মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর ।

Table of Contents

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর । 

মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। ব্রিটেনের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নিয়মতান্ত্রিক বা নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধানের অস্তিত্ব নেই। কেননা মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেবলমাত্র তত্ত্বগতভাবে নয়, বাস্তবেও প্রধান শাসক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার গতি প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। মূলত মার্কিন সংবিধানই রাষ্ট্রপতিকে অনন্য মর্যাদার আসন দান করেছে। এস. পি. হান্টিংটন (S.P. Hantington) তাঁকে সমসাময়িক বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নেতা হিসেবে মনে করেন। আন্তর্জাতিক শক্তিবলয়ে তাঁকে ‘মুক্ত বিশ্ব’ এর অধিকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হয়। যদিও ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সমস্যাসঙ্কুল বিশ্বে অনেক সময় তাঁকে ব্যক্তিগত যোগ্যতায়ও কাজ করতে হয়। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি কেবলমাত্র একজন সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তি নন, তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। অর্থাৎ, মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদটির ‘প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ (Insitutionalization) ঘটেছে।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা
Presidential System of USA

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতির হাতেই সকল প্রকার প্রশাসনিক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। আবার কার্যক্ষেত্রেও তিনি হলেন প্রকৃত প্রশাসনিক প্রধান। অর্থাৎ, তত্ত্বগত এবং বাস্তব উভয় বিচারেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি দেশের শাসন বিভাগীয় ক্ষমতার প্রকৃত অধিকারী। ক্লিনটন রসিটারের মতে, সংবিধান অনুসারে যেসমস্ত দেশ শাসিত হয় সেসব দেশের প্রশাসনিক প্রধানদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী ও মর্যাদাযুক্ত পদাধিকারী হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। বর্তমানে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ধারণা সংবিধানে বিন্যস্ত ক্ষমতার পরিধিকে অতিক্রম করেছে। শাসন বিভাগীয় এখতিয়ারকে অতিক্রম করে তাঁর ক্ষমতার সীমা সরকারি কাজকর্মের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকে ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংবিধান প্রণেতাদের যাবতীয় পরিকল্পনাকে ছাপিয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় বর্তমানে তিনি হলেন সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। যে কারণে বর্তমানে কেউ কেউ ‘রাজকীয় রাষ্ট্রপতি’ (Royal Presidency) -এর তত্ত্ব প্রচার করে থাকেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জাতির প্রধান, আর কার্যক্ষেত্রে তিনি হলেন শাসন বিভাগের প্রকৃত কর্ণধার ।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি
Election Method of the President of USA

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিশ্বের শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে একটি অসাধারণ ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদটির নির্বাচন একটি জটিল প্রক্রিয়া অতিক্রম করে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ১৭৮৭ সালে অনুষ্ঠিত ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট তুমুল বিতর্ক অন্য সক ইস্যুকে পেছনে ফেলে দেয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী জেমস উইলসন বলেন, “এই বিষয় নিয়ে সভায় প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। বস্তুত যে সব ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে এটিই ছিল সর্বাপেক্ষা কঠিন বিষয়।” কেননা, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের অনেকেই সরাসরি জনসাধারণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে যেমন মত প্রদান করে তেমনি অনেকে আবার কংগ্রেস কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় বলে মতামত পেশ করে ৷

কিন্তু সংবিধান রচয়িতাগণ একথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, প্রথম পদ্ধতি, তথা জনসাধারণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হলে রাষ্ট্রপতিকে সর্বদাই জনসাধারণের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ব্যস্ত থাকতে হবে। তাছাড়া, জনসাধারণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় প্রার্থীর দক্ষতা, যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতিকে মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ না করে বাকসর্বস্ব নেতার বাকচাতুর্যে অভিভূত হয়ে অনেক সময় তাঁর পক্ষেই ভোটদান করবে। ফলে এ পদ্ধতিতে যোগ্য ব্যক্তির পরিবর্তে সুচতুর ও জনপ্রিয় ব্যক্তির নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অপরদিকে, দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ তথা কংগ্রেস কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের হাতের পুতুলে পরিণত হবেন। ফলে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল উদ্দেশ্য বিনষ্ট হওয়ার আশংকা থেকে যাবে।

এসকল দিক বিবেচনায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, একটি ‘নির্বাচক সংস্থা’ (lilectoral college) কর্তৃক বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণে ‘পরোক্ষভাবে’ (indirectly) মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। এ পদ্ধতিতে জনগণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের সুযোগ থাকবে না ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর । 

 ‘নির্বাচক সংস্থা’ গঠন
Composition of ‘Electoral College’

মার্কিন সংবিধানের ২ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রারম্ভে দেশের বিভিন্ন আইনসভার সদস্যগণ নির্বাচকমণ্ডলী বা ‘নির্বাচক সংস্থা’ (Electoral college) এর সদস্যদের নির্বাচন করতেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচক সংস্থার সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয় এবং বর্তমানে নির্বাচক সংস্থার সকল সদস্যকেই জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত করে। অর্থাৎ, বর্তমানে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রত্যেক নাগরিক কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে এই ‘নির্বাচক সংস্থা’ গঠিত হয়। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের জনগণ প্রথমে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে মোট প্রতিনিধি সংখ্যার সমানসংখ্যক নির্বাচক-প্রতিনিধিকে নির্বাচন করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিনেট ও প্রতিনিধিসভায় যদি কোনো অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধির সংখ্যা যথাক্রমে ২ জন ও ৫ জন হয় তবে রাষ্ট্রপতি নির্বানের লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচক সংস্থায় ঐ রাজ্য থেকে মোট ৭ জন নির্বাচক-প্রতিনিধি গ্রহণ করা হবে। এক কথায় বলা যায়, নির্বাচক সংস্থার সদস্য সংখ্যা কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যার সমান। তবে ১৯৬৪ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ওয়াশিংটন ডি. সি. থেকে অতিরিক্ত ৩ জন সদস্য নির্বাচক সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত হন। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘নির্বাচক সংস্থা’ সর্বমোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় (১০০+ 435 + 3) = ৫৩৮ জন। তবে কংগ্রেসের কোনো সদস্য কিংবা কেন্দ্রিয় সরকারের কোনো কর্মচারী নির্বাচক সংস্থার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীকে এই নির্বাচক সংস্থার ৫৩৮ ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হয় ।

 রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া
Voting Process of the Presidential Election

প্রতি লিপইয়ার বর্ষের নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পর প্রথম যে মঙ্গলবার আসে সেই দিন নির্বাচক, সংস্থার প্রতিনিধিদের নির্বাচন করার জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তারপর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বুধবারের পর প্রথম সোমবার প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের নির্বাচক-প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যে মিলিত হয়ে গোপন ভোটদান পদ্ধতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোট প্রদান করেন। তবে ১৯৬৪ সালে আনীত সংবিধানের ২৩তম সংশোধনের ফলে বর্তমানে নির্বাচক-প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ জেলায় উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ভোট বাক্সগুলোকে সিলগালা করে ওয়াশিংটনে প্রেরণ করা হয়। পরের বছর ৬ জানুয়ারি সিনেটের সভাপতি কংগ্রেসের সকল সদস্যদের সম্মুখে সিলগালাকৃত বাক্সগুলোর ব্যালট পেপার গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে যিনি নির্বাচক-সংস্থার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় ২৭০টি “নির্বাচক ভোট” (Electroal Vote) লাভ করেন তাকেই সিনেট সভাপতি রাষ্ট্রপতি পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী কোনো ব্যক্তিই যদি প্রয়োজনীয় ২৭০টি নির্বাচক ভোট অর্জনে সক্ষম না হন, তবে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত তিন জনের মধ্যে থেকে একজনকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভা গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করেন। এভাবে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভা এ পর্যন্ত ২ জনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিন সংবিধানে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য একটি জটিল পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নের বিষয়গুলো বিশেষভাবে লক্ষণীয় :

ক. মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভা যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে তখন প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিগণ সম্মিলিতভাবে মাত্র একটি ভোট দিতে পারেন এবং এ ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের অংশগ্রহণ অপরিহার্য ।

খ. কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভা যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন তখন সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অর্থাৎ, প্রতিনিধিসভার সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনপ্রাপ্ত প্রার্থীই কেবলমাত্র বিজয়ী বলে ঘোষিত হয়।

গ. রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্ট্রপতি একই অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত হতে পারেন না।

ঘ. নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্তির পূর্বে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন।

ড. পূর্বে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী রাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় স্থানাধিকারী প্রার্থী উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতেন। কিন্তু দু’জন প্রার্থীর মধ্যে ভোট সমান ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলে অনিশ্চিত ও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি মার্কিন শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দুই বার। প্রথমবার ১৮০০ সালে জেফারসন ও বারের মধ্যে এবং ১৮২৪ সালে জ্যাকসন ও কুইন্স অ্যাডামসের মধ্যে। ফলে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী মোতাবেক এ ব্যবস্থা গৃহীত হয় যে, রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী দুটি পৃথক ব্যালট পেপার ব্যবহার করবেন।

চ. নির্বাচনের সাধারণ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হয়েও উপ-রাষ্ট্রপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়া যায়। রাষ্ট্রপতি জন কেনেডি নিহত হওয়ার পর উপ-রাষ্ট্রপতি জনসন এবং নিক্সনের পদত্যাগের পর উপ-রাষ্ট্রপতি জেরাল্ড ফোর্ড রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছিলেন। এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হওয়াকে মারকাস কানলিফ (Marcus Cunlife) ‘পশ্চাতের দ্বার দিয়ে অনুপ্রবেশের পদ্ধতি’ (Backdoor method of entry) বলে বর্ণনা করেছেন।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির সমালোচনা
Criticism of the Presidential Election Method

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতাগণ যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্রপতির বিশেষ নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিলেন, দলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে তাঁদের সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, দলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি কার্যত প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচক সংস্থার সদস্যগণ বর্তমানে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচিত হন বিধায় তারা নিজ নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীর অনুকূলেই ভোট প্রদান করেন। ফলে নির্বাচক সংস্থার প্রতিনিধিদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবী রাষ্ট্রপতি কে হবেন তা সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়। নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক রাষ্ট্রপতির নির্বাচন অনুষ্ঠান তখন আনুষ্ঠানিক ব্যাপারেই পর্যবসিত হয়। যে কারণে ঐ নির্বাচনে জনগণের মধ্যে আদৌ কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয় না। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল-রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি উভয়েই বুর্জোয়া শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে বিধায় তারা সংশ্লিষ্ট শ্রেণিস্বার্থ রক্ষায় বিশেষ পারদর্শী ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করেন। আর্থার ম্যাকমোহন যথার্থই বলেছেন, দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতিত্বের ক্ষমতা দখল করার জন্য এক শিথিল মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ ।

অনেক সমালোচকের মতে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনুসৃত পদ্ধতি অকারণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাঁদের মতে, বর্তমানে অনুসৃত পরোক্ষ পদ্ধতি সম্পূর্ণ গণতন্ত্রসম্মত নয়। কারণ সকল অঙ্গরাজ্যের মোট নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পেয়েও কোনো একজন প্রার্থী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন। যোগনাথ মুখোপাধ্যায় এক বিশেষণের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে, সংখ্যালঘুর ভোটেও একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন এবং কয়েকজন অনুরূপভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেনও। এ পর্যন্ত তিনবার এ ঘটনা ঘটেছে।

১৮২৪ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এন্ড্রু জ্যাকসন পেয়েছিলেন ১,৫৩,৫৪৪ ভোট। এই সংখ্যা ছিল মোট প্রদত্ত ভোটের ৪৩.১ শতাংশ। কিন্তু নির্বাচক সংস্থার ভোটের প্যাঁচে জন কুইন্স অ্যাডামস রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। অ্যাডামস কিন্তু নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৩৪.৮ শতাংশ পেয়েছিলেন। একইভাবে নির্বাচক সংস্থার ভোটব্যবস্থার সুযোগে সংখ্যালঘু ভোটে আর যারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁরা হলেন ১৯তম রাষ্ট্রপতি রাদারফোর্ড বি. হেইজ এবং ১৮৮৮ সালে ক্লিভল্যান্ড ।

বর্তমান পদ্ধতিতে বৃহৎ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ভোটদাতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেয়ে কিন্তু সকল অঙ্গরাজ্যের ভোটদাতাদের সংখ্যালঘিষ্ঠের ভোটেও রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়া যায়। এমনও হতে পারে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে একজন মাত্র ১৮টি অঙ্গরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন। বিপরীতে ৩২টি অঙ্গরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও রাষ্ট্রপতি পদে পরাজিত হতে পারেন। তাছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।

পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এই জটিল প্রক্রিয়াটি মূলত দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত। যার প্রথম পর্যায় হলো নির্বাচক সংস্থা গঠন এবং দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায় হলো নির্বাচক সংস্থার সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতির নির্বাচন। সর্বোপরি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বাকি অংশ সম্পূর্ণ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতা
Qualification for the Presidential post of USA

মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের যোগ্যতা প্রসঙ্গে মার্কিন সংবিধানের ২নং ধারায় কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ আছে। এগুলো হলো :

ক. রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।

খ. তাঁকে জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হতে হবে।

গ. তাঁকে অন্তত ১৪ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে।

প্রার্থীর বসবাসগত যোগ্যতাকে কেন্দ্র করে হার্বার্ট হুভার (Harbert Hoover) এর রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে যে, হুভার একাধিক্রমে ১৪ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেননি। এই প্রসঙ্গে মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট অভিমত জ্ঞাপন করে যে, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে একাদিক্রমে ১৪ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার প্রয়োজন নেই ।

রাষ্ট্রপতির কার্যকাল
Tenure Term of the President

১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ সম্পর্কে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। প্রতিনিধিদের অনেকে রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ ৭ বছর করার দাবি করেন এবং রাষ্ট্রপতি পুনর্নির্বাচনের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কার্যকালের মেয়াদ ৪ বছর নির্ধারণ করা হলেও পুনর্নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন ও টমাস জেফারসন তৃতীয় বার রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অস্বীকার করলে তখন থেকেই এই শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি (Convention) গড়ে ওঠে যে, কোনো রাষ্ট্রপতি দু’বারের বেশি ঐ পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল গ্রান্ট (General Grant) ও থিওডোর রুজভেল্ট (Theodore Roosevelt) এই রীতিনীতিকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে গ্রান্ট তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে চাইলে তাঁর দল তাঁকে মনোনয়ন দিতে অস্বীকার করে। কিন্তু রুজভেল্ট তৃতীয়বার নির্বাচন করে পরাজিত হন । অবশ্য তৃতীয়বার নির্বাচন করে কোনো প্রার্থীই যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন নি, একথা বলা যায় না । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংকটময় সময়ে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট (Franklin Roosevelt) ১৯৪০ সালে তৃতীয়বারের জন্য এবং ১৯৪৪ সালে চতুর্থবারের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ১৯৫১ সালে সংবিধানের ২২তম সংশোধনীর দ্বারা দুই বারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রহিত করা হয়, যা বর্তমানেও চালু আছে ।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর করার জন্য ১৮২৬ সাল পর্যন্ত ১৫০টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয় এবং ১৯১৩ সালে এরকম একটি প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছিল। কিন্তু প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের তীব্র বিরোধিতার কারণে এটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে বর্তমানে মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যকাল যেমন ৪ বছর তেমনি কারো পক্ষে দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার সুযোগ নেই ।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির বেতন-ভাতা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
Salary-allowances and other Previleges of the President

মার্কিন সংবিধান কর্তৃক রাষ্ট্রপতির বেতন ও ভাতা নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও সংবিধানের ২ (৬) নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মধ্যে তাঁর আর্থিক সুবিধা হ্রাস করা যাবে না। তাঁর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে। সংবিধান কার্যকর হওয়ার সময়ে রাষ্ট্রপতির বেতন হিসেবে বার্ষিক ২৫,০০০ ডলার ধার্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির বেতন বছরে ১,০০,০০০ ডলার এবং অন্যান্য খরচ বাবদ করের আওতামুক্ত ৫০,০০০ ডলার ধার্য করে। রাষ্ট্রপতির অনুরোধে খরচের ক্ষেত্রে কর রদ করার অংশটি ১৯৫৩ সালে বাতিল করা হয়। সাম্প্রতিককালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি লাভ করেন :

১. সম্মানী (বেতন)

২. আপ্যায়ন ভাতা

৩. ভ্রমণ ভাতা

৪. অবসর ভাতা

৫. আবাসন সুবিধা

৬. ৪০০-৫০০ কর্মচারী

: বার্ষিক ২,০০,০০০ ডলার (ট্যাক্সযোগ্য)।

: বার্ষিক ৫০,০০০ ডলার ।

: ১,০০,০০০ ডলার (ট্যাক্সযোগ্য)।

: বার্ষিক ৬৩,০০০ ডলার ।

: হোয়াইট হাউসের বাড়ি।

(হোয়াইট হাউস স্টাফ)

৭. সরকারি বাড়ি হোয়াইট হাউস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ।

৮. পর্যাপ্ত পরিবহন সুযোগ-সুবিধা ।

রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধিকার : সাংবিধানিক অব্যাহতি
Special Right of the President: Constitutional Immunity

মার্কিন রাষ্ট্রপতি কতগুলো ক্ষেত্রে বিশেষ অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক অব্যাহতি ভোগ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের ইমপিচমেন্ট বা অভিসংশন ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। কার্যকালের মধ্যে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো প্রকার দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দায়ের বা কোনো আদালতে তাঁকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করা যায় না; অথবা কংগ্রেসের কোনো কমিটির সামনে তাঁর উপস্থিতি দাবি করা সম্ভব নয়। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমানার অভিযোগও উত্থাপন করা যাবে না। ১৯৩৮ সালে কেনডেল বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মামলায় সুপ্রিমকোর্ট রায় দিয়েছিলেন যে, ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষমতা যার হাতে ন্যস্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো হুকুমনামাই কার্যকর হবে না ।

 

রাষ্ট্রপতির অপসারণ
Removal of the President

রাষ্ট্রপতির স্বাভাবিক কার্যকাল ৪ বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হলে বা তিনি পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়। আবার তিনি পদচ্যুতও হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশনের (Impeachment) মাধ্যমে পদচ্যুত করা যায়। যে সকল কারণে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যায় সেগুলো হলো

ক. রাজদ্রোহিতা বা বিশ্বাসঘাতকতা (Teason);

খ. উৎকোচ গ্রহণ (Bribery )

গ. ঘোরতর কোনো অপরাধ (Commitment of High Crimes ) ;

ঘ. বিধি-বহির্ভূত কাজ (Midemeanours);

ঙ. সংবিধান লঙ্ঘন (Violation of the Constitution )

রাষ্ট্রপতির অভিসংশন বা পদচ্যুতির জন্য কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় অভিযোগ উত্থাপন করতে হয়। রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি সম্পর্কিত প্রস্তাব প্রতিনিধি সভার এক বা একাধিক সদস্য উত্থাপন করতে পারেন। এই প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ার পর প্রতিনিধি সভার বিচার বিভাগীয় কমিটি বা বিশেষ তদন্ত কমিটির নিকট রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়বস্তু পাঠাতে হয়। এই কমিটিকে তার প্রতিবেদন প্রতিনিধিসভার কাছে পাঠাতে হয়। কমিটির এই প্রতিবেদন সভায় বিচার-বিবেচনার পর অধিকাংশ সদস্য ইম্পিচমেন্টের সমর্থন করলে রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার কারণ দেখিয়ে ইম্পিচমেন্টের একটি খসড়া রচনা করা হয়। প্রতিনিধিসভায় অভিযোগটি গৃহীত হলে অভিযোগটি বিচারের জন্য কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে প্রেরণ করা হয়। গিনেট অভিযোগটি বিচার বিবেচনা করে। এ সময় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সিনেটর সভায় সভাপতিত্ব করেন। অভিযুক্ত রাষ্ট্রপতি সিনেটে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান। সিনেটের উপস্থিত সদস্যদের অন্তত: দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অভিযোগটি অনুমোদন করলে রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত হন। রাষ্ট্রপতির ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সম্পৃক্ত করার পদ্ধতিটি আধা-বিচারবিভাগীয় মর্যাদা লাভ করেছে।

১৮৬৮ সালে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে অপসারণের জন্য কংগ্রেসে প্রস্তাব পেশ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৪ সালে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারীর অভিযোগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নিম্ননের বিরুদ্ধে অপসারণ প্রস্তাব কংগ্রেসের প্রতিনিধি সভায় উত্থাপিত হলেও প্রতিনিধিসভা অভিসংশন আনার পূর্বেই তিনি পদত্যাগ করেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অপসারণ প্রস্তাব প্রতিনিধি সভায় এক ভোটের ব্যবধানে পাস করানো সম্ভব হয়নি। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, রাষ্ট্রপতির অপসারণের এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

রাষ্ট্রপতির পদের শূন্যতা উত্তরাধিকার
Vacancy of Presidential Post and Inheritance

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদত্যাগ বা তাঁকে পদচ্যুত করা হলে নির্দিষ্ট কার্যকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়। ফলে রাষ্ট্রপতির কার্যকালের অবশিষ্ট সময়ের জন্য উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির পদ লাভ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক ইতিহাসে এরকম ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। উইলিয়াম ম্যাকিঞ্জির মৃত্যুর পর থিওডোর রুজভেল্ট, হার্ডিং-এর মৃত্যুর পর কুলিজ, কেনেডির মৃত্যুর পর জনসন রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন। আবার রাষ্ট্রপতি নিক্সন ১৯৭৪ সালে পদত্যাগ করার পর উপরাষ্ট্রপতি জেরাল্ড ফোর্ড রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছিলেন।

কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় উপ-রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পর যদি তাঁরও মৃত্যু ঘটে অথবা তিনি পদত্যাগ করেন কিংবা পদচ্যুত হন তবে নতুন করে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে নির্দিষ্ট কার্যকালের অবশিষ্ট সময়ের জন্য এই শূন্য পদ পূরণের ব্যাপারে সংবিধানে কোনো কিছুর উল্লেখ ছিল না। ফলে এ ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেস ১৯৭২ সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনে বলা হয় যে, অবশিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিনিধি সভার স্পিকার রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করবেন। কিন্তু ১৯৮৬ সালে এই ব্যবস্থার আবার পরিবর্তন করে বলা হয়, উপ-রাষ্ট্রপতির পর সেক্রেটারি অব্ স্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী), তারপর ক্রমান্বয়ে প্রতিরক্ষা সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল প্রমুখ মার্কিন কেবিনেটের সদস্যগণ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।

১৯৬৭ সালে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে, কোনো রাষ্ট্রপতি কোনো কারণে নিজ দায়িত্ব সম্পাদনের ব্যাপারে সাময়িক অক্ষমতার কথা লিখিতভাবে কংগ্রেসকে জানাতে পারেন। তখন উপ-রাষ্ট্রপতি কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে জানিয়ে আবার নিজের কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন। তবে শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার জন্য সাময়িকভাবে অসমর্থ হওয়া সত্ত্বেও কোনো রাষ্ট্রপতি তাঁর দায়িত্বভার সাময়িকভাবে হস্তান্তরের ব্যাপারে কংগ্রেসকে লিখিতভাবে না জানালে মার্কিন কেবিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সম্মতিক্রমে উপ-রাষ্ট্রপতি কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন ।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উৎস
Sources of Presidential Powers of the U.S.A

বর্তমানে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রের সরকার প্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে ব্যাপক। মূলত দীর্ঘ দু’শ বছরের অধিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের পরিণতি হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদে বহুবিধ ক্ষমতা পুঞ্জিভূত হয়েছে। নিম্নে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উৎসসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

ক. সংবিধান : মার্কিন রাষ্ট্রপতির যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে বিধায় মার্কিন সংবিধান সেদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রধান উৎস। শাসন, আইন ও বিচার বিভাগীয় ক্ষেত্রে সংবিধান মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে যতটুকু ক্ষমতা স্থির করে দিয়েছে রাষ্ট্রপতি ততটুকু ক্ষমতাই প্রয়োগ করেন। তাছাড়া শাসন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অপ দু’বিভাগের সাথে রাষ্ট্রপতির সম্পর্ক কিরূপ হবে তাও মার্কিন সংবিধান কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

খ. কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত আইন : মার্কিন কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন আইন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অন্যতম উৎস। কেননা, মার্কিন কংগ্রেস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে নানাবিধ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির হস্তে ব্যাপক ক্ষমতা ন্যস্ত করেছে। এভাবে মার্কিন কংগ্রেস পদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা, ১৯২১ সালের কংগ্রেস প্রণীত আইন অনুসারে বাজেট তৈরি ও উত্থাপন ক্ষমতা, ১৯৩৪ সালের বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ক আইন অনুসারে বাণিজ্যিক শুল্ক নির্ধারণ বিষয়ক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হস্তে ন্যস্ত করেছে।

গ. বিচার বিভাগীয় ব্যাখ্যা সিদ্ধান্ত : বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে মার্কিন সুপ্রিমকোর্টও মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করেছে। অর্থাৎ, বিচার বিভাগীয় বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। যে সকল বিষয়ে সংবিধান নীরব ছিল বা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি সেসকল বিষয়ে বিচার বিভাগ তার সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত ব্যাখ্যা প্রদান করে। ১৯২৬ সালে মেয়ার্স বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (Myers Vs United States- 1926) মামলায় সুপ্রিমকোর্ট রায় প্রদান করে যে, রাষ্ট্রপতি এককভাবে সরকারি কর্মচারীদের পদচ্যুত করতে পারবে এবং এক্ষেত্রে তিনি সিনেটের সাথে পরামর্শ নাও করতে পারেন। আবার ১৯৩৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম কার্টিস-রাইট কর্পোরেশনের মামলায় সুপ্রিমকোর্ট প্রদত্ত রায় অনুসারে রাষ্ট্রপতি পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতার অধিকারী হন। ঘ. প্রথাগত বিধান : অপরাপর রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার ন্যায় মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কতকগুলো রীতিনীতি ও প্রথাগত বিধানের উদ্ভব ঘটেছে, যা মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উৎস হিসেবে কাজ করে। মার্কিন সংবিধানে কেবিনেট ব্যবস্থার কোনো উল্লেখ ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ওয়াশিংটন শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে একটি কেবিনেট গঠন করার, তার পর থেকেই বর্তমান পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রপতির কেবিনেট একটি প্রচলিত শাসনতান্ত্রিক প্রথা হিসেবে চলে আসছে। এভাবে সিনেটের সৌজন্যবিধিও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করেছে। বস্তুত মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে সংবিধানে সাধারণভাবে একটি কাঠামো গড়ে তোলা হলেও পরবর্তীতে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রয়োজন পূরণের তাগিদে বিভিন্ন প্ৰথা, পদ্ধতি ও অলিখিত বিধানের উদ্ভব হয়েছে। এগুলো মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিধিকে প্রসারিত করেছে।

৫. স্বনামধন্য রাষ্ট্রপতির ভূমিকা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য রাষ্ট্রপতিগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং বিচক্ষণতা পরবর্তী সময়ের রাষ্ট্রপতিদের ক্ষমতার পরিধিকে সম্প্রসারিত করেছে। জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষক এবং দেশ ও জনগণের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে অনেকে সুদৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা তাদের কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা ও কার্যক্রয়ের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতির প্রভাব ও প্রাধান্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এক্ষেত্রে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন আব্রাহাম লিংকন, উড্রো উইলসন, ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট, থিওডর রুজভেল্ট, আইসেনহাওয়ার, বিল ক্লিনটন প্রমুখ ।

উপরোক্ত আলোচনায় এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেবলমাত্র সংবিধানে লিখিত বিধান ও পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং কংগ্রেস প্রণীত আইন, সাংবিধানিক রীতিনীতি, বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতীক হিসেবে জাতীয় নেতৃত্বের দাবি প্রভৃতি মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অন্যান্য উৎস।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা
Position of the President of U.S.A

মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদের গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রসঙ্গে ব্রগান (Brogan) বলেছেন, “The position of the president of the United States is double. He is the formal head of the nation; he is also the effective head of the executive.” মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদের এ দ্বিবিধ গুরুত্ব ও মর্যাদা রাষ্ট্রপতি পদটিকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, ক্ষমতা, প্রভাব ও প্রতিপত্তির কারণে কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় নয়, বরং সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায়ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির পদটির ‘প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ (Institutionalization) ঘটেছে। নিম্নে মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচনা করা হলো :

ক. প্রভূত ক্ষমতাশালী ব্যক্তি : মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রের শাসন বিভাগীয় প্রধানের চেয়ে অধিকতর ক্ষমতাশালী বললেও অত্যুক্তি হবে না। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন যে, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত কোনো ব্যক্তি মার্কিন রাষ্ট্রপতির ন্যায় ক্ষমতা ও প্রভাবশালী নন। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রপতি একাধারে সুপারিশ করেন, সুপারিশসমূহকে কার্যকর করেন, কর্মসূচি স্থির করেন, সংবিধান যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কেও সচেতন থাকেন। এক কথায় গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব যে ব্যক্তির উপর অর্পিত তিনি হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি।

খ. দলীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু : মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে দলীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। রাষ্ট্রপতি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে কংগ্রেসের নিজ দলের সদস্যদেরকে প্রভাবিত করেন এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর স্বার্থের সাথে কংগ্রেস সদস্যদেরকে যুক্ত করেন। দলীয় সদস্যদের শাস্তিদান বা পুরস্কৃত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে দলীয় প্রার্থীরা রাষ্ট্রপতির সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতাকে মূলধন হিসেবে বিবেচনা করেন। যে কোনো স্তরের নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নিজ দলের প্রধান প্রচার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।

গ. মুখ্য কূটনীতিক : মার্কিন রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান কূটনীতিকের ভূমিকা পালন করেন। সংবিধান অনুযায়ী পররাষ্ট্র সংক্রান্ত সকল বিষয় তাঁর নির্দেশে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টের এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী মুখ্য কূটনীতিবিদ হিসেবে রাষ্ট্রপতির মর্যাদার প্রসার ঘটেছে। সুপ্রিমকোর্টের মতে, বিদেশ সংক্রান্ত ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বকে সংবিধানের অনুচ্ছেদসমূহের মধ্যে বন্দী অবস্থায় রাখার যৌক্তিকতা বর্তমানে অচল ।

ঘ. নীতি নির্ধারণ প্রয়োগ : মার্কিন রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণকারী ব্যক্তি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার সঙ্গে সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন নীতি প্রণীত হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা কিংবা পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। শুধু নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নই নয়, বরং সেসব নীতি ও কর্মসূচিকে কার্যকর করার সিদ্ধান্তও রাষ্ট্রপতিকেই গ্রহণ করতে হয়।

৫. রাষ্ট্রপ্রধান: মার্কিন রাষ্ট্রপতি একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। ব্রিটেনের রানীর ন্যায় তিনি রাজত্ব করেন, আবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় তিনি শাসনও করেন। অর্থাৎ ব্রিটিশ রানী ও প্রধানমন্ত্রীর মিলনস্থল হচ্ছে মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে গোটা জাতিকে নেতৃত্ব প্রদান করেন। মোট কথা, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি জাতীয় স্বার্থের মুখ্য প্রবক্তা।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা পদাধিকারীর ব্যক্তিত্ব ও সমকালীন পরিস্থিতির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তিনি জাতির নেতা ও মুখপাত্র, জাতীয় ঐক্য ও সম্মানের প্রতীক। তিনি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। অবশ্য মার্কিন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তা, প্রজ্ঞা-দক্ষতা ও প্রভাব এ পদের ক্ষমতার প্রসার ও মর্যাদা বর্ধনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।

Leave a Reply