ব্রিটিশ পার্লামেন্টের  ব্যক্তিগত সদস্যের বিল পাসের পদ্ধতি

Procedure of Passing the Private Members Bills

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ব্যক্তিগত সদস্যের বিল পাসের পদ্ধতি Procedure of Passing the Private Members Bills

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের  ব্যক্তিগত সদস্যের বিল পাসের পদ্ধতি

Procedure of Passing the Private Members Bills

যখন মন্ত্রিগণ ছাড়া পার্লামেন্টের কোনো সাধারণ সদস্য সাধারণ স্বার্থ সংক্রান্ত বিল বা পাবলিক বিল ব্যক্তিগত উদ্যোগে উত্থাপন করে তখন সেই বিলকে ব্যক্তিগত সদস্যের বিল (Private members Bills) বলে। এ ধরনের বিলের ভাগ্য সরকার পক্ষের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। সরকার সহযোগিতা ও সমর্থন না করলে এই বিলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সরকার পক্ষ সহযোগিতা না করলে ব্যক্তিগত সদস্যের বিলের অপমৃত্যু ঘটে।

ব্যক্তিগত সদস্যের বিল পাসের পথে বাধাসমূহ : ব্যক্তিগত সদস্যের বিল পাসের পথে অনেক বাধা-বিপত্তি রয়েছে । এগলো নিম্নরূপ—

ক. কমন্সসভার এ ধরনের বিল উত্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যকে পূর্বেই লিখিত নোটিশ দিতে হয়। তবে কোনো পিয়ার লর্ডসভায় নোটিশ না দিয়ে বিল উত্থাপন করতে পারেন ।

খ. কমন্সসভার কার্যক্রম সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। ইচ্ছা করলে সরকার এরূপ বিল উত্থাপনের পথে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে।

গ. কমন্সসভায় ব্যক্তিগত সদস্যের বিলের জন্য প্রত্যেক অধিবেশনের ১০টি শুক্রবার নির্দিষ্ট থাকে। এই ১০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পাঠের জন্য ৬ দিন এবং বিলের অন্যান্য পর্যায়ের জন্য ৪ দিন বরাদ্দ থাকে। সুতরাং এ ধরনের বহু বিল সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায় না।

ঘ. ব্যক্তিগত সদস্যের বিলের জন্য বরাদ্দ সময় অত্যন্ত কম। একটি নির্দিষ্ট দিনে ব্যক্তিগত সদস্যদের মধ্য থেকে কাকে কাকে বিল উত্থাপনের সুযোগ দেওয়া হবে তা লটারীর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। ফলে বিশেষ ভাগ্যবান কয়েকজন এ সুযোগ পান।

ড. আবার এ বিষয়ে ১০ মিনিটের বিধি’ নামে একটি নিয়ম আছে। এই নিয়ম অনুযায়ী কমন্সসভার মঙ্গল বা বুধবার প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলে যে কোনো সদস্য ১০ মিনিটের বক্তৃতার মাধ্যমে বিল উত্থাপন করতে পারেন।

চ. ব্যক্তিগত সদস্যের পক্ষে বিলের খসড়া প্রস্তুত করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এর জন্য আইন ও অভিজ্ঞতা উভয়ই প্রয়োজন। ছ. যে সব ব্যক্তিগত সদস্যের বিলের উপর আলোচনা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঐসব বিল সম্পর্কে দ্বিতীয় পাঠের পর আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।

জ. ব্যক্তিগত সদস্যের বিল উত্থাপনের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। নিজ ব্যয়ে তাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়।

ঝ. কোনো ব্যক্তিগত সদস্যের বিল সরকারি নীতির বিরোধী হলে ক্ষমতাসীন দলে ঐ বিলের বিরোধিতার জন্য কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের উপর নির্দেশ জারি করে।

অর্থ বিল ছাড়া অন্যান্য সরকারি বিল পাসের পদ্ধতি অনুসারে ব্যক্তিগত সদস্যের বিল পাস হয়। ব্যক্তিগত সদস্যের বিলকেও তিনটি পাঠসহ সর্বমোট সাতটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। ১৯৬৫ – ১৯৭০ সালে বহু ব্যক্তিগত সদস্যের বিল পাস হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে ডেভিড স্টিলের গর্ভপাত আইন কমন্সসভার অনুমোদন লাভ করে।

বিশেষ স্বার্থ সংক্রান্ত বিল বা বেসরকারি বিল পাসের পদ্ধতি

Procedure of Passing the Private Bills

বিলের প্রথম পাঠ : বিশেষ কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তিসংঘ, প্রতিষ্ঠান বা অঞ্চলের স্বার্থ জড়িত বিলকে বিশেষ স্বার্থ সম্পর্কিত বিল (Private Bills) বলে। প্রাইভেট বিল পাসের পদ্ধতি পাবলিক বিল পাসের পদ্ধতি থেকে আলাদা। প্রাইভেট বিল উত্থাপনের আগে উত্থাপকদের স্থানীয় সংবাদপত্রে এবং সরকরি গেজেটে বিল সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হয়। স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিল ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্থানীয় সংবাদপত্রে ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখের মধ্যে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। বিলটি লন্ডন গেজেটেও বিজ্ঞাপিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া বিলটি পার্লামেন্টের যে কক্ষে প্রথম উত্থাপিত হবে সেই কক্ষের প্রাইভেট বিল অফিস (Private Bill Office)-এ উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিলটির মুদ্রিত অনুলিপিসহ একটি আবেদন পত্র পেশ করতে হয়। এই বিল ও আবেদনপত্র ২৭ নভেম্বরের পূর্বে জমা দিতে হয়। বিলটির প্রতিলিপি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর কাছে প্রেরণ করতে হয়। এরপর পার্লামেন্টের আবেদনপত্র পরীক্ষকগণ (Examiners of Petition for Private Bills) প্রাইভেট বিলগুলো আইনসঙ্গতভাবে প্রস্তুত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখেন এবং সে বিষয়ে রিপোর্ট দেন। রিপোর্ট সন্তোষজনক হলে যে কোনো একটি কক্ষে তা পেশ করা হয় এবং রিপোর্ট পেশ করা হলে সংশ্লিষ্ট বিলের প্রথম পাঠ শেষ হয়। বিলের প্রথম পাঠের সময় বিলটির উপর কোনো বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় না ।

বিলের দ্বিতীয় পাঠ : বিলটির দ্বিতীয় পাঠের সময় বিলটি জনস্বার্থ বিরোধী কিনা তা নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিলটির বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি তোলা না হলে সেটিকে একটি আপত্তিহীন বিল কমিটি (An Unopposed Bills Commitee) – তে প্রেরণ করা হয়। এই কমিটির কার্যপদ্ধতি অত্যন্ত সং ও ও আনুষ্ঠানিক। কিন্তু কোনো প্রাইভেট বিলের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হলে সংশ্লিষ্ট বিলটিকে একটি সাধারণ প্রাইভেট বিল কমিটি (An Ordinary Private Bills Commitee)-তে প্রেরণ করা হয়। এই কমিটি অনেকটা আদালতের ভূমিকা পালন করে। এই কমিটিতে বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় বিলের সমর্থক ও বিরোধীগণ আইনজীবী নিয়োগ করে নিজ নিজ বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। প্রয়োজন হলে কমিটি সাক্ষী প্রমাণাদি ইত্যাদি উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। কমিটির কার্যাবলি আদালতের কার্যপদ্ধতি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। বিলটির মুখবন্ধ প্রত্যাখ্যাত হলে সমগ্র বিলটির অপমৃত্যু ঘটে। কিন্তু বিলের মুখবন্ধ গৃহীত হলে কমিটি বিলটির ধারা-উপধারা পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট কক্ষের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।

বিলের তৃতীয় চূড়ান্ত পাঠ : কমিটি প্রদত্ত রিপোর্ট পার্লামেন্টের সংশ্লিষ্ট কক্ষে গৃহীত হলে বিলের তৃতীয় পাঠ শুরু হয়। কোনো ধরনের লিখিত বা গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন তৃতীয় পাঠে হয় না। তবে মৌখিক সংশোধনের প্রস্তাব এলে এবং মৌখিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করলে তা গৃহীত হতে পারে। এ পর্যায়ে একটি কক্ষে গৃহীত হলে অন্য কক্ষের অনুমোদনের জন্য বিলটিকে প্রেরণ করা হয়।

রাজা বা রানীর অনুমোদন : কমন্সসভা ও লর্ডসভা কর্তৃক বিলটি গৃহীত হওয়ার পর রাজা বা রানীর সম্মতিলাভের জন্য সেটি প্রেরিত হয়। রাজা বা রানীর সম্মতি লাভের পর বিলটি আইনে পরিণত হয়।

সরকারি আয়-ব্যয়ের উপর পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ

Parliamentary Control Over Govt. Revenue and Expenditure

তত্ত্বগতভাবে পার্লামেন্ট সরকারি আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হলেও বাস্তবিক পক্ষে কেবল কমন্সসভাই এই ক্ষমতা ভোগ করে। ১৯১১ সালের পার্লামেন্টে আইন প্রণীত হওয়ার পর অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে লর্ডসভার কোনো কার্যকরী ক্ষমতা নেই। এই আইনে বলা হয়েছে অর্থ বিলসমূহ কেবল কমন্সসভাতেই উত্থাপিত হবে এবং কমন্সসভায় গৃহীত হবার পর কোনো অর্থ বিলে লর্ডসভার অনুমোদন আবশ্যক নয়। এক মাসের মধ্যে লর্ডসভা অনুমোদন না করলে, লর্ডসভার অনুমোদন ছাড়াই রাজা বা রানীর সম্মতিসমেত তা আইনে পরিণত হয়। তাছাড়া কোনো বিল অর্থ বিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে কমন্সসভার স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। সুতরাং সরকারের আয়-ব্যয়র উপর পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ বলতে কার্যক্ষেত্রে কেবল কমন্সসভার নিয়ন্ত্রণকেই বোঝায়।

সরকারি আয়-ব্যয়কে কমন্সসভা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিনা তা নিয়ে দুটি পরস্পর বিরোধী মত রয়েছে। অনেকের মতে সরকারের ‘ আয়-ব্যয়কে কমন্সসভা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আবার অনেকের মতে সরকারের আয়-ব্যয়ের উপর কমন্সসভার কোনো কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ নেই। সিদ্ধান্তের সমর্থনে যেসব যুক্তির অবতারণা করা হয় সেগুলো নিম্নরূপ :

১. কমন্সসভায় বাজেট পেশ করতে হয় : আগামী অর্থ বছরের জন্য সরকার কর্তৃক প্রণীত সরকারি আয়-ব্যয়ের খসড়াকে বাজেট (Budget) বলে। বাজেটে প্রস্তাবিত ব্যয়ের জন্য সরকার বিভিন্ন খাতে অর্থ প্রদানের দাবি করে। পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া এই ব্যয় নির্বাহ করা যায় না।

২. সরবরাহ কমিটি হিসেবে কমন্সসভা : সরকারের বেশির ভাগ ব্যয় পার্লামেন্টের অনুমোদন সাপেক্ষ। অর্থমন্ত্রী প্রত্যেক আর্থিক বছরের শুরুতে অনুমোদন সাপেক্ষে যাবতীয় ব্যয় বরাদ্দ দাবি কমন্সসভায় পেশ করেন। কমন্সসভা সরবরাহ কমিটিতে (Commitee of Supply) রূপান্তরিত হয়ে প্রস্তাবিত খরচের প্রতিটি খাতের উপর পর্যালোচনা করে ব্যয় হ্রাসের জন্য বা ব্যয় সম্পূর্ণ বাতিল করার জন্য যেকোনো ব্যয় বরাদ্দের দাবির উপর সংশোধনী প্রস্তাব আনা যায় ।

৩. উপায় নির্ধারণী কমিটি রূপে কমন্সসভা : কোন্ কোন্ সূত্র থেকে প্রস্তাবিত ব্যয় সংকুলান হবে সরকারকে তার হিসাব কমন্সসভায় পেশ করতে হবে। সরকার কর ধার্য ও কর সংগ্রহের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আয়ের ব্যবস্থা করে। সরকার কমন্সসভার অনুমতি ছাড়া নতুন কোনো কর বা শুল্ক ধার্য করতে এবং রাজকোষ থেকে এক কপর্দক পরিমাণ অর্থও ব্যয় করতে পারে না । কমন্সসভা উপায় নির্ধারণী কমিটি (Committee of ways and means) হিসাবে সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থ তুলবার অধিকার সরকারকে প্রদান করে।

৪. তদারকি ব্যবস্থা : অনুমোদিত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য এবং অর্থের অপচয় রোধ করার জন্য কমন্সসভার তিন ধরনের তদারকি ব্যবস্থা আছে। ক. মহাহিসাব নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রক (The Comptroller and Auditor General); খ. সরকারি গণিতক কমিটি (The Public Accounts Committee) এবং গ. ব্যয় কমিটি (The Expenditure Committee) |

ক. মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রক (The Comptroller and Auditor General) : ১৮৩২ সালের আর্থিক কাজ-কর্মের উপর কমন্সসভার তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কারণ যথাযথ উপায়ে ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা করা হতো না। ১৮৩২ সালে সরকার যেসব অর্থ ব্যয় করে তার হিসাব পরীক্ষা করার জন্য কমন্সসভা একটি আইন পাস করে।

নিয়োগ : প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোন ১৮৬৬ সালে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের পদ সৃষ্টি করেন। তিনি কমন্সসভার একজন অত্যন্ত ক্ষমতাবান উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী। তিনি পার্লামেন্টের একজন স্থায়ী কর্মচারী। রাজা বা রানী পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের প্রস্তাবক্রমে তাঁকে নিয়োগ ও অপসারণ করেন। তার বেতন সম্পর্কে পার্লামেন্টে বিতর্ক ও ভোট গ্রহণ হয় না। তিনি সঞ্চিত তহবিল থেকে বেতন পান ।

ক্ষমতা কার্যাবলি : মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেন। ক. তিনি নিয়ন্ত্রক হিসেবে রাজকোষের আয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করেন। খ. পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া এবং যে বিষয়ের জন্য পার্লামেন্ট তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করেছে কিনা তিনি তা পরীক্ষা করেন। এছাড়া তিনি সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ব্যয় পরীক্ষা করেন। সরকারের

 

ঘ. কমন্সসভার সময়ের অভাব কমগসভার কাজের অত্যধিক চাপ এবং সময়ের অভাব এক্ষেত্রে আরেকটি বড় বাধা । বছরের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বাজেটের প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অসম্ভব ব্যাপার। ২৬ দিনের মধ্যে সকল খাতের ব্যয় সম্পর্কে আলোচনা করা যায় না। বহু পাতের ব্যয় আলোচনা ও বিতর্ক ছাড়াই কণ্ঠ ভোটে পাস

৫. আর্থিক বিষয়ের জটিলতা : বাজেটের মতো জটিল বিষয়কে যথাযথভাবে পর্যালোচনা করার ক্ষমতা কমথসভার সাধারণ সদস্যদের থাকে না। তাই তাদের নির্ভর করতে হয় অনেক বেশি দক্ষ ও অভিজ্ঞ মন্ত্রীদের উপর। কমন্সসভার অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ সদস্যগণ আর্থিক বিষয়ের উপর আলোচনার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

চ. প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ অকার্যকর : মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি গণিতক কমিটি কিংবা রাজকোষ ও আমলাতন্ত্র কমিটির মাধ্যমে সরকারের আয়-ব্যয়ের উপর কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায় না। এস. ই. ফাইনার (S.E. Finer) বলেছেন, “কমথসভা কর ধার্য ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে বলে একটি অমূলক ধারণা আছে। বাস্তবে কমন্সসভা এর কোনোটাই করে না। অগ এবং জিংক (Ogg and Zink) মন্তব্য করেছেন, “The results that, save or rare occasions parliamentary control is largely a matter of form.”

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

Sovereignty of the British Parliament

ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে পার্লামেন্টারী শাসনব্যবস্থার জননী (Mother of Parliament) বলা হয়। এটি হলো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা পুরাতন আইনসভা। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বলতে “রাজা বা রানীসহ পার্লামেন্ট” (King or Queen in Parliament) কে বোঝায় । রাজা বা রানী এবং লর্ডসভা ও কমপসভা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গঠিত হয়। এটি হলো ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা। ব্রিটেনের সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর পার্লামেন্টের নিরঙ্কুশ আইনগত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। আইনগত দিক থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব হলো ব্রিটিশ সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। অধ্যাপক কে. সি. হোয়ার (K.C. Wheare) বলেছেন, ” The Supermacy of Parliament is the cornerstone of the British Constitution.”

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের অর্থ প্রকৃতি

Meaning and Nature of Soverignty of the British Parliament

পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব বলতে আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের সীমাহীন, চূড়ান্ত, অবাধ ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে বোঝায়। এরূপ আইনের বৈধতা এবং সাংবিধানিকতা সম্পর্কে কোনো ব্যক্তি, আদালত এবং প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন তুলতে পারে না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব আইনগত, রাজনৈতিক নয়। আইনগত দিক থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতা অবাধ ও অসীম। ব্রিটেনে আইন প্রণয়নকারী একমাত্র সংস্থা হলো পার্লামেন্ট। সুতরাং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাতেই আইনগত সার্বভৌমত্ব ন্যস্ত আছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যে কোনো আইন প্রণয়ন বা বাতিল করতে পারে। পার্লামেন্ট প্রণীত আইনকে রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানই বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে না ।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে তাত্ত্বিকদের মতমত : অধ্যাপক এ.ভি. ডাইসি ( Prof. A. V. Diecy) সর্বপ্রথম তাঁর Law of the Constitution শীর্ষক গ্রন্থে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, “ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব বলতে যে কোনো বিষয়ে আইন রচনা করা বা না করার ব্যাপারে পার্লামেন্টের চরম ক্ষমতাকে বোঝায়, ইংল্যান্ডের কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা পার্লামেন্ট কর্তৃক রচিত আইনকে বাতিল করতে বা অগ্রাহ্য করতে পারেন না।” অধ্যাপক ডাইসি ( Prof. Diecy)-র ভাষায় “he principle of parliamentary sovereignty means that parliament has

under the English constitution, the right to make or unmake any law whatever and further, that no person or body is recognised by the law of England has having a right to override or set aside the legislation of parliament.” অন্যভাবে বলা যায় অধ্যাপক ডাইসি (Diecy) -র মতে, পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব বলতে বোঝায়-

ক. ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যে কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে।

খ. যে কোনো আইন সংশোধন বা বাতিল করতে পারে। এবং

গ. সংবিধান সংশোধন করতে পারে।

ব্লাকস্টোন (Blackstone) বলেছেন, “পার্থিব জগতে এমন কোনো শক্তি নেই, যা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতা অস্বীকার করতে পারে।”

পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে ডি গোমি (De Lolme) বলেছেন, “ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পুরুষকে নারীতে এবং নারীকে পুরুষে রূপান্তরিত করা ছাড়া সবকিছু করতে পারে।” (It is fundamental principle with English lawyers that parliament can do everything but make a man woman and a woman man.)

এডওয়ার্ড কোক (Edward Coke)-এর মতে, “The power and jurisdication of parliament is so transcedent and absolute that it can not be confined with in any bounds.”

অধ্যাপক এস.ই. ফাইনার ( Prof. S.E. Finer) তাঁর “Five Constitutions ” নামক গ্রন্থে বলেন, “The law assures that parliament is omnipotent and paramount. No court in the kingdom is competent to quest on the legal validity of any Act of parliament, i.e. of a statute.”

ভি টকডিল (Alexis De Tocquevilles) বলেছেন, ” In England, the parliament has an acknowledged right to modify the constitution, as therefore, the constitution may undergo perpetual changes, does not in reality exist, the parliament is at once a legislative and a constituent assembly.”

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম কি-না

Whether British Parliament is Sovereign or not

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে নিম্নলিখিত যুক্তি উপস্থাপন করা যায় :

ক. পার্লামেন্টের কোনো প্রতিযোগী নেই : অতীতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজার হাতে ন্যস্ত ছিল। ব্রিটিশ সংবিধানের বিবর্তন ও পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থার বিকাশের ফলে রাজার হাত থেকে এই ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে চলে যায়। কিন্তু পার্লামেন্টের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা গড়ে ওঠেনি। অনেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টকে বিকল্প আইনসভা বলেন।

খ. আদালতের এখতিয়ারমুক্ত : আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতাই চরম ও চূড়ান্ত। আইনগত দিক থেকে পার্লামেন্টের এ ক্ষমতার উপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। মার্কিন বিচার বিভাগের মতো ব্রিটেনের বিচার বিভাগ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতা বিচার করতে পারে না। পার্লামেন্ট ইচ্ছা করলে আদালতের যে কোনো সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিতে পারে। অ্যান্ডারসন ও ক্রিস্টল (Anderson and Cristol) বলেছেন, “In a purely legal sense, the British parliament is supreme, no court can declare its enactments void; neither Monarch nor the Prime Minister holds power of veto.”

গ. শাসনবিভাগের এখতিয়ার মুক্ত : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়নের ক্ষমতার উপর শাসন বিভাগের কোনো এখতিয়ার নেই। ব্রিটেনে রাজা বা রানীর ভূমিকা আনুষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিক। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত বিলের উপর রাজা বা রানীর ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা তিরোহিত হয়েছে। রানী অ্যান কর্তৃক ১৭০৩ সালের পর কোনো রাজা বা রানী পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত বিলে ভেটো প্রয়োগ করেন নি।

ঘ. নিজের কার্যকাল বৃদ্ধি করার ক্ষমতা : প্রয়োজনবোধে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নিজের কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে। ১৬৯৪ সালে প্রণীত ত্রিবার্ষিক আইন (Terinnial Act) অনুযায়ী পার্লামেন্ট নিজের কার্যকাল ৩ বছর নির্ধারিত করে। তারপর ১৭১৬ সালে সপ্তবার্ষিক আইন (Septennial Act) পাস করে পার্লামেন্ট তার কার্যকালের মেয়াদ ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করে। আবার ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট আইন অনুযায়ী পার্লামেন্টের কার্যকাল কমিয়ে ৫ বছর করা হয়। অধ্যাপক ডাইসি (Prof. Diecy), Parliament made a legal though unprecedented use of its powers.

ড. শাসনব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তার সার্বভৌম ক্ষমতার বলে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ Act of settlement, Act of union, The representation of the people Act এবং ভোটাধিকার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত সংস্কার আইনসমূহ (Reforms) -এর কথা বলা যায়।

চ. দণ্ড নিষ্কৃতি আইন পাসের ক্ষমতা : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দত্ত নিষ্কৃতি আইন (Indemnity Act) পাস করে অতীতের অবৈধ কাজকে বৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে। বিশেষ করে যুদ্ধকালে এ আইন পাস করে পার্লামেন্ট অবৈধ কাজকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। এভাবে পার্লামেন্ট অতীতের যেকোনো অবৈধ কাজকে বৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে।

ছ. অলিখিত সংবিধানের সুযোগ গ্রহণ : আধুনিক সংবিধানসমূহের মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধান হলো অলিখিত সংবিধানের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। সুতরাং ব্রিটিশ সংবিধান অলিখিত হওয়ায় পার্লামেন্টের ক্ষমতা কোনো বিধিবদ্ধ দলিলে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এ সুযোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।

জ. পার্লামেন্ট প্রণীত আইন এবং সাংবিধানিক আইনের অভিন্নতা : ব্রিটেনে পার্লামেন্ট প্রণীত আইনই চরম ও চূড়ান্ত। এখানে পার্লামেন্ট প্রণীত আইন এবং সাংবিধানিক আইনের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না। তাই পার্লামেন্টের সীমাহীন কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে ।

ক. অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সার্বভৌম : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন। পার্লামেন্টের প্রতিটি কক্ষ নিজ নিজ কার্যধারা অবাধে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পার্লামেন্টকে কেউ অবমাননা করলে তাকে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা পার্লামেন্টের আছে।

ঞ. আন্তর্জাতিক আইন ও পার্লামেন্টের প্রাধান্য : পার্লামেন্ট প্রণীত আইন আন্তর্জাতিক আইনের স্বীকৃত নীতিসমূহ মেনে চলে কি-না এ প্রশ্ন ব্রিটিশ আদালতের কাছে অবান্তর, পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করেছে এটাই আদালতের কাছে যথেষ্ট।

ট. জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কমন্সসভার প্রাধান্য : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব বলতে প্রধানত কমন্সসভার সার্বভৌম ক্ষমতাকে বোঝায়। বর্তমানে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমন্সসভার আইনগত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অগণতান্ত্রিক লর্ডসভা ও রাজতন্ত্র কমন্সসভার কাছে পরাভূত হয়েছে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের সীমাবদ্ধতা

Limitations of the Sovereignty of British Parliament

পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব একটি আইনগত ধারণা। বাস্তবে পার্লামেন্ট যা ইচ্ছে তা করতে পারে না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতার উপর বাস্তব কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

ক. জনমতের নিয়ন্ত্রণ : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উপর জনমত বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। তাই পার্লামেন্টের আইনগত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব জনমতের দ্বারা সীমাবদ্ধ। জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে পার্লামেন্ট কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না। সচেতন জনমতকে উপেক্ষা করলে পার্লামেন্টের অস্তিত্ব বিপন্ন হবার আশঙ্কা থাকে। কার্টার, রেনি ও হার্জ (Carter, Ranney and Herz), “Though Parliament is legally supreme, parliamentary responsible government is a more accurate term for describing the way in which the system works.”

খ. কেবিনেটের নিয়ন্ত্রণ : পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যগণকে নিয়ে কেবিনেট গঠিত হয়। কেবিনেট সদস্যগণ পার্লামেন্টেও নেতৃত্ব দেন। তাই রামজে ম্যুর (Ramsay Muir ) বলেছেন, আজকাল পার্লামেন্ট কেবিনেটকে নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং কেবিনেটই পার্লামেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করে, সিডনি লো ( Sidney Low) এর মতে, Its ( parliament) own servants have become, for some purpose, its masters. অর্থাৎ, “পার্লামেন্টের ভৃত্যরাই এখন তার প্রভুতে পরিণত হয়েছে।” হার্ভে এবং ব্যাথার (Harvey and Bather) বলেছেন, ” Although parliament is legally absolute, in practice its powers are exercised largely according to the dictates of the cabinet.”

. গ. প্রথা, রীতিনীতি কর্তৃক আরোপিত নিয়ন্ত্রণ । ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব প্রথা, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস প্রভৃতির দ্বারা সীমাবদ্ধ। এগুলোকে উপেক্ষা করে আইন প্রণয়ন করা পার্লামেন্টের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রথাগুলোর প্রতি জনগণের আনুগত্য অপরিসীম। সুতরাং ব্রিটিশ পার্লামেন্ট জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দেশে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে।

ঘ. ওয়েস্টমিনিস্টার আইন কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ । ১৯৩১ সালের ওয়েস্টমিনিস্টার আইনের দ্বারা পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব যথেষ্ট পরিমাণ খর্ব হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী কোনো ডোমিনিয়নের অনুরোধ ও সম্মতি ছাড়া পার্লামেন্ট সংশ্লিষ্ট ডোমিনিয়ন সম্পর্কে কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না। তাছাড়া প্রতিটি ডোমিনিয়ন নিজের ইচ্ছেমতো আইন তৈরি করতে পারবে বলে ঐ আইনে বলা হয়।

৫. রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের নিয়ন্ত্রণ : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব হলো আইনগত, রাজনৈতিক নয়। ব্রিটেনের জনগণ হলো রাজনৈতিক সার্বভৌম। সুতরাং রাজনৈতিক সার্বভৌমের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না।

চ. আদালতের আংশিক নিয়ন্ত্রণ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের মতো ব্রিটেনের আদালত আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতা বিচার করতে পারে না। কিন্তু আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করার ক্ষমতা ব্রিটেনের আদালতের রয়েছে। সুতরাং আইনের ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে আদালত পার্লামেন্টের উপর আংশিকভাবে হলেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

ছ. স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব : স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারে না। কমন্সসভায় ব্রিটেনের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর শক্তিশালী ‘লবি’ থাকে। এসব লবির মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো গোষ্ঠী স্বার্থের অনুকূলে পার্লামেন্টকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বকে কিছুটা পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।

জ. আন্তর্জাতিক আইনের নিয়ন্ত্রণ : আন্তর্জাতিক আইনের বিধানগুলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। আন্তর্জাতিক আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে কাজ করতে হয়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কোনো আইন পাস করতে পারে না ।

ঝ. অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের উপর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকে। পার্লামেন্টের সদস্যগণ আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাবমুক্ত নয়। সামাজিক আচার ব্যবহার, ন্যায়-নীতিবোধ, ধর্ম বিশ্বাস, প্রথা, জাতিগত ঐতিহ্য প্রভৃতির দ্বারা সদস্যগণ প্রভাবিত হন। তারা এগুলোকে অগ্রাহ্য করে আইন প্রণয়ন করতে পারেন না।

ঞ. আইনের শাসন : আইনের শাসন পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের উপর কার্যকর বাধা আরোপ করে। অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার (Prof. Ernest Barker) বলেছেন, “The sovereignty of parliament and the rule of law are not only parallell, they are also interconnected and are mutually interrelated.”

ট. অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন : পার্লামেন্টের সময়ের স্বল্পতা এবং আইন প্রণয়নের জটিলতার কারণে বেশ কিছু আইন শাসন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত হয়। এই আইন পার্লামেন্ট কর্তৃক অর্পিত ক্ষমতা বলে তৈরি করা হয়। এর ফলে পার্লামেন্টের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে এবং শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ঠ. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার অস্তিত্ব : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দুটি মাত্র দলের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে মন্ত্রিসভাই পার্লামেন্টকে পরিচালিত করে। পার্লামেন্ট মন্ত্রিসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ।

ড. ইউরোপের অভিন্ন বাজার : ব্রিটেন বর্তমানে ইউরোপের অভিন্ন বাজার (European Common Market) এ যোগ দিয়েছে। এতে স্থির হয়েছে যে, অভিন্ন বাজার সংক্রান্ত আইন সবসময় অগ্রাধিকার পাবে। ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে।

ঢ. উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণ : রাজকীয় উপাধি, রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। এর জন্য কমনওয়েলথ ভুক্ত অন্যান্য রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর অনুমোদন নিতে হবে।

গ. অধ্যাপক ডাইসির অভিমত :

অধ্যাপক ডাইসি পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের উপর তিন ধরনের আইনগত সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। যথা—

ক. ন্যায়-নীতিবোধ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

খ. পার্লামেন্ট রাজা বা রানীর বিশেষাধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

গ. একটি নতুন পার্লামেন্ট পূর্ববর্তী কোনো পার্লামেন্ট প্রণীত আইনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অধ্যাপক ডাইসি চূড়ান্ত বিচারে অভিমত প্রকাশ করেন যে, উল্লিখিত বিধিনিষেধগুলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইনগত সার্বভৌমত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ।

পরিশেষে বলা যায় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইনগত দিক থেকে সার্বভৌম হলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তত্ত্বসর্বস্ব। বর্তমানে নানা কারণে পার্লামেন্টের পরিবর্তে কেবিনেটের প্রাধান্য ও প্রতিপত্তি অপ্রতিহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধ্যাপক লাস্কি (Laski) বলেছেন, কেবিনেটের কাজকে সমর্থন করাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রকৃত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কনসসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কেবিনেট গঠিত হয়, ফলে বাস্তবে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব কেবিনেটের সার্বভৌমত্বে পরিণত হয়েছে। সিডনি গো (Sidney Low) যথার্থই বলেছেন, “Its (Parliament )) own servants have become for some purpose, its masters’

Leave a Reply