ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ

ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর । Discuss about the characteristics of British Constitution

আধুনিক সংবিধানগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধান হলো সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধানের উপর এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তাই অধ্যাপক মুনরো (Munro) বলেছেন, “ব্রিটিশ সংবিধান হলো সব সংবিধানের মাতৃস্থানীয়, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হলো সব পার্লামেন্টের মাতৃস্থানীয়।” (The British constitution is the mother of all coristitutions, the British parliament is the mother of all parliaments.) সঙ্গত কারণে ব্রিটিশ সংবিধানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জানার আগ্রহ মানুষের মধ্যে প্রবল। ব্রিটিশ সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ক. অলিখিত সংবিধান ( Unwritten constitution) : ব্রিটিশ সংবিধান হলো অলিখিত সংবিধানের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশের মতো ব্রিটিশ সংবিধানের মূলনীতিগুলো কোনো একটি লিখিত দলিলের মধ্যে লিপিবদ্ধ নেই। বিভিন্ন সংবিধানিক রীতিনীতি, সংস্কার, নজির, প্রথা প্রভৃতির মধ্যে এই সংবিধানের মূলনীতিগুলো অবিন্যস্তভাবে রয়েছে, ব্রিটিশ সংবিধান কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো গণপরিষদ বা কনভেনশন কর্তৃক রচিত হয় নি।

তবে ব্রিটিশ সংবিধান সম্পূর্ণভাবে অলিখিত-একথা বলা যায় না। এই অলিখিত সংবিধানেরও কিছু কিছু লিখিত অংশ আছে। উদাহরণস্বরূপ-১২১৫ সালের মহাসনদ (Magna Carta), ১৬৮৯ সালের অধিকারের বিল (Bill of Rights), 1901 সালের নিষ্পত্তি আইন ( Act of settlement), ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট আইন (Act of Parliament) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাই ব্রিটিশ সংবিধানকে সম্পূর্ণভাবে অলিখিত না বলে প্রধানত অলিখিত বলাই যুক্তিযুক্ত।

খ. এককেন্দ্রিক (Unitary) : ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা কাঠামোগতভাবে এককেন্দ্রিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়নি। ব্রিটেনের সংবিধান অনুযায়ী সমুদয় ক্ষমতা লন্ডনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন অনুযায়ী সমগ্র দেশের ও অঞ্চলের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য এখানেও কাউন্টি, বরো, প্যারিস প্রভৃতি স্থানীয় সরকার সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু এসব সরকার সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্ৰীয় সরকারের আইন ও নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

গ. সুপরিবর্তনীয় সংবিধান (Flexible constitution) : ব্রিটিশ সংবিধান সুপরিবর্তনীয় প্রকৃতির। সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতির মতো অতি সহজ পদ্ধতিতে এই সংবিধানকে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায়। এরূপ সংবিধানের সংশোধন বা পরিবর্তন সাধনের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়োজন হয় না। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে সংবিধান পরিবর্তন করা যায়। অধ্যাপক ফাইনার (Finer) বলেন, “The British constitution is the most flexible constitution among free states.” অবশ্য কে. সি. হোয়ার (K. C. Wheare) মনে করেন যে, সংশোধন পদ্ধতির উপর কোনো সংবিধানের সুপরিবর্তনীয়তা বা দুষ্পরিবর্তনীয়তা নির্ভর করে না। তা নির্ভর করে সমাজের প্রভুত্বকারী শ্রেণির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর।

ঘ. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা (Parliamentary form of Government) : ব্রিটেনে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ব্রিটেনকে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মাতৃভূমি বলা হয়। ব্রিটেনের রাজা বা রানী হলেন নিয়মতান্ত্রিক শাসক মাত্র। দেশের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকে। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ পার্লামেন্টের সদস্য। মন্ত্রিগণ তাদের যাবতীয় কাজের জন্য পার্লামেন্টের কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং যৌথভাবে দায়ী থাকেন। পার্লামেন্টের আস্থা হারালে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয় । তত্ত্বগতভাবে ব্রিটেনে পার্লামেন্টই শাসনকার্য পরিচালনা করে।

ঙ. নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র (Constitutional monarchy) : ব্রিটেনে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রবর্তিত হয়েছে। তত্ত্বগতভাবে রাজা বা রানী দেশের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী হলেও বাস্তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ ব্যতীত উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা ভোগ করেন না। তাঁর নামে যাবতীয় শাসনকার্য পরিচালিত হলেও তিনি নিজে কোনো কার্য সম্পাদন করেন না। তাঁর হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভাই সব কিছু করে। মূলত ১৬৮৯ সালের অধিকারের বিল এবং ১৭০১ সালের রাজকীয় উত্তরাধিকার আইনের মাধ্যমে রাজশক্তির ক্ষমতা খর্ব এবং পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। এজন্য বলা হয় ব্রিটেনে রাজা রাজত্ব করেন, কিন্তু শাসন করেন না। (The king reigns, but does not govern.)

চ. পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব (Parliamentary Sovereignty ) : ব্রিটিশ সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পার্লামেন্টের সার্বভৌম ক্ষমতা। ব্রিটেনে পার্লামেন্ট বলতে রাজাসহ পার্লামেন্ট (King-in-Parliament)-কে বোঝায়। রাজা, লর্ডসভা এবং কমন্সসভাকে নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গঠিত হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যে কোনো আইন তৈরি, বাতিল বা সংশোধন করতে পারে। পার্লামেন্টের সব আইনকেই আদালত বৈধ বলে প্রয়োগ করে। আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ব্যাখা করতে পারলেও এরূপ আইন বাতিল করতে পারে না। ফরাসি লেখক ডি. লোলমি (De Lolme) যথার্থই বলেছেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পুরুষকে নারীতে এবং নারীকে পুরুষে রূপান্তরিত করা ছাড়া সবকিছুই করতে পারে। (It is a fundamental principle with English lawyers that Parliament can do every thing but make woman a man and a man a woman) E (Blackstone)-এর মতে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাজকে অস্বীকার করার মতো কোনো শক্তি ইহজগতে নেই। কে.সি. হোয়ার (K. C. Wheare)-এর ভাষায়, “The supremacy of parliament is the cornerstone of the British constitution.”

ছ. দুর্বল বিচার ব্যবস্থা (Weak judicial system) : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের মতো ব্রিটেনের বিচার বিভাগ তেমন শক্তিশালী নয়। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান বিরোধী এবং ন্যায়নীতি বোধের বিরোধী যে কোনো আইনকে বাতিল ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু ব্রিটেনের বিচার বিভাগের হাতে এ ধরনের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়নি। আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত কোনো আইন ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু তার বৈধতা বিচার করতে পারে না। আইনের বিষয়ে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

জ. ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির অনুপস্থিতি (Absence of separation of Powers) : ব্রিটেনের সংবিধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসৃত হয় না। ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে রামজে মুইর (Ramsay Muir ) বলেন, “If separation of powers is the essential principle of the American constitution, centralization of responsiblity is the essential principle of the British constitution.” অধ্যাপক রবসন (RA. Robson ) বলেছেন, “ব্রিটেনের সাংবিধানিক ইতিহাসে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিশেষ কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না।” এখানে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে মস্তিগণ একই সাথে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সাথে জড়িত থাকেন। তবে বর্তমানে বিচার বিভাগকে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা হয়েছে।

ঝ. প্রথার প্রাধান্য (Importance of Conventions ) : ব্রিটিশ সংবিধানের একটি বৃহৎ অংশ অধিকার করে আছে প্রথাগত বিধানসমূহ । এসব প্রথাগত বিধান ব্রিটিশ সংবিধানের প্রকৃতিকে বহুলাংশে পরিবর্তন করেছে। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings)-এর মতে, “সাংবিধানিক প্রথাসমূহ আইনের শুষ্ক কাঠামোকে রক্তমাংসের আবরণে আবৃত করে, আইনগত সংবিধানকে কার্যকরী করে এবং পরিবর্তনশীল চিন্তাধারার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে।” (The short explanation of the constitutional conventions is that they provide the flesh which clothes the dry bones of the law; they make the legal constitution work; they keep it in touch with the growth of ideas.) হারভে ও ব্যাথার (Harvey and Bather) বলেছেন, “Conventions are the means by which the constitution is made adaptable. “

ঞ. আইনের শাসন (Rule of law) : আইনের শাসন ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আইনের শাসন বলতে দেশের শাসনব্যবস্থায় আইনের সুস্পষ্ট প্রাধান্যকে বোঝায়। অধ্যাপক ডাইসি (A.V. Diecy) আইনের শাসনের তিনটি অর্থ ব্যক্ত করেছেন, যথা (ক) সাধারণ আইনের সর্বাত্মক প্রাধান্য, (খ) আইনের চোখে সকলে সমান এবং (গ) আইনের দ্বারা জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করা। লর্ড হিউয়ার্ট (Lored Hewart) বলেন, “Rule of law means the supremacy or predominance of law as distinguished from mere arbitariness.” গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসনকে ব্যক্তিস্বাধীনতার সর্বপ্রধান রক্ষাকবচ বলে মনে করা হয় ।

ট. দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা (Bi-cameral Legislature) : ব্রিটিশ আইনসভা তথা পার্লামেন্ট দুটি কক্ষের সমন্বয়ে গঠিত। এর নিম্নকক্ষের নাম কমন্সসভা (House of Commons ) এবং উচ্চকক্ষের নাম লর্ভ সভা (House of Lords)। নিম্নকক্ষ ব্রিটিশ জনগণের দ্বারা সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। উচ্চকক্ষের সদস্যগণ সামন্ততান্ত্রিক উপায়ে অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে সদস্যপদ লাভ করেন। অতীতে উভয় কক্ষ সমান ক্ষমতা ভোগ করলেও বর্তমানে লর্ডসভার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং কমন্সসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ঠ. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা (Bi-Party system ) : ব্রিটেনে অনেক রাজনৈতিক দল থাকলেও দুটি মাত্র দলই প্রাধান্য অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। অতীতে ছিল রক্ষণশীল দল ও উদারনৈতিক দল। বিংশ শতাব্দির শুরুতে উদারনৈতিক দলের প্রভাব একেবারে হ্রাস পেয়ে যায় এবং সেই শূন্যস্থান পূরণ করে শ্রমিক দল। বর্তমানে ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রক্ষণশীল দল ও শ্রমিক দল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।

ড. নাগরিকদের অধিকার ( Rights of the citizens) : ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকারসমূহ প্রচলিত প্রথা, সাংবিধানিক রীতিনীতি, বিধিবদ্ধ আইন, বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত প্রভৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত। ব্রিটেনে বাক্’ স্বাধীনতা, সভা-সমিতি করার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি নাগরিকগণ প্রচলিত আইনের ভিত্তিতেই ভোগ করে। ‘হেবিয়াস কর্পাস’ আইনের মাধ্যমে ব্রিটেনের নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ঢ. অগণতান্ত্রিক উপাদান (Undemocratic elements) : ব্রিটিশ সংবিধানে কিছু অগণতান্ত্রিক উপাদান বর্তমান। ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের মতো একটি অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে এখনও যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তাছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডসভাও একটি অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। লর্ডসভার সদস্যগণ উত্তরাধিকার সূত্রে সদস্য পদ লাভ করেন। স্থানীয় সরকারগুলোতে এখনও বাইরের সদস্য গ্রহণ করা হয়।

ণ. ধারাবাহিকতা এবং পরিবর্তনশীলতা (Continuity and Changeablity) : ব্রিটিশ সংবিধানের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ধারাবাহিকতা এবং পরিবর্তনশীলতা। ব্রিটিশ সংবিধান হলো বিরতিহীন ক্রমবিকাশের ফল। অধ্যাপক ফাইনার ( Finer)-এর ভাষায়, “A constitution of never ending evolution.” যুগ যুগ ধরে ধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবিধান বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। সি. এফ. স্ট্রং (C. F. Strong) যথার্থই বলেছেন, “ব্রিটেনের সংবিধান কোনো সংকট ছাড়াই পরিবর্তিত হয়েছে এবং হঠকারিতা ও আন্দোলন ছাড়াই উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে।”

ত. তত্ত্ব বাস্তবের মধ্যে ব্যবধান (Gap between Theory and Practice) : ব্রিটেনের সংবিধানের তত্ত্ব ও বাস্তবের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন- তত্ত্বগতভাবে রাজা বা রানী সকল ক্ষমতার উৎস এবং তার নামেই সকল কাজ অনুষ্ঠিত হয়। বাস্তবক্ষেত্রে রাজা বা রানী নামেমাত্র প্রধান, কেবিনেটই সবকিছু করে। আবার তত্ত্বগতভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী পার্লামেন্ট কেবিনেটকে নিয়ন্ত্রণ করলেও বাস্তবক্ষেত্রে কেবিনেটই পার্লামেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. রাজকীয় প্রজাতন্ত্র (Crowned Republic) : তত্ত্বগত বিচারে রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র হলো দুটি পরস্পর বিরোধী শাসনব্যবস্থা। রাজতন্ত্র হলো বংশানুক্রমিক শাসন। এতে জনগণের সার্বভৌম রাজনৈতিক ক্ষমতা স্বীকৃত নয়। আর প্রজাতন্ত্রে কোনো বংশানুক্রমিক পদ থাকে না। এতে রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। সুতরাং বংশানুক্রমিক শাসন প্রজাতন্ত্রের বিরোধী। কিন্তু ব্রিটেনে এই উভয় ব্যবস্থার অভিনব সমাবেশ ঘটেছে। ব্রিটেনের রাজা বা রানী নিয়মতান্ত্রিক শাসক, তাঁর হাতে প্রকৃত কোনো ক্ষমতা নেই। তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ প্রয়োগ করেন। এই জনপ্রতিনিধিগণ শাসনকার্যের জন্য জনগণের কাছে দায়ী থাকেন। কিন্তু রাজা বা রানীর কোনো দায় দায়িত্ব নেই। তিনি রাজত্ব করেন কিন্তু শাসন করেন না। (The King reigns, but does not govern) ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় রাজশক্তির ভূমিকা আনুষ্ঠানিক মাত্র। সুতরাং বলা যায়, ব্রিটেনে তত্ত্বগতভাবে রাজতন্ত্র বিদ্যমান থাকলেও বাস্তবে নীতিনির্ধারণ, আইন প্রণয়ন, শাসনকার্য পরিচালনা প্রভৃতি বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য অনেকে ব্রিটেনকে ‘রাজকীয় প্রজাতন্ত্র [Crowned Republic) নামে আখ্যায়িত করেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক অগ (Ogg) বলেছেন, “তত্ত্বগত বিচারে ব্রিটেন চরম রাজশক্তি শাসিত, ধরন ধারণের দিক থেকে সীমিত রাজতন্ত্র এবং প্রকৃত চরিত্রের দিক থেকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়।” (The government of the U.K. is an ultimate theory of absolute monarchy, in form a constitutional limited monarchy and in actual character a democratic republic.)

পরিশেষে বলা যায়, ব্রিটিশ সংবিধান হলো এক বিরতিহীন ক্রমবিকাশের ফল। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে এর বিকাশ ঘটেছে। সংবিধান জনগণের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়েছে। এটি অলিখিত চরিত্রের হলেও একটি উত্তম সংবিধানের বহুবিধ বৈশিষ্ট্য ব্রিটিশ সংবিধানে বিদ্যমান ।

Leave a Reply