Table of Contents
Toggleব্রিটেনে দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
ব্রিটেনে দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
ব্রিটেনে রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি
Functions of the Political Parties in Britain“
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। রাজনৈতিক দল ছাড়া প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে কার্যকরী করা সম্ভব নয়। ব্রিটেনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল বহুবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে। অধ্যাপক অ্যালান বল (Alan R.Ball) রাজনৈতিক দলের কার্যাবলিকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলো হলো (১) প্রতিনিধিত্বমূলক, (২) নির্বাচন সংক্রান্ত (৩) সরকার পরিচালনা সংক্রান্ত এবং (৪) নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত। হার্ভে ও ব্যাথার (Harvey and Bather ) রাজনৈতিক দলের কার্যাবলিকে সাত ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা (১) জাতীয় বিষয়ে জনমত গঠন, (২) সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধন, (৩) পার্লামেন্টের স্থায়িত্ব এবং ঐক্য বজায় রাখা, (৪) সরকারের স্থায়িত্ব সংরক্ষণ, (৫) জনমতকে শিক্ষাদান, (৬) সরকার পরিবর্তন এবং (৭) সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। যাইহোক, ব্রিটেনে রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি ও ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ক. সমস্যা নির্ধারণ ও জনগণের কাছে উপস্থাপন : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলো নির্ধারণ করে এবং সেগুলো জনগণের সামনে উপস্থাপন করে। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যে রাজনৈতিক দল পদক্ষেপ গ্রহণ করে এর ফলে জাতীয় স্তরের সমস্যাসমূহ নির্ধারণ ও তার সমাধানের জন্য জনগণকে সমস্যায় পড়তে হয় না।
খ. নির্বাচনি কর্মসূচি প্রণয়ন : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি নির্বাচনি কর্মসূচি প্রণয়ন করা। এ কর্মসূচিতে দলের আদর্শ, কর্মপন্থা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জনগণের সম্মুখে পেশ করা হয়। তাছাড়া দলগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি ঘোষণা করে। জনগণ এসব আদর্শ ও কর্মসূচি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে এবং তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ।
গ. প্রার্থী মনোনয়ন ও নির্বাচনি প্রচারণা : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় এবং প্রার্থীর স্বপক্ষে ব্যাপক নির্বাচনি প্রচারকার্য পরিচালনা করে। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমিতি, অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে ভোটারদের কাছে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে। নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা নির্ভর করে বহুলাংশে সঠিক প্রার্থী মনোনয়নের উপর ।
ঘ. জনমত গঠন : ব্রিটেনের রক্ষণশীল দল ও শ্রমিক দল নিজেদের নির্ধারিত নীতি ও কর্মসূচির স্বপক্ষে জনমত গঠনের জন্য সচেষ্ট হয়। প্রতিটি দলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীগণ সভা-সমিতি, পত্র-পত্রিকা, পুস্তক-পুস্তিকা, বেতার, টেলিভিশন ইত্যাদি মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে নিজ নিজ দলীয় নীতি ও কর্মসূচির সমর্থনে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। সক্রিয়, সচেতন ও সদা জাগ্ৰত জনমত সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অনন্য। অধ্যাপক লাওয়েল (Prof. Lowell) বলেছেন, জনমতকে সবার সামনে উপস্থাপিত করে গণরায় আদায়ের জন্য উপযুক্ত কর্মসূচি প্রচার করা রাজনৈতিক দলের অন্যতম লক্ষ্য (There essential function and the ture reason for their existence is bringing public opinion to a focus and framing issues for the popular verdict)
ঙ. সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধন : ব্রিটেনের উদারনৈতিক গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের সাথে জনগণের সংযোগ সাধন করে। বিরোধী দল জনগণের আশাআকাঙ্ক্ষা ও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সেই সব সমস্যাবলির প্রতিবিধানের স্বার্থে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করে। আবার সরকারি দল ও বিরোধী দলের উভয়ের পারস্পরিক বক্তব্য শুনে জনগণ সরকারের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। আধ্যাপক বার্কার (Barker) বলেছেন, “When parties listen to the people, and the state listen to parties, politics will be healthy and national life will be served.”
চ. রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটায়। জনগণকে রাজনীতি সচেতন করা ও তাদেরকে কাজে উদ্যমশীল করা রাজনেতিক দলের কাজ। দলগুলো তাদের দলীয় কর্মসূচি ব্যাখ্যার পাশাপাশি অন্যান্য দলের কর্মসূচিকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। এর ফলে জনগণ বিভিন্ন দলের কর্মসূচি সম্পর্কে এবং রাষ্ট্রীয় সমস্যাবলি সম্পর্কে অবহিত হয়। জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায় । অ্যালান বল ( Alan R. Ball) বলেছেন, “Political parties provide a link between government and people. They seek to educate, instruct and activate the electorate.”
ছ. সরকারে স্থায়িত্ব সংরক্ষণ : ব্রিটেনে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার কারণে সরকারের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত হয়েছে। দলের সদস্যগণ দলীয় নীতি ও সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারেন না, কারণ সরকারি দল ও বিরোধী দলের সদস্যগণ দলীয় শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার কঠোর বন্ধনে আবদ্ধ। তাছাড়া পার্লামেন্টে সরকারি দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে। বিরোধী দল অনাস্থাসূচক প্রস্তাব আনয়ন করে সরকারকে পরাজিত করতে পারে না। সরকারি দলের সকল সদস্য দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারেন না। ফলে সরকার স্থায়িত্ব লাভ করে।
জ. গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে, আধুনিক প্রতিনিধিত্ব- মূলক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দল। বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন বলতে দলীয় শাসনকেই বোঝায়। গণতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব অপরিহার্য। ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে। অধ্যাপক ফাইনার (Finer) এর মতে, গণতন্ত্র তার আশা-নিরাশা সমন্বিত দল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।
(Democracy rests in its hopes and doubts upon the party system. There lies political centre of gravity) | R গণতন্ত্রকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
ঝ. শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন : ব্রিটেনে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা চালু থাকায় সহজে এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন সম্ভব হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সরকার পরিবর্তন করতে পারে। আবার বিরোধী দল সরকারি প্রস্তাব বাতিল করে বা অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং নতুন সরকার গঠন করতে পারে। তাই সরকার পরিবর্তনের জন্য বিপ্লব বা ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির প্রয়োজন হয় না ।
ঞ. সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা সৃষ্টি : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি রচনা করে। কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতাকে সম্প্রসারিত ও সুনিশ্চিত করে। ফলে শাসনকার্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে না। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সংহতি সাধন সহজ হয়।
ট, কেবিনেট ব্যবস্থাকে কার্যকর করে : ব্রিটেনের কেবিনেট ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। অধ্যাপক বার্কারের (Barker) মন্তব্য- ব্রিটেনে সরকার গঠনের প্রাথমিক উপাদানের উৎস হলো রাজনৈতিক দল । সাধারণত কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রী প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের সদস্যদের মধ্য থেকে কেবিনেট-সদস্যদের নিয়োগ করেন। একটি মাত্র দলের সদস্যদের নিয়ে কেবিনেট গঠিত হয় বলে তা অনেক বেশি সুসংহতভাবে সরকারি কার্যাবলি পরিচালনা করতে পারে। সরকারি দল সুসংহত ও সুনির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করে সরকার পরিচালনা করতে পারে ।
ঠ. সরকারকে সংযত রাখে : ব্রিটেনে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত থাকায় কমন্সসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, সেই দল সরকার গঠন করে এবং অপর দলটি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে । বিরোধী দল সরকারি দলের কার্যকলাপ ও ত্রুটি- বিচ্যুতির উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এবং সরকারের নীতিমালার গঠনমূলক সমালোচনা করে। বিরোধী দলের সমালোচনার ভয়ে সরকার সংযত আচরণ করতে বাধ্য হয়। সরকার যা খুশি তা করতে সাহসী হয় না। অধ্যাপক জেনিংস (Sir Ivor Jennings) তাই বলেছেন, “If there is no opposition, there is no democracy.”
ড. স্বার্থের সমষ্টিবদ্ধকরণ ও গ্রন্থিকরণ : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল বহুমুখি স্বার্থের সমষ্টিবদ্ধকরণে ভূমিকা পালন করে । বিভিন্ন স্বার্থের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নিজেদের সমর্থনের ভিত্তিকে ব্যাপক ও মজবুত করে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো স্বার্থের গ্রন্থিকরণের কাজও করে। অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (Almond and Powell) এর মতে বিভিন্ন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বা স্বার্থ গোষ্ঠীসমূহের দাবি-দাওয়াকে কার্যকর পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করাই হলো স্বার্থের গ্রন্থিকরণ। ওয়াজবি (S. Wasby) মন্তব্য করেছেন, “Parties articulate interests, in some cases repeating those of interest groups and in other cases stating new and independent ones.”
ঢ. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । সমাজে দৃষ্টিভঙ্গিগত ও আচরণগত পরিবর্তন সাধন করে রাজনৈতিক দল-এর সদস্যদের আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সহায়তা করে। প্রত্যেকটি দল নিজের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা জনগণকে প্রভাবিত করে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সমর্থন অর্জন ও সংরক্ষণ করতে চায় এবং জনগণের মধ্যে নিজেদের পক্ষে জাগরণ সৃষ্টি করে।
ণ. রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা আনে : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রশাসনে সুশৃঙ্খল ও স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নিজ নিজ মতাদর্শ অনুযায়ী নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে দলগুলো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকেই বড় মনে করে বিধায় তাদের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত সংকীর্ণ স্বার্থপর মনোবৃত্তি গড়ে ওঠে না। অধ্যাপক অ্যালান আর. বল (Alan R. Ball) এর মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ঐক্যবদ্ধ, সরলীকরণ ও স্থিতিশীল করা। (One of the most important functions of political parties is that of simplifying and estabilising political process.)
ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থার সমালোচনা
Criticism of the British Party System
ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকার গুরুত্ব সত্ত্বেও কিছু বিরূপ সমালোচনাও করা হয়ে থাকে । সমালোচকগণ ব্রিটেনের দলব্যবস্থার কতকগুলো ত্রুটির কথা বলেছেন ।
ক. আইনগত স্বীকৃতি নেই : ব্রিটেনে দলীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবিনেট ও পার্লামেন্টের পারস্পরিক সম্পর্কের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পার্লামেন্টের প্রাধান্যের পরিবর্তে কেবিনেটের নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়েছে। তাছাড়া দলীয় ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে কেবিনেট শাসনব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর শাসনে পরিণত হয়েছে। অথচ ব্রিটেনে দলীয় ব্যবস্থার কোনো আইনত স্বীকৃতি নেই ।
খ. দলীয় স্বৈরাচারের আশঙ্কা : ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে কেবল দুটি দল প্রাধান্য ও প্রতিপত্তি কায়েম করেছে। হার্ডে ও ব্যাথার (Harvey and Bather) বলেছেন, Over the last 100 years there have, at any time, been virtually only two parties of importance in the United Kingdom. প্রথমে টোরী ও হুইগ, তারপর রক্ষণশীল ও উদারনৈতিক এবং বর্তমান রক্ষণশীল ও শ্রমিক দল ব্রিটিশ রাজনীতির গতি-প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে ব্রিটেনে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দলীয় স্বৈরাচারের আশঙ্কা দেখা দেয় ।
গ. সামগ্রিক উন্নয়নে বাধা : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল দুটি পুরোপুরি শ্রেণিভিত্তিক না হলেও শ্রেণিমত দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়। সাধারণভাবে শ্রমিক দল শ্রমিক ও দরিদ্র শ্রেণির এবং রক্ষণশীল দল ধনিক-বণিক শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে শ্রেণি স্বার্থভিত্তিক দলীয় ব্যবস্থা দেশের সুষম ও সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ঘ. রক্ষণশীলতা : ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থা রক্ষণশীলতা দোষে দুষ্ট। প্রভুত্বকারী দুটি দলের মধ্যে আদর্শগত ক্ষেত্রে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত থাকে। কোনো দলই পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন চায় না। দুটি দলই প্রচলিত সমাজব্যবস্থা সংরক্ষণে বদ্ধ পরিকর।
ঙ. সুষ্ঠু জনমত গঠিত হয় না : ব্রিটেনে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত থাকায় সুষ্ঠু জনমত গঠিত হয় না। কারণ এতে জনগণ দুটি দলের একটিকেও পছন্দ না করলেও বাধ্য হয়ে একটি দলকে সমর্থন করে। যেমন— দুটি রাজনৈতিক দলের কোনোটিকে সমর্থন করেন না। তাদের জন্য ‘না’ ভোটের বিধান নেই। অধ্যাপক মাকাইভার (MacIver) বলেছেন, দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা জনগণের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রকে সুনির্দিষ্টভাবেই সীমিত করে দেয় (The two party system puts definite limits on the political expression of public .)
চ. কেবিনেটের একনায়কত্ব : ব্রিটেনের দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় কেবল একটি দলের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পার্লামেন্ট একদলীয় মন্ত্রিসভার আজ্ঞাবাহী সংগঠনে পরিণত হয়। এর ফলে পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে কেবিনেটের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রামজে ম্যুর (Rumsay Muir) এর মতে, ব্রিটেনে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার কারণে সেখানে কেবিনেটের এক নায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ছ সংসদীয় গণতন্ত্রের অনুকূল নয় : ব্রিটেনে তত্ত্বগতভাবে মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীলতার কথা বলা হলেও কার্যত মন্ত্রিসভা জনগণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। আবার বিরোধী দলও সীমিত ক্ষেত্রে সরকারের নীতি ও কাজের বিরোধিতা করে। ব্রিটেনে সরকার দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার মনোভাব বিদ্যমান। সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে একাত্মতা সংসদীয় গণতন্ত্রের অনুকূল নয় ।
জ. কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব : ব্রিটেনে প্রতিটি দলের নেতৃত্ব কেন্দ্রীভূত। দলগুলোর কেন্দ্রীয় সংগঠনের হাতেই অধিক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। কেন্দ্রীয় সংগঠনের নির্দেশই চূড়ান্ত । তাই বলা যায় ব্রিটেনের দলগুলোর সংগঠনের মধ্যে গণতান্ত্রিকতার অভাব রয়েছে।
উপরিউক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও বলা যায় যে, ব্রিটেনে দলব্যবস্থার ভিত্তিতে গণতন্ত্রের বিকাশ ও পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থার বিবর্তন ঘটেছে। দলব্যবস্থা ব্রিটেনকে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই দল ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবিনেট ব্যবস্থার প্রবর্তন। কেবিনেটের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা, পার্লামেন্টের ক্ষমতা হ্রাস, প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য, সরকারি দল ও বিরোধী দলের উদ্ভব প্রভৃতির বিকাশ ঘটেছে।
ব্রিটেনের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের আদর্শ ও কর্মসূচি (Ideology and Programmes of Major Political Parties in Britain) বর্তমানে ব্রিটেনে ছোট-বড় ২১টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। তবে ব্রিটেনের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বর্তমান অবস্থা দীর্ঘ বিবর্তনের ফল । নিম্নে কয়েকটি দলের সংগঠন, মতাদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
রক্ষণশীল দল Conservative Party
উৎপত্তি : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রক্ষণশীল দল সবচেয়ে প্রাচীন। ১৮৩২ সালের সংস্কার আইনের পূর্বে এর নাম ছিল টোরী (Tory)। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings)-এর মতে, সংস্কার আন্দোলন ( Reformation Movement) এর ফলে গির্জার দল (the Church Party) হিসেবে সপ্তদশ শতাব্দিতে এই দলের আবির্ভাব ঘটে, ১৮৩২ সালের সংস্কার আইন প্রণীত হওয়ার পর এই দল রক্ষণশীল দল নামে পরিচিত হয়। প্রথমে কয়েকজন এম.পি. ও লর্ড নিয়ে রক্ষণশীল দল জন্ম লাভ করে। অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, স্যার রবার্ট পীল-এর ক্ষমতাসীন হবার সময় থেকে কার্যত রক্ষণশীল দল সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৬৭ সালে ভোটাধিকারের সম্প্রসারণের ফলে রক্ষণশীল দল আয়তনে বড় হয় এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখা স্থাপন করে। ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত রক্ষণশীল দল দেশের মধ্যে ৪৭২টি শাখা স্থাপন করে ফেলে।
গঠন : রক্ষণশীল দেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ওয়েস্ট মিনিস্টারে অবস্থিত। এর পরিচালনায় থাকেন পেশাগত সংগঠকরা। তারা দলকে সুসংহত ও জনপ্রিয় করে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অব্যবহিত পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রক্ষণশীল গবেষণা বিভাগ (Conservative Research Department) স্থাপন করেন। এর উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে দলকে উন্নত করা। ভোটারদের আচরণ ও বিভিন্ন দলের ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করা। রক্ষণশীল দল প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার জন্য একটি করে শাখা সমিতি স্থাপন করেছে। রক্ষণশীল দলের একটি যুব শাখাও আছে। রক্ষণশীল দলের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১২-১৩ লক্ষের মতো ।
আদর্শ ও কর্মসূচি
Ideology and Programmes
ক. রক্ষণশীল দল বিশ্বাস করে, রাষ্ট্র বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন নিয়ে গঠিত। যারা নিজ নিজ মেধা অনুসারে কাজ করে । যোগ্যতা হবে মানুষের কর্মের ভিত্তি, বংশ বা সম্পদ নয়। কোনো শ্রেণিকে অপর শ্রেণির উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা যাবে না ।
খ. মানব জীবনের অপরিহার্য কর্ম হলো স্বাধীনতা ও প্রগতি। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে হবে । আত্মনির্ভরশীলতার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
গ. রক্ষণশীল দল রাজশক্তির উচ্ছেদ চায় না। রাজশক্তিকে রক্ষণশীল দল জাতীয় সংহতি, ঐক্য ও সম্মানের প্রতীক বলে মনে করে । রাজা বা রানীর প্রতি অখণ্ড আনুগত্য প্রদর্শনকে এই দল প্রতিটি ব্রিটিশ প্রজার প্রাথমিক কর্তব্য বলে মনে করে ।
ঘ. রক্ষণশীল দল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকাকে সংকীর্ণ পরিসরের মধ্যে আবদ্ধ রাখার পক্ষপাতি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শিল্পের জাতীয়করণ বাঞ্ছনীয় নয় বলে এই দল মনে করে ।
ঙ. শ্রেণি সংগ্রামতত্ত্বে রক্ষণশীল দলের কোনো বিশ্বাস নেই বলে বিপ্লবের মাধ্যমে শোষণের অবসান ও শোষণ থেকে মুক্তি সম্ভব তা এ দল মনে করে না। বিপ্লবকে এই দল সমাজের শত্রু বলে মনে করে ।
চ. রক্ষণশীল দল পুঁজিবাদের উচ্ছেদ চায় না। তাই এ দল ব্যক্তি মালিকানার মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী । একে Property owning democracy বলা হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পপতিদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা উৎপাদন বৃদ্ধি সহায়তা করবে বলে রক্ষণশীল দলের বিশ্বাস ।
ছ. রক্ষণশীল দল সমতাবাদে বিশ্বাসী নয়। বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পার্থক্য প্রকৃতিগত। এই পার্থক্যকে অস্বীকার করা চলে না । জ. রক্ষণশীল দল উপজাতীয়তাবাদের প্রধান প্রবক্তা। বার্চ (Birch) বলেছেন রক্ষণশীলরা হলো নির্লজ্জ জাতীয়তাবাদী । এরা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের তত্ত্বে বিশ্বাসী ।
ঝ. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এই দল ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী (European Economic Community — EEC), উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (North Atlantic Treaty Organisation — NATO) প্রভৃতিতে যোগদানের পক্ষপাতি।
সমর্থনের ভিত্তি Basis of Support
রক্ষণশীল দলের অধিকাংশ সদস্য হলো অভিজাত, বিত্তবান, শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক, বড় বড় ব্যবসায়ী, জমিদার, ধর্ম যাজক প্রভৃতি উচ্চ শ্রেণির লোক। তবে সাম্প্রতিককালে শ্রমিক শ্রেণির একটি অংশের উপরও এই দল প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। রক্ষণশীল দল বর্তমানে তার অনেক নীতির পরিবর্তন করেছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রক্ষণশীল দল মিশ্র অর্থনীতি এবং জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের আদর্শ গ্রহণ করেছে। বৈদেশিক ক্ষেত্রে দলটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি স্বীকার করে নিয়েছে। ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে রক্ষণশীল দল কমন্সসভায় সর্বাপেক্ষা বেশি আসন পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে নি। ফলে দলটি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দল (Liberal Democratic Party) এর সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছিল। তখন রক্ষণশীল দলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডেভিড ক্যামেরুন এবং উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দলের প্রধান নিকরেগ ছিলেন উপ- প্রধানমন্ত্রী।
শ্রমিক দল Labour Party
উৎপত্তি : ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলো শ্রমিক দল। ১৯০০ সালের পূর্বে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে শ্রমিক সদস্য থাকলেও শ্রমিক শ্রেণির কোনো রাজনৈতিক দল না থাকায় তাদের স্বার্থ ও দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত হতো। তাই পার্লামেন্টে বেশি সংখ্যায় শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধি প্রেরণের উদ্দেশ্যে ১৯০০ সালে ( ১ ) স্যোসাল ডেমোক্রেটিক ফেডারেশন (Social Democratic Federation) (২) ফেবিয়ান সোসাইটি (Fabian Society) এবং (৩) ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি (Independent Labour Party, 1993) নামে পরিচিত ৩টি সমাজতান্ত্রিক সংগঠন এবং ৬৪টি শ্রমিক সংঘ (Trade unions) এর প্রতিনিধিরা সমবেতভাবে শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব-কমিটি (The Labour Representation Commitee) গঠন করেন। ১৯০৬ সালে এই শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব কমিটির নাম পরিবর্তন করে শ্রমিক দল (Labour Party) রাখা হয় ।
,
শ্রমিক দলের গঠন (Formation of Labour Party) : প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার জন্য শ্রমিক দলের একটি করে সংগঠন আছে । কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখা, অর্থ সংগ্রহ করা ও প্রার্থী স্থির করা ইত্যাদি কাজ নির্বাচনি এলাকার সংগঠন করে থাকে। সংগঠনের একজন করে সচিব থাকেন। তিনি সংগঠন সংক্রান্ত কাজ-কর্ম পরিচালনা করেন। প্রতি বছর দলের অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনে ১১০০-র কিছু বেশি প্রতিনিধি (delegates ) যোগদান করেন। বার্ষিক অধিবেশনে দলের সাধারণ নীতি স্থির হয়। বার্ষিক অধিবেশনে জাতীয় নির্বাহী কমিটি (National Executive Committee) এর সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ২৯ জন। তার মধ্যে শ্রমিক সংঘগুলো ১২ জন, নির্বাচনি এলাকা ও কাউন্টি সংগঠন ৭ জন, সমাজতান্ত্রিক ও সমবায় সমিতিগুলো ১ জন, শ্রমিক দলের সমাজতান্ত্রিক যুব শাখা ১ জন সদস্য নির্বাচিত করে। অধিবেশন ৫ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত করে। দলের নেতা ও সহকারী নেতা পদাধিকার বলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। একজন কোষাধ্যক্ষ অধিবেশন কর্তৃক নির্বাচিত হন। এভাবে ২৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটি (National Executive Committee) গঠিত হয়। বার্ষিক অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ কার্যকর করা এর প্রধান কাজ। এছাড়া দলের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা সংগঠনগুলোর উপর তদারকিও করতে হয়। শ্রমিক দলের নেতা হলেন পার্লামেন্টারি দলের নেতা। শ্রমিক সংঘ, নির্বাচনি এলাকার সংগঠন ও এম.পি.দের নিয়ে একটি নির্বাচনি সংস্থা (Electoral College) গঠিত হয়। এই সংস্থাই শ্রমিক দলের নেতা নির্বাচন করে। দলের গঠন, কাজকর্ম পরিচালনা ও অর্থ সংগ্রহে শ্রমিক সংঘগুলো আধিপত্য বিস্তার করে। দেশের কয়েকটি বৃহৎ শ্রমিক সংঘ শ্রমিক দলের সদস্য। যেমন পরিবহন শ্রমিকদের সংঘ। প্রায় ১০ লাখের মতো শ্রমিক দলের সদস্য বার্ষিক অধিবেশনে শ্রমিক সংঘের নেতৃবৃন্দ প্রভাব বিস্তার করেন ।
শ্রমিক দলের আদর্শ ও নীতি
Ideology and Principles of Labour Party
শ্রমিক দল কর্তৃক অনুসৃত আদর্শ ও নীতিসমূহ নিম্নরূপ :
ক. শ্রমিক দল মনে করে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে ভালো। কিন্তু সমাজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানুষকে খারাপ হতে ও দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য করে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের মধ্যে অসাম্য-বৈষম্য সৃষ্টির জন্য দায়ী । এজন্য গণতন্ত্রকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ করতে হবে।
খ. ব্যক্তিগত মুনাফার পরিবর্তে সহযোগিতামূলক বন্ধুত্ব (Co-operative fellowship) গড়ে তোলাই হলো শ্রমিক দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ফার্ম ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীনে আনার কথা এই দল প্রচার করে। তাদের মতে, মূল শিল্পগুলোর জাতীয়করণ ও বাকি শিল্পের গণতন্ত্রায়ন করতে হবে।
গ. ব্যক্তিগত অর্থনীতির উপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্দেশ্যে এই দল জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। শ্রমিক দলের মতে, রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত ।
ঘ. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আসক্তির জন্য শ্রমিক দল লর্ডদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধার বিলোপ সাধন, লর্ডসভার গণতন্ত্রীকরণ এবং রাজতন্ত্রের নামসর্বস্ব শাসকের ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে ।
ঙ. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযোগিতার বন্ধন সুদৃঢ় করা, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘকে শক্তিশালী করা, স্বায়ত্তশাসনহীন অঞ্চলে জনগণকে স্বাধীনতা প্রদান করা। ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটিগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ব্যবহৃত হতে না দেওয়া, বিশ্বের দরিদ্র ও দুর্বল জাতিগুলোর উন্নতির জন্য উন্নত দেশগুলো কর্তৃক সাহায্য দানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি হলো শ্রমিক দলের ঘোষিত নীতি । সুতরাং বলা যায়, যে প্রধান ৪টি আদর্শের জন্য শ্রমিক দল কাজ করে সেগুলো হলো-
ক. জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা;
খ. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ;
গ. আয়ের পুনর্বণ্টন এবং
ঘ. শিক্ষাক্ষেত্রে সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা।
শ্রমিক দলের কর্মসূচি
Programmes of the Labour Party
শ্রমিক দল গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। ইউরে’পের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দলের আদর্শ থেকে শ্রমিক দলের আদর্শ ভিন্ন। এর সমাজতন্ত্র ফেবিয়ানবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত । .ফবিয়ানবাদ ব্রিটেনের নিজস্ব ধাঁচের সমাজতন্ত্র । শ্রমিক দলের নীতি ও উদ্দেশ্য বাস্তব পন্থা ও অবস্থান দ্বারা প্রভাবিত। এখানে দর্শনের বাড়াবাড়ি নেই। শ্রমিক দলের সমাজতন্ত্র মার্কসীয় সমাজতন্ত্র হতে আলাদা। অধ্যাপক এস. ই.ফাইনার (S. E. Finer) বলেন, “The Labour Party’s brand of socialism has been
tempered by the exercise of power. The chief im has become the establishment of a labour government rather than bringing about socialism.” দলীয় আদর্শ সেবে শ্রমিক দল উৎপাদন, বণ্টন ও বিনিময়ের যৌথ মালিকানাকে গ্রহণ করলেও এটি কার্যকর করার জন্য দল কাজ করে ন৷
সমর্থনের ভিত্তি
Basis of Support
শ্রমিক দলের প্রধান শক্তি হলো মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী ও শ্রমিক শ্রেণি। এর সদস্যগণ ৪ ভাগে বিভক্ত যথা : (ক) বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষক শ্রেণি (খ) ক্ষুদ্র পেশাজীবী যেমন— সাংবাদিক, সংগঠক, পাবলিক লেকচারার, বিমা কর্মী, (গ) ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, (ঘ) শ্রমিক, কারিগর করণিক। এ দলের সংগঠনে পেশাজীবী ও শ্রমজীবীর প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। এর সদস্যপদ দুই ধরনের যথা- (ক) ব্যক্তিগত (Individual) যেমন- নির্বাচনি এলাকার শাখা এবং (খ) পরোক্ষ সদস্য (Indirect) (যারা ট্রেড ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক সংগঠনের সদস্য)। ব্যক্তিগত সদস্যদের যোগ্যতা নির্বাচনি পরীক্ষায় পাস করতে হয়, যেন তারা অন্য কোনো দলের বা তাদের সহযোগী সংগঠনের সদস্য হতে পারবে না। সংযুক্ত সদস্যদের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নেই। দলটির জাতীয় পর্যায়ের এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের দলের ব্যক্তিগত সদস্য হতে হবে।
উদারনৈতিক দল
Liberal Party
উৎপত্তি : ১৮৩২ সালের সংস্কার আইন প্রণীত হওয়ার পর হুইগ (Whig) দল উদারনৈতিক দল নামে পরিচিত হয়। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একসময় উদারনৈতিক দল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পামার মেটাল, গ্লাডস্টোন, আসকুইথ, লয়েড জর্জ প্রভৃতি স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বাধীন এই দল একসময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করেছিল। ১৯১১ সালে পার্লামেন্ট আইন পাস করে এই দল লর্ডসভাকে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলে। অগ এবং জিংক (Ogg and Zink) এর মতে, ১৯০৫ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত দশকটি উদারনৈতিক দলের দশক হিসেবে গণ্য। ব্রিটেনের রাজনৈতি ইতিহাসে এমন তাৎপর্যপূর্ণ দশক আর কোনো সময় দেখা যায়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উদারনৈতিক দলের প্রভাব হ্রাস পায় এবং শ্রমিক দলের প্রভাব বৃদ্ধি পায় ৷
উদারনৈতিক দলের গঠন
Formation of the Liberal Party
উদারনৈতিক দলের একজন নেতা আছেন। ১৯৭৬ সালের আগে দলের এমপিরাই নেতা নির্বাচন করতেন। এই বছর নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়। তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দলের সদস্যরাই নেতা নির্বাচনের কাজে অংশগ্রহণ করেন। এই পরিবর্তনের কারণ হলো ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে দলটি ১৪ জনের বেশি এমপি সংগ্রহ করতে পারে নি। উদারনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনেকটা ক্ষমতাহীন। পার্লামেন্টের নির্বাচনে আঞ্চলিক শাখা প্রার্থী নির্বাচন করে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তার বিরোধিতা করতে পারে না। উদারনৈতিক দলে তিন শ্রেণির সদস্য রয়েছে । প্রথম শ্রেণির সদস্য হলো বৃত্তিভোগী প্রধান ব্যক্তি যারা আন্তর্জাতিকতাবাদ প্রচার করত। দ্বিতীয়ত, উদারনৈতিক দলের একশ্রেণির সদস্য সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী (Community) রাজনীতি করেন। জাতীয় রাজনীতির স্তরে এই দলের তেমন কোনো প্রভাব নেই । তৃতীয়ত মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক যুবক এই দলের সদস্য।
উদারনৈতিক দলের আদর্শ ও নীতি
Ideology and Principle of Liberal Party
উদারনীতিবাদের সার কথা হলো নতুন নতুন চেতনা ও চিন্তার উন্মেষকে আমন্ত্রণ জানানো। নতুন অভিজ্ঞতাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা, ব্যক্তিগত বিচার-বুদ্ধিকে সর্বত্র অগ্রাধিকার দেওয়া। উদারনীতিবাদের উদ্ভব রাষ্ট্র ও গির্জার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদস্বরূপ। উদারনীতিবাদে বলা হয়েছে- Individual is prior to the state.
Only in the individual appear the principles of growth, of initiative, of creation and the possibility of really assenting to its validity in other people. উদারনীতিবাদ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের সমৃদ্ধি সাধন, ভোটাধিকারের সম্প্রসারণ, বৈদেশিক ক্ষেত্রে অবাধ বাণিজ্য নীতি সমর্থন, মুদ্রণযন্ত্রের স্বাধীনতা, রাজশক্তি ও লর্ডসভার ক্ষমতা হ্রাস, কমন্সসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রভৃতি হলো উদারনৈতিক দলের স্বীকৃত নীতি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদারনৈতিক দল উপনিবেশসমূহ রক্ষা করার এবং কমনওয়েলথ ব্যবস্থাকে বজায় রাখার নীতিতে বিশ্বাসী ।
সমর্থনের ভিত্তি
Bases of Support
উদারনৈতিক দলের প্রধান সমর্থক হলো মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যে সব লোক রক্ষণশীল বা শ্রমিক দলের কোনোটিই করে না তাদের কেউ কেউ এ দলের সমর্থক। তবে এ দল রক্ষণশীল দলের চেয়ে প্রগতিশীল। ১৯৮৪ সালের হিসাব অনুযায়ী এ দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো। তবে ব্রিটেনের রাজনীতিতে এ দল এখনও নিঃশেষ হয়ে যায় নি।
সামাজিক গণতন্ত্ৰী দল
Social Democratic Party-SDP
উৎপত্তি : ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে সরকারিভাবে সামাজিক গণতন্ত্রী দল (SDP) আত্মপ্রকাশ করে। দলের গঠনের শুরুতে ছিলেন চার জন নেতা। রয় জেনকিনস (Roy Jenkins) হলেন সরকারি অর্থ ভাণ্ডারের চ্যান্সেলর ও অভিন্ন বাজারের কমিশনার উইলিয়াম রোজার্স (William Rodgers) হলেন প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী, শিলে উইলিয়মস ( Shirley Williams) প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং ডেভিড ওয়েন (David Owen) প্রাক্তন বিদেশ সচিব। এই চার জনের সকলেই শ্রমিক দলের নেতা ছিলেন এবং সরকারি কাজে তাঁরা নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের সাথে আরও ৯ জন শ্রমিক এমপি নতুন দলে যোগ দেন। চারজন নেতার দলত্যাগের বক্তব্য ছিল শ্রমিক দল ক্ৰমান্বয়ে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে শ্রমিকদল জয়লাভ করলে ন্যাটো ও অভিন্ন বাজার ত্যাগ করবে যা হবে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতির পক্ষে চরম ক্ষতিকর। সুতরাং ব্রিটেনের জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনীতিকে বাঁচাবার তাগিদেই তাঁরা এসডিপি গঠন করেছেন।
মতাদর্শ ও কর্মসূচি
Ideology and Programme
সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নীতি ও কর্মসূচির মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের আশা-আকাঙ্খা প্রতিফলিত হওয়ায় পরিবর্তে পুঁজিবাদী ব্রিটেনের প্রচলিত সমাজব্যবস্থাকে সংরক্ষণ করার কথাই প্রাধান্য পেয়েছে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করার জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো ন্যাটোর মতো যে সব আঞ্চলিক সামরিক জোট কিংবা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সংস্থা গঠন করেছে এই দল তাতে যোগদান করার কথা ঘোষণা করেছিল।
এসডিপি ১৯৮৩ সালের নির্বাচনে উদারনৈতিক দলের সাথে জোট গঠন করে ৬টি আসনে জয়ী হয়। ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে এই দল ৫টি আসন লাভ করে। ১৯৮৮ সালে উদারনৈতিক দল এবং সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (SDP)-র সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দল (Liberal Democratic Party) গঠন করে। ২০১০ সালের নির্বাচনে এই দল তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এ নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সর্ববৃহৎ দল রক্ষণশীল দল (Conservative party), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সহায়তায় কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। এ দলের নেতা ছিলেন নিক ক্লেগ (Nick Clegg)। তিনি তখন ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
কমিউনিস্ট দল
Communist Party
ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কনিউনিস্ট দল হলো একটি ক্ষুদ্র দল। এই দল মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী। মার্কসীয় দৰ্শন অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার বৈপ্লবিক ও আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করাই হলো এই দলের মূল লক্ষ্য। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে শ্রমিক দলের সহায়তায় কমিউনিস্ট দল ব্রিটেনে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ব্রিটেনের রাজনীতিতে এই দলের তেমন কোনো প্রভাব নেই ।
গ্রিন পার্টি
Green Party
১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম ইকোলোজি পার্টি নামে দলটি আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৫ সালে নাম পরিবর্তন করে গ্রিন পার্টি (Green Party) ব্যাখ্যা হয়। এই দলটি পরিবেশ সংরক্ষণের সমস্যা দূরীকরণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। তাছাড়া মানবিক অধিকার রক্ষাও দলটি কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্ষুদ্রায়তন শিল্পের প্রসার সাধন এবং আণবিক অস্ত্রের বিলোপ সাধনে দলটি আন্দোলন সংগ্রাম করে।
উলস্টার ইউনিয়নিস্ট
Ulstar Unionists
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত উত্তর আয়ারল্যান্ডের অধিকাংশ সদস্যই হলেন ইউনিয়নিস্ট। তাঁরা আয়ারল্যান্ডের প্রজাতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন এবং ব্রিটেনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। এটি একটি আঞ্চলিক দল ।
ইসলামিক পার্টি অব ব্রিটেন
Islamic Party of Birtain
১৯৮৯ সালে ইসলামিক পার্টি অব ব্রিটেন গঠিত হয়। এ দল ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবিদার। তাঁরা মুসলিম শিক্ষার বিকাশের জন্য সরকারি সাহায্য লাভের চেষ্টা করে। দলটি ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষায় অঙ্গীকার বদ্ধ। তাছাড়া দলটি সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট।
স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি
Scotish Nationalist Party
১৯৩৪ সালে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি গঠিত হয়। এ দলের দাবি হলো স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা আদায় করা। এটি একটি আঞ্চলিক দল। ব্রিটেনের রাজনীতিতে এ দলের প্রভাব কম। তবে প্রতিটি পার্লামেন্ট নির্বাচনে এ দল ২-৫টি আসন অর্জন করতে সক্ষম হয়।