নির্বাচন Election

Define the electorate. Write down the role or importance of the electorate in modern democratic state. নির্বাচন পদ্ধতি Methods of Election

ভোটদানের পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সাধারণ নির্বাচন পদ্ধতির দুটি রূপ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

ক. প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি (Direct Method of Election )

খ. পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি (Indirect Method of Election )

প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি Direct Method of Election

যে নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটদাতাগণ সরাসরি নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন তাকে প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা বলে। অধ্যাপক সি. এফ. স্ট্রং (C.F. Strong ) -এর মতে, “প্রত্যক্ষ নির্বাচন বলতে বোঝায় নির্বাচনের এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ভোটাররা প্রত্যক্ষ উপায়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে।

বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্যগণ এ পদ্ধতিতেই জনসাধারণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। এ ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ সরল। এ পদ্ধতিতে নির্বাচকরা নির্দিষ্ট ভোটদান কেন্দ্রে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পছন্দমতো একজনকে ভোট দেন। ভোট গণনায় সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী নির্বাচিত হন। বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে এ পদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতের লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিকে নিম্নোক্ত ছকের মাধ্যমে দেখানো যায় :


প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সুবিধা বা গুণাগুণ  Merits of Direct Method of Election

প্রত্যক্ষ নির্বাচনে জনগণ সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিনিধি বাছাই করে। ফলে এর কিছু সুবিধা ও গুণাগুণ বিদ্যমান । নিয়ে এসব সুবিধা ও গুণাবলি তুলে ধরা হলো :

১. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচক ও নির্বাচিত প্রতিনিি । মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ জনসমর্থন লাভের আশায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও অভাব- অভিযোগের প্রতি নজর দেন এবং নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তারা জনস্বার্থবিরোধী কাজ করেন না। এভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের সহায়ক। কেননা এ ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি ও সক্রিয়ভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। যথাযথভাবে প্রার্থী বাছাই করার জন্য জনগণকে সরকারি নীতি ও কাজ- কর্ম সম্পর্কে যথাসম্ভব ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। ফলে রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে চেতনা ও আগ্রহ বৃদ্ধি পায় ৷

৩. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা জনগণকে রাজনৈতিক ও শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় । নির্বাচন অবস্থায় যে সরকার গঠিত হয় জনগণ তাদেরকে নিজেদের সরকার বলেই মনে করে। জনগণের মধ্যে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। সরকার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত সহানুভূতি ও সমর্থন লাভ করে। সরকারের সমস্যা ও সংকটে জনগণ সক্রিয়ভাবে সংযোগিতা করে। তার ফলে সরকারের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত হয় ।

৪. . প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি দুর্নীতির আশঙ্কা থেকে মুক্ত। এ ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিপুল সংখ্যক নির্বাচককে অসৎ উপায়ে প্রভাবিত করা প্রায় অসম্ভব ৷

প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা জনমত গঠন ও প্রকাশের সহায়ক। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ নাগরিকদের প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা এবং রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়ে প্রচার ও আলাপ-আলোচনার ফলে সুস্থ জনমত গঠিত ও প্রকাশিত হতে পারে। গণতন্ত্রে জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী। জনগণের ভোটেই সরকার নির্বাচিত হয় এবং টিকে থাকে। আর প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি ভোট দিয়ে সরকার গঠনে সহায়তা করে বলে এ ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক ।

৭. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকারের স্থায়িত্ব পরিলক্ষিত হয়। কারণ এ ধরনের নির্বাচনে যারা সরকার গঠন করে তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভোটের ভিত্তিতেই সরকার গঠন করে। যে কারণে সরকার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত সহানুভূতি ও জনসমর্থন লাভ করে।

৮. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠিত হয় বিধায় সরকার সর্বদাই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি লক্ষ রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। কারণ এ ব্যবস্থায় জনগণের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলে তাঁরা সরকারের পতন ঘটাতে পারে।

৯. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দক্ষতার সাথে এবং আদর্শ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে শাসন করে বিধায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায় ।

প্রত্যক্ষ নির্বাচনের অসুবিধা বা দোষ-ত্রুটি  Demerits of Direct Method of Election

প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার বেশ কিছু অসুবিধা বা দোষ-ত্রুটি রয়েছে। যে কারণে সমালোচকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। নিম্নে এসব দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা হলো-

১. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের অসুবিধা হয়। কারণ ভোটার সংখ্যা অধিক হলে তাদের মধ্যে সহজে কোনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাছাড়া অধিকাংশ ভোটদাতাই অশিক্ষিত ও রাজনীতিতে অজ্ঞ। অধিকন্তু এত ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের সাথে প্রতিনিধিগণ প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারেন না। ফলে অনেক সময় অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকে ।

২. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচনের উপর রাজনৈতিক দলের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলের কার্যপ্রক্রিয়া আরও অধিকতর বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক দলের প্রচার এবং প্রচারণায় সাধারণ ভোটারগণ তাদের স্বীয় চিন্তা- ভাবনা হারিয়ে ফেলে এবং দলের প্রভাবে ভোট প্রদান করতে বাধ্য হয়।

৩. জনসাধারণকে নিজেদের অনুকূলে আনয়নের জন্য সুচতুর এবং চটুল বক্তাগণ উত্তেজনাকর বক্তব্য প্রদান করেন। সাধারণ ও অশিক্ষিত ভোটারগণ অনলবর্ষী বক্তাদের বক্তব্যে বিচার-বুদ্ধি ভুলে তাদেরকে ভোট প্রদান করেন। এভাবে কৌশলে সুচতুর প্রার্থীগণ নির্বাচনি বৈতরণী উত্তরণের চেষ্টা করেন।

৪. প্রত্যক্ষ নির্বাচনে প্রার্থীদেরকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। প্রচার-প্রচারণা, ভ্রমণ ইত্যাদিতে যে পরিমাণ ব্যয় তা সংকুলান করতে না পেরে অনেক যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।

৫. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় অনেক সময় প্রার্থীরা প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে। তাঁরা মিথ্যা আশ্বাস ও ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জনগণকে তাঁরা ভুলে যায় এবং বাহানা করে।

৬. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে দলীয় হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। দলসমূহ পরস্পর পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি আরম্ভ করে। মিথ্যা অভিযোগ, শ্লোগান, পাল্টা শ্লোগান, প্রচারণা প্রভৃতি পরিবেশকে কলুষিত করে তোলে।

৭. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় সমাজে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের পূর্বে ও পরে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাতে সাধারণ মানুষের কাজ-কর্ম ব্যাহত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে সংঘাত, বিজয়ী ও বিজিতদের মধ্যে সংঘর্ষ, সরকারি ও বিরোধীদলের মধ্যকার বিরোধিতাপূর্ণ মনোভাব মারাত্মক অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয় ।

৮. প্রত্যক্ষ নির্বাচনের উত্তেজনা ও দলীয় কার্যকলাপের তিকতা সৎ ও বিশিষ্ট জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা এড়িে

নিজেদেরকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিড়ম্বনার মধ্যে জড়িয়ে ফেলতে রাজি হন না। অতি সাধারণ ও নিম্নমানের ব্যক্তিরাই এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। যে কারণে সাধারণ জনগণ যোগ্য ও বিজা বাতিনা সেবা থেকে ণিত হন।

৯. সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্র বৃহৎ হয়ে থাকে। এই বৃহৎ রাষ্ট্রে বিশাল জনগোষ্ঠীর পক্ষে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন

করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা উপযোগী হয়ে থাকে।

পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি Indirect Method of Election

পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটদাতাগণ সরাসরি তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন না করে মধ্যবর্তী একটি गा গঠন করে এব সেই সংস্থার নির্বাচিত সদস্যগণই চূড়ান্তভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এ মধ্যবর্তী সংস্থাটিকে সাধারণত ‘নির্বাচক সংস্থা’ (Electoral College) বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থায় সাধারণত প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ভোটদাতাদের হাতে থাকে না, থাকে নির্বাচক সংস্থার সদস্যদের হাতে।

অধ্যাপক সি. এফ. স্ট্রং (C.F. Strong )-এর মতে, “পরোক্ষ নির্বাচন বলতে নির্বাচনের পর এমন এক প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেখানে তাদের প্রতিনিধিরা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়। “

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এভাবে নির্বাচিত হয়। সেখানে কেবল রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করার জন্যই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচক সংস্থা (Electoral College) গঠন করা হয়। অনেকক্ষেত্রে পৃথক নির্বাচক সংস্থা গঠন করা হয় না। আইনসভাই নির্বাচক সংস্থার দায়িত্ব পালন করে। যেমন- ভারতের রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচক সংস্থা দ্বারা নির্বাচিত হন তা গঠিত হয় আইনসভার উভয়কক্ষের এবং রাজ্যের বিধানসভাসমূহের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে।

পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিকে নিম্নোক্ত ছকের মাধ্যমে দেখানো যায় :

পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার সুবিধা/ গুণাগুণ  Merits of Indirect Method of Election

পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে যেসকল সুবিধা পরিলক্ষিত হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হলো :

১. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় যোগ্য প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকে। কারণ এ ব্যবস্থায় জনসাধারণের হাতে নির্বাচনের চূড়ান্ত দায়িত্ব ন্যস্ত না থেকে তা নির্বাচক সংস্থা বা জনপ্রতিনিধিদের হাতে থাকে। এ মধ্যবর্তী নির্বাচক সংস্থার স্বল্প সংখ্যক যোগ্য ও বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ চূড়ান্ত পর্যায়ে উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।

২. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় ব্যয় সংকোচন করা যায়। এ ব্যবস্থায় যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তারা অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত ও বিজ্ঞ হওয়ায় অহেতুক অর্থ ব্যয় হয় না ।

৩. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচনের একাধিক স্তর থাকে। এর ফলে নির্বাচকমণ্ডলীর পক্ষে নির্ভয়ে ও চিন্তা-ভাবনা করে যোগ্যতম প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা সম্ভব হয়।

৪. মধ্যবর্তী নির্বাচক সংস্থার সদস্যগণ ধীর-স্থিরভাবে প্রার্থীর গুণাগুণ বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে রাজনৈতিক দলের অযথা বাড়াবাড়ির সুযোগ থাকে না, কিংবা ধোঁকাবাজি করে নির্বাচনি সুবিধা লাভ করা যায় না।

৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা অনেকটা উপযোগী। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় বৃহৎ রাষ্ট্রে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। যে কারণে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা উপযোগী হয়ে থাকে।

৬. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। রাজনৈতিক দলাদলি, হানাহানি, বিশৃঙ্খলা না থাকায় স্থিতিশীলতা বজায় থাকে ।

৭… পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় হিংসা-দ্বেষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে। মিথ্যা অভিযোগ, শ্লোগান, পাল্টা শ্লোগান, প্রচারণা, রেখারেখি প্রভৃতি কমে যায়।

৮. জনকল্যাণ সাধন পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার একটি অন্যতম গুণ। যোগ্য প্রতিনিধিরা জনগণের অভাব-অভিযোগ শুনেন ও তাদের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হন। তাঁরা জনগণের অধিকার ও প্রাপ্তিকে প্রাধান্য দেন। ফলে জনকল্যাণ ত্বরান্বিত হয়।

৯. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় চতুর, কৌশলী, ছদ্মবেশী প্রার্থীরা বিভিন্ন কূট-কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ভোটারদের আবেগপ্রবণ করতে পারে না। ফলে তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রদান করেন।

১০. পরোক্ষ নির্বাচন জনজীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করে না। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকায় সুস্থ পরিবেশ বিরাজ করে।

১১. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় যে সকল জটিলতা লক্ষ করা যায় তা পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় দূর করা সম্ভব হয়।

পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার অসুবিধা বা দোষ-ত্রুটি

Demerits of Indirect Methods of Election

পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি বা অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। যে কারণে বিভিন্ন সমালোচক এ ব্যবস্থার সমালোচনা করে থাকেন। নিম্নে এসকল ত্রুটির কয়েকটি তুলে ধরা হলো :

১. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগরিকদের সরাসরি প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ থাকে না বিধায় এ ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, জনগণ এ ব্যবস্থায় প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পায় না ।

২. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় গঠিত সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে না বিধায় সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব লক্ষ করা যায় ।

৩. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে না। কারণ এ ব্যবস্থায় জনগণের সরাসরি ভোটদানের সুযোগ থাকে না বিধায় নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ জনসাধারণকে তেমন তোয়াক্কা করে না। প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনসাধারণের মধ্যে যেমন প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায় পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় তা দেখা যায় না। এতে করে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে অনাগ্রহ দেখা যায় ।

৪. পরোক্ষ নির্বাচনে নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা কম থাকায় প্রার্থীগণ অতি সহজেই বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ভোটারদেরকে স্বীয় অনুকূলে আনতে পারে ।

৫. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করা হয়। কারণ এ ব্যবস্থায় মনে করা হয় যে, জনগণ সরাসরি জাতীয় পর্যায়ের নেতা নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখে না। এ ধারণায় ১৯৯৮ সালে আইয়ুব সরকার তৎকালীন পাকিস্তানে মৌলিক গণতন্ত্র চালু করে।

৬. পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকার জনগণের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত না হয়ে মধ্যবর্তী সংস্থা দ্বারা নির্বাচিত হয় বিধায় জনগণ

সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আর এতে করে সরকার সহজেই স্বৈরাচারী হতে পারে।

৭. সাধারণ জনগণ প্রাথমিকভাবে নির্বাচক সংস্থার যোগ্য সদস্য নির্বাচন করতে পারলে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপযুক্ত প্রতিনিধিও নির্বাচন করতে পারবেন। তাই এ ধারণা অযৌক্তিক।

প্রাথমিক পর্যায়ে নাগরিকগণ নির্বাচক সংস্থার সদস্য নির্বাচনের সময় চূড়ান্ত প্রতিনিধির কথা বিবেচনা করেই ভোট প্রদান করেন। নির্বাচক সংস্থার সদস্যগণ ভোটারদের নিকট প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মোতাবেকই চূড়ান্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। যে কারণে মধ্যবর্তী একটি নির্বাচক সংস্থা গঠন অনাবশ্যক এবং ব্যয়বহুল মাত্র।

৯. মধ্যবর্তী সংস্থার সদস্যগণ চূড়ান্তভাবে প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার্যত দলীয় নেতৃত্বের দ্বারা পরিচালিত হয় বিধায় এতে দল প্রথার ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।

১০. এ ব্যবস্থায় নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে অনীহার ও রাজনৈতিক উদাসীনতার সৃষ্টি হয়। সরাসরি প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারায় নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা হ্রাস পায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, পরোক্ষ নির্বাচনের দোষ-গুণ উভয় থাকলেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশে এ ব্যবস্থার সরব উপস্থিতিই তার বড় প্রমাণ

Leave a Reply