Table of Contents
Toggleমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের আইন প্রণয়ন পদ্ধতির বর্ণনা দাও ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের আইন প্রণয়ন পদ্ধতির বর্ণনা দাও ।
Give a description of the law making procedure of the Congress of the USA.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিটি ব্যবস্থা
Committee System of the USA
আধুনিক জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমিটি ব্যবস্থা একটি অত্যাবশ্যক শর্তে পরিণত হয়েছে। কেননা, আধুনিককালে আইনসভার ব্যাপক সদস্য সংখ্যা, সময় স্বল্পতা, আইন প্রণয়নে জটিলতা, সমস্যার বৈচিত্র্যতা বহুমুখিতা, সদস্যদের আইন প্রণয়ন বিষয়ে বিশেষীকৃত জ্ঞানের অভাব, আইনের প্রস্তাবসমূহের বিশদ আলোচনার প্রয়োজন প্রভৃতি কারণে কমিটি ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ে আইনসভার শ্রম বণ্টনের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হলো কমিটি গঠন। এ প্রসঙ্গে কার, বার্নস্টাইন এবং মার্ফি বলেছেন যে, “There is a strong tendency for all modern legislative bodies to employ some sort of committee system so that a division of labour can be made in dealing with numerous and difficult proposals for legislation”. কমিটি ব্যবস্থাকে আইনসভার ‘সংক্ষিপ্ত সংস্করণ’ বলা যায় ৷
বিশ্বের অপরাপর দেশের আইনসভার ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমিটি ব্যবস্থার গুরুত্ব অন্যান্য দেশের আইনসভার কমিটি ব্যবস্থার তুলনায় অত্যন্ত বেশি। কেননা, আইন প্রণয়নের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিটি সমূহের যে প্রাধান্য দেখা যায় তা অন্য কোনো দেশে পরিলক্ষিত হয় না। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভারত প্রভৃতি দেশে কেবিনেটের সদস্যগণই আইনসভার আইন প্রণয়ন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হওয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি কিংবা তাঁর কেবিনেটের সদস্যগণ প্রত্যক্ষভাবে আইন প্রণয়ন কার্যে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ফলে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটিসমূহ এ দায়িত্ব পালন করে। এসব কমিটি বিলের খসড়া রচনা থেকে শুরু করে আইন প্রণয়ন হওয়া পর্যন্ত সকল স্তরের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে।
মার্কিন প্রতিনিধি সভা বা সিনেটে চূড়ান্ত পর্যায়ে যে ভোটাভুটি হয় তা সংশ্লিষ্ট কক্ষের কমিটির সিদ্ধান্তের অনুমোদন ব্যতীত আর কিছুই নয়। কেননা, কমিটির দ্বারা অনুমোদিত না হলে কোনো বিল কংগ্রেসে পাস হয় না। যে কোনো বিল কংগ্রেসের কোনো কক্ষে উত্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বিচার-বিবেচনার পর বিলটির পক্ষে-বিপক্ষে, প্রয়োজনে সংশোধনী প্রস্তাবসমেত একটি রিপোর্ট সভায় পেশ করেন। তাছাড়া কমিটি বিলটি সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট না দিয়ে বিলটির মৃত্যু ঘটাতে পারে। আবার সংশ্লিষ্ট বিলের পরিবর্তে কমিটি একটি নতুন বিল উত্থাপন করতে পারে। অর্থাৎ, কোনো বিলের জীবন, মৃত্যু কংগ্রেসের কমিটিগুলোর উপর নির্ভরশীল। যে কারণে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কমিটিগুলোকে ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আইনসভা’ (Little legislatures) বলেছেন, “কমিটিগুলো হলো প্রতিনিধি সভার চক্ষু, কর্ণ, হস্ত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উহার মস্তিষ্ক” (The committees act as the eye, the ear, the hand and very often the basis of the house. )
মার্কিন কমিটি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
Characteristics of the American Committee System
থিয়োডর জে. লোই (Theodore J. Lowi) তাঁর ‘American Government: Incomplete Conquest গ্রন্থে মার্কিন কংগ্রেসের কমিটি ব্যবস্থার নিম্নোক্ত পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন :
১. মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিটি কমিটিই একটি স্থায়ী কমিটি। মার্কিন কংগ্রেসের বিধি অনুযায়ী স্থায়ীভাবে কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিসমূহের সদস্য সংখ্যা যেমন নির্দিষ্ট তেমনি এগুলোর নির্দিষ্ট-বিধি, এখতিয়ার এবং নিজস্ব কর্মচারী রয়েছে।
২. আইন প্রণয়নের বিষয়বস্তু অনুয়ায়ী প্রত্যেক স্থায়ী কমিটির এখতিয়ার নির্দিষ্ট করা হয়। প্রতিনিধি সভার ‘বিধি বিষয়ক কমিটি’ (Rules Committee) ব্যতীত অন্যান্য কমিটি তাদের নিকট প্রেরিত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব অনুযায়ী বিলের পূর্ণাঙ্গ রূপদানের জন্য গঠিত হয় ।
৩. শাসন বিভাগের কোনো সংস্থা অথবা প্রধান দপ্তরের কার্যাবলি অনুযায়ী কমিটির এখতিয়ার স্থির করা হয়। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কমিটিসমূহ হলো প্রতিনিধি সভার উপায় নির্ধারণ কমিটি, সিনেটের ফিন্যান্স কমিটি, প্রতিনিধি সভা ও সিনেটের ব্যয় বিষয়ক কমিটি এবং প্রতিনিধিসভার বিধি বিষয়ক কমিটি।
৪. প্রত্যেক কমিটিই বৈচিত্র্যপূর্ণ। কোনো কমিটিই আইনসভার কোনো কক্ষের ক্ষুদ্র সংস্করণ নয়। প্রত্যেক কমিটিই এক অর্থে অ-প্রতিনিধিত্বশীল । ব্যক্তিগত উৎসাহ এবং দক্ষতা অনুযায়ী আইনসভার সদস্যগণ কমিটির সদস্যপদ অর্জন করেন । ৫. প্রত্যেক কমিটিই জ্যেষ্ঠতার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
(Source: Theodore J. Lowi, American Government: Incomplete Conquest. p 268)
মার্কিন কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটি
Various Committees of the American Congrees
মার্কিন কংগ্রেসের নির্বাচনের পর কংগ্রেসের উভয় কক্ষ নিজ নিজ কক্ষের বিভিন্ন ধরনের কমিটি গঠন করে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিনিধি সভা ও সিনেটে প্রত্যেক দলের নেতৃবৃন্দ ‘উচ্চতর কমিটি’ (Committee on Committees) নামে একটি নির্বাচনি কমিটি গঠন করে। এ ‘উচ্চতর কমিটি’ অন্যান্য কমিটি গঠন করে। দলীয় ভিত্তিতে কমিটিগুলো গঠিত হয় এবং প্রতিটি কমিটির সভাপতি হন সংশ্লিষ্ট কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কোনো প্রবীণ সদস্য। সাধারণত যে সদস্য সংশ্লিষ্ট বিশেষ কমিটি সম্পর্কে যথোচিত অভিজ্ঞ তাঁকেই সেই কমিটির সভাপতি করা হয়। প্রত্যেক কমিটিতে সংশ্লিষ্ট কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। প্রতিটি কমিটি কৃষি, বৈদেশিক সম্পর্ক, ব্যাংক ও মুদ্রা প্রভৃতি কোনো-না-কোনো বিষয়ে বিশেষীকৃত। উচ্চতর কমিটির কথা বাদ দিলে মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিগুলোকে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা— ক. স্থায়ী কমিটি (Standing Committee);
খ. যুগ্ম কমিটি (Joint Committee);
গ. কনফারেন্স কমিটি (Conference Committee);
ঘ. সমগ্র কক্ষ কমিটি (Committee of the Whole House);
এবং ও, বিশেষ কমিটি (Special Committee)।
নিম্নে এসকল কমিটি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ক. স্থায়ী কমিটি (Standing Committee) : মার্কিন কংগ্রেসের বিভিন্ন প্রকারের কমিটির মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এমিটি হলো স্থায়ী কমিটি। ১৯৪৬ সালের ‘কংগ্রেসের পুনর্গঠন আইন’ অনুযায়ী উভয় কক্ষের স্থায়ী কমিটির সংখ্যা স্থির করে দেয়া হয়। ২০০১ সালে প্রতিনিধি সভায় ২২ টি এবং সিনেটে ১৫ টি স্থায়ী কমিটি ছিল। কিন্তু বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সংখ্যা হলো ‘প্রতিনিধি সভায় ২৫টি এবং সিনেটে ২০টি। প্রতিনিধি সভার স্থায়ী কমিটিগুলোতে সাধারণত ৯ থেকে ৫১ জন পর্যন্ত সদস্য থাকতে পারেন, কিন্তু সিনেটের স্থায়ী কমিটিগুলো ৭ থেকে ২৪ জন পর্যন্ত সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।
তত্ত্বগতভাবে প্রতিটি কক্ষের স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ নিজ নিজ কক্ষের সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। কিন্তু বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক দলের দু’টি কমিটি নিজ নিজ দলীয় সদস্যদেরকে বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে মনোনীত করেন এবং সংশ্লিষ্ট কক্ষ সেই নিয়োগ বা মনোনয়ন মেনে নেন। রিপাবলিকান দলের মনোয়ন কমিটির নাম ‘উচ্চতর কমিটি’ (Committee on Committees ) এবং ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন কমিটির নাম ‘উপায় নির্ধারণী কমিটি’ (Committee on ways and means)। আইনসভায় কোনো সদস্যের ভূমিকার উপর তাঁর কমিটির সদস্যপদ প্রাপ্তি নির্ভর করে বিধায় কমিটির সদস্যপদের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। সাধারণত কংগ্রেসে কোনো সদস্যের কার্যকলাপ, অভিজ্ঞতা, ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে কমিটির সদস্যপদ স্থির করা হয়। কংগ্রেস সদস্যদের প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্যপদ লাভের জন্য সচেষ্ট থাকেন। প্রতিটি কক্ষের সদস্য সংখ্যার আনুপাতিক হারে স্থায়ী কমিটিতে কোনো দলের কত জন সদস্য থাকবেন তা নির্ধারিত হয়। তবে নিয়ম সংক্রান্ত কমিটির ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে অধিক সদস্য মনোনয়ন দেয়া হয়ে থাকে। কারণ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের কমিটিসমূহের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত প্রতিনিধি সভার প্রত্যেক সদস্য একটি স্থায়ী কমিটির এবং সিনেটের প্রত্যেক সদস্য দুটি স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ।
সাধারণত প্রতিটি কমিটির সদস্যদের মধ্যে থেকে প্রবীণ ব্যক্তিকেই সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে । কমিটির সভাপতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করেন। তিনি কমিটির সভা আহ্বান করেন, কমিটির কার্যসূচি নির্ধারণ করেন, সাব-কমিটিসমূহ গঠন করেন ও এদের নিকট বিলসমূহ প্রেরণ করেন এবং কমিটির কর্মচারী নিয়োগ করেন। এছাড়া কোনো বিল যখন কমিটি হতে সংশ্লিষ্ট কক্ষে যায় তখন তিনি বিলটির সমর্থনে কমিটির পক্ষে নেতৃত্ব দান করেন এবং বিতর্কের সময় নির্ধারণ করেন। তিনি ইচ্ছা করলে কমিটির সভা স্থগিত রাখতে পারেন। ১৯১১ সালে কমিটির সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে স্পিকারের ক্ষমতা অবসানের পর থেকে কমিটির সভাপতির ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পায় ।
মার্কিন কংগ্রেসে আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় কার্য স্থায়ী কমিটিগুলোর মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। কংগ্রেসের অধিকাংশ বিলই কোনো না কোনো স্থায়ী কমিটির নিকট বিচার বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। প্রতিনিধি সভা বা সিনেটে আলোচনার পূর্বেই বিলটিকে নির্দিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। যে সকল বিল কমিটি সমর্থন করে সেগুলোই কেবলমাত্র কংগ্রেসে উত্থাপিত হয়। সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি বিচার বিবেচনার পর বিলের পক্ষে বা বিপক্ষে (প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ) একটি রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কক্ষে পেশ করে। কমিটির দ্বারা অনুমোদিত না হলে কোনো বিল কংগ্রেসে পাস হয় না। স্থায়ী কমিটির দ্বারা অনুমোদিত বিলসমূহ সাধারণত সহজেই কংগ্রেসে পাস হয়ে যায়। যে কারণে জর্জ গ্যালওয়ে (Geroge Galloway)-এর অভিমত হলো, “the real locus of the legislative power is not in the House or the Senate as such; it is in their standing committees.” অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রণয়নের প্রকৃত স্থান হলো স্থায়ী কমিটিগুলো, প্রতিনিধি সভা বা সিনেট নয়।
মার্কিন কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিসমূহ
প্রতিনিধি সভার স্থায়ী কমিটিসমূহ
আয়-ব্যয় কমিটি (Finance Committee )
১. অর্থসংস্থান কমিটি (Appropriation Committee)
নিয়ম কমিটি (Rules Committee )
প্রতিরক্ষা কমিটি (Armed Services Committee)
পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি (Foreign Affairs Committee)
বিচার বিভাগীয় কমিটি (Judiciary Committee)
৭: কৃষি কমিটি (Agriculture Committee)
সিনেটের স্থায়ী কমিটিসমূহ
আয়-ব্যয় কমিটি (Finance Committee)
অর্থসংস্থান কমিটি (Appropriation Committee )
নিয়ম কমিটি (Rules Committee)
প্রতিরক্ষা কমিটি (Armed Services Committee)
পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি (Foreign
Relations Committee)
বিচার বিভাগীয় কমিটি (Judiciary Committee) ৭. কৃষি ও বন কমিটি (Agriculture and Forest
Committee)
৮. ব্যাংকিং ও মুদ্রা বিষয়ক কমিটি (Banking and ৮. ব্যাংকিং ও মুদ্রা বিষয়ক কমিটি (Banking and Currency Committee)
আন্তঃরাজ্য ও বহির্বাণিজ্য কমিটি (Inter-State and Foreign Commerce Committee)
১০. শ্রম কমিটি (Labour Committee)
১১. শিক্ষা কমিটি (Education Committee)
১২. আমেরিকা বিরোধী কার্যাবলি কমিটি (Anti-American Activities Committee)
আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য কমিটি (Inter-State Commerce Committee)
১০. শ্রম কমিটি (Labour Committee)
১১. জনকল্যাণ কমিটি (Public Welfare Committee)
খ. যুগ্ম কমিটি (Joint Committee) : সাধারণত কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে যুগ্ম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি কি উদ্দেশ্যে এবং কতজন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে তা আইন প্রণয়ন করে স্থির করতে হয়। যেসব কাজ স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সম্পাদিত হতে পারে না সেগুলো সম্পাদনের জন্য, কংগ্রেসের কোনো কাজ তত্ত্ববধান কিংবা আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য সাধারণত যুগ্ম কমিটি গঠন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পরমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত যৌথ কমিটি (The Joint Committee on Atomic Energy), যৌথ অর্থনৈতিক কমিটি (the Joint Economic Committee) প্রভৃতি কমিটির কথা বলা যায় ৷
গ. কনফারেন্স কমিটি (Conference Committee) : কনফারেন্স কমিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি মোক্ষম হাতিয়ার। কোনো বিল সম্পর্কে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের মধ্যে যখন মতবিরোধ দেখা দেয় তখন উভয় কক্ষের সমান সংখ্যক সদস্যদের নিয়ে কনফারেন্স কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কক্ষের সভাপতি নিজ নিজ কক্ষের প্রতিনিধিদেরকে কমিটিতে মনোনয়ন দেন। কার্যত উভয় দলের সিনিয়র সদস্যবৃন্দ এ কমিটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন। এ কমিটি সাধারণত গোপন ও প্রকাশ্য বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় উপনীত হন। তবে অনেক ক্ষেত্রে তা সিনেট ও প্রতিনিধি সভার ইচ্ছাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করতে পারে।
ঘ. সমগ্র কক্ষ কমিটি (Committee of the Whole House) : সমগ্র কক্ষ কমিটি প্রতিনিধি সভা বা সিনেটের সকল সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। অর্থাৎ, সমগ্র কক্ষই একটি কমিটিতে রূপান্তরিত হয়। প্রতিনিধি সভা বা সিনেটের স্পিকার এ কমিটিতে সভাপতিত্ব করেন না, বরং উভয় কক্ষেই স্পিকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি সভাপতিত্ব করে থাকেন। সদস্যগণ একাধিকবার বক্তৃতা করতে পারেন, অনেক সময় বিতর্কের নিয়মাবলি শিথিল করা হয়ে থাকে। সমগ্র কক্ষ কমিটির রিপোর্ট প্রতিনিধি সভা বা সিনেটে প্রেরণ করে অনুমোদন নিতে হয়। প্রতিনিধি সভায় সমগ্র কক্ষ কমিটির অধিবেশনে ১০০ সদস্যের
উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ হয়ে থাকে। সরকারের আয়-ব্যয় এবং অর্থসংস্থানের বিষয় এবং বিশেষ জরুরি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার উদ্দেশ্যে সাধারণত এ সমগ্র কক্ষ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি সকল প্রকার বিল পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে থাকে।
ঙ. বিশেষ কমিটি (Special Committee) : মার্কিন কংগ্রেসের সমস্ত কমিটির মধ্যে এ বিশেষ কমিটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। সাময়িক বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য কংগ্রেসে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। নির্দিষ্ট দায়িত্বভার পালনের পর এ কমিটির কাজ শেষ হয়ে যায়। যেমন— বিশেষ অনুদান কমিটি। যে কোনো জরুরি বিষয়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত করার জন্য কংগ্রেসের যে কোনো কক্ষ এ বিশেষ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে পারে। এরূপ অনুসন্ধান কমিটি নিয়োগ করে, নিয়োগ করার ভয় দেখিয়ে প্রতিনিধি সভা বা সিনেট বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। তদুপরি, এ কমিটি সাক্ষ্য গ্রহণ করে, কাগজপত্র তলব করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ করে প্রশাসনের নানাবিধ তথ্য উদ্ঘাটন করে থাকে ।
মার্কিন কংগ্রেসের কমিটির ভূমিকা
Role of the U.S. Congressional Committee
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি রাষ্ট্রে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইন বিভাগীয় কমিটিসমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ব অর্জন করেছে। কেননা, আধুনিক আইনসভার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা, সময়ের অভাব, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জটিলতা বৃদ্ধি, সমস্যার বৈচিত্র্য ও বহুমুখিনতা, অধিকাংশ সাধারণ সদস্যদের বিশেষজ্ঞতার অভাব, আইনের প্রস্তাবসমূহের বিশদ আলোচনার প্রয়োজন প্রভৃতি কারণে কমিটি ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কংগ্রেসের কার্যসূচি প্রকৃতপক্ষে স্থায়ী কমিটিগুলোর দ্বারা স্থিরীকৃত হয়। সভায় কী আলোচিত হবে, কীভাবে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে, এই সমস্ত বিষয়ে কংগ্রেসের কার্যকর স্থায়ী কমিটিগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কমিটিসমূহ মার্কিন আইনসভায় শ্রম বণ্টনের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। কমিটি ব্যবস্থাকে আইনসভার ‘সংক্ষিপ্ত সংস্করণ’ বলা যায় ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিটি ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে আইন প্রণয়নের কথা চিন্তাই করা যায় না। কারণ মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে এত বিপুল সংখ্যক বিল উত্থাপন হয় যে সেগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক করার পর্যাপ্ত সময় সদস্যদের থাকে না। তাই কংগ্রেসের যে কোনো কক্ষে বিল উত্থাপনের পর কোন রকম বিতর্ক ছাড়াই বিলটিকে সংশ্লিষ্ট কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয় । কমিটিতে বিলটির উপর বিস্তারিত আলোচনা ও বিতর্ক চলে। কমিটির সভায় বিলটির পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রকার যুক্তি ও তথ্যাদি দিয়ে সদস্যগণ তাদের বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা করেন। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিবেচনার পর সংশ্লিষ্ট বিলটি সম্পর্কে কমিটি নিম্নোক্ত চার প্রকার ব্যবস্থার মধ্যে যে কোনো একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে :
ক. বিলটিকে অপরিবর্তিত অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কক্ষে ফেরত পাঠাতে পারে ।
খ. বিলটিকে পরিবর্তিত অবস্থায় বা সংশোধিত আকারে সংশ্লিষ্ট কক্ষে ফেরত পাঠাতে পারে।
গ. বিলটিকে গ্রহণ না করার জন্য যুক্তি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কক্ষে ফেরত পাঠাতে পারে ।
ঘ. কমিটি বিলটিকে সংশ্লিষ্ট কক্ষের নিকট আদৌ ফেরত পাঠাতে নাও পারে। এরূপক্ষেত্রে বিলটির অপমৃত্যু ঘটে। অন্যভাবে বলা যায়, কোন বিল কংগ্রেসের যে কক্ষ কমিটির নিকট পাঠিয়েছিল সেই কক্ষে বিলটি ফেরত না এলে ঐ কক্ষ ধরে নেয় যে বিলটি পাসে সংশ্লিষ্ট কমিটির সম্মতি নেই। এরূপক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কক্ষ কোনোভাবেই বিলটি পাস করতে পারে না।
বস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিল পাসের ক্ষেত্রে কংগ্রেস অপেক্ষা কংগ্রেসের কমিটিগুলোর ভূমিকাই প্রধান। কমিটিগুলোর এরূপ ভূমিকা লক্ষ করে উড্রো উইলসন এগুলোকে ‘ক্ষুদ্র আইনসভা’ (Little Legislature) বলে অভিহিত করেছিলেন। হ্যারিস (J. P. Harris) বলেছেন, কংগ্রেসের প্রকৃত কাজ তার দু’টি কক্ষে সম্পাদিত হয় না; সম্পাদিত হয় ‘ক্ষুদ্র আইনসভা’ হিসেবে পরিচিত কমিটিগুলোতে। বলা বাহুল্য কমিটিগুলোর অসীম গুরুত্বের জন্য মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিগণ সর্বদাই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেন। এমনকি স্বার্থগোষ্ঠীগুলোও কমিটি সমূহের কাজ-কর্মকে নিজেদের অনুকূলে : প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। যে কারণে লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce) বলেছেন যে, প্রধানত কমিটিগুলোর মাধ্যমেই সরকারের আইন বিভাগের সঙ্গে শাসন বিভাগের সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
মার্কিন কংগ্রেস বা আইনসভায় কমিটি ব্যবস্থার ভূমিকাকে কোনোভাবেই খাটো করা যায় না। কেননা, কমিটি ব্যতীত কংগ্রেস কর্তৃক আইন প্রণয়নের কথা ভাবাই যায় না। এই ব্যবস্থা গড়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগলেও কমিটি মার্কিন আইনসভার অতি প্রয়োজনীয় কার্যগত অঙ্গে পরিণত হয়েছে। মার্কিন আইনসভার কমিটিসমূহ আইনের প্রস্তাবকে পূর্ণাঙ্গ বিলে রূপ দিয়ে থাকে। মূলত প্রতিনিধিসভার বিধিবিষয়ক কমিটি ব্যতীত অন্য সকল কমিটি তাদের কাছে প্রেরিত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব অনুসারে বিলের পূর্ণাঙ্গ রূপদানের দায়িত্ব পালন করে। কমিটিগুলোর পক্ষে বিভিন্ন আইনের সকল দিক খুঁটিনাটি বিচার বিশ্লেষণ করা এবং আইনসভার নিকট রিপোর্ট করা সহজে সম্ভব হয়। মার্কিন কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটি বিলের খসড়া রচনা থেকে শুরু করে আইনে পরিণত হওয়া পর্যন্ত সকল স্তরের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে। মার্কিন প্রতিনিধিসভা বা সি কোনো বিলের উপর চূড়ান্ত পর্যায়ে যে ভোটাভোটি হয় তা সংশ্লিষ্ট কক্ষের কমিটির সিদ্ধান্তের অনুমোদন ব্যতীত অন্য কিছু নয়। প্রতিনিধি সভায় বা সিনেটে বিলের উপর আলোচনা, বিতর্ক সবই হয়ে থাকে, কিন্তু কমিটির সিদ্ধান্ত নাকচ হওয়ার ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিটিগুলোর মাধ্যমেই আইন প্রণীত হয়।
মার্কিন কংগ্রেসের কমিটি ব্যবস্থার গুরুত্ব
Importance of the U. S. Congressional Committee
বর্তমান বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় মার্কিন কংগ্রেসের আইন প্রণয়ন কার্যক্রমও বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। কিছু, মার্কিন কংগ্রেসের কমিটি ব্যবস্থার গুরুত্ব বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তাছাড়া এখানে কমিটি ব্যবস্থার উদ্ভবের কারণও আলাদা। ভারতবর্ষ, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে মন্ত্রিসভার সদস্যগণ অর্থাৎ শাসন বিভাগীয় কর্মকর্তাপণ আইন প্রণয়ন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেন বা নেতৃত্ব দেন। কিন্তু মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হওয়ার শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের আইনসভায় উপস্থিত হওয়ার এবং আইন প্রণয়নে নেতৃত্বদানের কোনো সুযোগ নেই। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বা তার কেবিনেটের সদস্যগণ প্রত্যক্ষভাবে আইন প্রণয়ন কার্যে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ফলে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটিসমূহ এই দায়িত্ব বহন করে। অর্থাৎ, কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটি বিলের খসড়া রচনা থেকে শুরু করে আইনে পরিণত হওয়া পর্যন্ত সকল স্তরের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে। কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূলত কমিটিগুলোর মাধ্যমেই আইন প্রণীত হয়। কমিটিগুলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আইনসভায় পরিণত হয়েছে। যে কারণে অনেকে বলে থাকেন, ‘কংগ্রেসের কমিটিগুলো এক একটি ক্ষুদ্র আইনসভা’ ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি গৃহীত হওয়ায় আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পাদন করে। এই অবস্থায় লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce) এর মতানুসারে, “সরকারের দুটি অঙ্গ আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে মূলত এই কমিটিগুলোর মাধ্যমেই সম্পর্ক স্থাপিত হয়।” কমিটিতে কোনো বিলের বিচার বিবেচনার সময় বিলের সমর্থক ও বিরোধিগণ বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্য পেশ করেন। মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের সমর্থন লাভের জন্য সক্রিয় হন। এমনকি স্বার্থগোষ্ঠীগুলোও (Interest Groups) কমিটির আলাপ-আলোচনার উপর নজর রাখে। যে কারণে রবিনসন (J. A. Robinson)-এর মতানুসারে, ‘কংগ্রেসের রাজনীতি হলো মূলত কমিটি রাজনীতি’ (Congressional politics is Committee politics)। একই কারণে উইলসন বলেছেন, মার্কিন শাসনব্যবস্থা হলো, “কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা” (Government by standing Committees of Congress)। অর্থাৎ “কংগ্রেসের দ্বারা শাসন হলো কার্যত কমিটিগুলোর দ্বারা শাসন। কংগ্রেসের কার্যসূচি প্রকৃতপক্ষে স্থায়ী কমিটিগুলোর দ্বারা স্থিরীকৃত হয়। সভায় কি আলোচিত হবে, কিভাবে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে, এই সমস্ত বিষয়ে কংগ্রেসের কার্যকর স্থায়ী কমিটিগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । বস্তুতপক্ষে মার্কিন কংগ্রেসের প্রায় সমস্ত কাজই কমিটি ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। মার্কিন কংগ্রেস বিভিন্ন প্রকারের স্বশাসিত (autonomous) কমিটির মাধ্যমে কাজ করে। আইন প্রণয়নে নেতৃত্ব দেয়া ছাড়াও কমিটিগুলো বর্তমানে শাসন বিভাগের উপর সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখে এবং প্রয়োজনমত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যে কারণে প্রাক্তন প্রতিনিধিসভার একজন খ্যাতিমান স্পিকার টমাস রীড (Thomas B. Reed) বলেছেন, *কমিটিগুলো হলো প্রতিনিধিসভার চক্ষু, কর্ণ, হস্ত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উহার মস্তিস্ক’ (The Committees act as “the eye. the ear the hand and very often the brain of the house.) বর্তমানে মার্কিন কংগ্রেসের কার্যাবলি প্রকৃত প্রস্তাবে বাস কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। বস্তুত কংগ্রেস বর্তমানে এই সমস্ত কমিটির উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল।
মার্কিন কমিটি ব্যবস্থার গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণ
Causes of Increasing the Importance of the American Committee System
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কংগ্রেসের কমিটিগুলোর এরূপ অস্বাভাবিক গুরুত্ব বৃদ্ধির পশ্চাতে কিছু কারণ রয়েছে। নিম্নে এসকল কারণ তুলে ধরা হলো :
বিগত শতাব্দির বিশের দশকের পর থেকে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের সংকট শুরু হলে প্রতিটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণি জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের আদর্শ গ্রহণ করে সংকটের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভের চেষ্টা করে। ফলে এসকল দেশের আইনসভার কাজ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এর ব্যতিক্রম নয়। যে কারণে কংগ্রেসের প্রতিটি অধিবেশনে বিপুল সংখ্যক বিল উত্থাপন হতে দেখা যায়। কংগ্রেস যদি সকল বিল নিয়ে যথাযথভাবে আলোচনা করতে চায় তবে একটি অধিবেশনে উত্থাপিত বিলগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই কয়েক বছর সময় লাগবে। এমতাবস্থায় কংগ্রেস আলোচনার পূর্বে বিলগুলোকে কমিটিতে পাঠানোকেই শ্রেয় বলে মনে করে ।
২. মার্কিন কংগ্রেসের ন্যায় একটি বৃহৎ আইনসভার পক্ষে কোনো বিল নিয়ে যথাযথভাবে আলোচনা করা সম্ভব নয় বলেই বিলগুলোকে কমিটির নিকট পাঠানো হয়।
৩. কংগ্রেসের সকল সদস্য বিশেষজ্ঞ নন বলে তাদের পক্ষে বিলের সবদিক নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয় না। যে কারণে বিশেষজ্ঞ সদস্যদেরকে নিয়ে গঠিত কমিটির হাতে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে কংগ্রেস নিশ্চিত হতে পারে ৷
৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে ‘দ্বি-মেরুকেন্দ্রিক রাজনীতি’ (Bipolar politcs)-র আবির্ভাবের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিস্টদের ধ্বংস সাধন এবং পুঁজিবাদী দুনিয়ার সংরক্ষণ এবং বিকাশের দায়িত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করায় স্বাভাবিকভাবে মার্কিন কংগ্রেসের কাজ পূর্বাপেক্ষা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ।
৫. চূড়ান্ত পর্যায়ে বিগত শতাব্দির নব্বই-এর দশকের প্রথমদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ‘এক-মেরুকেন্দ্রিক রাজনীতি’-র প্রতিষ্ঠা বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রণকর্তা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বকে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছে।
এমতাবস্থায় মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষে যাবতীয় বিষয়ে আইন প্রণয়নসহ অন্যান্য কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে আইন প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব কার্যত অর্পিত হয়েছে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের কমিটিগুলোর উপর।
মার্কিন কমিটি ব্যবস্থার ত্রুটি
Defects of the Committee System of USA
উড্রো উইলসনের মতে, কংগ্রেসের কমিটিগুলোর মাধ্যমেই নীতি প্রণয়নের নিয়মমাফিক কার্যাবলি পরিচালিত হয়। কিন্তু এগুলোরকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কয়েকটি ত্রুটি লক্ষণীয়। ১৯৪৬ এবং ১৯৭৪ সালে কংগ্রেসের সংস্কারের জন্য যে আইন প্রণীত হয় সে আইনে কংগ্রেসের কমিটিগুলোর তিনটি ত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ত্রুটিসমূহ হচ্ছে :
ক. এখতিয়ারগত অধিক্রমণ অর্থাৎ একই বিষয় কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটি এখতিয়ারভুক্ত আছে।
খ. কংগ্রেসের একই সদস্যকে বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়।
গ. বিভিন্ন কমিটির দায়িত্বভার বণ্টনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যের অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
একাধিক ব্যক্তি একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্যভুক্ত থাকায় কোনো কমিটির কার্যক্রম পরিচালনায় নৈপুণ্য প্রদর্শন করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। ১৯৭৪ সালে প্রতিনিধি সভার ‘সিলেক্ট কমিটি অব কমিটিজ’ কক্ষের প্রত্যেক সদস্যের কমিটি বিষয়ক দায়িত্বভার লাঘবের সুপারিশ করে।
মার্কিন ও বৃটিশ কমিটি ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা
Comparison between the American and British Committee System
বর্তমানে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইনসভাকে নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করতে হয়। কিন্তু বৃহৎ আকৃতির আইনসভার পক্ষে সীমিত সময়ের মধ্যে সকল বিষয়ে যথাযথ বিচার-বিবেচনা করে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু বর্তমানে আইন প্রণয়ন পদ্ধতিও অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ায় তা এখন বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে আইনসভার সাধারণ সদস্যদের পক্ষে এই দায়িত্ব সম্পাদন করা সম্ভব হয় না বিধায় স্বল্প সংখ্যক বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ সদস্যকে নিয়ে এক একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্বের অপরাপর দেশের ন্যায় বৃটিশ পার্লামেন্ট ও মার্কিন কংগ্রেসেও এই কমিটি ব্যবস্থা বিদ্যমান। যদিও কমিটি গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দুটি দেশের পার্থক্য বিদ্যমান ।
ব্রিটেনে রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় থেকে বিল পর্যালোচনার জন্য পার্লামেন্টে কমিটি গঠনের রীতি শুরু হয় এবং বিগত শতাব্দির গোড়ার দিকে ব্যাপক হারে কমিটি ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। প্রতি বছর একবার নির্দিষ্ট সময়ে পার্লামেন্টের অধিবেশন বসলেও কমিটিগুলোই পার্লামেন্টের কাজকে সারা বছর সচল রাখে। বর্তমানে বৃটিশ কমন্সসভায় ৫ ধরনের কমিটি বর্তমান। এগুলো হলো- ক) সমগ্র কক্ষ কমিটি (Committee of the full house); খ) স্থায়ী কমিটি (Standing Committee); গ) সিলেক্ট কমিটি (Select Committee); ঘ) বেসরকারি বিল কমিটি (Private Bills Committee); এবং ঙ) যৌথ কমিটি (Joint Committee) ।
মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ নিজ নিজ কমিটি গঠন করে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিনিধি সভা ও সিনেটে প্রত্যেক দলের নেতৃবৃন্দ “উচ্চতর কমিটি” নামে একটি নির্বাচনি কমিটি গঠন করেন। এই উচ্চতর কমিটি অন্যান্য কমিটি গঠন করে। প্রত্যেক কমিটিতে কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে চেষ্টা করে। প্রতিটি কমিটি কৃষি, বৈদেশিক সম্পর্ক, ব্যাংক ও মুদ্রা প্রভৃতি কোনো না কোনো বিষয়ে বিশেষীকৃত। “উচ্চতর কমিটির” কথা বাদ দিলেও মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিগুলোকে ৫টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা- ক) স্থায়ী কমিটি (Standing Committee); খ) যুগ্ম কমিটি (Joint Committee ) গ) কনফারেন্স কমিটি (Conference Committee); ঘ) সমগ্র কক্ষ কমিটি (Committee of the full house); এবং ও) বিশেষ কমিটি (Special Committee) ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন উভয় দেশের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমিটি ব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও এক্ষেত্রে উভয় দেশের কমিটি ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ক. আইন প্রণয়নের গুরুত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য : মার্কিন কংগ্রেসে মূলত কমিটিগুলোর মাধ্যমেই আইন প্রণীত হয়। কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটি বিলের খসড়া রচনা থেকে শুরু করে বিলটি আইনে পরিণত হওয়া পর্যন্ত সকল স্তরের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে। কমিটি যেভাবে বিলটিকে আইনসভায় পেশ করে অধিকাংশক্ষেত্রে সেভাবেই বিলটি গৃহীত হয়। প্রতিনিধি সভা বা সিনেটে কোনো বিলের উপর চূড়ান্ত পর্যায়ে যে ভোটাভোটি হয় তা সংশ্লিষ্ট কক্ষের কমিটির সিদ্ধান্তের সম্মতি মাত্ৰ ।
অপরদিকে, বৃটিশ কমন্সসভায় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমিটিগুলো এরকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না ।
খ. শাসনব্যবস্থার প্রকৃতিতে পার্থক্য : মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হওয়ায় আইন প্রণয়নের ব্যাপারে শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কোনো এখতিয়ার নেই। কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটিগুলোই এই দায়িত্ব সম্পন্ন করে। এ কারণে মার্কিন কংগ্রেসে আইন প্রণয়নের ব্যাপারে কমিটিগুলো বিশেষ প্রাধান্য চর্চা করে ।
অপরদিকে, বৃটেনে প্রচলিত সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রীগণ আইন প্রণয়নের ব্যাপারে নেতৃত্বদান করে থাকেন । পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মন্ত্রীরাই আইন প্রণয়নের সকল স্তরে কার্যকরী ও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থায় কমিটিগুলোর তেমন গুরুত্ব নেই।
গ. বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রে পার্থক্য : বৃটেনের পার্লামেন্টারী শাসনব্যবস্থায় আইনসভায় উত্থাপিত অধিকাংশ বিলই কোনো না কোনো মন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত হয়। মন্ত্রীগণ পার্লামেন্টের সদস্য বিধায় তাদের পক্ষে বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই। অপরদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের অধিকাংশ বিলই কোনো না কোনো কমিটি কর্তৃক উত্থাপিত হয়। কেননা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বা তার কেবিনেটের সদস্যগণ কংগ্রেসের সদস্য নন বিশয় তাঁরা কংগ্রেসে কোনো বিল উত্থাপন করতে পারেন না ।
ঘ. সভাপতি পদের গুরুত্ব বিবেচনায় : মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিসমূহের সভাপতিগণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্ৰহণ করেন। তাঁদের নামেই বিলগুলো প্রচারিত হয় এবং তাঁদের নামানুসারেই পরিচিতি লাভ করে। অধিকন্তু কমিটিসমূহের সভাপতিগণ সংশ্লিষ্ট কক্ষের নেতা হিসেবে তাদের ক্ষমতার প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তারের যথেষ্ট সুযোগ পান।
অপরদিকে, বৃটেনে কমিটি সভাপতিগণের তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে না। যে কারণে সাধারণত তারা পর্দার অন্তরালে থেকে যান। তাঁদের ক্ষমতার প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত ।
ঙ. পদ্ধতিগত পার্থক্য : মার্কিন কংগ্রেসের বিলের প্রথম পাঠের পর আলোচনা শুরু হওয়ার পূর্বেই বিলটি কমিটিতে পাঠানো হয়।
অপরদিকে, বৃটেনে বিলের দ্বিতীয় পাঠের পর সাধারণত বিলগুলোকে কোনো কমিটির নিকট পাঠানো হয় ।
চ. সংখ্যাগত পার্থক্য : ব্রিটিশ কমন্সসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর তুলনায় মার্কিন প্রতিনিধি সভায় অধিক সংখ্যক স্থায়ী কমিটি আছে। মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিসমূহের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্থায়ী কমিটির সংখ্যা প্রায় ১৩টি। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে ৫০ টির বেশি স্থায়ী কমিটি রয়েছে।
ছ. পরিধিগত পার্থক্য : মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিগুলোর তুলনায় বৃটিশ পার্লামেন্টের কমিটিগুলোর সদস্য সংখ্যা অধিক। জ. সদস্যদের সক্রিয়তার ক্ষেত্রে : মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কমিটিগুলোর গুরুত্ব ও কর্তৃত্বের কারণে কংগ্রেসের সদস্যদের মধ্যে কমিটির সদস্যপদ লাভের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায় ৷
অপরদিকে, বৃটেনের কমিটিগুলোর গুরুত্বহীনতার কারণে পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে কমিটির সদস্য হওয়ার ব্যাপারে, তেমন আগ্রহ বা প্রতদ্বন্দ্বিতা দেখা যায় না।
ঝু. বিশেষজ্ঞতা বিবেচনায় : আইন প্রণয়নের ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্যই মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিগুলোর সদস্যগণ বিশেষীকৃত জ্ঞানের অধিকারী হয়ে থাকেন। কংগ্রেসের কমিটিগুলো সকল আইনের খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে। যে কারণে কমিটির সদস্যগণ সেই সমস্ত বিষয়ে বিশেষীকৃত জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পান ।
অপরদিকে, বৃটেনের কমিটিসমূহের সদস্যগণ ততটা বিশেষীকৃত জ্ঞানের অধিকারী হন না।
ঞ. গোষ্ঠী ও আঞ্চলিক স্বার্থ বিবেচনায় : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিটি গঠনে আঞ্চলিক ও দলীয় স্বার্থ তীব্রভাবে প্রতিফলিত হয়। কমিটিসমূহ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
অপরদিকে, বৃটিশ পার্লামেন্টে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক মানসিকতা তীব্রভাবে অনুভূত হয় না। কমিটি স্তরে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের তীব্রতাও এখানে সীমিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিটিসমূহ ‘স্বার্থের প্রহরী’ কমিটি নামে পরিচিত । ট. পরামর্শ গ্রহণ : মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিসমূহ প্রয়োজনবোধে কংগ্রেসের সদস্য নয় এমন ব্যক্তির সঙ্গেও পরামর্শ করতে পারে। বৃটিশ পার্লামেন্টের কমিটিগুলো সাধারণত তা করে না।
ঠ. সভাপতির ক্ষমতা চর্চার ক্ষেত্রে : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কমিটিগুলোর সভাপতিদের কার্যকরভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ ও প্রভাব খাটানোর সুযোগ খুবই সীমিত। অপরদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিগুলোর সভাপতিগণ কক্ষের নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিগুলো বিল সম্পর্কে কংগ্রেসের নিকট রিপোর্ট পেশ করতে বাধ্য নন ৷ ড. বিলের শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে : ব্রিটেনে সরকারি বিল ও বেসরকারি বিলের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের সরকারি ও বেসরকারি বিলসমূহের কোনো শ্রেণিবিভাগ নেই ।
ঢ. অভিজ্ঞতা বিবেচনায় : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা হয়। যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাঁকে সে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ব্রিটেনে কমিটির সদস্যদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার উপর তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না।
ণ. সিনিয়রিটি বিবেচনায় : মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিসমূহের সভাপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সিনিয়রিটি’ নীতি অনুসরণ করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সিনিয়র সদস্যই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত ২০ অপরদিকে, ব্রিটেনে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ‘সিনিয়রিটি’ নীতি অনুসরণ করা হয় না।
ক্ষমতা ও গুরুত্বের দিক বিবেচনা করলে মার্কিন কংগ্রেসের কমিটিসমূহের অবস্থান বৃটিশ পার্লামেন্টের কমিটিগুলোর অনেক উপরে। অনুসন্ধান ও রিপোর্ট প্রদান ছাড়া বৃটিশ কমপসভার কমিটিগুলোর আর তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই । কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিটিব্যবস্থা এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, এটি কংগ্রেসের কর্মক্ষমতা ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতাকে অনেকাংশে ক্ষুণ্ণ করেছে ।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক
Relation between the President and the Congress
মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির উপস্থিতির কারণে রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক বিশেষভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুযায়ী মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের সদস্য নন । আবার রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও মার্কিন রাষ্ট্রপতি ব্রিটেনের রাজা বা রানীর ন্যায় আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে, স্থগিত রাখতে বা আইনসভার নিম্নকক্ষকে ভেঙে দিতে পারেন না। তিনি কংগ্রেসের নিকট দায়িত্বশীলও নন। ফলে তত্ত্বগতভাবে মনে হতে পারে যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। তবে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি প্রযুক্ত হওয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই বা একে অপরের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত-এ কথা ঠিক নয় ।
বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের আইন প্রণয়ন ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগ ‘শক্তিমান রাষ্ট্রপতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’
(Institutionlaization of the strong president) নামে পরিচিত। এ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়ার ফলে কংগ্রেসের সদস্যগণ এমন একটি অবস্থায় উপনীত হয়েছেন যে, যেখানে রাষ্ট্রপতির কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা নিজেদের কার্যাবলি স্থির এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তথাপি অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতিকে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ রাষ্ট্রপতি যেমন কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তেমনি কংগ্রেসও রাষ্ট্রপতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কংগ্রেসের উপর রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণ
Presidential Control over the Congress
মার্কিন রাষ্ট্রপতি সাধারণত দুটি উপায়ে কংগ্রেসের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সক্ষম হন। উপায় দুটি হলো
ক. সাংবিধানিক বা আনুষ্ঠানিক (Constitutional or Formal Method) এবং
খ. অনানুষ্ঠানিক (Informal Method)।
ক) আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি (Formal Method) : মার্কিন রাষ্ট্রপতি সংবিধান স্বীকৃত যেসকল পন্থা বা উপায় ব্যবহার করে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন সেসব পন্থা বা উপায়কে আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি বলা হয়। এসকল আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
১. কংগ্রেসে বাণী প্রেরণ : মার্কিন সংবিধানের ২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে কংগ্রেসের নিকট বাণী প্রেরণ করতে পারেন। এ জাতীয় বাণীর মাধ্যমে তিনি দেশের অবস্থা ও কী কী বিষয়ের উপর আইন প্রণয়ন প্রয়োজন তা কংগ্রেসকে অবহিত করবেন। ১৯২৩ সালে রাষ্ট্রপতি মুনরো প্রেরিত বাণীর মধ্যে ‘মুনরো মতবাদ বা ডকট্রিন’ এর কথা, কিংবা ১৯৪১ সালে রুজভেল্টের বাণীর মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূল বক্তব্য ব্যক্ত হয়েছিল। এ জাতীয় বাণী লিখিত, মৌখিক কিংবা নিজে উপস্থিত হয়ে কংগ্রেসের সভায় ভাষণ দানের মাধ্যমে করতে পারেন। প্রয়োজনীয় আইন পাসের সুপারিশ সম্বলিত রাষ্ট্রপতির এসকল বাণীকে কংগ্রেস অগ্রাহ্য করতে পারে না বিধায় রাষ্ট্রপতির সুপারিশ মোতাবেক আইন প্রণয়নে কংগ্রেস বিশেষভাবে প্রভাবিত হন।
২. কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান : মার্কিন রাষ্ট্রপতি সাধারণভাবে কংগ্রেসের অধিবেশন আহ্বান করতে না পারলেও জরুরি ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। যদিও ১৯৩৯ সালের পর থেকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের সংখ্যা বিশেষভাবে হ্রাস পেয়েছে। আবার অধিবেশন মূলতবি করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের উভয় কক্ষ ঐকমত্যে উপনীত হতে না পারলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন ।
৩. শাসন বিভাগীয় আদেশ জারি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ‘অধ্যাদেশ’ (Ordinance) বা ‘শাসন বিভাগীয় আদেশ’ (executive orders) জারি করতে পারেন। এই আদেশ আইনের মতোই কার্যকরী হয়। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি কিংবা কংগ্রেস কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রশাসকগণ (administrators) এই আদেশ জারি করতে পারেন। আইনের সংখ্যা ও জটিলতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কংগ্রেসের পক্ষে পরিপূর্ণভাবে প্রতিটি আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না। তাই কংগ্রেস কর্তৃক আইনের মূলনীতিসমূহ নির্ধারণের পর রাষ্ট্রপতির হস্তে সেগুলোকে পূর্ণতা দানের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি সেসব আদেশের ফাঁক পূরণের জন্য শাসন বিভাগীয় আদেশ জারি করে থাকেন। এসকল শাসন বিভাগীয় আদেশ জারির মাধ্যমেও রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে ।
৪. ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা : মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের জন্য কোনো বিল প্রত্যক্ষভাবে কংগ্রেসে উত্থাপন করতে না পারলেও কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত সংবিধান সংশোধনী বিল ব্যতীত অন্য যে কোনো বিল তাঁর অনুমোদনের জন্য প্রেরিত হয়। কংগ্রেস কর্তৃক পাসকৃত কোনো বিলে যদি রাষ্ট্রপতি সম্মতি প্রদানে অস্বীকার করেন তবে সেই বিলটি আইনে পরিণত হতে পারে না। রাষ্ট্রপতি কোনো বিলে সম্মতি জানাতে অস্বীকার করতে পারেন, অর্থাৎ ‘ভেটো’ (Veto) প্রয়োগ করতে পারেন। এরূপ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে যে কক্ষ থেকে বিলটি তাঁর নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল ১০ দিনের মধ্যে আপত্তি সহ সেই কক্ষে ফেরত পাঠাতে হয়। কিন্তু সংশিষ্ট বিলটি যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কংগ্রেস কর্তৃক পুনরায় গৃহীত হয় তবে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীতই আইনে পরিণত হয়। কংগ্রেস কর্তৃক পাসকৃত কোনো বিলে স্বাক্ষর না করে রাষ্ট্রপতি সেটি আটকে রাখতে পারেন। এরূপ বিল প্রেরণের ১০ দিনের মধ্যে যদি কংগ্রেসের অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে তবে সংশিষ্ট বিলটির স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় বিল নাকচ করাকে ‘পকেট ভেটো’ (Pocket Veto) বলা হয়। এভাবে ‘ভেটো’ ক্ষমতা ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির এ ভেটো ক্ষমতাই কার্যত রাষ্ট্রপতিকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের কক্ষে পরিণত করেছে। তৃতীয়
খ. অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি (Informal Method) : মার্কিন রাষ্ট্রপতি যদি সংবিধান বহির্ভূত পন্থা বা কৌশল অবলম্বন করে কংগ্রেসকে প্রভাবিত করতে উদ্যোগী হন তবে একে অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি বলে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণের সংবিধান বহির্ভূত উপায় বা অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. কংগ্রেসকে ভীতি প্রদর্শন : মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসেকে ভয় দেখিয়ে তার প্রয়োজনীয় আইনসমূহ প্রণয়নে বাধ্য করার মাধ্যমে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত তিনটি উপায় অবলম্বন করেন :
ক. বিল পাসের ব্যাপারে তিনি কংগ্রেসকে পূর্বেই অবহিত করেন যে, যদি তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী বিল পাস করা না হয় তবে তিনি তাতে সম্মতি প্রদান করবেন না। এভাবে কংগ্রেস কর্তৃক বিল পাস হবার পূর্বেই তিনি তাঁর সূত্রপাত করতে পারেন।
খ. যদি সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যগণ রাষ্ট্রপতির সমর্থিত আইন পাস করতে সম্মত না হন তবে তিনি তাদের পৃষ্ঠপোষকতার আবেদনের প্রতি কোনো প্রকার ভ্রূক্ষেপ না করে তাদেরকে তাদের নির্বাচনি এলাকা হতে পদচ্যুত করতে পারেন এবং পুনর্বিবেচনার পথ বন্ধ করে দিতে পারেন।
গ. রাষ্ট্রপতির দলীয় সদস্যগণ, যারা তাঁর অনুগত নীতি সমর্থন করেন না তাদের পৃষ্ঠপোষকতা না করে কিংবা কোনো কোনো সময় খোলাখুলি বিরোধিতা করে তাদের পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হবার আশা ভঙ্গ করতে পারেন ।
২. কংগ্রেসকে তোষামোদ করা : যদিও প্রথাগত বিধান অনুযায়ী কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিক বাণী প্রেরণ ব্যতীত মার্কিন রাষ্ট্রপতির আর কোনো ক্ষমতা নেই তথাপি তিনি ইচ্ছা করলে যে কোনো নীতি বা বিধানের ব্যাপারে সদস্যদের সাথে আলাপ- আলোচনা করতে পারেন। এ ধরনের তোষামোদের (Persuation) মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইন পাস করে নিতে পারেন ।
৩. জনমত গঠন : মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট সময়ান্তর সংবাদপত্র ও প্রচার মাধ্যমগুলোর নিকট রাষ্ট্রের নীতি ও শাসনকার্য সম্পর্কে প্রেস কনফারেন্স কিংবা বেতার-টেলিভিশনের মাধ্যমে যেসকল বক্তৃতা ও বিবৃতি প্রদান করেন সেগুলো জনমত গঠনে সহায়ক হয়। কংগ্রেসের পক্ষে এধরনের জনমত উপেক্ষা করা কিছুতেই সম্ভব হয় না। এসকল প্রচেষ্টায় যদি রাষ্ট্রপতি অকৃতকার্য হন তবে তিনি প্রত্যক্ষভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জাতির নিকট আবেদন জানাতে পারেন। ফলে জনসমর্থন হারাবার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবার জন্য কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির নির্দেশকে আইনে রূপ দিতে বাধ্য হন। তবে এটি অতি সংকটাপন্ন সময়ে এবং কদাচিৎ গ্রহণ করা হয়। অত্যধিক গুণসম্পন্ন রাষ্ট্রপতি ব্যতীত এ কাজে কেউ অবতীর্ণ হতে পারে না।
৪. কংগ্রেস সদস্যদেরকে ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত করা : রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের ব্যাপারে কংগ্রেসের যে কোনো সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় তিনি সদস্যদেরকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন অথবা প্রলোভন দেখিয়ে কাজ আদায় করে নিতে পারেন ।
৫. রাষ্ট্রপতির লবি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসন বিভাগের কর্মচারীগণ রাষ্ট্রপতির লবি নামে অভিহিত । এসকল লবি রাষ্ট্রপতির নীতি ও কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জনগণ ও কংগ্রেসের সাথে প্রয়োজনমতো যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি এভাবে তাঁর লবির মাধ্যমে কংগ্রেসকে প্রভাবিত করতে পারেন।
৬. রাষ্ট্রপতির জাতীয় নেতৃত্ব : কংগ্রেসের কোনো একজন সদস্যের পক্ষে যা করা সম্ভব নয় জাতীয় নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতির পক্ষে এককভাবে সেই কর্মসূচি ও পরিকল্পনা জাতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব। রাষ্ট্রপতি সরাসরি তার নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনের জন্য জনসাধারণের নিকট আবেদন করতে পারেন। বিংশ শতকের অনেক রাষ্ট্রপতিই এই নীতি অনুসরণ করেছেন ।
৭. অন্যান্য কারণ : কংগ্রেসের উপর রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণের অন্য যেসকল কারণ রয়েছে সেগুলো হলো :
ক. সমগ্র শাসন বিভাগের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব এককভাবে রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত হওয়ায় তিনি দ্রুত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু কংগ্রেস সদস্যগণ এককভাবে রাষ্ট্রপতির ন্যায় সমগ্র দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না ।
খ. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির জটিলতা, যুদ্ধের আশঙ্কা, অর্থনৈতিক সংকট প্রভৃতি ক্ষেত্রে মার্কিন জনগণ কংগ্রেসের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির উপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয় যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিভিন্নভাবে কংগ্রেসের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। যে কারণে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় প্রধান প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতির আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ।
রাষ্ট্রপতির উপর কংগ্রেসের নিয়ন্ত্ৰণ
Congressional Control over the President
মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদটি সাংবিধানিকভাবে যত ক্ষমতার অধিকারী হোক না কেন কিংবা নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি যতট ব্যক্তিত্ববান ও দৃঢ়চেতা হোক না কেন কংগ্রেসের সহযোগিতা ব্যতীত তিনি তার দায়িত্ব ও ক্ষমতা চর্চার ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবেন। কেননা, কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেমন :
ক. রাষ্ট্রপতি বাজেট তৈরি করতে পারেন, কিন্তু কংগ্রেসের সম্মতি ব্যতীত তা কার্যকর হয় না।
খ, বাজেট অনুমোদন ছাড়াও যে কোনো প্রকার প্রশাসনিক ব্যয় বরাদ্দের জন্য রাষ্ট্রপতিকে কংগ্রেসের উপর নির্ভর করতে হয়। অধিকন্তু রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের নিকট যে পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দের দাবি পেশ করেন তা মেনে নিতে কংগ্রেস বাধ্য নয়। কংগ্রেস অনেক সময়ই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পেশকৃত ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
গ. কংগ্রেসের নিকট রাষ্ট্রপতি বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক কিংবা আরো সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাঁর ক্ষমতার ব্যবহার সম্পর্কিত বিশদ বিবরণী পেশ করতে হয়।
ঘ. রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসে বাণী প্রেরণের সময় যেসকল আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন সেসব আইন প্রণয়ন করার জন্য কংগ্রেসকে তিনি বাধ্য করতে পারেন না ।
ঙ. কংগ্রেস কর্তৃক নিয়োগকৃত বিভিন্ন কমিশনের কার্যাবলিকে রাষ্ট্রপতি প্রভাবিত কিংবা নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন না। চ. রাষ্ট্রপতি সিনেটের অনুমোদন ব্যতীত শাসন বিভাগীয় কর্মচারী, যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতসমূহের বিচারপতি এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের নিযুক্ত করতে পারেন না। সিনেট অনুমোদন না করলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্পাদিত নিয়োগ বাতিল হয়ে যাবে।
ছ. কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত বিলে রাষ্ট্রপতি অসম্মতি জ্ঞাপন করলে তার কারণ জানিয়ে ১০ দিনের মধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট কক্ষে বিলটি ফেরত পাঠাতে বাধ্য। এরপর কংগ্রেস দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সেই বিলটি পুনরায় গ্রহণ করলে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ব্যতীতই আইনে পরিণত হয়। রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ভেটোকে নাকচ করে কংগ্রেস ‘যুদ্ধ ক্ষমতা সংক্রান্ত আইন’ (War powers act) প্রণয়ন করে। ফলে বিদেশে সৈন্য প্রেরণ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বহুলাংশে ক্ষুণ্ন হয়। সুতরাং বলা যায় যে, রাষ্ট্রপতির ভেটো প্রয়োগ কোনো প্রকার আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কার্যকরীভাবে কোনো বাধা প্রদান করতে পারে না।
জ. মার্কিন রাষ্ট্রপতি কোনো আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি ব্যতীত তা কার্যকর হয় না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসন কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘ভার্সাই সন্ধিপত্র’ কে সিনেট অনুমোদন না করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন জাতিপুঞ্জে যোগদান করতে পারেনি ।
ঝ. কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতীত রাষ্ট্রপতি যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন না ।
ঞ. কংগ্রেস প্রয়োজন মনে করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিসংশন পদ্ধতি দ্বারা মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারীর নায়ক রাষ্ট্রপতি নিক্সনকে অভিসংশনের ভয়েই ১৯৭৪ সালের ৯ই আগস্ট পদত্যাগ করতে হয়েছিল ।
উপরোক্ত আলোচনা পরবর্তীতে কংগ্রেস ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সম্পর্কের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বলা যায় যে, তাদের মধ্যে মতানৈক্যের চিরন্তন উৎস হলো রাষ্ট্রপতি সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কিন্তু কংগ্রেস কেবল অংশের প্রতিনিধি। কংগ্রেসের কোনো অংশই সামগ্রিকভাবে জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না। তথাপি বলা যায় যে, রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমেই রাষ্ট্রব্যবস্থার সাফল্য সুনিশ্চিত করা সম্ভব।