Table of Contents
Toggleমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভার গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভার গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।
Discuss the formation, power and functions of the house of representative of USA.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস নামে পরিচিত। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষকে প্রতিনিধি সভা এবং উচ্চকক্ষকে সিনেট নামে অভিহিত করা হয়। উভয় কক্ষের সদস্যগণ প্রত্যক্ষভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ঐতিহ্য অনুসারে সিনেট হলো অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্বমূলক কক্ষ। আর প্রতিনিধিসভা মার্কিন জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক কক্ষ বা জনপ্রিয় কক্ষ নামে পরিচিত। ব্রিটেনের কমন্সসভা এবং ভারতের লোকসভাকে যে অর্থে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক বলা যায় প্রতিনিধি সভাকে সেই অর্থে এককভাবে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক বলা চলে ।
কংগ্রেসের গঠন
Composition of the Congress
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হবে না দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট হবে এ নিয়ে ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। পূর্বে ‘সমবায়ের সংবিধান’ (Articles of Confederation) অনুযায়ী যে কংগ্রেস গঠিত হয়েছিল তা ছিল এককক্ষবিশিষ্ট। কিন্তু ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে সমবেত নেতৃবৃন্দ এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নানা প্রকার সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন বলে তাঁরা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট কংগ্রেস গঠনের জন্য সচেষ্ট হন। কিন্তু সমবায়ের সংবিধান অনুযায়ী সমমর্যাদা ভোগকারী ক্ষুদ্ররাজ্যসমূহ এই মর্মে দাবি তুলে যে, তাদের পূর্ব মর্যাদা সংরক্ষণের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গৃহীত না হলে তারা নতুন ব্যবস্থা মেনে নেবে না। অপরদিকে, বৃহৎ রাজ্যসমূহের দাবি ছিল, নতুন আইনসভায় তাদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রধান উত্তরাঞ্চলে অধিবাসীগণ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কৃষিপ্রধান দক্ষিণাঞ্চল নিজ নিজ অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় বেশি আগ্রহী ছিল।
এ ধরনের দুটি পরস্পর বিরোধী দাবির মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সংবিধান প্রণেতাগণ কংগ্রেসকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা হিসেবে গড়ে তোলেন। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের নাম ‘সিনেট’ (The Senate) এবং নিম্নকক্ষের নাম ‘প্রতিনিধিসভা’ (The House of Representative)। উচ্চকক্ষ সিনেটে সকল অঙ্গরাজ্যের সমসংখ্যক প্রতিনিধি প্রেরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের দাবি যেমন মেনে নেয়া হয়, তেমনি জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিসভার নির্বাচনের ব্যবস্থা করে উত্তরাঞ্চলের দাবির প্রতি স্বীকৃতি জানানো হয়।
প্ৰতিনিধি সভা
The House of Representative
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আইনসভা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের নাম প্রতিনিধি সভা। জাতীয় প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে প্রতিনিধি সভার সদস্য নির্বাচনের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে।
প্রতিনিধি সভার গঠন
Composition of the House of Representative
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ভিত্তিতে গঠিত হয়। কোন অঙ্গরাজ্য থেকে কত জন সদস্য প্রতিনিধি সভায় নির্বাচিত হবেন তা সাম্প্রতিক আদমশুমারি (Census) অনুসারে নির্ধারিত হয়। আদমশুমারীর পর প্রত্যেক রাজ্যের জনসংখ্যা ও তার প্রাপ্য আসনসংখ্যার ব্যাপারে ‘ব্যুরো অব সেন্সাস’ একটি প্রতিবেদন পেশ করে । সাধারণত সাড়ে তিন লক্ষ জনসংখ্যা প্রতি এক জন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন ।
সংবিধান প্রবর্তনের সময় প্রতিনিধি সভার সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৫ জন। এই সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২৯ সালে প্রণীত “The Reapportionment Act, 1929″ এর মাধ্যমে প্রতিনিধি সভার সদস্য সংখ্যা ৪৩৫ করা হয়েছে। তাই বর্তমানে প্রতিনিধি সভার সদস্য সংখ্যা ৪৩৫ জন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষুদ্র ছয়টি অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি সভায় মাত্র এক জন করে প্রতিনিধি রয়েছেন । রাজ্যসমূহ হলো নেভাদা, ভারমন্ট, আলাস্কা, ওমিং, উত্তর ডাকোটা এবং ডিলাওয়ারা । অপরদিকে, বৃহদায়তন বিশিষ্ট ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য থেকে আছেন ৪৩ জন প্রতিনিধি ।
জেরিমেন্ডারিং
Jerimendering
প্রতিনিধি সভার সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক রাজ্যকে কতগুলো নির্বাচনি জেলায় ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক নির্বাচনি জেলা থেকে এক জন করে সদস্য নির্বাচন করা হয়। মার্কিন সংবিধানের ১নং ধারা এবং ১৯৬৪ সালে প্রদত্ত মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের এক ঘোষণা অনুসারে নির্বাচনি জেলাগুলোর জনসংখ্যার মধ্যে সমতা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এ সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে আঞ্চলিক, রাজনৈতিক, বর্ণবিদ্বেষ প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য গোষ্ঠীসমূহ নিজ নিজ সুযোগ-সুবিধার স্বার্থে নির্বাচনি জেলার সীমানা নির্ধারণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে । রাজনৈতিক দলের এ প্রবণতা পদ্ধতিকে ‘জেরিমেন্ডারিং’ বলা হয়। জেরিমেন্ডারিং হলো এমন একটি পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনি জেলার সীমানা এমনভাবে নির্ধারণ করতে চায় যাতে নিজেদের নির্বাচনি সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। অর্থাৎ, দলীয় স্বার্থে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণ করাকে জেরিমেন্ডারিং বলা হয়। ম্যাসাচুসেটের গভর্নর ‘জেরি’র পরিকল্পনাপ্রসূত বলেই এ কৌশলকে জেরিমেন্ডারিং বলা হয়। বিপক্ষ দলের নির্বাচনি সাফল্যকে কম সংখ্যক জেলার মধ্যে সীমিত রাখা এবং নিজেদের সাফল্যকে অধিক সংখ্যক জেলায় বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে এ পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয় । তবে বর্তমানে নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া, দলীয় মনোভাব, রাজনৈতিক চাপ প্রভৃতি কারণে এ পদ্ধতির কার্যকারিতা ও গুরুত্ব আর তেমন নেই ।
প্রতিনিধি সভার নির্বাচকমণ্ডলীর যোগ্যতা
Qualification of the Electorate of the House of Representative
প্রতিনিধি সভায় ভোটাধিকারের ভিত্তি কী হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যসমূহের। ফলে ভোটার বা নির্বাচক হওয়ার যোগ্যতা এবং নির্বাচন পদ্ধতি বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নীতি অনুসৃত হয়। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে কর প্রদানকে, আবার কোথাও কোথাও শিক্ষাগত যোগ্যতাকে ভোটাধিকারের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে সংবিধানের পঞ্চদশ ও উনবিংশতম সংশোধনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ কিংবা পূর্ব দাসত্বের অজুহাতে কোনো নাগরিককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। তাছাড়া ১৯৩৪ সালে সংবিধানের ২৪তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কর প্রদানে অক্ষমতার অজুহাতে কোনো মার্কিন নাগরিককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
এভাবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃতি লাভ করেছে। পূর্বে ভোটাধিকারের বয়সসীমা ছিল ২১ বছর। কিন্তু ১৯৭২ সালে আনীত সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী অনুসারে বর্তমানে ১৮ বছর বয়স্ক যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের নাগরিক প্রতিনিধি সভার সদস্যদের নির্বাচন করতে পারেন।
প্রতিনিধি সভার সদস্যদের যোগ্যতা
Qualification of the Candidates of the House of Representative
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত যোগ্যতার প্রয়োজন।
এগুলো হলো :
১. প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৫ বছর বয়স্ক হতে হবে;
২. প্রার্থীকে একাধারে অন্তত ০৭ (সাত) বছর যাবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে;
৩. তিনি যে অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন সেই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে;
৪. সরকারি পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি সাধারণত প্রতিনিধি সভার সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারেন না ।
প্রতিনিধি সভার কার্যকাল
Tenure of the House of Representative
মার্কিন প্রতিনিধি সভার কার্যকাল খুবই সীমিত। এই সভার সদস্যগণ মাত্র দু’বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এর কার্যকাল হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায় না। তবে পুনর্নির্বাচনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। প্রতিনিধি সভার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৪৩৫ জন সদস্যের মধ্যে ২১৮ জনের উপস্থিতি প্রয়োজন ।
প্রতিনিধি সভার সদস্যদের বেতন-ভাতা ও অব্যাহতি
মার্কিন সংবিধানে বলা হয়েছে যে, প্রতিনিধি সভার সদস্যদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা আইনের দ্বারা নির্ধারণ করা হবে। ১৯৬৪ সালে প্রতিনিধি সভার সদস্যদের বার্ষিক বেতন ২২,৫০০ ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ৩০,০০০ করা হয়। ২০০০ সালে তা বাৎসরিক ৬০,৬৬২ ডলারে উন্নীত করা হয়, যা বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। তাছাড়া তারা অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ- সুবিধা ভোগ করেন। নিজ দপ্তরের কার্যাদি পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি সভার প্রত্যেক সদস্য বাৎসরিক নির্দিষ্ট পরিমাণে ভাতা পান। এর সাথে ওয়াশিংটনে ও নিজ রাজ্যে বিনা মাশুলে ডাকের ব্যবস্থা, বিনা ভাড়ায় দপ্তর পরিচালনার জন্য ঘর ও যাতায়াত ভাতা দেয়া হয় ।
প্রতিনিধি সভার সদস্যদেরকে ফৌজদারি অপরাধে গ্রেপ্তার করা গেলেও অধিবেশন চলাকালীন সময়ে দেওয়ানী অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা যায় না। প্রতিনিধি সভার অধিবেশন চলাকালে সভায় আলোচনায় অংশগ্রহণ সূত্রে সদস্যগণ যেসকল বক্তব্য পেশ করেন সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা যায় না ।
প্রতিনিধি সভার অধিবেশন
সংবিধান অনুসারে প্রতিনিধি সভার অধিবেশন বছরে অন্তত এক বার আহ্বান করতে হয়। ৩ জানুয়ারি অধিবেশন শুরু হয়ে সাধারণত ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলতে থাকে। কংগ্রেসের উভয় কক্ষের অধিবেশন সাধারণত একই সাথে আরম্ভ হয় এবং একই সাথে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তবে রাষ্ট্রপতি বিশেষ প্রয়োজনে যে কোনো সময় প্রতিনিধি সভার বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। তাছাড়া, ১৯৪৪ সালে একটি প্রস্তাব অনুসারে সিনেটের সভাপতি এবং প্রতিনিধি সভার স্পিকার কিংবা উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অথবা সংখ্যালঘু দলের নেতৃদ্বয় বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। প্রতিনিধি সভার অধিবেশনে স্পিকার সভাপতিত্ব করেন।
মার্কিন প্রতিনিধি সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি
Powers and Functions of the House of Representative
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় প্রতিনিধি সভাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। নিম্নে মার্কিন প্রতিনিধি সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
ক. প্রতিনিধি সভা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। যে কোনো ধরনের বিল প্রতিনিধি সভায় উত্থাপন করা যায়। আবার অর্থ বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি সভা একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী। কেননা, অর্থ বিলসহ কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে উত্থাপন করা যায় না। অর্থ বিল প্রতিনিধি সভাতেই সর্বপ্রথম উত্থাপন করতে হয়। তবে অর্থ বিল, যে কোনো প্রকার বিল পাসের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের সম্মতি প্রয়োজন হয়। কোনো বিল পাসের ব্যাপারে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের মধ্যে মতপার্থক্যের উদ্ভব হলে উভয় কক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ‘কনফারেন্স কমিটি’ (Conference Committee) বিলটির নিষ্পত্তি করে ।
খ. রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি প্রমুখের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, উৎকোচ গ্রহণ প্রভৃতির অভিযোগে প্রতিনিধি সভা ইম্পিচমেন্ট আনয়ন করতে পারে। অবশ্য ইম্পিচমেন্টের বিচার করার ক্ষমতা এককভাবে এই কক্ষের নেই ।
গ. সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে সিনেটের ন্যায় প্রতিনিধি সভাও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী।
ঘ. নতুন কোনো রাজ্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সিনেটের ন্যায় প্রতিনিধি সভারও সম্মতি প্রয়োজন । ঙ. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত প্রথম তিন জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে প্রতিনিধি সভা রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করতে পারে ।
চ. সভার কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন প্রণয়ন এবং প্রচলিত নিয়মকানুনের পরিবর্তন সাধনের ক্ষমতা প্রতিনিধি সভার রয়েছে।
মার্কিন প্রতিনিধি সভা উপরিউক্ত ক্ষমতা ও কার্যাবলির অধিকারী হলেও কংগ্রেসের উভয় কক্ষের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, প্রতিনিধি সভা অপেক্ষা সিনেট অধিক ক্ষমতার অধিকারী। অর্থ বিল সিনেটে উত্থাপন হতে পারে না বিধায় আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ব্যাপারে সিনেট অপেক্ষা প্রতিনিধি সভা অধিক ক্ষমতাশালী। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত চিত্র দেখা যায়। কারণ, সিনেট প্রতিনিধি সভা কর্তৃক প্রেরিত অর্থ বিলের কেবলমাত্র শিরোনামটি বাদ দিয়ে বাকী সবকিছুই পরিবর্তন সাধন করতে পারে ।
প্রতিনিধি সভার স্পিকার
Speaker of the House of Representative
মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার ব্রিটিশ কমন্সসভার স্পিকারের ন্যায় দল নিরপেক্ষ নন। কেননা, প্রতিনিধি সভার স্পিকার দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচিত হন এবং প্রতিনিধি সভায় নিজ দলকে নেতৃত্বদান করেন। মার্কিন স্পিকার প্রতিনিধি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান মুখপাত্র বা নেতা হিসেবে দলীয় স্বার্থে তাঁর ক্ষমতাবলি প্রয়োগ করেন। মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হয়েছে বিধায় শাসন বিভাগীয় প্রধান রাষ্ট্রপতি কিংবা তাঁর কেবিনেটের সদস্যগণ কংগ্রেসের অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে কিংবা প্রতিনিধি সভায় নেতৃত্ব প্রদান করতে পারেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভায় নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা স্পিকারের উপর অর্পিত হয়েছে।
প্রতিনিধি সভার স্পিকারের নির্বাচন ও কার্যকাল
Election and Tenure of the Speaker of House of Representative
সংবিধান অনুযায়ী প্রতিনিধি সভার সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে থেকে এক জনকে অধ্যক্ষ বা স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত করেন। তবে স্পিকারকে যে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ তথা প্রতিনিধি সভার সদস্যই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই । তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বা প্রথা অনুসারে প্রতিনিধি সভার নবনির্বাচিত সদস্যগণ অধিবেশনের শুরুতেই নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত করেন। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় কার্যত দলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে কার্যত প্রতিনিধি সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দই নির্ধারণ করেন স্পিকার কে হবেন এবং এই দলের সাধারণ সদস্যরা স্পিকার নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করেন মাত্র।
প্রতিনিধি সভার স্পিকারের কার্যকাল ২ বছর। অবশ্য একই দল একাধিকবার প্রতিনিধি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে প্রাক্তন স্পিকারের পুননির্বাচনের পথে কোনো অসুবিধা থাকে না। সাম রেবার্ন (Sam Ryburn) ১৬ বছর স্পিকার হিসেবে কার্য সম্পাদন করেছেন। বর্তমানে প্রতিনিধি সভার স্পিকার বছরে ৭৫,০০০ ডলার বেতন ও একই সাথে অন্যান্য ভাতা পান।
প্রতিনিধি সভার স্পিকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
Powers and Functions of the Speaker of House of Representative
প্রতিনিধি সভার স্পিকারের ক্ষমতা দীর্ঘদিনের ক্রমবিবর্তনের ফল। কেননা, ১৯১০ সালের পূর্বে প্রতিনিধি সভার স্পিকার এত ব্যাপক ক্ষমতা চর্চা করতেন যে, কেউ কেউ তাকে আমেরিকার ‘জার’ (Czar) নামে অভিহিত করেন। প্রতিনিধি সভার যেসব সদস্য স্পিকারের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখতেন স্পিকার সেসব সদস্যের মতামতের উপর গুরুত্ব আরোপ করতেন। তাঁর বিরাগভাজন কোনো সদস্য সভায় বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পেতেন না। প্রতিনিধি সভার বিভিন্ন কমিটির পদ স্পিকার তাঁর অনুগ্রহভাজন সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করতেন। ‘বিধি প্রণয়ন কমিটি’ (Rules Committee) -এর চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিধি প্রণয়ন ও সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও প্রভূত ক্ষমতা ভোগ করতেন। স্পিকার রীড (Thomas B. Read)-কে তাঁর স্বৈরাচারী আচরণের জন্য অনেকে ‘জার’ (Czar) রিড আখ্যা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে স্পিকার ক্যানন (Joseph G. Cannon) এর নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রিপাবলিকান দলীয় স্পিকার ক্যাননের স্বৈরাচারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ১৯১০ সালে তার নিজ দলীয় বেশ কিছু সদস্য বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। রিপাবলিকান পার্টির এ বিক্ষুব্ধ সদস্যগণ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে একযোগে তীব্র ও ব্যাপক আন্দোলনে সামিল হন। এ আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বহু ক্ষমতা স্পিকারের হাতছাড়া হয়ে যায়। নিয়ম সংক্রান্ত কমিটি থেকে তিনি অপসারিত হন, বিভিন্ন কমিটিতে সদস্য মনোনয়নের ব্যাপারে তাঁর ক্ষমতা বহুলাংশে সঙ্কুচিত হয়। অধিকন্তু, তখন থেকেই স্পিকারের পদটিকে কিছুটা দলনিরপেক্ষ করার প্রয়াস চালানো হয়।
পূর্বেকার অপ্রতিহত ক্ষমতা হ্রাস পেলেও প্রতিনিধি সভার স্পিকার বর্তমানে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী :
ক. সভা পরিচালনা : স্পিকার সভাপতি হিসেবে প্রতিনিধি সভার কার্য পরিচালনা করেন। তিনি সভার বিতর্ক, সদস্যদের বিতর্কে অংশগ্রহণ, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সভায় সদস্যদের বক্তব্য পেশ, প্রস্তাব উত্থাপন বা সংশোধনের দাবি পেশ প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতি লাগে। স্পিকারের সম্মতি ব্যতীত সভায় কোনো সদস্য বক্তব্য পেশ করতে পারেন না। তবে প্রতিনিধি সভার সদস্যদের বক্তৃতা পেশ করার অধিকার সভার কার্যবিধি অনুসারে স্বীকৃত। তবুও এক্ষেত্রে স্পিকার স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। কোনো সংশোধনী প্রস্তাব বৈধ কি-না তা স্পিকার ঠিক করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে ভোট গ্রহণ এবং তার ফলাফল তিনিই ঘোষণা করেন। সভার সদস্য হিসেবে স্পিকার যে কোনো বিষয়ে ভোট দিতে পারেন। তবে সাধারণত তিনি এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না। কিন্তু কোনো সংশোধনী প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট পড়লে জটিলতা নিরসনের জন্য স্পিকার ‘নির্ণায়ক ভোট’ (Casting Vote) প্রদান করে থাকেন।
খ. বিধি-বিধান ব্যাখ্যা: ১৯১২ সালের পর প্রতিনিধি সভার বিধি সংক্রান্ত কমিটি’ এর সভাপতি পদ থেকে স্পিকারকে অপসারণ করা হলেও মার্কিন প্রতিনিধি সভার কার্য পরিচালনা সম্পর্কিত নিয়মকানুন ব্যাখ্যার অধিকার ও ক্ষমতা বৰ্তমানেও স্পিকারের হাতে ব্যাপকভাবে রয়েছে। সাধারণত এসমস্ত ক্ষেত্রে যে কোনো বৈধতার প্রশ্ন দেখা দিলে স্পিকারের ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হয়। কিন্তু সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে তাঁরা তা অগ্রাহ্য বা বাতিল করতে পারেন। তবে স্পিকার হলেন সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। এ কারণে তাঁর ব্যাখ্যা বা সিদ্ধান্ত সাধারণত বাতিল হয় না।
গ. শৃঙ্খলা রক্ষা : প্রতিনিধি সভার নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে স্পিকারের উপর। সভার স্বাভাবিক কাজে যাতে করে কোনো সদস্য বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে তাকে দৃষ্টি রাখতে হয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য তিনি কোনো সদস্যকে সতর্ক করে দিতে পারেন। তবে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে সভার নির্দেশ প্রয়োজন হয়। প্রতিনিধি সভার সদস্যগণ সভার মর্যাদা বিরোধী, অসম্মানজনক বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো শব্দ ব্যবহার করলে তিনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ।
ঘ. কমিটিতে বিল প্রেরণ : স্পিকার প্রতিনিধি সভার বিভিন্ন কমিটিতে বিল প্রেরণ করেন। এক্ষেত্রে কোন কমিটিতে কোন বিল প্রেরিত হবে তা স্পিকারই স্থির করেন। অবশ্য বর্তমানে এ ধরনের ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়মমাফিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিলের বিষয়বস্তু অনুসারে প্রতিনিধি সভার ক্লার্ক বিলগুলোকে কমিটির নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু কোন বিল কোন কমিটিতে খাবে এ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হলে স্পিকারকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
ঙ. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা : স্পিকার প্রতিনিধি সভার ‘সমগ্র কক্ষ কমিটি’ (Committee of the whole house)-এর সদস্যদের নিয়োগ করে থাকেন। তিনি এ কমিটির চেয়ারম্যানকেও মনোনয়ন দেন। এছাড়া সভার বিশেষ কমিটিতে স্পিকার সদস্য নিয়োগ করার অধিকারী। অন্যান্য যুগ্ম কমিটি ও কমিশনের সদস্যগণকে স্পিকার বিধি মোতাবেক মনোনীত করতে পারেন। প্রতিনিধি সভার স্পিকার হিসেবে অস্থায়ী স্পিকারকে নিযুক্ত করার ক্ষমতাও তিনি চর্চা করেন। তবে স্পিকারের এ নিয়োগ মাত্র তিন দিনের জন্য কার্যকর থাকে ।
চ. আইন প্রণয়নে ভূমিকা : প্রতিনিধি সভার নেতা হিসেবে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্পিকার যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। সাধারণত স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিধি সভায় বিলের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এই কমিটির সদস্য মনোনয়নের ক্ষমতা বর্তমানে স্পিকারের হাতে না থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের একজন কর্তৃত্বসম্পন্ন নেতা হিসেবে তিনি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। প্রতিনিধি সভায় আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজ-কর্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে এককভাবে স্পিকারই হলেন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ।
ছ. দলীয় ভূমিকা : নিজ দলের নেতা হিসেবেও স্পিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। সভার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে, দলের নেতাদের সাথে পরামর্শ করে তিনি দলীয় কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। স্পিকার আহ্বান না করলে কোনো সদস্য সভার বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। স্পিকার তাঁর এ ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজ দলের সদস্যদেরকে অধিক বক্তৃতাদানের সুযোগ দিয়ে দলীয় নীতিকে বাস্তবে রূপায়িত করেন। সভায় দলীয় রাজনৈতিক কার্যকলাপের তিনিই হলেন কেন্দ্রবিন্দু ।
বস্তুতপক্ষে মার্কিন প্রতিনিধিসভার স্পিকার ব্যাপক ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব। স্পিকার দলীয় নেতা তো বটেই, তদুপরি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন তিনজন পদাধিকারী ব্যক্তিত্বের মধ্যে একজন। অধ্যাপক রিসলে বলেন, “ক্ষমতা ও পদমর্যাদার দিক দিয়ে স্পিকারের উপরে সম্ভবত দু’জনের স্থান -রাষ্ট্রপতির ও প্রধান বিচারপতির।” ১৯১০ সালের পর হতে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পিকারের ক্ষমতা অনেকটা হ্রাস করা হলেও তিনি আজও ক্ষমতা, মর্যাদা ও নেতৃত্বের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আসীন ।
প্রতিনিধি সভার স্পিকার পদের গুরুত্ব ও পদমর্যাদা
Significance and Status of the Speaker of House of Representative
মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতার অধিকারী। মার্কিন শাসনব্যবস্থার বিশেষ প্রকৃতি স্পিকারের পদটিকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। ব্রিটেনের কমন্সসভার স্পিকারের তুলনায় তাঁর ক্ষমতা অনেক বেশি। মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার ব্রিটেনের স্পিকারের মতো কেবলমাত্র সভার সভাপতি নন, তিনি সভায় নিজ দলের নেতা। মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগের কারণে শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ আইনসভায় কোনো রকম নেতৃত্বদান বা কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন না বিধায় প্রতিনিধি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব স্পিকারের উপর এসে পড়েছে। সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে তিনি দলীয় নীতি ও কর্মসূচিকে রূপায়ণের জন্য সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। যে কারণে অধ্যাপক মুনরো (Prof. Munro) বলেন, “স্পিকার হওয়া এক বিশেষ গৌরবের বিষয়”। নিজ দলের একজন প্রথম সারির
নেতা হিসেবে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকে। প্রতিনিধি সভায় রাষ্ট্রপতি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও স্পিকারকেই দলীয় নীতি ও কর্মসূচি কার্যকর করার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হয়। মার্কিন স্পিকারের এ ধরনের রাজনৈতিক ভূমিকা তাঁর ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। কার, বার্নস্টেইন এবং মারফি (Carr, Bernstein and Murphy) তাঁদের “American Democracy” গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, “The Speaker of the house is almost one of the two or three most respected and influential members of the majority party.”
কিন্তু বর্তমানে মার্কিন স্পিকারের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর তিনি সম্পূর্ণ দলীয় স্বার্থে কাজ করেন না। ব্রিটেনের কমন্সসভার স্পিকারের ন্যায় মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকারের দলনিরপেক্ষ হবার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ঐতিহ্য, মার্কিন দলীয়ব্যবস্থা, শৃঙ্খলার অভাব, সরকারি কাঠামো প্রভৃতির কারণে ব্রিটিশ কমন্সসভার স্পিকারের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার স্পিকারকে রাজনীতি নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। মার্কিন স্পিকারকে বর্তমান সভার সভাপতি হিসেবে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশেষ বিচার-বিবেচনার সঙ্গে কাজ করতে হয়। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে দলীয় কর্মসূচিকেও কার্যকর করার চেষ্টা করতে হয়। এরকম জটিল ভূমিকা পালনের জন্য বিশেষ গুণগত যোগ্যতা প্রয়োজন। একজন সাধারণ মানের ব্যক্তি স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হলে কমন্সসভার স্পিকারের ন্যায় তিনি কেবল সভার সভাপতি হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে যাবেন; অতিরিক্ত কোনো ক্ষমতা তিনি ভোগ করতে পারবেন না। আবার হেনরি ক্লে, টমাস রীড বা জোসেফ ক্যানন-এর ন্যায় কোনো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নেতা স্পিকারের পদে অধিষ্ঠিত হলে তিনি যে প্রভূত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হবেন এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই ।
প্রতিনিধি সভা ও কমন্সসভার স্পিকারের মধ্যে তুলনা
Comparative discussion between the Speakers of the House of Representatives and the House of Commons
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভা এবং ব্রিটেনের আইনসভার নিম্নকক্ষ কমন্সসভার সভাপতি স্পিকার হিসেবে আখ্যায়িত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা এবং ব্রিটেনে সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রচলিত। শাসনব্যবস্থার এই ভিন্নতার কারণে উভয় দেশের আইনসভার নিম্নকক্ষের স্পিকারের মধ্যে কতিপয় সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
সাদৃশ্যসমূহ
Similarities
মার্কিন প্রতিনিধিসভার স্পিকার ও ব্রিটিশ কমন্সসভার স্পিকারের মধ্যে যেসকল ক্ষেত্রে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো হলো : ক. মার্কিন প্রতিনিধিসভা এবং ব্রিটিশ কমন্সসভার শি ….র উভয়েই সাধারণ নির্বাচনের পর অধিবেশনের প্রথমেই স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন ।
খ. উভয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে স্পিকার নির্বাচিত হয়ে থাকেন। যদিও ব্রিটেনে সামান্য ব্যতিক্রম ঘটে থাকে। গ. মার্কিন প্রতিনিধিসভার স্পিকারের ন্যায় কমন্সসভার স্পিকারও নিজ নিজ সভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
ঘ. সভার কার্যপরিচালনা সম্পর্কিত বিধি-নিয়ম ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ, সদস্যদের প্রস্তাব ও বক্তব্য পেশ এবং আলোচনা অনুমতি প্রদান, সভার মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা প্রভৃতি দায়িত্ব উভয় সভার স্পিকারই পালন করে থাকেন।
ঙ. প্রতিনিধি সভা ও কমন্সসভার মেয়াদ যতদিন স্পিকারের মেয়াদও তত দিন ।
চ. উভয় দেশের স্পিকারের পূর্বানুমতি ব্যতীত সভার কোনো সদস্য সভায় বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন না। কমন্সসভার স্পিকার কমন্সসভা এবং ব্রিটিশ রাজারানীর মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। অনুরূপভাবে প্রতিনিধি সভার স্পিকারও মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও প্রতিনিধি সভার মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
বৈসাদৃশ্যসমূহ Dissimilarities
কতিপয় ক্ষেত্রে সাদৃশ্যের কথা বাদ দিলে মার্কিন প্রতিনিধি সভা ও ব্রিটিশ কমন্সসভার স্পিকারের ক্ষমতা, পদমর্যাদা ও কার্যাবলির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। দৃশ্যমান ব্যাপক পার্থক্যের কারণে মার্কিন ও ব্রিটিশ স্পিকারের পদ দু’টিকে সম্পূর্ণ পৃথক সংস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কার্টার, রেনী ও হার্ড-এর মতানুসারে, কমন্সসভার স্পিকারের ভূমিকা জানতে হলে প্রতিনিধি সভার স্পিকারকে ভুলে যাওয়া প্রয়োজন। নিম্নে উভয়ের মধ্যকার পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
ক. নির্বাচনের ক্ষেত্রে পার্থক্য : ব্রিটিশ কমন্সসভায় দলীয় বিচার বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে স্পিকার নির্বাচন করা হয় বিধায় এখানে কমপসভায় স্পিকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্পিকার নির্বাচনের রীতিনীতি পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতার সাথে আলাপ-আলোচনা করে স্পিকার নির্বাচনের ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। বিগত কমন্সসভার স্পিকার পুনর্নির্বাচনে আগ্রহী হলে সাধারণত তাকেই সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচন করা হয়।
কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যদের সমর্থনের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন বিধায় স্পিকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনিবার্য। রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার জন্য কমন্সসভার স্পিকার পুনর্নির্বাচিত হতে পারলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার স্পিকারের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। এখানে দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে স্পিকার নির্বাচিত হয় ।
খ. দল নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে : ব্রিটেনের কমন্সসভার স্পিকার দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে সভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। ব্রিটেনে কমন্সসভার স্পিকারের নিরপেক্ষতাকে এত বেশি মর্যাদা দেয়া হয় যে, কোনো ব্যক্তি একবার স্পিকার পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ইচ্ছা করলে সারা জীবন স্পিকার পদে থাকতে পারেন। কমন্সসভার স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর দলীয় সদস্যপদ ত্যাগ করেন এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে সভার কার্য পরিচালনা করেন। ব্রিটেনে স্পিকারের নিরপেক্ষতার বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল এত বেশি শ্রদ্ধাশীল যে, স্পিকার যাতে করে পরবর্তী নির্বাচনে সহজেই বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন সেজন্য তার সংসদীয় আসনে কোনো রাজনৈতিক দল সাধারণত প্রার্থী দেন না। এভাবে তাঁর স্পিকার পদটি সুরক্ষিত থাকে বিধায় তিনি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করতে পারেন। কমন্সসভার স্পিকার সাধারণত কোনো বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।
অপরদিকে, মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তিনি হলেন প্রতিনিধি সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। যে কারণে প্রতিনিধি সভার স্পিকার নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সর্বসম্মত ভিত্তিতে হয় না। স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হবার পরও তিনি তাঁর নিজ দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখেন। তিনি দলীয় স্বার্থে বক্তৃতা করেন, ভোট দেন এবং বিল উত্থাপন করেন। বস্তুত কমন্সসভার স্পিকারের ন্যায় দলনিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করা প্রতিনিধি সভার স্পিকারের পক্ষে সম্ভব হয় না।
গ. সভার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে : প্রতিনিধি সভার স্পিকার কার্য পরিচালনা এবং সভার কার্যবিধি ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হন। মার্কিন স্পিকার সভার কার্যসূচি নির্ধারণ এবং সভা পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন অনেক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন যা ব্রিটেনে কেবিনেট করে থাকে। ব্রিটেনে কমন্সসভার স্পিকার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে দলীয় সহানুভূতি এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে কেবল কার্যপদ্ধতির নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকেন ।
ঘ. বিতর্কে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পার্থক্য : ব্রিটেনের কমন্সসভার স্পিকার কখনো সভার আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন না । তিনি সভার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম যতটুকু কথা বলার প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি কথা বলেন না। কিন্তু, মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার সভার আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন। দলের নেতা হিসেবে দলীয় নীতির অনুমোদনে সহযোগিতা করা তাঁর দায়িত্ব। তিনি প্রতিনিধি সভায় দলীয় বক্তব্য উপস্থাপন করেন ।
৫. ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে : ব্রিটেনের কমন্সসভার স্পিকার কেবলমাত্র কোনো প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়লে অচলাবস্থা নিরসনের জন্য একটি ‘নির্ণায়ক ভোট’ প্রদান করেন। তাও আবার তিনি এমনভাবে এ নির্ণায়ক ভোট প্রদান করেন যাতে প্রশ্নটির চূড়ান্ত মিমাংসা না হয় এবং বিষয়টি নিয়ে পুনরায় কমন্সসভায় আলোচনার সুযোগ থাকে। কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার যে কোনো বিষয়ে ভোট প্রদান করেন এবং ভোট প্রয়োগটি সর্বদাই দলীয় স্বার্থে হয়ে থাকে ।
চ. আর্থিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে। কমাসভার স্পিকার আর্থিক দিক দিয়ে প্রতিনিধি সভার স্পিকারের তুলনায় অ অধিকারী। ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট আইন অনুসারে কোনো একটি বিল অর্থবিল কি-না তা কমন্স সভার স্পিকার নির্ধারণ করে এবং এক্ষেত্রে স্পিকারের সিদ্ধান্তই হলো চূড়ান্ত। আবার অর্থ নিল কমপসভায় পাস হওয়ার পর রাজা বা রানীর অনুমোদে জন্য পাঠানোর সময় স্পিকারকে এই মর্মে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয় যে, সংশ্লিষ্ট নিপটি হলো একটি অর্থ দিল। কিন্তু এরকম কোনো ক্ষমতা মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকারের নেই।
ছ. রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে পার্থক্য। মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার কমপসভার স্পিকারের তুলনায় অ রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করেন। প্রতিনিধি সভার স্পিকার একাধারে সভার সভাপতি এবং সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। সভার আলোচনা ও বিতর্কে যোগ দেন এবং দলের প্রথম সারির নেতা হিসেবে তিনি দলীয় মতামত ব্যক্ত করেন। এভাবে তিনি রাজনৈতিক অভিমত প্রকাশ এবং নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু কমাসভার স্পিকার তাঁর নিরপেক্ষ চরিত্রের কারণে এ ধরনের ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন না। তিনি দলের প্রতি সহানুভূতি ও ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার উর্দে থেকে সতার কাজ পরিচালনা করেন।
জ. ক্ষমতার হ্রাসকরণ প্রসঙ্গে প্রতিনিধি সভার স্পিকার অতীতে নিজ কক্ষের কমিটিসমূহের সদস্যাদের মনোনয়নে একচ্ছত্র ক্ষমতা চর্চা করতেন। কিন্তু বর্তমানে সে ক্ষমতা ম্লান হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানোর প্রয়াস এবং দদীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাই এর অন্যতম কারণ। অন্যদিকে কমপসভার স্পিকারের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার কারণে তাঁর ক্ষমতা হ্রাসের প্রয়োজন হয় নি।
ঝ, মর্যাদা ও প্রভাবের ক্ষেত্রে : কমন্সসভার স্পিকার তাঁর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার কারণে ব্যাপক প্রভাব ও মর্যাদার অধিকারী। তাঁর পুনর্নির্বাচনে বাধা নেই; বরং আগ্রহী থাকলে আজীবন স্পিকার পদে সমাসীন থাকতে পারেন।
কিছু মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার এ ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। কারণ তিনি দলীয় রাজনীতির গণ্ডির মধ্যে থেকে দায়িত্বভার পালন করেন। যে কারণে তাঁর ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। পূর্বে প্রতিনিধি সভার স্পিকার যে ক্ষমতা চর্চা করতেন বর্তমানে ততটুকু নেই ।
মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার এবং ব্রিটিশ কমন্সসভার স্পিকারের ক্ষমতা, পদমর্যাদা ও ভূমিকার ক্ষেত্রে যে সকল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তার মূলে রয়েছে দুটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যকার স্বাতন্ত্র্য। ব্রিটেনে সংসদীয় গণতন্ত্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ব্রিটেনে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মূল নীতি অনুসারে কমপসভার সঙ্গে কেবিনেটের গভীর যোগাযোগ বর্তমান। প্রকৃত প্রস্তাবে কমন্সসভায় কেবিনেটের কর্তৃত্ব কায়েম হয় বিধায় স্পিকার দলীয় নেতা হিসেবে কমন্সসভায় সক্রিয় হলে কেবিনেটের সঙ্গে কর্তৃত্বের প্রশ্নে সংঘাত দেখা দিতে পারে। যে কারণে কমপসভায় স্পিকার দলনিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর পুনর্নির্বাচন সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপস্থিতির কারণে মার্কিন আইন ও শাসন বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। মার্কিন কেবিনেট প্রতিনিধি সভায় নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে না বিধায় স্পিকার প্রতিনিধি সভায় দলীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করেন। প্রতিনিধি সভায় দলীয় নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য স্পিকার অনেক সময় ক্ষমতা ও মর্যাদাগত বিচারে মার্কিন রাষ্ট্রপতির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়েন।