মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সুবিধা

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সুবিধা বা গুণাবলি Merits of Parliamentary Government

১. আইন ও শাসন বিভাগের সুসম্পর্ক : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে

সুসম্পর্ক বিরাজ করে বিধায় উভয় বিভাগের কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা ও ঐক্য নিশ্চিত করা যায়। উভয় বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার ফলে উন্নতমানের আইন তৈরি ও তা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের সুবিধা হয়। আইন পরিষদে জনগণের অভাব, অভিযোগ, প্রয়োজন ও সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রতিফলিত হয়ে ওঠে। তেমনি মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ আইন পরিষদের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থেকে জনগণের প্রয়োজন ও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং নিজস্ব কার্যক্রম দ্বারা তা সমাধান করার চেষ্টা করেন।

২. দায়িত্বশীলতা : দায়িত্বশীলতা সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার একটি উত্তম গুণ। এ ধরনের ব্যবস্থায় সরকার তার যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকেন। আইনসভার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় মন্ত্রিপরিষদ জনকল্যাণে তৎপর হয়। কাজেই এ ব্যবস্থা শাসক ও শাসিতের পরস্পরের দায়ত্বশীলতার ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ। কে. কে. মিশ্র (K. K. Mistra ) -এর ভাষায়, “For the administration and policies every department of the government, the ministers are collectively responsible to the parliament.”

 

৩. গণতান্ত্রিকতা। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার  পরি শাসিত সরকার  সরকা কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে যেমন গঠিত হয়, তেমনি সরকারও গণতান্ত্রিক ভরিতে পরিচাপিত হয়। গা  সার্বিকভাবে সংসদের নিকট गंग চূড়ান্তভাবে জনগণের নিক কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। এ ধরনের শাসনব্যবস্থার  ভিত্তি হলো, “Peoples are the source of all powers.”

  1. সুশাসন সুশাসন সংসদীয় বা পরিগम শাসিত সরকারের একটি বিশেষ সম্মতি নিয়ে তাদের জান-মাল – স্বাধীনতা প্রভৃতি রক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া, गान মধ্যে সরকারি কর্মকাণ্ড নিয়ে বাদানুবাদ ও পারস্পরিক বোঝাপড়া হয়। আর এতে করে শ শ ও জাতির সুখ, সমৃদ্ধি ও শাস্তি বয়ে আনে ।

৫. জনকল্যাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদীয় বা মর্মপরিষদ শাসিত সরকার একটি জনকল্যাণমূলক সরকার। কারণ এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় জনমত ও জনকল্যাণকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়। জনমতকে সামনে রেখে সরকার ি কর্মসূচি প্রণয়ন করে। বিরোধীদল সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড জনগণ

দলের সমালোচনা ও জনমত হারানোর ভয়ে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির উপর গুরুত্ব আরোপ করে।

৬. নেতৃত্বের বিকাশ : মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় নেতৃত্বের বিকাশ সাধিত হয়। কারণ এটি নেতৃত্ব বিকাশের একটি উপযোগী শাসনব্যবস্থা। কারণ এ ব্যবস্থায় সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও প্রতিভাধর ব্যক্তিদেরকেই জনগণ তাদের প্রতিনিধিরূপে নির্বাচন করে ও তারাই মন্ত্রিসভায় স্থান লাভ করে।

৭. রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার পর। কারণ এ সরকার দলীয় সরকার। সরকারি দল ও বিরোধী দল জনমত সপ্তাহের জন্য সব সময় তৎপর থাকে। ফলে দলীয় প্রচার, প্রচারণা ও কর্মকাণ্ড সর্বদা অব্যাহত থাকে বিধায় জনগণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞান পাত করে এবং তাদের রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। এতে করে জনগণ তাদের অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য, শাসন কার্যে অংশগ্রহণ, দেশপ্রেম প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। নির্বাচন প্রক্রিয়া, দলীয় ব্যবস্থা, সংসদ, গণমাধ্যম, সভা-সমাবেশ, আলোচনা প্রভৃতির মাধ্যমে জনগণের চেতনা বৃদ্ধি পায়।

৮. রাজনৈতিক মেরুকরণ : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা দ্বিদলীয় ব্যবস্থার জন্য বিশেষ উপযোগী। ছোট ছোট দলগুলো বড় বড় দলের সাথে একীভূত হয়ে নির্বাচন করে। ফলে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও गान, সংঘাত নিরসন হয়।

৯, স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধ সংসদীয় সরকার স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধ করে। এখানে সরকার নিজে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইনসভার উপর নির্ভরশীল। বিরোধী দল সরকারের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকে। সরকারও বিরোধী দলের সমালোচনার জবাব দিতে বাধ্য। বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার উপর ও জনমতের সমর্থনের উপর সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। তাছাড়া সরকারকে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হতে হয়। এসব কারণে সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না।

১০. বিপ্লবের আশঙ্কা কম : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় বিপ্লবের আশঙ্কা কম থাকে। কেননা, আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্কের কারণে রাষ্ট্রের জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। তাছাড়া, সরকার যদি জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তবে আইনসভায় অনাস্থা প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে সহজেই সরকারের পরিবর্তন ঘটানো যায়। ফলে সরকার বিরোধী বিপ্লবের কোনো আশঙ্কা থাকে না।

১১. গণতন্ত্র রাজতন্ত্রের সমন্বয় : গণতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের একটি উত্তম দিক। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র পাশাপাশি অবস্থান করে। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা হয় । এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা, যেখানে রাজতন্ত্রের পাশাপাশি গণতন্ত্র বিদ্যমান । ১২. সময়োপযোগিতা : সময়োপযোগিতা সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার একটি বিশেষ গুণ। কেননা, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রয়োজনে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন ও সংশোধন সম্ভব। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। জেনিংস Jenning-এর ভাষায়, “Parliamentary government can be changed according to the circumstances for the people needs,” ১৩. বিকল্প সরকার : সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় বিকল্প সরকারের সুযোগ রয়েছে। কেননা, সরকারি দল সংসদের আস্থা হারালে রাষ্ট্রপতি বিকল্প সরকার গঠনের জন্য বিরোধী দলকে আহ্বান জানাতে পারে। জেনিংস ( Jennings)-এর ভাষায়, “The leader of the opposition is the alternative Prime Minister, only a slight shift in the public opinion is necessary to give his majestry’s.”

১৪. নমনীয় প্রকৃতির : নমনীয়তা এ ধরনের শাসনব্যার বিশেষ গুণ। সময়, প্রয়োজন, পরিবেশ, পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে এতে উপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমনকি সংবিধান ও মন্ত্রিসভায়ও পরিবর্তন করা যায়। ফলে যে কোনো প্রকার সমস্যা বা সংকট সহজেই উত্তরণ করা সম্ভব হয়।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বেশ কিছু গুণ বিদ্যমান, যেগুলো এধরনের সরকারের উত্তম দিক বা সুবিধারূপে পরিগণিত হয়। বর্তমান বিশ্বে এ সরকারের ব্যাপক সাফল্য থাকায় তা নন্দিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply