্তরকে শাসন বিভাগীয় দপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এই ব্যুরোর প্রধান কাজ হলো বাজেট প্রণয়ন করা। রাষ্ট্রপতির দ্বারা প্রণীত নীতি অনুযায়ী এই ব্যুরো বাজেট প্রণয়ন করলেও অনেক সময় নিজেই নীতি নির্ধারকরূপে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রশাসনিক পরিচালনার উন্নতির জন্য সুপারিশ করা, বিভিন্ন দপ্তর ও এজেন্সি কর্তৃক আইন প্রণয়নের উদ্যোগের সমন্বয় সাধন করা, রাষ্ট্রপতিকে বাজেট প্রণয়নে সাহায্য করা এ ব্যুরোর অন্যতম প্রধান কাজ ।

গ. অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা পরিষদ ১৯৪৬ সালে এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী গঠিত হয়। এই পরিষদ বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। রাষ্ট্রপতি এ প্রতিবেদন কংগ্রেসে উপস্থাপন করেন। আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান, জাতীয় সরকারের আর্থিক কর্মসূচি ও নীতির মূল্যায়ন এবং অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব ও বিকাশের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করা এ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

ঘ. সামরিক ও কূটনৈতিক নীতি নির্ধারণ, সামরিক বাহিনীকে সংগঠিত করা, শিল্প এবং সম্পদের সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির দক্ষতার বিকাশের জন্য ১৯৪৭ সালে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা হয়।

৫. ১৯৫৮ সালে জাতীয় বিমান চালনা ও মহাকাশ সম্পর্কিত পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদ মূলত একটি কেবিনেট কমিটি। উপ-রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে এ পরিষদ পরিচালিত হয়। এ বিভাগ মহাকাশ সম্পর্কিত কর্মসূচির সমন্বয় সাধন করে ।

চ. ১৯৬২ সালে গঠিত হয় বিমান ও প্রযুক্তি শাখা। এর পরিচালক হলেন বিজ্ঞান বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা। জাতীয় কল্যাণ ও প্রতিরক্ষার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে বৈজ্ঞানিক কর্মসূচি সমন্বয় সাধন করা এ শাখার কাজ ।

ছ. জরুরি পরিকল্পনা শাখার কাজ হলো যুদ্ধের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উদ্যোগের জন্য অর্থনীতিকে প্রস্তুত করে তোলা । রাষ্ট্রপতির নতুন শাসন বিভাগীয় দপ্তর ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এ দপ্তর তাঁর বিশ্বস্ত ‘প্যালেস গার্ড’-দের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে। এ বিরাট প্রশাসনিক কাঠামোসহ রাষ্ট্রপতি শুধু একটি ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ থাকেন নি, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন । শাসন বিভাগীয় দপ্তর থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতির পক্ষে সকল ক্ষেত্রেই সমন্বয় সাধনের কাজ করা দুষ্কর। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, শাসন বিভাগীয় দপ্তর প্রতিষ্ঠার ফলে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর উপর ন্যস্ত ব্যাপক দায়িত্ব পালন করা সহজতর হয়েছে। তবে শাসন বিভাগীয় দপ্তরের পক্ষে প্রশাসনের সকল কাজের সমন্বয় করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত প্রশাসনিক দক্ষতার উপর ।

 

মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট ও কেবিনেটের উদ্ভব আলোচনা কর ।

Leave a Reply