দলীয় ব্যবস্থা কী?

দলীয় ব্যবস্থা এবং এর শ্রেণিবিভাগ Party System and it’s Classification

সরকার গঠনের জন্য কোনো রাষ্ট্রের যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাকে দলীয় ব্যবস্থা বলে। আধুনিক রাষ্ট্রের সব সরকারেরই দলীয় ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক সরকারের অর্থই হলো দলীয় সরকার। দলীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রের প্রাণ ।

আধুনিক বিশ্বের সকল রাষ্ট্রে দলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। তবে সকল রাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থা একরূপ নয়। সমাজ ব্যবস্থাভেদে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। মতাদর্শ এবং কর্মপন্থার ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটে। রাজনৈতিক দলের শ্রেণিবিভাগ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

ক. সংখ্যার ভিত্তিতে দলের শ্রেণিবিভাগ : সাধারণত সংখ্যার ভিত্তিতে দলীয় ব্যবস্থাকে তিনভাগে ভাগ করা যায় :

১. একদলীয় ব্যবস্থা (One Party System)

২. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা (Bi-party System) এবং ৩. বহুদলীয় ব্যবস্থা (Multi Party System)

দেশে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকলে, তাকে একদলীয় ব্যবস্থা বলে। দেশে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল থাকলে তাকে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলে এবং দেশে দুটির বেশি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকলে তাকে বহুদলীয় ব্যবস্থা বলে ।

কিন্তু কেবল সংখ্যার ভিত্তিতে দলীয় ব্যবস্থার এই শ্রেণিবিভাগকে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সমর্থন করেন না। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাজনৈতিক দলের শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে দলের সংখ্যার থেকে শক্তি, গঠন পদ্ধতি, কার্যপদ্ধতি, মতাদর্শ প্রভৃতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।

খ. ব্যাপক ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ : অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দলীয় ব্যবস্থাকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন।

  1. প্রতিযোগিতামূলক (Competitive) এবং ii. অপ্রতিযোগিতামূলক (Non-competitive)।

প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে এই শ্রেণিবিভাগকে অনেকে আবার সমর্থন করেন না। তাই তারা ব্যাপক ভিত্তিতে দলীয় ব্যবস্থাকে দু’ভাগে বিভক্ত করেন—

  1. উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দলীয় ব্যবস্থা (Liberal democratic party system) এবং
  2. সর্বাত্মক দলীয় ব্যবস্থা (Totalitarian party system )

কিন্তু রাজনৈতিক দলের এই শ্রেণিবিভাগও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। কারণ শ্রেণিবিভাগের এই ভিত্তি অতিমাত্রায় ব্যাপক। ·

গ. অ্যালমণ্ডের শ্রেণিবিভাগ : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক অ্যালমণ্ড (Almond) দলীয় ব্যবস্থাকে নিম্নলিখিত ৭ (সাত) ভাগে বিভক্ত করেছেন ।

১. অস্পষ্ট দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা— এর উদাহরণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যাণ্ড ।

২. সুস্পষ্ট দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা— এর উদাহরণ হচ্ছে গ্রেট ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া ।

৩. কার্যকরী বহুদলীয় ব্যবস্থা— এর উদাহরণ হচ্ছে নরওয়ে ও সুইডেন ।

৪. অস্থায়ী বহুদলীয় ব্যবস্থা— এর উদাহরণ হচ্ছে ভারতবর্ষ ও মালয় । ৫. প্রভুত্বকারী দলীয় ব্যবস্থা— এর উদাহরণ হচ্ছে ইতালি ও ফ্রান্স ।

৬. এক দলীয় ব্যবস্থা- এর উদাহরণ হচ্ছে মিসর ও স্পেন।

৭. সর্বাত্মক এক দলীয় ব্যবস্থা— এর উদাহরণ হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ।

ঘ. বুরলাটস্কীর শ্রেণিবিভাগ : বুরলাটস্কী (Burlatsky) শ্রেণিগত ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলকে বুর্জোয়া, পেটি বুর্জোয়া, প্রলেতারিয়ান এবং আধা-প্রলেতারিয়ান ব্যবস্থায় বিভক্ত করেছেন। মতাদর্শগত দিক থেকে রাজনৈতিক দলকে চরম দক্ষিণ- পন্থী দল (ফ্যাসিস্ট), রক্ষণশীল, বুর্জোয়া উদারপন্থী, বুর্জোয়া সংস্কারপন্থী, সমাজবাদী গণতান্ত্রিক, বাম সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট দলে বিভক্ত করেছেন। আবার দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর দিক থেকে এদেরকে জঙ্গিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক দলীয় ব্যবস্থায় ভাগ করেছেন ।

ঙ. আধুনিক শ্রেণিবিভাগ : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ দলীয় ব্যবস্থাকে তিন ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করেন।

১. একদলীয় ব্যবস্থা (Single party system);

২. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা (Bi-party system)

৩. বহুদলীয় ব্যবস্থা (Multi-party system )

Leave a Reply