Table of Contents
Toggleব্রিটেনে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ
Application of the Theory of Separation of Power in U. K.
ব্রিটেন/ যুক্তরাজ্য বিশ্বের অন্যতম সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যে কারণে ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা করণ ৩৩টা কার্যকর নয়। এখানে এ নীতি আংশিকভাবে প্রযোজ্য। হার্ভে ও বার্গার-এর মতে, “The Cabinet is the real policy forming body in the British constitution.” যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ না হওয়ার পশ্চাতে যে সময় কারণ রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ :
১. পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব : ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সার্বভৌম ও প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। নিরঙ্কুশ তার অধিক পার্লামেন্ট যে কোনো শাসনতান্ত্রিক আইন প্রবর্তন করতে পারে, যে কারণে ব্রিটেনে ক্ষমতাতন্ত্রীকরণ নীতি অতটা নয়। কে. সি. হুইয়ার (K. C. Wheare)-এর ভাষায়, “The supremacy of parliament is the corner stone of british constitution.”
২. শাসন ও আইন বিভাগের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক : ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় শাসন ও আইন বিভাগ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। যে কারণে উভয় বিভাগকে কোনোক্রমেই পৃথক করা যায় না। কমন্সসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আস্থাভাজন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কেবিনেট গঠিত হয়। শাসন বিভাগের স্থায়িত্ব পার্লামেন্টের আস্থার উপর নির্ভরশীল। ফলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। অধ্যাপক কোরি (Prof. Kori) -এর মতে, “In Britain the executive and legislative powers are not separated but almost completely fused.”
৩. শাসন বিভাগের দায়-দায়িত্ব : ব্রিটেনের শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিকট দায়ী। এমনকি মন্ত্রিসভা একটি কমিটির ন্যায় কাজ করে মাত্র। মন্ত্রিসভার সদস্যরা আইনসভারও সদস্য। যে কারণে এখানে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির জোরালো উপস্থাপন নেই ।
৪. মন্ত্রিসভার একনায়কত্ব : ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একনায়কত্ব এদেশে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করেছে। কেননা, রাষ্ট্রের ক্ষমতার কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনসভা মন্ত্রিসভাকে অনেক অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছে। এতে করে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াল্টার বেজহট (Begehot)-এর মতে, “The British cabinet is not merely a fusion but almost a complete union of both the legislative functions of the government.”
৫. এককেন্দ্রিকতা : ব্রিটেনের এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগের অন্যতম বাধা। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় যাবতীয় ক্ষমতা একটি মাত্র কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত। কেন্দ্রীয় আইনসভা হিসেবে পার্লামেন্ট সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আঞ্চলিক ক্ষমতা এখানে অনেকটা সীমিত। ফলে কেন্দ্রিয় প্রবণতার কারণে ব্রিটেনে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি সীমিত।
৬. রাজা বা রানীর নিয়োগ ক্ষমতা : ব্রিটেনের রাজা বা রানী হলেন সাংবিধানিকভাবে প্রকৃত শাসক। তিনি বিচারপতিসহ অন্যান্য নিয়োগ ক্ষমতা ভোগ করেন। আবার পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই বিচারপতিদের কেবল অপসারণ সম্ভব। অর্থাৎ বিচারপতিগণ কেবিনেট ও রাজার নিকট দায়ী থাকেন। যে কারণে ব্রিটেনে কার্যক্ষেত্রে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি অপ্রযোজ্য ।
৭. বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা : ব্রিটেনের বিচার বিভাগ দুর্বল প্রকৃতির। এ বিভাগ সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে না; বাতিল করতে পারে না। এমনকি আইনসভা বিচার বিভাগীয় ব্যাখ্যা বাতিল করে নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে। ফলে ব্রিটেনে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ হয় না।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যুক্তরাজ্যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এখানকার আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। অধ্যাপক জিঙ্ক ও কোরির (Zink & Kory), “The principle of seperation of power finds only limited application in British system.” কাজেই বলা যায়, ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি অতটা কার্যকরী নয়, তবে এর উপস্থিতি আজও ঐ শাসনব্যবস্থায় বিদ্যমান