মার্কিন  উপ-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি

মার্কিন  উপ-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কার্যাবলি

Power and Functions of the Vice-President

উপ-রাষ্ট্রপতি
The Vice-President

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির পদের পাশাপাশি উপ-রাষ্ট্রপতির পদ রয়েছে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের জন্যই উপ-রাষ্ট্রপতির পদের সৃষ্টি করা হয়েছে। যে কারণে উপ-রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির ন্যায় যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন । মার্কিন সংবিধানের ২(১) ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতির অপসারণ, মৃত্যু, পদত্যাগ ও অক্ষমতার ক্ষেত্রে ঐ পদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি উপ-রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত হয় ।

উপ-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন
Election of the Vice-President

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর অন্তর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় একজন উপ-রাষ্ট্রপতিও নির্বাচন করা হয়। মূল সংবিধানে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা ছিল না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেই উপ- রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হতো। কিন্তু ১৮০০ সালে জেফারসন ও বার এবং ১৮২৪ সালে জ্যাকসন ও জন কুইন্সি অ্যাডামস সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ার ফলে এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয় এবং রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংকটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী দ্বারা এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের একই প্রক্রিয়ায় উপ-রাষ্ট্রপতিও চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নিজের পরে মতো উপ-রাষ্ট্রপতি পদে একজন প্রার্থীর নাম ঠিক করেন। নির্বাচক সংস্থার সদস্যগণ একই সময়ে পৃথকভাবে দুটি পদের নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন। তবে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি একই অঙ্গরাজ্যের অধিবাসী হন না।

মার্কিন  উপ-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কার্যাবলি
Power and Functions of the Vice-President

মার্কিন সংবিধান অনুসারে উপ-রাষ্ট্রপতির প্রধান কাজ হলো সিনেটের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা। সিনেট সভা পরিচালনার ব্যাপারে উপ-রাষ্ট্রপতির ভূমিকা নেহায়েতই নিয়মতান্ত্রিক। কারণ সিনেটের কাজ-কর্ম কীভাবে পরিচালিত হবে তা সিনেটের সদস্যরাই স্থির করেন। উপ-রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি বা অক্ষমতার ক্ষেত্রে সিনেটের সভাপতি হন একজন অস্থায়ী সভাপতি। তবে উপ-রাষ্ট্রপতি যেহেতু সিনেটের সদস্য নন, সেহেতু তিনি সিনেট সভার বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন না বা ভোট দান করেন না। তবে কোনো বিষয়ে ভোটাভোটিতে উভয় পক্ষে সমান ভোট পড়লে তিনি কেবল ‘নির্ণায়ক ভোট’ (Casting Vote) দিতে পারেন ।

কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় পর্যন্ত উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি পদের ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদন করেন। এভাবে আজ পর্যন্ত নয় জন উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কার্যকাল শেষ হবার পূর্বে চারজন রাষ্ট্রপতির মৃত্যু হয়েছে, চার জন নিহত হয়েছেন এবং বাকি একজন পদত্যাগ করেছেন। উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করলে নতুন রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নিজের দলের একজনকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করেন। যদিও এক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি নিক্সন পদত্যাগ করলে উপ-রাষ্ট্রপতি ফোর্ড রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন এবং রকফেলারকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রপতি কোর্ড কিংবা উপ-রাষ্ট্রপতি রকফেলার কেউ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন না। মানসিক অসুস্থতার কারণে উপ-রাষ্ট্রপতি অ্যাগনিউ পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতি নিক্সন ফোর্ডকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি না হয়েও একই সময়ে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি পদে দু’জন ব্যক্তির অধিষ্ঠিত থাকার ঘটনা মার্কিন শাসনব্যবস্থায় একবারই ঘটেছে ।

মার্কিন-উপ-রাষ্ট্রপতির-ক্ষমতা-ও-কার্যাবলি

মার্কিন কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করে উপ-রাষ্ট্রপতিকে নৌ-বিদ্যালয়, সামরিক বিদ্যালয়, জাতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা, বোর্ড অব রিজেন্টস প্রভৃতি কয়েকটি বিষয়ে ছয় ধরনের ক্ষমতা প্রদান করেছে। তাছাড়া, ২৫ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে যে, সিনেটের সভাপতি বা প্রতিনিধিসভার অধ্যক্ষের নিকট রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব সম্পাদনের ক্ষেত্রে নিজের অক্ষমতার কথা জানালে উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করবেন। আবার কেবিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ও উপ- রাষ্ট্রপতি, সিনেটের সভাপতি বা প্রতিনিধিসভার অধ্যক্ষের নিকট কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অক্ষমতার অভিযোগ লিখিতভাবে জানালে উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপতি তাঁর বিরুদ্ধে অক্ষমতার অভিযোগ লিখিতভাবে অস্বীকার করলে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় ।

উপ-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি বস্তুত অত্যন্ত সীমিত ও গুরুত্বহীন। মার্কিন শাসনব্যবস্থায় উপ-রাষ্ট্রপতিকে যথার্থ স্বীকৃতি দেয়া হয় নি । সিনেটের সভাপতি হিসেবে তাঁর করার কিছু থাকে না। তাছাড়া অনেক রাষ্ট্রপতি উপ-রাষ্ট্রপতির পদটিকে নগণ্য জ্ঞান করে থাকেন। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীগণ তাঁদের সহযোগী হিসেবে কোনো বিচক্ষণ ব্যক্তিকে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করতে চান না। ফ্রাঙ্কলিন উপ-রাষ্ট্রপতির পদাধিকারীকে “His Superfluous Highness” বলে অভিহিত করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস নিজের পদটিকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট একটি পদ বলে অভিহিত করেন।

তবে বর্তমান শতাব্দিতে কিন্তু উপ-রাষ্ট্রপতি পদের গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে রুজভেল্ট, ওয়ালেস, নিক্সন প্রমুখ উপ-রাষ্ট্রপতিদের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। রাষ্ট্রপতি আইসেনহাওয়ার উপ-রাষ্ট্রপতি নিক্সনকে কেবিনেটে স্থান তো দিয়েছিলেনই তাছাড়া তাঁর অনুপস্থিতিতে কেবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করার অধিকারও দিয়েছিলেন। উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিক্সন ও জনসন পররাষ্ট্র সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। সিনেট সভা থেকে যারা উপ-রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তাঁরা সিনেটকে প্রভাবিত করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবেও উপ-রাষ্ট্রপতিদের অবদান অনস্বীকার্য।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর তুলনামূলক আলোচনা
Comparative study between the President of USA and the Prime Minister of UK

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বিশ্বের দুটি পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বরাজনীতিতে যেমন প্রবল প্রতাপ ও প্রতিপত্তির অধিকারী, তেমনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দু’দেশের দু জনের পদ ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র হলেও অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও রাজনীতিতে দু’জনের ভূমিকা ও কর্তৃত্বের অনেক ক্ষেত্রেই মিল পাওয়া যায়। তবে পদ্ধতিগত ভিন্নতা আর স্বতন্ত্র অবস্থানের ফলে উভয়ের ক্ষমতা, কার্যাবলি এবং প্রভাব- প্রতিপত্তির ভিন্নতাও অনেক। তবুও উভয়েই নিজ নিজ সরকারের প্রধান হিসেবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । অধ্যাপক লাস্কির ভাষায়, “ The President of USA is both more or less than a king, he is also both more or less than a Prime Minister.” মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলির তুলনামূলক আলোচনা করতে গেলে উভয়ের মধ্যেকার ব্যাপক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তাঁদের মধ্যকার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা করা হলো ।

 সাদৃশ্যসমূহ Similarities

উভয়ের মধ্যেকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সকল সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :

ক. পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি : মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উভয়েই পরোক্ষভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনগণ প্রথমে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে “Electoral College” এর সদস্যদের নির্বাচিত করেন। পরবর্তীতে “Electoral College”-এর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

অনুরূপভাবে ব্রিটেনেও প্রথমে জনগণের সরাসরি ভোটে হাউস অব কমন্সের সদস্যগণ নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে হাউস অব কমন্সের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের ভিত্তিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

খ. উভয়েই শাসন বা নির্বাহী বিভাগীয় প্রধান : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সেই দেশের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার আওতায় নির্বাহী বিভাগের প্রধান। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার সুবাদে সে দেশের শাসন বা নির্বাহী বিভাগের প্রধান ।

গ. ক্ষমতার পরিধি বা ব্যাপ্তি : সাধারণ ও জরুরি অবস্থা নির্বিশেষে উভয়ের ক্ষমতা মোটামুটি অভিন্ন। উভয়েই নিজ নিজ দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক পটপরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও উভয় সরকার প্রধানের ভূমিকা স্ব স্ব মহিমায় সমুজ্জ্বল।

ঘ. দলীয় নেতৃত্ব : মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উভয়েই দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে সমান ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া, উভয়েই যেমন স্ব স্ব দলের প্রধান হিসেবে প্রতিপন্ন হয়ে থাকেন, তেমনি নিজেরা নির্বাচনে বিজয় অর্জনের জন্যও নিজ নিজ দলের উপর নির্ভর করে থাকেন ।

ঙ. জরুরি অবস্থায় ক্ষমতা : জাতির বিভিন্ন সংকট— যেমন অর্থনৈতিক সংকট বা যুদ্ধকালীন সময়ে উভয় নেতাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে সাধারণ অবস্থার তুলনায় সংকটকালে উভয়ের ক্ষমতাই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ প্রসঙ্গে Griffith-এর কথা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “The potentialities of the office of Prime Minister in Britain have been demonstarted in two world wars. So also have those of the office of the American President. “

বৈসাদৃশ্যসমূহ Dissimilarities

নিম্নে উভয়ের ক্ষমতা ও কার্যাবলির বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

ক. পদের ভিত্তির ক্ষেত্রে : মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদ যেমন সাংবিধানিক, তেমনি তাঁর ক্ষমতাও সংবিধান প্রদত্ত। মার্কিন সংবিধানের অনুচ্ছেদ- ২, সেকশন-১ এ রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অপরদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ ও ক্ষমতা প্রথাভিত্তিক।

খ. মেয়াদকাল বিবেচনায় : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ৫ বছরের জন্য। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন : বছরের জন্য। আবার একই ব্যক্তি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একাধারে কয়েক মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি নির্বাচিত হতে পারেন না।

গ. যোগ্যতা বিবেচনায় : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে ২৫ বছর বয়স্ক হতে হয় এবং কমন্সসভার সদস্য হলেই চলে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে জন্মসূত্রে বা জন্মস্থানসূত্রে মার্কিন নাগরিক হতে হয়। ন্যূনতম বয়স হতে হয় ৩৫ বছর এবং তাকে ১৪ বছর যাবৎ স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হয়।

ঘ. পদচ্যুতি / স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় অধিকতর স্থায়ী। কেননা, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ব্যতীত পদচ্যুত করা যায় না এবং তাঁর স্থায়িত্ব কংগ্রেসের সমর্থনের উপর নির্ভর নয়। তবে তাঁকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ইম্পিড বা অপসারণ করা যায়। অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদত সম্পূর্ণভাবে কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল।

ড. ক্ষমতার উৎস বিবেচনায় : মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার উৎস হলো দেশের সংবিধান। সংবিধানের দ্বিতীয় অনু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। অপরদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ব্যাপারে কোনো সাংবিধানিক দিক নির্দেশন নেই । তবে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও প্রথা অনুযায়ী তিনি তাঁর ক্ষমতা চর্চা করে থাকেন।

চ. রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ক্ষমতা : মার্কিন প্রেসিডেন্ট একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেবল সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান নন।

ছ. কেবিনেটের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজা বা রানী ব্রিটিশ কেবিনেটের সদস্যদেরকে নিয়োগ দিলেও কেবিনেট সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রীর সহকর্মী, অধস্তন কর্মচারী নন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই কেবিনেট সদস্যদের মতামত বিবেচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তিনি ইচ্ছা করলেই যে কোনো মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারেন না। অপরদিকে, মার্কিন কেবিনেট সদস্যগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক যেমন নিযুক্ত হন, তেমনি তারা রাষ্ট্রপতির সাহায্যকারী ও অধীনস্থ কর্মচারী মাত্র, তারা রাষ্ট্রপতির সহকর্মী নন। তিনি কেবিনেট সদস্যদেরকে খেয়ালখুশিমতো অপসারণও করতে পারেন।

জ. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে.: প্রশাসনিক নীতি নির্ধারণ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় বেশি। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভাকে বাদ দিয়ে এককভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না।

অপরদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে কোনো বিষয়ে একক ও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এ ব্যাপারে তিনি কেবিনেটের সাথে পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য নন ।

ঝ. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতার ক্ষেত্রে : মার্কিন রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা থাকলেও তা সীমিত। তিনি সিনেটের সাথে একাত্মতা ছাড়া নিয়োগ দিতে পারেন না। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতার অধিকারী। রাজা বা রানী এক্ষেত্রে কোনো বাধা প্রদান করতে পারে না।

ঞ. আইন বিভাগীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্য হিসেবে আইন প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সেখানে Cabinet Dictatorship-এর সুবাদে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যাপক কর্তৃত্ব কায়েম করেন অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইনসভার কোনো কক্ষেরই সদস্য নন। যে কারণে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনেকটাই গৌণ। তবে তিনি আইনসভার বিশেষ অধিবেশন আহবান করতে পারেন ।

ট. আইনসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা বিবেচনায় : সংসদীয় পদ্ধতির নিয়মানুযায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রাজা বা রানীকে আইনসভা ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দিতে পারেন এবং তিনি এ ভয় দেখিয়ে পার্লামেন্টের উপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের উপর এ ধরনের কোনো হাত নেই ।

ঠ. ভেটো প্রদানের ক্ষমতা বিবেচনায় : মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেস কর্তৃক পাসকৃত কোনো বিলে ভেটো প্রয়োগ করতে পারেন অথবা তা অনুমোদন করতে পারেন। অন্যদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কোনো ক্ষমতা নেই বরং একজন সাধারণ সদস্যের মতোই তিনি ভোট প্রদান করে থাকেন ।

ড. বিচার বিভাগীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে : মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনেটের অনুমোদনক্রমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগপ করেন এবং তাদের বেতন, ভাতা স্থির করেন। দণ্ডিত ব্যক্তির শাস্তি স্থগিতকরণ, হ্রাসকরণ বা ক্ষমা করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কোনো ক্ষমতা নেই ।

ঢ. যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষেত্রে : মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনেটের পরামর্শ ও অনুমোদনক্রমে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সেই ক্ষমতা নেই। সেখানে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা রাজা বা রানীর হাতে। সেজন্য অবশ্য কেবিনেটের অনুমোদন নিতে হয় ।

ন. দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর কৃতকর্মের জন্য আইনসভার নিকট জবাবদিহি করতে হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাঁর কৃতকর্মের জন্য কারো নিকট জবাবদিহি করতে হয় না।

ত. প্রতিরক্ষা বিষয়ক ক্ষমতার ক্ষেত্রে : মার্কিন প্রেসিডেন্ট সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিয়োগদান করেন এবং অপসারণের ক্ষমতাও তাঁরই হাতে। অপরদিকে, ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় এ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নয় বরং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাজা বা রানী এ ক্ষমতা ভোগ করেন ।

খ. কূটনৈতিক কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে : বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেরূপ ক্ষমতা ভোগ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সেরূপ কোনো ক্ষমতা নেই । তাছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসেবে বিদেশে কূটনীতিবিদ প্রেরণ ও নিজ রাষ্ট্রে বিদেশি কূটনীতিবিদদেরকে গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তা পারেন না। এটি রাজা-রানীর কাজ ।

দ. দলের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের নায়ক এবং তাঁকে সর্বদা তার দলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। এমনকি তিনি তার নিজ দলের মতের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন না। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুধু নিজ দলের নেতাই নন বরং তিনি দল এবং জাতি উভয়েরই নেতা। তিনি জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য দলীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করতে পারেন। এক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের বক্তব্য হলো, “His (President) position take the imagination of the country. He is the representative of no constituency but of the whole people.”

ধ. সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে : মার্কিন প্রেসিডেন্ট মার্কিন সমাজের নেতা হিসেবে এক মর্যাদামণ্ডিত আসনের অধিকারী। তাঁর সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা যে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের ঈর্ষার বস্তু। অপরদিকে, ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীর অনুরূপ সামাজিক মর্যাদা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর নেই ।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যাপক ক্ষমতা এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতার মধ্যে অবশ্য কারণ আছে । কেননা, যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতান্ত্রিক দেশ, যে কারণে এই দেশটির সমস্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে কেন্দ্র করে। অপরদিকে ব্রিটেনে রাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র চালুর ফলে রাজা বা রানী এর প্রধান। আবার সংসদীয় পদ্ধতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাও মোটামুটি ব্যাপক । তাই অনেকে বলে থাকেন, “মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং রাজশক্তির সমাহার।”

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ব্রিটেনের রাজা বা রানীর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা
Comparative study between the President of USA and the British King or Queen

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রাজা বা রানী দুটি ভিন্ন প্রকৃতির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালন করে থাকেন। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার আওতায় ব্রিটেনের রাজা বা রানী নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালন করে থাকেন। অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রাজা বা রানীর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করতে হলে উভয়ের মধ্যে পরিলক্ষিত সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে আলোচনা করতে হবে। নিম্নে তাঁদের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো :

সাদৃশ্যসমূহ Similarities

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রাজা বা রানীর ক্ষমতা ও কার্যাবলির মধ্যে যেসকল সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ক. মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রাজা বা রানী উভয়েই রাষ্ট্রপ্রধান। বিমূর্ত রাষ্ট্রের ধারণা উভয়ের মধ্যে বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে ।

খ. মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে ব্রিটেনের রাজা বা রানীর মতোই কতগুলো আনুষ্ঠানিক কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হয়। যেমন : বৈদেশিক রাষ্ট্রদূত গ্রহণ, বিদেশে রাষ্ট্রদূত প্রেরণ, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করা ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উভয়েই নিজ নিজ রাষ্ট্রের প্রধান মুখপাত্র বলে বিবেচিত হন।

গ. ব্রিটেনের রাজা বা রানীর ন্যায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি জনসাধারণের নিকট বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র। ব্রিটিশরা যেমন তাদের রাজা ৰা ৱানীকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে মনে করে, তেমনি মার্কিন জনগণও তাদের রাষ্ট্রপতিকে আশা-ভরসার একমাত্র কেন্দ্রস্বপ বলে মনে করেন।

বৈসাদৃশ্যসমূহ

Dissimilarities

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রাজা বা রানীর মধ্যে সাদৃশ্যের পাশাপাশি উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্যের পরিমাণই বেশি। নিম্নে উভয়ের মধ্যকার বৈসাদৃশ্যসমূহ বর্ণনা করা হলো :

ক. পদের উৎসগত পার্থক্য : মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদ সাংবিধানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে সৃষ্ট। তাঁর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে। অপরদিকে, ব্রিটেনের রাজা বা রানীর পদমর্যাদা ও ক্ষমতা সাংবিধানিক রীতিনীতি ও প্রথাগত ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।

খ. কার্যকালগত পার্থক্য : মার্কিন রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য জনগণ কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। তবে একই ব্যক্তি দু’বারের বেশি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন না। আবার মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে ইম্পিচমেন্টের মাধ্যমে অপসারণ করা যায়। কিন্তু ব্রিটেনের রাজা বা রানী উত্তরাধিকার সূত্রে শাসন ক্ষমতা লাভ করেন। তাঁর কার্যকালের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই । তিনি আমৃত্যু স্বীয় পদে আসীন থাকেন। তাঁকে অপসারণ করা যায় না, তবে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন।

গ. ক্ষমতার উৎসগত পার্থক্য : মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মূল উৎস হলো সংবিধান। তবে বিচার বিভাগীয় ব্যাখ্যা ও রাষ্ট্রপতির নিজ উদ্যোগ এবং শাসন বিভাগের প্রাধিকার মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অন্যতম উৎস। কিন্তু, ব্রিটেনের রাজা বা রানীর ক্ষমতার মূল উৎস হলো সাংবিধানিক রীতিনীতি। মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। ব্রিটেনের রাজা বা রানীর ক্ষমতা লিখিত আইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হয়নি।

ঘ. রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ক্ষমতার পার্থক্য : রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি স্বদেশ ও বিদেশে নীতি নির্ধারণ ও তার প্রয়োগের ব্যাপারে যে ক্ষমতা ভোগ করেন, তা ভোগ করা ব্রিটেনের রাজা বা রানীর পক্ষে সম্ভব হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে নীতি নির্ধারণের মুখ্য দায়িত্ব মার্কিন রাষ্ট্রপতির, যা ব্রিটেনের রাজা বা রানীর নেই । তিনি স্বদেশ ও বিদেশে নেহায়েতই জাঁকজমকের এক প্রতীক মাত্র ।

৫. শাসন বিভাগীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে পার্থক্য : ব্রিটেনের রাজা বা রানীর উপর তত্ত্বগতভাবে সকল শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা ন্যস্ত থাকলেও বাস্তবে তিনি প্রকৃত শাসক নন। পার্লামেন্টের নিকট দায়িত্বশীল মন্ত্রিসভাই হলো ব্রিটেনের প্রকৃত শাসন ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক শাসক প্রধান নন, দেশের শাসন ক্ষমতার প্রকৃত অধিকারীও বটে। সংবিধান অনুসারে তাঁর উপরই শাসন বিভাগীয় দায়িত্ব ন্যস্ত আছে। তিনি প্রত্যক্ষভাবে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন এবং করেন। চ. আইন বিভাগীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে পার্থক্য : ব্রিটেনের রাজা বা রানী আইন বিভাগ তথা পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ ব্রিটেনের আইন বিভাগ রাজা বা রানী এবং লর্ডসভা ও কমন্সসভা নিয়ে গঠিত। ব্রিটিশ রাজা বা রানী পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান করতে, অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করতে এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই কমন্সসভা ভেঙে দিতে পারেন। পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে তিনি ভাষণ দিতে বা বাণী প্রেরণ করতে পারেন। তাঁর সম্মতি ব্যতীত কোনো বিল আইনে পরিণত হয় না। আবার তিনি সম্মতি না দিলে কোনো অর্থবিল বা বাজেট কম সভায় উত্থাপন করা যায় না।

তিনি তবে মার্কিন রাষ্ট্রপতির এরকম ক্ষমতা নেই। তিনি শাসন বিভাগীয় প্রধান হলেও আইন বিভাগের তিনি কেউ নন। কংগ্রেসের অধিবেশন আহবান করতে, স্থগিত রাখতে বা কার্যকাল শেষ হওয়ার পূর্বে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভা ভেঙে দিতে পারেন না। তবে তিনি কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহবান ছাড়াও কংগ্রেসে বাণী প্রেরণ করতে পারেন।

মার্কিন  উপ-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কার্যাবলি

Leave a Reply