মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ

Origin and Development of the Party System in U.S.A

মার্কিন সংবিধানে রাজনৈতিক দলের কোনো উল্লেখ নেই। ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সংবিধান প্রণেতাগণ সচেতনভাবে দলীয় ব্যবস্থা বা দলীয় সরকার সম্পর্কিত আলোচনাকে বর্জন করেছিলেন। তাদের চিন্তা-ভাবনা ছিল রাজনৈতিক দল ছাড়াই রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেস সদস্যদের নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যাবে। কেননা, মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ ব্রিটিশ সরকারের দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রী চরিত্রের পশ্চাতে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব ছিল বলে মনে করতেন। তাই তাঁরা প্রথম থেকেই দলব্যবস্থার বিরোধিতা করে আসছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনসহ অনেক সংবিধান প্রণেতা বিশ্বাস করতেন যে, রাজনৈতিক দলব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। তথাপি পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনে দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলীয় ব্যবস্থাকে মার্কিন সাংবিধানিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দলীয় ব্যবস্থা সাংবিধানিক রীতিনীতি ও বাস্তব প্রয়োজনের ফলেই অত্যাবশ্যক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে ক্লিনটন রসিটার (Clinton Rossiter) উল্লেখ করেছেন “গণতন্ত্র ব্যতীত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই, রাজনীতি ব্যতীত গণতন্ত্র নেই, রাজনৈতিক দল ব্যতীত রাজনীতি নেই এবং আপস ও মধ্যপন্থা ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দল নেই।” এস.ই. ফাইনার (S.E. Finer) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলসমূহকে ‘একটা চমকপ্রদ ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ
Origin and Development of the Party System in U.S.A

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্যকালের দ্বিতীয় পর্যায়ে মূলত দুটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটে। এ দুটি দল হচ্ছে আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় দল’ (Federalist) এবং টমাস জেফারসনের ‘যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী দল’ (Anti- Federalist)। সরকারি নীতি নির্ধারণ সম্পর্কে ওয়াশিংটন জেফারসনের বিরোধী এবং হ্যামিল্টনের প্রভাবাধীন হয়ে পড়েছিলেন। টমাস জেফারসন ও জেমস ম্যাডিসন ঐক্যবদ্ধভাবে কংগ্রেসের সদস্য এবং মধ্য আটলান্টিক রাজ্যসমূহের নেতাদের সাথে যৌথভাবে ক্ষুদ্র সম্পত্তির মালিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের সংগঠিত করে হ্যামিল্টনের নীতির বিরোধিতা করেন। জেফারসন ১৭৯৩ সালে ওয়াশিংটনের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই ‘রিপাবলিকান দল’ গঠন করেন। জেফারসন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিকান দল অঙ্গরাজ্যের অধিকার রক্ষার নীতি গ্রহণ করে এবং আঞ্চলিক ও মাঠ পর্যায়ে দলীয় সংগঠন গড়ে তোলে। ফলে ১৮০০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জেফারসন সহজেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং রিপাবলিকান দল ক্রমশ প্রাধান্য লাভ করে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রীয় দল সংবিধান ব্যাখ্যার মাধ্যমে কেন্দ্রিয় সরকারকে শক্তিশালী করার পক্ষপাতি ছিল। ফলে তারা বিত্তবান শ্রেণির সমর্থন লাভ করে। কিন্তু আঞ্চলিক দলীয় সংগঠন গড়ে নির্বাচকমণ্ডলীকে সংগঠিত করতে ব্যর্থ হবার ফলে একাধারে কয়েকটি নির্বাচনে এ দলের বিপর্যয় ঘটে। ে কারণে ১৮১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রীয় দলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়।  

রিপাবলিকান দল জেফারসনের নেতৃত্বে সকল প্রকার রাজনৈতিক মতামতের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করলেও পক্ষে সকল প্রকার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করা সম্ভব হয় নি। ঊনবিংশ শতাব্দির বিশের দশকে রিপাবলিকান দলের মধ্যে ‘ডেমোক্রাটিক রিপাবলিকান’ ( Democratic Republican ) এবং ‘ন্যাশনাল রিপাবলিকান’ (National Republican) নামে দু’টি পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে ডেমোক্রাটিক রিপাবলিকান গোষ্ঠী ডেমোক্র্যাটিক দল (Democratic Party) হিসেবে আত্মপ্রকাশ লাভ করে। অন্যদিকে, ন্যাশনাল রিপাবলিকান পোষ্টা উদারনৈতিকতা বা ‘হুইগ’ দল নামে খ্যাতি লাভ করে। হুইগ দল রিপাবলিকান দল (Republican Party) নামেও পরিচিত হয়। গণতন্ত্রী দল ক্রমশ রক্ষণশীলতার নীতির প্রতি ঝুঁড়ে পড়ে। আর হুইগ দল সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মসূচি এবং শিল্প সংরক্ষণ নীতিতে আগ্রহ দেখায়। রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের সময় থেকে দাসপ্রথা উচ্ছেদের বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল দু’টির মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি ঘটে। গণতন্ত্রী দল দাসপ্রথাকে সমর্থন করতে আরম্ভ করে এবং রিপাবলিকান দল বা সাধারণতন্ত্রী দুল দাসপ্রথার উচ্ছেদকে সমর্থন জানায়। ফলে দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে তাদের সমর্থকদের আনুগত্যের পরিবর্তন ঘটে। গণতন্ত্রী দল দক্ষিণের সম্পন্ন বিত্তবান ভূসম্পত্তির মালিকদের এবং রিপাবলিকান দল উত্তরের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থের প্রতীকে পরিণত হয়। দাসপ্রথার উপর ভিত্তি করেই দক্ষিণের অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপ্রধান দক্ষিণাংশের কৃষির অবাধ অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ দাস শ্রমিক। সুতরাং গণতন্ত্রী দল দাস ব্যবসার মালিকদের পক্ষ অবলম্বন এবং বিচ্ছিন্নতার প্রচার করতে আরম্ভ করে। পক্ষান্তরে রিপাবলিকান দল উত্তরাংশের শিল্পের প্রসারের জন্য সুলভে শ্রমিক সরবরাহের জন্য সচেষ্ট ছিল। যে কারণে রিপাবলিকান বা সাধারণতন্ত্রী দল ছিল দাসপ্রথা উচ্ছেদের পক্ষপাতি ।

১৮৬১-৬৫ সালের গৃহযুদ্ধের সময় রিপাবলিকান দল দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং গৃহযুদ্ধে লিংকনের জয় হলে উত্তরের শিল্পোন্নত রাজ্যসমূহ এবং মধ্য-পশ্চিমের কৃষি উন্নত অঞ্চলে রিপাবলিকান দলের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। গৃহযুদ্ধে পরাজিত গণতন্ত্রী দল দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রিপাবলিকান দলের কঠোর আর্থিক নীতি, উচ্চ শুল্ক নীতি, শিল্পের শোষণ ইত্যাদির ফলে গণতন্ত্রী দল ধীরে ধীরে উত্তরাংশের শ্রমিক ও কৃষকদের সমর্থন পেতে শুরু করে। ঐসময় অঙ্গরাজ্যসমূহের স্বাধিকার রক্ষা এ দলের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। রিপাবলিকান দল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রাধান্যের দাবিতে অটল থাকে। উত্তর ও মধ্য-পশ্চিমের শিল্প, বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সম্পদশালী কৃষকদের রক্ষক হিসেবে ঐ দল সক্রিয় ভূমিকা পালনে তৎপর হয়। সুতরাং বলা যায়, উৎপত্তিগত দিক থেকে গণতন্ত্রী দল জেফারসনের প্রজাতান্ত্রিকতা এবং রিপাবলিকান দল হ্যামিল্টনের ফেডারিলিস্ট মতবাদের উত্তরসূরি বৈ আর কিছুই নয়। বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয় দশকে কৃষি ক্ষেত্রে করুণ পরিণতি এবং তৃতীয় দশকে অর্থনৈতিক মন্দা দক্ষিণাংশে এমন একটি কৃষক-শ্রমিক-খামার মালিকদের কোয়ালিশন গড়ে তুলেছিল যা এখনও গণতন্ত্রী দলের প্রাধান্য ও প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্বরূপ ।

বাণিজ্যিক স্বার্থকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দান ছিল ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত রিপাবলিকান দলের প্রধান নীতি। অপরদিকে, গণতন্ত্রী দল সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিরোধী ও অবাধ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের সমর্থক হিসেবে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদেরকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দানের বিরোধী ছিল। কিন্তু ১৯৩৩ সালে রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের ‘মন্দা প্রতিরোধ নীতি’ গণতন্ত্রী দলের কর্মসূচি ও কার্যাদিতে পরিবর্তন আনয়ন করে। রুজভেল্ট দক্ষিণাংশের সাথে উত্তর-মধ্য-পশ্চিমের একটা সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করেন। তিনি মন্দা প্রতিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন এবং অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ ও জনকল্যাণমূলক নীতির প্রতি সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তাঁর সময়ে গণতন্ত্রী দল একটা আন্দোলনের দল হিসেবে আবির্ভূত হয় । দক্ষিণের নিগ্রো বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে এ দলের নতুন চেতনার অসঙ্গতিও ফুটে ওঠে এবং নিগ্রোদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে এ দলের আগ্রহের জন্য দক্ষিণাংশে এ দলের সমর্থন কমতে থাকে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রী দল ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য নেই। উভয় দলই পুঁজিপতি স্বার্থের রক্ষক। তাদের মধ্যে মৌলিক উদ্দেশ্যগত কোনো তারতম্য নেই । একটি আপসমূলক পরিবেশের মধ্যে উভয় দলই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রী দল ও রিপাবলিকান দল ব্যতীত আরও কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল বা তৃতীয় দলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। তবে সেগুলো বিশেষ করে রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে। চার্লস ও জোনস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দলসমূহের উৎপত্তি ও উদ্দেশ্যের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দলসমূহকে উৎপত্তি ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা :

প্রথম শ্রেণিতে সে সকল গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় যেগুলো দু’টি প্রধান দল হতে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রগতিবাদী বা ১৮৭২ সালে লিবারেল রিপাবলিকানগণ এবং ১৯১২ সালে রুজভেল্টপন্থী প্রগতিবাদীগণ পৃথক পৃথক দল গঠনের জন্য রিপাবলিকান দল ত্যাগ করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে গোল্ড ডেমোক্র্যাটিকগণ এবং ১৮৯৪ সালে ডিকিক্র্যাটগণ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।

I

দ্বিতীয় শ্রেণির তৃতীয় দলসমূহ বিশেষ ধরনের জনসাধারণকে সাহায্য করার জন্য গঠন করা হয়েছিল । উদাহরণস্বরূপ, ঋণগ্রস্ত কৃষকগণ ১৮৭০ এর দশকে গ্রীনব্যাক পার্টি এবং ১৮৯০ এর দশকে পপিউলিস্ট পার্টি গঠন করেছিল ।

তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত তৃতীয় দলগুলো প্রতিবাদী বামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে গঠিত হয়। ১৮৭৭ সালে গঠিত সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টি, ১৯০১ সালে গঠিত সোস্যালিস্ট পার্টি, ১৯১৯ সালে গঠিত আমেরিকান কমিউনিস্ট পার্টি এবং ১৯৩৮ সালে গঠিত সোস্যালিস্ট ওয়াকার্স পার্টি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

চতুর্থ শ্রেণির তৃতীয় দলগুলোর একটি মাত্র লক্ষ রয়েছে। এদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপ্রাচীন ও কার্যরত তৃতীয় দল প্রোহিবিশন পার্টিও অন্তর্ভুক্ত। এটি ‘ন্যাশনাল স্টেটম্যান পার্টি’ নামেও অভিহিত। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মদ জাতীয় পানীয়ের প্রস্তুতকরণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে চায় ।

পঞ্চম শ্রেণির তৃতীয় দলগুলো সেই সকল গোষ্ঠীকে নিয়ে গঠিত, যেগুলোর ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচি রয়েছে এবং যেগুলো জাতীয় সমর্থন অর্জন করতে চান। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১৯২৪, ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের প্রগ্রেসিভ পার্টিসমূহ এবং ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ইন্ডিপেডেন্ট পার্টি ।

এসকল তৃতীয় ধারার অপ্রধান দলসমূহ বিভিন্ন সরকারি পদে নিজেদের প্রার্থীকে নির্বাচিত এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করতে সচেষ্ট থাকে। তবে বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রাধান্যই পরিলক্ষিত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Two Party System in the U.S.A

মার্কিন দলীয় ব্যবস্থার কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে এসকল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

ক. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা : দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্তরে গণতন্ত্রী বা ডেমোক্র্যাট দল (Democratic Party) এবং সাধারণতন্ত্রী বা রিপাবলিকান দল (Republican Party)-এই দুটি বৃহৎ দলের একাধিপত্য বিদ্যমান রয়েছে। যদিও এ দুটি প্রধান দল ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের অস্তিত্বও বিদ্যমান রয়েছে তথাপি তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব এতই সীমাবদ্ধ যে, মার্কিন রাজনীতিকে প্রভাবিত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সমাজতন্ত্রী দল, সাম্যবাদী দল ও অন্যান্য শ্রমিক গোষ্ঠী সেখানে থাকলেও তারা কোনোভাবেই মার্কিন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের ন্যায় শক্তি অর্জন করতে পারে নি। ক্লিনটন রসিটারের মতে, মার্কিন রাজনীতির সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তার স্বৈরতান্ত্রিক দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা ।

ডেমোক্র্যাট দল এবং রিপাবলিকান দল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রশ্নে কোনো বিরোধ নেই। কেননা, উভয় দলই পুঁজিবাদের পৃষ্ঠপোষক। অভ্যন্তরীণ কিংবা পররাষ্ট্র নীতি-কোনো ক্ষেত্রেই দুটি দলের মধ্যে মৌলিক মতাদর্শগত কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। রাজনৈতিক কর্মসূচি, কার্য পরিচালনা পদ্ধতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি ক্ষেত্রে উভয় দলই সমপর্যায়ভুক্ত। উভয় দলই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও সরকার পরিচালনাকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে। তবে সাধারণত নির্বাচনোত্তর সময়ে তাদের সক্রিয় রাজনৈতিক তৎপরতার অভাব লক্ষ করা যায় । গ্রেট ব্রিটেনে কিন্তু সর্বদাই রাজনৈতিক দলের ব্যাপক কর্মব্যস্ততা লক্ষ করা যায়।

খ. বিকেন্দ্রীকরণ নীতির প্রাধান্য : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বিকেন্দ্রীকরণ নীতির প্রাধান্য। এখানে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের প্রকৃত ক্ষমতা দলের রাজ্য ও স্থানীয় সংগঠনের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। এসকল সংগঠনের সমর্থন ও সহযোগিতা ব্যতীত জাতীয় সংগঠনের নেতৃত্ব মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এভাবে দলীয় সংগঠন আঞ্চলিক ভিত্তিতে গড়ে উঠার ফলে উভয় দলের জাতীয় সংগঠনের ভিত্তি যথেষ্ট দুর্বল থেকে গেছে। তবে সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভবনের ফলে দলীয় সংগঠনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রিভবন ঘটছে।

গ. আঞ্চলিকতার প্রাধান্য : আঞ্চলিকতার প্রাধান্য মার্কিন দলীয় ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠার সময় থেকেই আঞ্চলিক মনোভাব বিশেষভাবে প্রাধান্য লাভ করে। যে কারণে ১৯৩২ সালের পূর্ব পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে যথাক্রমে গণতন্ত্রী ও সাধারণতন্ত্রী দলের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় সংগঠনের প্রকৃতি, নির্বাচন সংক্রান্ত আইন, রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের নির্বাচন ব্যবস্থা প্রভৃতি সংকীর্ণ আঞ্চলিক মনোভাব বৃদ্ধির সহায়ক হয়েছে। আঞ্চলিক সংগঠনগুলো প্রতিটি রাজনৈতিক দলের শক্তির প্রধান উৎস। তাছাড়া, বৃহৎ বৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য না থাকায় তাদের অনুসৃত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি অভিন্ন প্রকৃতি সম্পন্ন হয়। ফলে নির্বাচনের সময় স্থানীয় ও আঞ্চলিক সমস্যাসমূহই প্রাধান্য লাভ করে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যসমূহের হাতে নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরির ক্ষমতা থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রিয় সরকার অপেক্ষা রাজ্য সরকারের সাথে অধিক পরিমাণে যুক্ত থাকে। এ ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আঞ্চলিকতাকে বাড়িয়ে তোলে। অবশ্য ১৯৩২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গণতন্ত্রী দলের প্রার্থী রুজভেল্ট সাধারণতন্ত্রী দলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ভোট পাওয়ার পর হতে মার্কিন দলীয় ব্যবস্থায় সংকীর্ণ আঞ্চলিকতাবাদের অপসারণ হয়েছে বলে মনে করা হয়। বর্তমানে উভয় দলই আঞ্চলিক রাজনীতির পরিবর্তে জাতীয় নীতি অনুসরণ করছে বলে অনেকে মনে করেন।

ঘ. দলীয় শৃঙ্খলা সংহতির অভাব : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা ও সংহতির একান্ত অভাব লক্ষ করা যায়। যে কারণে অনেক সময় রাষ্ট্রপতির দলভুক্ত কংগ্রেস সদস্যগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় রাষ্ট্রপতির মতামতের বিরোধিতা করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। তাছাড়া, কংগ্রেস সদস্যগণ আঞ্চলিক স্বার্থরক্ষায় বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় নেতৃত্বের সাথে তাদের বিরোধ বাধে। তাই জেমস ম্যাকগ্রিগর বার্নস (James Mac Gregor Burns) মার্কিন দলীয় ব্যবস্থাকে ‘চার দলের রাজনীতি’ (four-party politics) বলে বর্ণনা করেছেন। এই চারটি দল হলো : (ক) রাষ্ট্রপতির গণতন্ত্রী দল ( Presidential Democrats); (খ) কংগ্রেসের গণতন্ত্রী দল (Congressional Democrats); (গ) রাষ্ট্রপতির রিপাবলিকান দল ( Presidential Republicans) এবং (ঘ) কংগ্রেসের রিপাবলিকান দল (Congressional Republicans)। এভাবে শ্রেণিবিভাজনের তাৎপর্য হলো, রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে একই দলের সদস্যদের আনুগত্য দু’টি পৃথক ধারায় প্রবাহিত করা। যে কারণে ম্যালকম শ’-এর মতে কেউ কেউ মার্কিন সরকারকে ‘দলীয় সরকার’ না বলে ‘ব্যক্তি শাসিত সরকার’ বলে অভিহিত করার পক্ষপাতি।

ঙ. মতাদর্শগত দিকে থেকে মৌলিক পার্থক্যের অভাব : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সামাজিক ভিত্তি বা আদর্শগত দিক থেকে তেমন কোনো মৌলিক স্বাতন্ত্র্য নেই। উভয় দলই সমাজতন্ত্রের বিরোধী এবং পুঁজিবাদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক। রাজনৈতিক মতাদর্শের ন্যায় দল দু’টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও মৌলিক বা আদর্শগত স্বাতন্ত্র্য অনুপস্থিত। নির্বাচনকেন্দ্রিক দু’টি দলের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি ক্ষমতা অর্জন ও সংরক্ষণ করা । উভয় দলই নির্বাচনে জয় লাভের জন্য সক্রিয় রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে থাকে। স্বাভাবিক নিয়মেই নির্বাচনে বিজয়ী দল সরকার গঠন করে এবং বিজিত দল বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আসলে গণতন্ত্রী ও সাধারণতন্ত্রী দুটি দল সমপর্যায়ভুক্ত। এস. ই. ফাইনার তাঁর গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন, দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ এবং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে মূলত অভিজ্ঞতাবাদী ।

দলীয় কর্মসূচি : গণতন্ত্রী সাধারণতন্ত্রী

Party Programmes : Democratic and Republican

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী ও সাধারণতন্ত্রী দলের মধ্যে নানা মতাবলম্বী মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কেউ উগ্রপন্থী, কেউ নরমপন্থী, কেউবা উদারপন্থী, আবার কেউবা রক্ষণশীল, কেউ আস্তিক, আবার কেউবা সন্দেহবাদী, সংযমবাদী বা নাস্তিক। মূলত এসব শ্রেণি পার্থক্যের কারণে উভয় দলের অভ্যন্তরে আবার ছোট ছোট গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রুপের মধ্যে যে মতবিরোধ নেই তা নয়, বরং এদের মধ্যে মতদ্বৈততা প্রকাশ করার পূর্ণ সুযোগ রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার ন্যায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এসব গ্রুপ প্রাথমিকভাবে মতদ্বৈততা প্রকাশ করেও শেষ পর্যায়ে সকলে একযোগে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে থাকে। দলীয় স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখেই এমনটি করা হয়ে থাকে। এছাড়া অর্থনৈতিক স্বার্থও এসব গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ রাখে এবং দলীয় ব্যবস্থায় কর্মশক্তির যোগান দেয় ৷

ডব্লিউ বি. মুনরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয়ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, বাস্তবিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলসমূহ বড়ই বিচিত্র। সেখানে নানা ধর্ম, জাতি গোষ্ঠী, নানা অঞ্চল, আদর্শ এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্তরের সমন্বয়ে দেশের সমগ্র জনগণ নিজ নিজ স্বার্থ ও উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলে সংগঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়নের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেলিস্ট (Federalist) ও এন্টি-ফেডারেলিস্ট (Anti Federalist) দলের আবির্ভাব ঘটে। ফেডারেলিস্ট দলের প্রধান ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা। আর এর বিপরীতে এন্টি- ফেডারেলিস্ট দলের নীতি মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃত হয়- অঙ্গরাজ্য সরকারের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন প্রথমোক্ত দলটির এবং থমাস জেফারসন ছিলেন দ্বিতীয় দলটির প্রবক্তা, যদিও পরবর্তীকালে জেফারসনের দল রিপাবলিকান (Republican) এবং হ্যামিল্টনের দল ডেমোক্র্যাট দলে (Democratic) রূপান্তরিত হয়। এভাবে ফেডারেলিস্ট বিরোধী দল থেকে বেরিয়ে আসা ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান দল দুটির মধ্যে কৌশল ও নীতিমালার দিক থেকে বড় কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। আদর্শিক দিক থেকে রিপাবলিকান দল একটি শক্তিশালী জাতীয় সরকারের সমর্থক দল হিসেবে পরিচিত। এ দল কার্যকরভাবে অর্থনীতির প্রসার ঘটাতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়। বিপরীতে, ডেমোক্র্যাটিক দল অঙ্গরাজ্যের অর্থনৈতিক অধিকারে বিশ্বাস করে এবং ফেডারেল তথা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্বকে খর্ব করতে আগ্রহ প্রকাশ করে ।

রিপাবলিকান দল যুক্তরাজ্যের উত্তরাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যসমূহে এবং ডেমোক্র্যাটিক দল দক্ষিণাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যসমূহে প্রাধান্য বিস্তার করে। প্রথমদিকে, ডেমোক্র্যাটিক দল দাসপ্রথার সমর্থক এবং রিপাবলিকান দল এ প্রথার বিরোধী ছিল। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের সময়ে রিপাবলিকান দল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এ দল উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক নীতি গ্রহণ করার ফলে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরাও সমর্থন করে। অপরদিকে, ডেমোক্র্যাটিক দল শুল্ক হ্রাস করার নীতি গ্রহণ করে বিধায় কৃষিপ্ৰধান দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিকগণ তার প্রতি সমর্থন জানায়। আর এ কৃষিপ্রধান দক্ষিণাঞ্চলেই দাস-শ্রমিক বিদ্যমান ছিল। লিঙ্কনের নেতৃত্বে শিল্পপ্রধান উত্তরাঞ্চল দাসপ্রথার বিরোধিতা করে। স্বভাবতই তাঁর দাসপ্রথা বিরোধী নীতি দক্ষিণাঞ্চলে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে। ১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধ (Civil War) এ দাসপ্রথা উচ্ছেদেরই ফলশ্রুতি। গৃহযুদ্ধের অবসানের পর সংবিধান সংশোধন করে দাসপ্রথা রহিত করা হয় এবং সে সাথে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দল দু’টোর মধ্যে প্রধান মতানৈক্যর অবসান ঘটে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পরস্পর বিরোধী দল দুটোর অস্তিত্ব থাকলেও এদের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই ।

রিপাবলিকান কিংবা ডেমোক্র্যাটিক দলের কোনোটিই চরম কোনো মতবাদে বিশ্বাসী নয়। জনগণের চাহিদা অনুসারে উভয় দলই সরকারি নীতি নির্ধারণ করে। উভয় দলই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপামর জনগণের জন্য ন্যায়নীতি প্রবর্তন করতে ইচ্ছুক। অভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে তারা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলেছে। সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটিক দল সামাজিক নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা ও বেকার ভাতা প্রদানের পক্ষপাতি। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দল উভয়েই শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে সচেষ্ট। উভয় দলই আবার জাতিসংঘের মাধ্যমে সামষ্টিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে ইচ্ছুক। সকল স্বাধীনতাকামি দেশের প্রতি সমর্থন দান, অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দলের মধ্যে যথেষ্ট মিল দেখা যায়। তবে করারোপের ক্ষেত্রে দল দুটির মধ্যে পার্থক্য লক্ষণীয়। রিপাবলিকান দল যেখানে কর ভার লাঘব করার উপর অধিক মাত্রায় জোর দেয়, ডেমোক্র্যাটিক দল সেখানে অধিক করারোপ করার পক্ষপাতি ।

পরিশেষে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বৃহৎ দলের মূল নিহিত আছে পুঁজিবাদে। তবে রিপাবলিকান দল মনে করে যে, যতই পুঁজিবাদকে আপন পথে বিকশিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করবে ততই তা উন্নত হবে। আর ডেমোক্র্যাটিক দল মনে করে যে, পুঁজিবাদ নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কারিগরি উন্নয়নের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে।

Leave a Reply