ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্রমবিকাশ

university blog 1

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্রমবিকাশ Evolution of British Parliament

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্রমবিকাশ

Evolution of British Parliament

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বিশ্বের সকল দেশের পার্লামেন্টের মাতৃস্থানীয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ ব্রিটেনের পার্লামেন্ট দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গঠিত হয় রাজা বা রানী, লর্ডসভা এবং কাপসভার সমন্বয়ে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বলতে সাধারণভাবে রাজা বা রানীসহ পার্লামেন্টকে বোঝায়। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের প্রকৃত নাম “দি প্যালেস অব ওয়েস্ট মিনিস্টার” (The Palace of West Minister) ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কোনো নির্দিষ্ট সময়ে প্রণীত সংবিধানের মাধ্যমে গঠিত হয় নি। দীর্ঘ কয়েক শতাব্দির বিবর্তনের ধারায় পার্লামেন্টের উৎপত্তি হয়েছে। সুতরাং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উৎপত্তির ইতিহাস আলোচনা করা প্রয়োজন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিবর্তন বা বিকল্প ধারাবাহিক হলেও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞগণ এর বিকাশকে কয়েকটি পর্যায়ে

ভাগ করেছেন। এগুলো হলো :

প্রথম পর্যায় : প্রথম পর্যায় হলো অ্যাংলো-স্যাকসন ও নর্মান অর্থাৎ মধ্যযুগ।

দ্বিতীয় পর্যায় : ১৪৮৫ সাল থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু। টিউডর ও স্টুয়ার্ট রাজাদের রাজত্বকাল এই পর্যায়ের মধ্যে

তৃতীয় পর্যায় : ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপ্লব থেকে শুরু করে ১৮৩২ সালের সংস্কার আইন পাস পর্যন্ত সময়কে তৃতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চতুর্থ পর্যায় : ১৮৩২ সাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত সময়কে চতুর্থ পর্যায় বলে আখ্যায়িত করা যায়।

প্রথম পর্যায় :

ক. অ্যাংলো-স্যাকসন যুগ : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উৎপত্তির ইতিহাসের সূত্রপাত ঘটে অ্যাংলো-স্যাকসন যুগে। অ্যাংলো- স্যাকসন রাজাগণ উত্তরাধিকার সূত্রে শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে শুরু করেন। এ সময় আইন প্রণয়ন, কর ধার্য প্রভৃতি শাসন কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত কাজে পরামর্শ দেওয়ার জন্য রাজারা নিজেদের মনোনীত ব্যক্তিবর্গের সাথে পরামর্শ করার রীতি চালু করেন। তবে এই পরামর্শ গ্রহণ করার ব্যাপারে রাজাদের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। অ্যাংলো-স্যাকসন যুগে রাজারা উইটান বা উইটেনাগেমট (Witan or Witanagemot) নামে রাজ মনোনীত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংস্থার সাথে পরামর্শ করতেন। উইটান ছিল একটি বিজ্ঞজনসভা (Council of Wisemen)। প্রকৃতপক্ষে এ সভা প্রতিনিধিত্বমূলক ছিল না। কারণ এ সভার সদস্যরা ছিলেন রাজপরিবারের লোক, শায়ারের অল্ডারম্যান, বিশপ ও নৃপতি কর্তৃক মনোনীত কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এই সভায় রাজা নিজে সভাপতিত্ব করতেন।

খ. নর্মান যুগ : নর্মান যুগেও উইটান-এর মতো আর একটি পরামর্শদাতা সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সংগঠনটি মহাপরিষদ (Magnum councilum) নামে পরিচিত। শাসন পরিচালনার সুবিধার জন্য রাজা উইলিয়াম নিজের মনোনীত সামন্ত, নাইট, উপাধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং যাজকদের নিয়ে এই মহাপরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদ রাজাকে পরামর্শ দিত। মহাপরিষদের দুটি অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়ে রাজাকে সাহায্য করার জন্য গঠিত হয়েছিল একটি ক্ষুদ্র পরিষদ (Curia Regis)। তবে এ পরিষদ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মহাপরিষদই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাথমিক ধরন।

গ. রাজা জুম-এর শাসনামল : রাজা জন-এর শাসনামলে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য বাড়তি অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ বাড়তি অর্থ সংগ্রহের জন্য রাজাকে পরামর্শ দিতে অক্সফোর্ড মহাপরিষদ গঠিত হয়। রাজা জন এ পরিষদের চারজন করে নাইট (Knight) পাঠানোর জন্য প্রত্যেক শায়ার (Shire) এর শেরিফকে নির্দেশ দেন। অনেকের মতে, রাজা জনের এই ব্যবস্থা ব্রিটেনে প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্টের সূত্রপাত ঘটায়।

ঘ. তৃতীয় হেনরি সাইমন ডি মন্টফোর্ট : ১২৫৪ সালে তৃতীয় হেনরি অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক কাউন্টি থেকে দুজন করে নাইট (Knight) কে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন। ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধে প্রচুর অর্থ ব্যয় হওয়ায় রাজা বিপদে পড়ে সামন্তদের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেন। সামন্তগণ প্রস্তাব দেন যে, মহাসনদে সংযোজিত অধিকার এবং করদাতাদের সম্মতি নিয়ে কর ধার্য করতে রাজা স্বীকৃত হলেই, তাঁরা সাহায্য দেবেন। কার ধার্যের বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজা তৃতীয় হেনরির সাথে সামন্তদের বিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। সামন্তদের নেতৃত্ব দেন সাইমন ডি মন্টফোর্ট (Simon de Montfort)। এই বিরোধে রাজা তৃতীয় হেনরির পরাজয় ঘটে। সাইমন নতুনভাবে মহাপরিষদকে গঠন করার উদ্যোগ নেন । তৃতীয় হেনরীর রাজত্বকাল থেকেই মহাপরিষদ পার্লামেন্ট নামে অভিহিত হতে থাকে। ১২৬৫ সালে সাইমন পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করেন। এ পার্লামেন্ট গঠনে প্রত্যেক শায়র থেকে ব্যারন, পাদরী এবং ২ জন করে নাইট ছাড়াও ২১ টি বরো (Borough) থেকে ২ জন করে ‘বার্জেস’ (Burges) নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়। সাইমন ডি মন্টফোর্ট এভাবে নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্লামেন্ট গঠনের ব্যবস্থা করেন। এ কারণে অনেকে সাইমনকে কমন্সসভার জনক (Father of House of Commons) বলে অভিহিত করেন ।

রাজা প্রথম এডওয়ার্ড এর শাসনামল : রাজা হেনরির পুত্র প্রথম এডওয়ার্ড-এর সময় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা বিশেষভাবে সম্প্রসারিত হয়। তিনি নানা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১২৯৫ সালে সকল শ্রেণির প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্প্রসারিত পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করেন। এ পার্লামেন্টে প্রায় চার শতাধিক সদস্য ছিলেন। এদের মধ্যে ২ জন আর্চ বিশপ, ১৯ জন বিশপ, ৩ জন ধর্ম সম্প্রদায়ের প্রধান, ৯ জন আর্ল, ৪৮ জন অ্যাবট, ৪১ জন ব্যারন, ৬১ জন নাইট ও ১৭২ জন নাগরিক প্রতিনিধি এ পার্লামেন্টে স্থান পান। এ সময় প্রত্যেক শায়ার থেকে ২ জন কাউন্ট, প্রত্যেক শহর থেকে ২ জন নাগরিক এবং প্রত্যেক বরো থেকে ২ জন করে বার্জেস পার্লামেন্টে পাঠানোর নিয়ম করা হয়। ব্রিটেনের ইতিহাসে রাজা প্রথম এডওয়ার্ডের এ পার্লামেন্টে আদর্শ পার্লামেন্ট (Model Parliament) নামে পরিচিত ৷

ঙ. লর্ডসভা কমন্সসভার সৃষ্টি : পার্লামেন্টের এসব প্রতিনিধি তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত ছিলেন। যথা— যাজক শ্রেণির প্রতিনিধি, সামন্ত শ্রেণির প্রতিনিধি এবং নাইট ও বার্জেসগণ। চতুর্দশ শ্রেণির মধ্যভাগে এই তিন শ্রেণির প্রতিনিধিগণ পৃথক পৃথকভাবে মিলিত হতেন। এর ফলে পার্লামেন্টে তিনটি কক্ষে পরিণত হতে আরম্ভ করে। পরে সামন্ত শ্রেণি ও যাজক শ্রেণি অভিন্ন স্বার্থের বিচারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি কক্ষ গঠন করে। এ কক্ষই লর্ডসভা নামে পরিচিত লাভ করে । অপরদিকে নাইট, বার্জেস ও সাধারণ নাগরিকগণ আর একটি কক্ষে মিলিত হতেন। এই কক্ষটি কমন্সসভা নামে পরিচিত হয়।

লর্ডসভা এবং কমন্সসভার মধ্যে রাজার পরামর্শদাতা হিসেবে লর্ডসভা প্রাধান্য অর্জন করে। এ সময় কমন্সসভা গুরুত্বহীন কক্ষে পরিণত হয়। কমন্সসভার সদস্যদের বেশির ভাগ সদস্যই ছিলেন ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায়ী শ্রেণিকেই বেশি কর দিতে হতো। কর সংক্রান্ত অভিযোগের ব্যাপারে কমন্সসভা তার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করত। যুদ্ধ ব্যয় পরিচালনার জন্য তৃতীয় এডওয়ার্ড (Edward) কমন্সসভার কাছে অর্থের দাবি করেন। এ সময় কমন্সসভা শর্ত আরোপ করে যে, রাজা তাদের আবেদন মঞ্জুর করলে তাঁরাও রাজার অর্থের দাবি অনুমোদন করবেন। চতুর্দশ শতাব্দিতে কমসসভার ক্ষমতা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, ১৩৯৯ সালে পার্লামেন্টে দ্বিতীয় রিচার্ডসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। রাজা পঞ্চম হেনরি (Henry V) ১৪১৪ ঘোষণা করেন যে, কমন্সসভার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে না ।

দ্বিতীয় পর্যায় :

চ. টিউডর রাজাদের আমল : টিউডর আমলে পার্লামেন্ট বিশেষভাবে রাজা বা রানীর অনুগত হয়ে পড়ে। রাজা সপ্তম হেনরি তাঁর বিশ বছরের রাজত্বকালে মাত্র সাতবার পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন। তারপর রাজা অষ্টম হেনরি পার্লামেন্টকে নিজের নীতি ও উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি ১৫৩৪ সালে পার্লামেন্টের অনুমোদনের মাধ্যমে নিজেকে চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। রানী এলিজাবেথের আমলেও পার্লামেন্ট রানীর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। টিউডর রাজাদের শাসনকালে প্রতিটি কক্ষ কার্যাবলির নথিপত্র রাখতে শুরু করে ।

ছ. স্টুয়ার্ট রাজাদের আমল : স্টুয়ার্ট রাজাদের আমলে রাজশক্তির সাথে পার্লামেন্টের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইংল্যান্ডের চরম মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধের জন্য রাজাকে বারবার পার্লামেন্টের দ্বারস্থ হতে হয়। কিন্তু পার্লামেন্টের কর্তৃত্ব মানতে রাজি হননি । ফলে রাজার সাথে পার্লামেন্টের বিরোধ অব্যাহত থাকে। ইংল্যান্ডের ধনিক-বণিক শ্রেণি ১৬২৮ সালে রাজা প্রথম চার্লস এর কাছে একটি আবেদন পেশ করে। এই আবেদনকে অধিকারের আবেদন (Petition of Rights) বলা হয়। এ আবেদনের অন্যতম বক্তব্য ছিল পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া রাজা কর ধার্য করবেন না। শেষ পর্যন্ত ধনিক-বণিক শ্রেণির চাপে বাধ্য হয়ে রাজা অধিকারের আবেদন মেনে নেন। কিন্তু কালক্রমে প্রথম চার্লস অধিকারের আবেদনকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করেন। দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের পর ১৬৪৯ সালে প্রথম চার্লসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। রাজশক্তিকে উচ্ছেদ করে অলিভার ক্রমওয়েল ক্ষমতায় আসেন । ১৬৬০ সালে রাজশক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

. গৌরবময় বিপ্লব ও অধিকারের বিল। পার্লামেন্ট ও রাজার মধ্যে বিরোধের অবসান হয় ১৬৮৮ সালে গৌরবময় বিপ্ল (Glorious Revolution) এর মাধ্যমে। রক্তপাতহীন এই বিপ্লবে স্টুয়ার্ট রাজা দ্বিতীয় জেমস ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৩৮৯ স পার্লামেন্ট অধিকারের বিল (Bill of Rights) প্রণয়ন করে।

বা, পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা। ১৬৮৯ সালে অধিকারের বিল পাসের মাধ্যমে পরিপূর্ণ রাজতন্ত্রকে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে রূপান্তর করা হয়। ঐ আইন অনুযায়ী রাজার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হয়। এ সময়ে পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অধিকারের বিলের মাধ্যমে কর ধার্য করা, আইন বাতিল করা, শাস্তির সময়ে সৈন্যবাহিনী বজায় রাখার ক্ষেত্রে রাজার স্বোচ্ছাধীন ক্ষমতা বাতিল করা হয়।

ক. সন্ধবার্ষিক আইন (Septennial Act) ১৭১৬ সালে পার্লামেন্ট প্রণীত এ আইনের মাধ্যমে পার্লামেন্টের মেয়াদ ি বছরের পরিবর্তে সাত বছর করা হয়। তাছাড়া বছরে অন্তত একবার পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করার নিয়ম চালু করা হয়। রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর পদ এবং কেবিনেট ব্যবস্থার উত্তনের ফলে পার্লামেন্টের কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে। ১৭৭১ সালে পার্লামেন্টে বিতর্কের অধিকার স্বীকৃত হয়।

মুফা পর্যায় :

ট. ভোটাধিকারের সম্প্রসারণ : ১৮৩২ সালের সংস্কার আইন (Reform Act of 1832 ) অনুসারে সম্পত্তির মালিকানার ভিত্তিতে পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হবার পথ প্রশস্ত হয়। তাছাড়া মধ্যবিত্ত শ্রেণির নতুন এক লক্ষ ব্যক্তির ভোটাধিকার এবং পার্লামেন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার স্বীকৃত হয়।

ঠ. ১৮৬৭ সালের সংস্কার আইন : ১৮৬৭ সালে দ্বিতীয় সংস্কার আইনের মাধ্যমে শহরাঞ্চলের অধিকাংশ শ্রমিককে ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। তাছাড়া বরোসমূহে ঘরপিছু ভোট ব্যবস্থা চালু করা হয়। ফলে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ বৃদ্ধি পায়। ১৮৮৪ সালে তৃতীয় সংস্কার আইন পাস হয় ।

ড. ১৯১৮ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন : ১৯১৮ সালে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (Representation of Peoples Act, 1918) পাসের মাধ্যমে ৩০ বছরের অধিক বয়স্ক মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। পূর্বে দারিদ্র্য-ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ভোটাধিকারের অযোগ্য বলে বিবেচিত হতো। নতুন জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের সাহায্যে এই বাধা অপসারণ করা হয়। ১৯২৮ সালে এ আইনের সংশোধনের ফলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল ২১ বছর বয়স্ক ব্রিটিশ নাগরিকের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। ১৯৪৮ সালে পুনরায় জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে ভোটার পিছু এক ভোট স্বীকৃত হয়। ১৯৬৯ সালে ভোটাধিকার লাভের বয়স ১৮ বছর করা হয় ।

ঢ. ১৯১১ সালের পার্লামেন্টে আইন : ১৯০৯ সালে লয়েড জর্জ মন্ত্রিসভার বাজেট কমন্সসভা কর্তৃক অনুমোদিত হলেও লর্ডসভা তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে লর্ডসভার ক্ষমতা হ্রাসের উদ্দেশ্যে ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট আইন (The Parliamentary Act of 1911) প্রণীত হয়। এ আইনে বলা হয় যে, কোনো অর্থ বিল কমন্সসভায় পাস হওয়ার পর এক মাসের মধ্যে লর্ডসভা তা অনুমোদন না করলে, লর্ডসভার অনুমোদন ছাড়াই রাজা বা রানীর স্বাক্ষর সমেত তা আইনে পরিণত হবে।

ণ. ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট আইন : ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্টারি আইনের (The Parliamentary Act of 1949) মাধ্যমে সাধারণ বিলের ক্ষেত্রে লর্ডসভার ক্ষমতা আরও সংকুচিত করা হয়। লর্ডসভা বর্তমানে কমন্সসভা কর্তৃক গৃহীত কোনো সাধারণ বিল এক বছরের বেশি স্থগিত রাখতে পারে না ।

 লর্ডসভা
House of Lords

লর্ডসভা হলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ। এটি কেবল বিশ্বের প্রাচীনতম দ্বিতীয় কক্ষই নয় বরং এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় কক্ষও বটে। এটি নর্মান যুগের বৃহত্তর পরিষদ (Magnum Concillum) নামক সংস্থা হতে বিবর্তন লাভ করে বর্তমান রূপ লাভ করেছে। কালের বিবর্তনে লর্ডসভার ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটিকে ব্রিটেনের

ঝ. আজীবন পিয়ার বিষয়ক আইন : ১৯৫৮ সালে আজীবন পিয়ার সংক্রান্ত আইন (The Life Pearnge Act, 1958) গাণীত হয়। এই আইন অনুযায়ী রাজা বা রানী উপাধিতে ভূষিত করে লর্ডসভার আজীবন সদস্যপদ গ্রহণের আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে লর্ডসভার সদস্যপদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়, म বিষয়। সাধারণত রাজা বা রানীর জন্মদিন বা নববর্ষে এই আজীবন শিয়ারেজ বিতরণ করা হয়। রাজা বা রানীর পিয়ার সৃষ্টির ক্ষমতা একটি রাজকীয় বিশেষাধিকার (Royal prerogative) হিসেবে গণ্য হয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মসী, কমথসভার স্পিকার এবং রাষ্ট্রদূতগণকেও এ ধরনের উপাধি প্রদান করা হয়। যেমন- ডিজরেণীকে আর্ন অব বিকাস ফিল্ড এবং আসকুইনকে আর্ল অব অক্সফোর্ড উপাধিতে ভূষিত করে গর্ডসভার সদস্য করা হয়। ১৯৭৪ সালের তথ্য অনুযায়ী লর্ডসভার আজীবন পিয়ারের সংখ্যা ২৩৫ জন।

Leave a Reply