Table of Contents
Toggleদুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান : অর্থ, সংজ্ঞা, ধারণা Rigid Constitution : Meaning, Definition, Concepts
যে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পদ্ধতির প্রয়োজন হয়, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। অর্থাৎ, যে সংবিধান সংশোধনে দেশের সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যায় না, স্বতন্ত্র বা জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় তাই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের বিপরীত রূপই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান ।
অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettel) -এর ভাষায়, “If a constitution requires a special organ or a more difficult procedure of amendment than that required for the creation of ordinary law, that may be classed as rigid.”
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংশোধন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধনে বিশেষ যে নিয়ম থাকে তা সাধারণ আইন প্রণয়নের তুলনায় বিকল্প, পৃথক ও জটিল। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সংবিধানই দুষ্পরিবর্তনীয়। যেমন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত এমনকি বাংলাদেশের সংবিধানও।
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের গুণ বা সুবিধাসমূহ Qualities or Merits of Rigid Constitution
অন্যান্য সংবিধানের ন্যায় দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের কতিপয় গুণ ও দোষ রয়েছে। নিম্নে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ তুলে ধরা যেতে পারে :
১. সুস্পষ্টতা : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত থাকে বিধায় এই সংবিধান অনেকটা সুস্পষ্ট। আর সংবিধানের ধারা- উপধারাসমূহ লিখিত থাকলে তা যথার্থভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। ফ্রিম্যান ( Freeman)-এর ভাষায়, “A rigid constitution is clear and definite, the powers of the government are clearly defined in it.”
২. ছায়িত্ব : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত প্রকৃতির হওয়ায় এর স্থায়িত্ব বেশি। সহজে যে কোনো পদ্ধতিতে এটি সংশোধনযোগ্য নয়। এটি সংশোধনের জন্য বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। যে কারণে কোনো সরকার খেয়াল-খুশিমতো এ সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে না। তাই এ সংবিধানের স্থায়িত্ব তুলনামূলকভাবে অধিক ।
৩. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ : মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের গুণবাচক দিক। এ সংবিধানে জনগণের অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট বিধান রাখা থাকে। অধিকন্তু এ সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না বিধায় এতে জনগণের অধিকার সংরক্ষিত হয়। বিচারপতি জ্যাকসন (Justice Jackson)-এর ভাষায়, “Right of the people can be properly safeguarded through a rigid constitution.”
৪. স্বৈরশাসন রোধ : এ সংবিধানের অন্যতম সুবিধা হলো— এর মাধ্যমে স্বৈরশাসন রোধ করা সম্ভব হয়। কারণ এ সংবিধান লিখিত হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন বিধান সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। এতে করে সরকার যখন তখন তা সংশোধন করতে পারে না। আর এতে করে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সরকারের স্বৈরশাসন রোধ করে ।
৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংবিধান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপযোগী। এ সংবিধানের ধারা ও উপধারাসমূহ ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা যায় না। রাজনৈতিক দলের সমঝোতার ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই কেবল সংবিধানের পরিবর্তন সম্ভব। এতে করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে ৷
৬. বিচার বিভাগের প্রাধান্য : রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বিচার বিভাগের উপর ন্যস্ত। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রদান করা হয়েছে। বিচার বিভাগ দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আখ্যায়িত। যথা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচার বিভাগের প্রাধান্য বেশি দেখা যায় ৷
৭. জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনেকটা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। লিখিত প্রকৃতির এই সংবিধানটি বিশেষ কমিটি বা সংস্থা কর্তৃক প্রণীত হয়। সংবিধান প্রণয়নকালে প্রণেতারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি নজর রাখেন। ফলে এক্ষেত্রে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। ৮. যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির : দুষ্টরিবর্তনীয় সংবিধান অনেক ক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মূল বৈশিষ্ট্য হলো কেন্দ্র ও
প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন। আর দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মাধ্যমে তা সম্ভব হয় ।
৯. গণতান্ত্রিক : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনেকটা গণতান্ত্রিক । গণতন্ত্র হলো জনগণ কর্তৃক পরিচালিত শাসনব্যবস্থা । অধ্যাপক সিলি (Prof. Seeley)-এর ভাষায়, “Democracy is a form of government in which every body has a share.” দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে জনগণের অধিকার ও কর্তব্য লিপিবদ্ধ থাকে এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। ফলে এ সংবিধানে গণতন্ত্র সুসংহত হয়।
১০. ভারসাম্য রক্ষা : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। শাসনের বিধিবিধান স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। সরকার তার নিজ ইচ্ছেমতো সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারে না ।
১১. সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১২. সাংবিধানিক আইনের প্রাধান্য : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে সাংবিধানিক আইনকে সাধারণ আইন অপেক্ষা অধিকতর মর্যাদা প্রদান করা হয়।
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের দোষ বা অসুবিধাসমূহ Demerits of Rigid Constitution
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে সুবিধার পাশাপাশি বিভিন্ন অসুবিধা বা ত্রুটিও বিদ্যমান। নিম্নে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের কতিপয় ত্রুটি তুলে ধরা হলো :
১. রক্ষণশীলতা : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান রক্ষণশীলতার দোষে দুষ্ট। এ সংবিধান সহজে সংশোধন করা যায় না। আর সহজে সংশোধন করা যায় না বিধায় এ সংবিধানে রক্ষণশীলতার পরিচয় মেলে। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারে না ।
২. বিপ্লবের আশঙ্কা : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনেক সময় বিপ্লবের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এ সংবিধান অনেক সময় জনগণের পরিবর্তিত চাহিদার প্রতি সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। ফলে জনগণ বিভিন্ন সময় বাধ্য হয়ে বিপ্লবের মাধ্যমে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের বাধাকে অতিক্রম করতে উদ্যোগী হয়। লর্ড ম্যাকলে (Lord Macley)-এর ভাষায়, “The great cause of revolution is this; that while nations moved onward, constitutions stand still.” ৩. গতিহীনতা : গতিহীনতা দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের অন্যতম ত্রুটি। এ সংবিধান সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যহীন । সামঞ্জস্যহীনতা সমাজে গতিহীনতার সৃষ্টি করে। সমাজ গতিহীন হলে তা উন্নয়নের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। ফলে সাধারণ মানুষের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটি চলতে পারে না ।
৪. সংস্কারের পরিপন্থী : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনেকটা সংস্কারের পরিপন্থী। কারণ সমাজের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় এ সংবিধানে পরিবর্তন আনা যায় না। সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে জটিল পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। অনেক জল্পনা কল্পনা ও জটিলতার প্রেক্ষিতে এটিতে সংশোধন আনা হয় । যার ফলে আকাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয় না।
৫. রাজনৈতিক সংকট : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের পথ প্রশস্ত হয়। কেননা এটি সহজে
পরিবর্তন করা যায় না বিধায় দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়।
৬. বিচার বিভাগের প্রাধান্য : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে বিচার বিভাগকে অধিক প্রাধান্য দেয়া হয়। আইন ও শাসন বিভাগের চেয়ে এই বিভাগের ক্ষমতা বেশি থাকে। যার ফলে বাকী দুই বিভাগের উপর বিচার বিভাগ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এরূপ ক্ষমতার ফলে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয় ।
৭. সংসদীয় ব্যবস্থার অনুপযোগী : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ । অর্থাৎ, এ ধরনের সংবিধানকে জাতীয় আইনসভার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়। আদালত সংবিধানের ব্যাখ্যাকারক হিসেবে সরকারের অন্যান্য বিভাগের নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ফলে দেশের শাসনব্যবস্থায় আদালতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এরকম ব্যবস্থা সংসদীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী ।
৮. অসম্পূর্ণতা : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অসম্পূর্ণতার দোষে দুষ্ট। সংবিধানে শাসন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় লিপিবদ্ধ না থাকায় এটি অসম্পূর্ণ থাকে। যে কারণে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান উত্তম সংবিধান হতে পারে না। কেননা, উত্তম সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সম্পূর্ণতা ও সুস্পষ্টতা ।
৯. জরুরি অবস্থার অনুপযোগী : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান জরুরি অবস্থার অনুপযোগী। কোনো কারণে দেশের মধ্যে জটিলতা দেখা দিলে কিংবা রাষ্ট্রে জরুরি অবস্থার উদয় হলেও সংবিধান সংশোধনে অনেক সময় লাগে। অর্থাৎ, সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণের ক্ষেত্রে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সাহায্যের পরিবর্তে প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে ।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে দোষ ও গুণাবলি উভয়ই বিদ্যমান। তবে এ সংবিধানে ত্রুটির চেয়ে গুণই বেশি। তাছাড়া, বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কার্যকর। যে কারণে এ সংবিধান অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসিত সংবিধান। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আর. সি. আগরওয়াল (R. C. Agarwal)-এর মতে, “Rigid constitution is more useful in modern times because most of the countries in the world have aborted rigid constitution.”
সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য Distinction between Flexible and Rigid Constitution
সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান হলো সংশোধনের ভিত্তিতে রচিত দুটি সংবিধান। উভয় সংবিধানের প্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে কতিপয় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যথা :
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান হলো এমন এক প্রকার সংবিধান যে সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব। কিছু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলতে ঐ সংবিধানকে বুঝায় যে সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না বরং সংশোধনে বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে ।
২. লিপিবদ্ধকরণ : সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের অধিকাংশ ধারা ও উপধারা অলিখিত থাকে। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান হলো
লিখিত প্রকৃতির সংবিধান। এ সংবিধানের বিভিন্ন ধারা ও উপধারা লিখিত আকারে থাকে ।
৩. সংশোধন পদ্ধতি : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সাধারণ আইন পাসের ন্যায় পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায়। এক্ষেত্রে সংশোধনের বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয় না । কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংশোধনে জটিল ও বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে এটি সংশোধনযোগ্য নয় ।
৪. আইনগত : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে সাধারণ আইন ও সাংবিধানিক আইনের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু প্রচলিত আইন অপেক্ষা সাংবিধানিক আইনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। কিন্তু সুপরিবর্তনীয় সংবিধানে সাধারণ আইন ও সাংবিধানিক আইনে পার্থক্য করা হয় না। এক্ষেত্রে উভয় আইন সমমর্যাদার।
৫. কর্তৃত্বগত : সুপরিবর্তনীয় সংবিধানে রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্ব আইনসভার উপর ন্যস্ত করা হয়। আইনসভা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। পক্ষান্তরে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে কর্তৃত্ব অতটা আইনসভার উপর ন্যস্ত থাকে না। এক্ষেত্রে শাসনতন্ত্র নিজেই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। অর্থাৎ, আইনসভার উপর শাসনবিভাগের প্রাধান্য বজায় থাকে ।
৬. সুস্পষ্টতার ক্ষেত্রে : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নয়। কারণ এক্ষেত্রে অধিকাংশ ধারা ও উপধারা অলিখিত থাকে। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান হলো লিখিত সংবিধান। এ সংবিধানের অধিকাংশ নীতিমালা লিখিত থাকে। ফলে এ সংবিধান নির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট।
-৭. গতিশীলতার ক্ষেত্রে : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান গতিশীল প্রকৃতির। এ সংবিধানের সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে না বিধায় এটিকে যখন তখন পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান গতিশীল সংবিধান নয়, বরং স্থিতিশীল। এ সংবিধান যেকোনো পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে যখন তখন সংশোধন করা যায় না।
৮. অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে নাগরিক অধিকারসমূহ স্পষ্টাকারে লিপিবদ্ধ থাকে না। অধিকার সংরক্ষণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে তা অসম্ভব। কেননা, দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত প্রকৃতির বিধায় এতে নাগরিক অধিকারসমূহ স্পষ্টাকারে লিপিবদ্ধ থাকে। ফলে এ সংবিধান নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের উপযোগী হয়ে ওঠে।
৯. বিপ্লব সম্ভাবনার ক্ষেত্রে : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায়। যে কারণে এতে বিপ্লবের সম্ভাবনা কম।
অন্যদিকে, দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না বিধায় এতে বিপ্লবের আশঙ্কা অধিক। –
১০. বিচার বিভাগীয় প্রাধান্যের ক্ষেত্রে : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বিচারবিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণে তেমন উপযোগী নয়। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রাধান্য বেশি থাকে না। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য বেশি দেয়া হয় । যে কারণে এ ধরনের সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
১১. ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ-এর ক্ষেত্রে : উভয় সংবিধানে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ প্রশ্নে পার্থক্য দৃশ্যমান। সুপরিবর্তনীয় সংবিধানে
ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি অতটা কার্যকর করা যায় না। কারণ এ সংবিধানে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টনের বিধান থাকে না। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে তা থাকে। ফলে এক্ষেত্রে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির যথার্থ প্রয়োগ ঘটে।
১২. প্রকারভেদ-এর ক্ষেত্রে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত ও অলিখিত এই দুই প্রকার হতে পারে। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কেবলমাত্র লিখিতই হয়ে থাকে।
১৩. স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান অস্থিতিশীল ও অস্থায়ী। অপরদিকে, দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান দ্বিতিশীল ও স্থায়ী । ১৪. উৎসের দিক থেকে : সুপরিবর্তনীয় সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক আইন ও সাধারণ আইনের উৎস এক হলেও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে এই দুই প্রকার আইনের উৎস এক নয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে বহুবিধ পার্থক্য বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে উভয় সংবিধান স্বাতজ্যের পরিচয় প্রদান করে। তবে এদের মূল পার্থক্য হচ্ছে সংশোধনগত। সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে। কারণে বলা যায়, সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের পার্থক্য শ্রেণিগত নয়, বরং প্রকৃতিগত ।