ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি করা হয়নি
The British Constitution has not been made, it has Developed A. V. Dicey / The British Constitution is a result of Evolution by many centuries
সাধারণত চারটি পদ্ধতিতে সংবিধান রচিত হয়। এগুলো মঞ্জুরি, সুপরিকল্পিত রচনা, বিপ্লব ও বিবর্তন। এদের মাধ্যমে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে। ক্রমবিবর্তন বলতে পর্যায়ক্রমিক বিকাশ ধারাকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো আইনসভা নির্ধারিত কোনো সময়ে এ ধরনের সংবিধান রচনা করেনি। ব্রিটিশ জাতির ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরোনো হলেও পঞ্চম শতক থেকে সেখানে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। এভাবে শত শত বছরের শাসনতান্ত্রিক ও বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে ওঠে।
“ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে, তৈরি করা হয়নি”-এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের আলোচনা করতে হবে কোন কোন বিশেষ ঘটনা বা বাস্তবতাকে ঘিরে ব্রিটিশ সংবিধান প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। নিম্নে এসব বিষয়সমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর হলো
১. ঐতিহাসিক সনদ ও চুক্তিপত্র : ব্রিটেনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে সামস্তশ্রেণি ও বণিকশ্রেণির চাপে এবং বিভিন্ন আন্দোলনের ফলে ব্রিটেনের রাজন্যবর্গ সনদ ও চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কতগুলো অধিকার স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১২১৫ সালের ‘মহাসনদ’, ১৬২৮ সালের ‘অধিকারের আবেদনপত্র’, ১৬৮৮ সালের ‘অধিকারের বিল’, ১৭০৭ ও ১৮০০ সালের যথাক্রমে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের চুক্তিপত্র ইত্যাদির কথা। উল্লেখ করা যায়। এগুলো ব্রিটিশ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিধিবদ্ধ আইন : নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি সাধন, জনগণের ভোটাধিকার সম্প্রসারণ, রাজার ক্ষমতার সংকোচন, উৎকর্ষ সাধন ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করেছে। এগুলো ব্রিটিশ সংবিধানের প্রধান উৎ হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব বিধিবদ্ধ আইনের মধ্যে ১৬৭৯ সালে প্রণীত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সম্পর্কিত ‘হেবিয়াস কর্পাস আইন’, ১৭০১ সালে প্রণীত সিংহাসনের উত্তরাধিকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত ‘নিষ্পত্তি আইন’, ১৮৩২, ১৮৬৭, ১৮৮৪-৮৫ সালে প্রণীত ভোটাধিকার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত ‘সংস্কার আইন’ এবং ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালে প্রণীত পার্লামেন্টের ক্ষমতা বিষয়ক ‘পার্লামেন্ট আইন’ ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
২. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত : সনদ, চুক্তি ও বিধিবদ্ধ আইনের মধ্যে অনেক সময় অস্পষ্টতা থেকে যায়। বিচার বিভাগ সেগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে নতুন আইন সৃষ্টি করে। তবে যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগ পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারলেও এরূপ কোনো আইনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে না। অধ্যাপক ডাইসির মতে, ব্যক্তির অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারালয়ে আনীত মামলার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সংবিধানের সাধারণ সূত্রসমূহ গড়ে উঠেছে। তিনি যুক্তরাজ্যের সংবিধানকে ‘বিচারকগণ কর্তৃক রচিত সংবিধান’ বলে বর্ণনা করেছেন। বস্তুত ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট প্রণীত আইন অপেক্ষা বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
৩. প্রথাগত আইন : প্রথাগত আইন হলো সুদীর্ঘকাল যাবত প্রচলিত সেসব রীতিনীতি যেগুলো কালক্রমে আদালতের মাধ্যমে আইনরূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রথাগত আইনসমূহ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত হয় না কিংবা রাজন্যবর্গ সেগুলোকে অর্ডিন্যান্স হিসেবে ঘোষণা করে না। তবে অনেক প্রথাগত আইন কালক্রমে পার্লামেন্ট কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে বিধিবদ্ধ আইনে রূপান্তরিত হয়েছে। রাজার বিশেষ ক্ষমতা, জুরির সাহায্যে বিচার, বাকস্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ইত্যাদি প্রথাগত আইনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
৪. শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি : শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহের ভিত্তিতেও ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে। শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহ আইনের ন্যায় আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হলেও সেগুলো আইন অপেক্ষা কোনোক্রমেই কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না । রাজার সঙ্গে মন্ত্রিদের সম্পর্ক, মন্ত্রিদের সঙ্গে পার্লামেন্টের সম্পর্ক, পার্লামেন্টের কার্যপদ্ধতি, লর্ডসভা ও কমন্সসভার মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
৫. প্রামাণ্য পুস্তক : সংবিধান সম্পর্কে রচিত প্রামাণ্য পুস্তকসমূহকেও অনেকে ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে বর্ণনা করেছেন। এসব প্রামাণ্য পুস্তকের মধ্যে ওয়াল্টার বেজট লিখিত ‘ইংল্যান্ডের সংবিধান’, মে-এর ‘সংসদীয় প্ৰথা’, অ্যানসনের ‘সংবিধানের আইন ও রীতিনীতি’, ডাইসির ‘সংবিধানের আইন’, আইভর জেনিংস রচিত ‘আইন এবং সংবিধান ও ক্যাবিনেট শাসনব্যবস্থা’, লাস্কির ‘ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থা’, অ্যামেরির রচিত ‘সংবিধান সম্পর্কিত চিন্তা’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে ওঠার সপক্ষে আরও কিছু যুক্তি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
বর্তমান রাজতন্ত্র ও পার্লামেন্ট গড়ে ওঠে পঞ্চম শতকে। এ সময় অ্যাংলো-স্যাক্সনরা দেশ শাসন করত। রাজাকে পরামর্শ দিত ‘উইটনগমোট’ বা বিজ্ঞজনদের পরিষদ। একাদশ শতকে নরম্যানরা ইংল্যান্ড জয় করে। তাঁরা উইটনগমোট ভেঙে ‘ম্যাগনাস কনসিলিয়াস’ এবং ‘কিউরিয়া রেজিস’ নামে দুটি পরিষদ গঠন করে। পরবর্তীতে ‘কিউরিয়া রেজিস’-কে ভেঙে প্রতিষ্ঠা করা হয় আদালত ও প্রিভি কাউন্সিল। প্রিভি কাউন্সিলের সংস্করণকৃত নাম কেবিনেট।
ত্রয়োদশ শতকে আবার ম্যাগনাস কনসিলিয়াস ভেঙে লর্ডসভা ও কমথসভা গঠিত হয়। এ কাজটি করেন প্রথম এডওয়ার্ড। মূলত প্রজাতন্ত্রের যুগ এ সময় থেকেই শুরু। ১৬৮৮ সালে রক্তপাতহীন বিপ্লবের মাধ্যমে অরেঞ্জ বংশের রাজা তৃতীয় উইলিয়াম সিংহাসনে বসেন। তাঁর সময়ে ‘বিল অব রাইটস’ স্বাক্ষরিত হয়। এতে নিয়মতান্ত্রিক রাজতেন্ত্রর কথা বলা হয়। আর অ্যাক্ট অব সেটেলম্যান্ট দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।
প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে বর্তমান ব্রিটেনের বিকাশ আরম্ভ হলেও ব্রিটিশ সংবিধান নির্ধারিত কারো হাতে পূর্ণতা গায়নি। এটা গড়ে উঠেছে সময় ও ঘটনার পরম্পরায়। পরিবর্তনশীল পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে ব্রিটিশ সংবিধান খাপ খাইয়ে চলেছে । ফাইনার তাই বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের সংবিধানের ক্রমধারার শেষ নেই’।
সুতারাং, স্পষ্টতই দেখা যায় যে, বিভিন্ন পরিক্রমার মাধ্যমে ব্রিটিশ জাতি কর্তৃক অনুসরণকৃত সংবিধান গড়ে উঠেছে ।
The British Constitution has not been made, it has Developed A. V. Dicey / The British Constitution is a result of Evolution by many centuries
সাধারণত চারটি পদ্ধতিতে সংবিধান রচিত হয়। এগুলো মঞ্জুরি, সুপরিকল্পিত রচনা, বিপ্লব ও বিবর্তন। এদের মাধ্যমে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে। ক্রমবিবর্তন বলতে পর্যায়ক্রমিক বিকাশ ধারাকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো আইনসভা নির্ধারিত কোনো সময়ে এ ধরনের সংবিধান রচনা করেনি। ব্রিটিশ জাতির ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরোনো হলেও পঞ্চম শতক থেকে সেখানে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। এভাবে শত শত বছরের শাসনতান্ত্রিক ও বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে ওঠে।
“ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে, তৈরি করা হয়নি”-এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের আলোচনা করতে হবে কোন কোন বিশেষ ঘটনা বা বাস্তবতাকে ঘিরে ব্রিটিশ সংবিধান প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। নিম্নে এসব বিষয়সমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর হলো :
১. ঐতিহাসিক সনদ ও চুক্তিপত্র : ব্রিটেনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে সামস্তশ্রেণি ও বণিকশ্রেণির চাপে এবং বিভিন্ন আন্দোলনের ফলে ব্রিটেনের রাজন্যবর্গ সনদ ও চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কতগুলো অধিকার স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১২১৫ সালের ‘মহাসনদ’, ১৬২৮ সালের ‘অধিকারের আবেদনপত্র’, ১৬৮৮ সালের ‘অধিকারের বিল’, ১৭০৭ ও ১৮০০ সালের যথাক্রমে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের চুক্তিপত্র ইত্যাদির কথা। উল্লেখ করা যায়। এগুলো ব্রিটিশ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিধিবদ্ধ আইন : নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি সাধন, জনগণের ভোটাধিকার সম্প্রসারণ, রাজার ক্ষমতার সংকোচন, উৎকর্ষ সাধন ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করেছে। এগুলো ব্রিটিশ সংবিধানের প্রধান উৎ হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব বিধিবদ্ধ আইনের মধ্যে ১৬৭৯ সালে প্রণীত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সম্পর্কিত ‘হেবিয়াস কর্পাস আইন’, ১৭০১ সালে প্রণীত সিংহাসনের উত্তরাধিকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত ‘নিষ্পত্তি আইন’, ১৮৩২, ১৮৬৭, ১৮৮৪-৮৫ সালে প্রণীত ভোটাধিকার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত ‘সংস্কার আইন’ এবং ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালে প্রণীত পার্লামেন্টের ক্ষমতা বিষয়ক ‘পার্লামেন্ট আইন’ ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
২. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত : সনদ, চুক্তি ও বিধিবদ্ধ আইনের মধ্যে অনেক সময় অস্পষ্টতা থেকে যায়। বিচার বিভাগ সেগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে নতুন আইন সৃষ্টি করে। তবে যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগ পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারলেও এরূপ কোনো আইনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে না। অধ্যাপক ডাইসির মতে, ব্যক্তির অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারালয়ে আনীত মামলার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সংবিধানের সাধারণ সূত্রসমূহ গড়ে উঠেছে। তিনি যুক্তরাজ্যের সংবিধানকে ‘বিচারকগণ কর্তৃক রচিত সংবিধান’ বলে বর্ণনা করেছেন। বস্তুত ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট প্রণীত আইন অপেক্ষা বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
৩. প্রথাগত আইন : প্রথাগত আইন হলো সুদীর্ঘকাল যাবত প্রচলিত সেসব রীতিনীতি যেগুলো কালক্রমে আদালতের মাধ্যমে আইনরূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রথাগত আইনসমূহ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত হয় না কিংবা রাজন্যবর্গ সেগুলোকে অর্ডিন্যান্স হিসেবে ঘোষণা করে না। তবে অনেক প্রথাগত আইন কালক্রমে পার্লামেন্ট কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে বিধিবদ্ধ আইনে রূপান্তরিত হয়েছে। রাজার বিশেষ ক্ষমতা, জুরির সাহায্যে বিচার, বাকস্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ইত্যাদি প্রথাগত আইনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
৪. শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি : শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহের ভিত্তিতেও ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে। শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহ আইনের ন্যায় আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হলেও সেগুলো আইন অপেক্ষা কোনোক্রমেই কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না । রাজার সঙ্গে মন্ত্রিদের সম্পর্ক, মন্ত্রিদের সঙ্গে পার্লামেন্টের সম্পর্ক, পার্লামেন্টের কার্যপদ্ধতি, লর্ডসভা ও কমন্সসভার মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
৫. প্রামাণ্য পুস্তক : সংবিধান সম্পর্কে রচিত প্রামাণ্য পুস্তকসমূহকেও অনেকে ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে বর্ণনা করেছেন। এসব প্রামাণ্য পুস্তকের মধ্যে ওয়াল্টার বেজট লিখিত ‘ইংল্যান্ডের সংবিধান’, মে-এর ‘সংসদীয় প্ৰথা’, অ্যানসনের ‘সংবিধানের আইন ও রীতিনীতি’, ডাইসির ‘সংবিধানের আইন’, আইভর জেনিংস রচিত ‘আইন এবং সংবিধান ও ক্যাবিনেট শাসনব্যবস্থা’, লাস্কির ‘ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থা’, অ্যামেরির রচিত ‘সংবিধান সম্পর্কিত চিন্তা’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে ওঠার সপক্ষে আরও কিছু যুক্তি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
বর্তমান রাজতন্ত্র ও পার্লামেন্ট গড়ে ওঠে পঞ্চম শতকে। এ সময় অ্যাংলো-স্যাক্সনরা দেশ শাসন করত। রাজাকে পরামর্শ দিত ‘উইটনগমোট’ বা বিজ্ঞজনদের পরিষদ। একাদশ শতকে নরম্যানরা ইংল্যান্ড জয় করে। তাঁরা উইটনগমোট ভেঙে ‘ম্যাগনাস কনসিলিয়াস’ এবং ‘কিউরিয়া রেজিস’ নামে দুটি পরিষদ গঠন করে। পরবর্তীতে ‘কিউরিয়া রেজিস’-কে ভেঙে প্রতিষ্ঠা করা হয় আদালত ও প্রিভি কাউন্সিল। প্রিভি কাউন্সিলের সংস্করণকৃত নাম কেবিনেট।
ত্রয়োদশ শতকে আবার ম্যাগনাস কনসিলিয়াস ভেঙে লর্ডসভা ও কমথসভা গঠিত হয়। এ কাজটি করেন প্রথম এডওয়ার্ড। মূলত প্রজাতন্ত্রের যুগ এ সময় থেকেই শুরু। ১৬৮৮ সালে রক্তপাতহীন বিপ্লবের মাধ্যমে অরেঞ্জ বংশের রাজা তৃতীয় উইলিয়াম সিংহাসনে বসেন। তাঁর সময়ে ‘বিল অব রাইটস’ স্বাক্ষরিত হয়। এতে নিয়মতান্ত্রিক রাজতেন্ত্রর কথা বলা হয়। আর অ্যাক্ট অব সেটেলম্যান্ট দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।
প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে বর্তমান ব্রিটেনের বিকাশ আরম্ভ হলেও ব্রিটিশ সংবিধান নির্ধারিত কারো হাতে পূর্ণতা গায়নি। এটা গড়ে উঠেছে সময় ও ঘটনার পরম্পরায়। পরিবর্তনশীল পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে ব্রিটিশ সংবিধান খাপ খাইয়ে চলেছে । ফাইনার তাই বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের সংবিধানের ক্রমধারার শেষ নেই’।
সুতারাং, স্পষ্টতই দেখা যায় যে, বিভিন্ন পরিক্রমার মাধ্যমে ব্রিটিশ জাতি কর্তৃক অনুসরণকৃত সংবিধান গড়ে উঠেছে ।