Table of Contents
Toggleগণতন্ত্রের গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ Qualities or Merits of Democracy
গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বের উৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রের বিকল্প কোনো শাসনব্যবস্থা আজও কেউ উদ্ভাবন করতে পারেনি । নিম্নে গণতন্ত্রের গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ : গণতন্ত্রে শাসনকার্য পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ স্বীকৃত হয়। “যে সিদ্ধান্ত সকলকে স্পর্শ করে সে সিদ্ধান্ত সকলের দ্বারাই গৃহীত হওয়া উচিত” এটাই গণতন্ত্রের মূলনীতি। আর এজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন (Abraham Lincoln) বলেছেন, “Democracy is a form of government of the people, by the people and for the people. “
২. গণসম্মতিভিত্তিক : গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। বলা হয় “Government based on consent.” জনগণের মতামত অনুযায়ী সরকার কাজ না করলে জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করে নতুন সরকারকে ক্ষমতাসীন করতে পারে। অর্থাৎ, সরকারের স্থায়িত্ব জনগণ তথা শাসিতের সক্রিয় সম্মতির ওপর নির্ভরশীল।
৩. ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ : গণতন্ত্র ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সুগম করে। নাগরিকদের মৌল অধিকারসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দেয় বলে গণতন্ত্র সার্বিক কল্যাণ আনয়ন করে। অধাণিক ফাইনার (Finer) বলেন, “গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা মানুষের জীবন, পরিবার, ধর্ম ও কর্ম নিরাসক্ত যুক্তির অনুশাসনে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।”
৪. আইনের প্রাধান্য : গণতন্ত্র আইনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। এ ব্যবস্থায় সকলে আইনের চোখে সমান এবং সকলের জন্য আইন সমানভাবে প্রযুক্ত হয়। সমগ্র সরকার ব্যবস্থাও আইনের আলোকে পরিচালিত হয়। এ প্রসঙ্গে ফাইনার মন্তব্য করে বলেন, গণতন্ত্রে যথাবিহিত আইন পদ্ধতি (Due process of law) ব্যতীত আমাদের ব্যক্তি জীবনের উপর হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়। ঐ ব্যবস্থায় সম্পাদিত কার্যাবলির জন্য প্রশাসকদেরও জনগণের নিকট পরোক্ষভাবে জবাবদিহিতা করতে হয়।
৫. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে বিচার বিভাগ কার্য সম্পাদন করতে পারে বিধায় বিচার বিভাগের পক্ষে সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করা কিংবা নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়। ফলে গণতন্ত্র তত্ত্বসর্বস্ব নীতিকথার ঊর্ধ্বে ওঠে নিজেকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
দায়িত্বশীলতা : গণতন্ত্র অধিকতর দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা। কেননা, এ ব্যবস্থায় সরকার জনগণের নিকট দায়ী থাকে। নির্দিষ্ট মেয়াদে জনগণ অবাধ নির্বাচনে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। ফলে প্রতিনিধিরা পুনঃনির্বাচনের আশায় সফলভাবে কার্য সম্পাদন করে। অর্থাৎ, এ ব্যবস্থায় শাসক ও শাসিতের পরস্পরের দায়িত্বশীলতা ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ ।
৭. সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা রক্ষা : গণতন্ত্রের অন্যতম গুণ হলো সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা— এই তিনটি মৌল নীতির উপর ভিত্তি করে গণতন্ত্রের ইমারত দাঁড়িয়ে থাকে। গণতন্ত্রে সকলেই সমান, আর এই সমানাধিকারের নীতিটি শুধু তত্ত্বগতভাবে নয়, বাস্তবেও গৃহীত হতে দেখা যায়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-নির্ধন, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই আইনের চোখে সমান এবং সকলেই আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায় বিধায় প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে । অন্যভাবে বলা যায়, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ভোগ করতে পারে।
৮. সর্বাধিক জনকল্যাণ সাধন : গণতন্ত্রে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে। ফলে এ শাসনব্যবস্থায় জনকল্যাণবিরোধী কোনো কাজ করা যায় না। কেননা, রাষ্ট্রীয় কোনোরকম বৈষম্য বা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে না বিধায় জনকল্যাণ সর্বাধিক প্রাধান্য পায়। যে কারণে জে.এস. মিল ( J. S. Mill) গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে “আধুনিককালের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার” বলে অভিহিত করেছেন।
৯. সুশাসন সুশাসন গণতান্ত্রিক সরকারের একটি উত্তম দিক। এ শাসনব্যবস্থায় সরকার ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে। শাসকগণ সংবিধান অনুসারে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এতে করে জনগণের জানমাল ও স্বাধীনতা রক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সকল ধরনের সিদ্ধান্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গৃহীত হয়। অধ্যাপক বার্কার (Prof. Barker ) -এর ভাষায়, “Democracy is a system of government by discussion.” অর্থাৎ, গণতন্ত্রে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে বিধায় সুশাসন নিশ্চিত হয়।
গণতন্ত্রের দোষ বা অসুবিধাসমূহ
Qualities or Demerits of Democracy
১. দলীয় শাসন গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা গোষ্ঠী প্রাধান্য পায়। কারণ এটি জনগণের শাসন হলেও তারা সরাসরি শাসনকার্যে অংশ নিতে পারে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের একটি বিশেষ ক্ষুদ্র গোষ্ঠী প্রকৃত শাসন ক্ষমতা কব্জা করে। ফলে তারা সমষ্টিকে উপেক্ষা করে গোষ্ঠী বা ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়।
২. দলপ্রথার কুফল : গণতন্ত্রে দলপ্রথার কুফল হিসেবে ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসীনরা যে কোনো হীন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আবার বিরোধীরাও ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করে। ফলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। তাছাড়া অনেক সময় বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উপদলীয় কোন্দলও পরিলক্ষিত হয়। এতে করে দলীয় কোন্দল একসময় ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ৩. সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বেচ্ছাচার : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় গুণের চেয়ে সংখ্যাধিক্যের উপর জোর দেয়া হয়। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত বা সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত বা অযৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও গ্রহণ করা হয়। পক্ষান্তরে, সংখ্যালঘুদের মতামত এবং সিদ্ধান্ত যতই অভ্রান্ত ও যৌক্তিক হোক না কেন তা উপেক্ষিত হয়।
৪. সভ্যতা ও কৃষ্টি বিকাশের অন্তরায় : হেনরি মেইন (Henry Main)-এর ন্যায় দার্শনিকদের মতে, গণতন্ত্র সভ্যতা ও বৃষ্টি বিকাশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। কারণ গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি হলো সাধারণ মানুষ। তারা রক্ষণশীল ও পরিবর্তনের পক্ষপাতি নয়। যে কারণে C. D. Burns বলেন, “The civilization which democracy produces is said to be ban, mediocre or dull.”
৫. রাজনৈতিক সংকট : বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়ে ওঠে। পরস্পর বিরোধী মতামত, আদর্শ ও কর্মসূচি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে, যা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কঠিন সংকট সৃষ্টি করে।
৬. অস্থিতিশীলতা : গণতন্ত্রের নেতিবাচক দিক হচ্ছে যে, এ ব্যবস্থায় সহজেই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। সরকারের প্রতি অসন্তোষ, সরকারের রদবদল, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হানাহানি, ধর্মঘট, হরতাল ইত্যাদি গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ফলশ্রুতি। এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলো ফ্রান্সের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজাতন্ত্র ।
৭. ব্যয়বহুলতা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জটিল প্রকৃতির হওয়ায় ইহা পরিচালনায় ব্যাপক অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য সরকারি অর্থ অকাতরে ব্যয় করতে দ্বিধা করে না। যার ফলে উন্নয়ন সম্ভব হয় না। উন্নয়নশীল দেশগুলো এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এসকল দেশে জাতীয়, স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের জন্য বৈদেশিক সাহায্য নিতে হয়। ফলে এসকল দেশে ঋণের পাহাড় জমে আছে। ব্যাহত হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ।
৮. দীর্ঘসূত্রিতা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে সমালোচকরা মনে করেন যে, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কে অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় না।
৯. নৈতিকতা পরিপন্থী : গণতন্ত্র নৈতিকতা পরিপন্থী। কেননা, বিত্তশালীরা এ ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করে। তারা অর্থ দ্বারা ভোট কিনে নেয় এবং যোগ্য দরিদ্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে হটিয়ে দেয়। তাছাড়া আছে লালফিতার দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতি। জনগণকে প্রশাসনিক সেবা পাবার লক্ষ্যে আমলাদেরকে ঘুষ প্রদান করতে হয়। ঘুষ ও দলীয়করণের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ফলে এ ব্যবস্থায় নৈতিকতা বলতে কিছুই থাকে না।
১০. অদক্ষতা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অদক্ষতা ও অক্ষমতার জন্ম দেয়। কারণ এ ব্যবস্থায় শাসক শ্রেণি অনেক সময় রাজনৈতিক স্বার্থে সরকারি পদে অযোগ্যদের নিয়োগদান করে। আর এতে করে বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারের উপর অনুচিত চাপ সৃষ্টি করে। তাছাড়া নির্বাচনের ডামাডোলে শান্তিপ্রিয়, দক্ষ ও বিজ্ঞ লোকজন সামনে আসতে চান না। এ সুযোগে অদক্ষ, অক্ষম, অযোগ্য, প্রতারক ও প্রবঞ্চকরা নির্বিঘ্নে ক্ষমতাসীন হয়।
১১. অজ্ঞতা ও অযোগ্যতা : গণতন্ত্রের সমালোচকদের মতে, এটি অজ্ঞ, অশিক্ষিত ও অযোগ্যদের শাসনব্যবস্থা। লেকি (Lecky) বলেছেন, “গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বাপেক্ষা দরিদ্র, অজ্ঞ ও সর্বাপেক্ষা অযোগ্য ব্যক্তিদের শাসন।” কারণ গণতন্ত্ৰ জনগণের শাসন এবং তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ ও অযোগ্য। কাজেই এটি নিম্নমানের শাসনব্যবস্থা। কার্লাইল বলেছেন, “গণতন্ত্র হলো মূর্খদের জন্য এবং মূর্খদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা।”
১২. গুণের চেয়ে সংখ্যার উপর গুরুত্বারোপ : সমালোচকরা বলে থাকেন যে, গণতন্ত্র গুণের চেয়ে সংখ্যার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। এখানে নির্বাচনে জয়-পরাজয় ভোটারদের সংখ্যা দ্বারা নির্ণীত হয়। ভোট প্রয়োগে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকের গুরুত্ব একই রকম। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেখানে বিজ্ঞ, প্রাজ, জ্ঞানী ও শিক্ষিত লোকের মতামতের গুরুত্ব নেই ।
১৩. প্রতিভা বিকাশের অন্তরায় : অদক্ষ ও অযোগ্য ব্যক্তিরা শাসনব্যবস্থার চাবিকাঠি নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় গণতন্ত্রে প্রতিভার বিকাশ অবহেলিত হয়। কলা, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের সৃজনধর্মী বিকাশে শাসকদের অনীহার ভাব প্রকাশ পায়। ফলে মানব মনের সুকুমার বৃত্তিগুলো প্রস্ফুটিত হয়ে ফুলে ফুলে শোভা বর্ধন করার অনুকূল পরিবেশ খুঁজে পায় না। চেতনা বিকাশের সিঁড়ি বেয়ে সমাজ যতই উপরে উঠতে চায় গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত প্রকৃতি ততই সেখানে তালা ঝুলায় ।
১৪. অস্থায়ী শাসনব্যবস্থা : গণতন্ত্র অস্থায়ী ও ক্ষণভঙ্গুর শাসনব্যবস্থা। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর নির্বাচন, মধ্যবর্তী নির্বাচন, উপ- নির্বাচন, সরকারের প্রতি অনাস্থা, জনগণের খেয়ালখুশিমতো কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন ইত্যাদি গণতন্ত্রকে স্থায়ী হতে দেয় না। ফলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও পরিকল্পনা স্থায়ী হয় না। হেনরি মেইন-এর মতে, “গণতন্ত্র ক্ষণভঙ্গুর ও অস্থায়ী শাসনব্যবস্থার মূর্ত প্রতীক।”
১৫. আমলাতন্ত্রের প্রভাব : গণতন্ত্র একটি আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। জনগণ ও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। যে কারণে আমলাদের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে শাসনের কেন্দ্রস্থলে বসে আমলারা প্রভাব বিস্তার করে। অধ্যাপক লাস্কি (Prof. Laski) এ প্রসঙ্গে বলেন, “Every state is enormously dependent upon the quality of its public officials.”
১৬. পুঁজিবাদী শাসন ও বৈষম্য : পুঁজিবাদী প্রভাব ও অর্থনৈতিক বৈষম্য গণতন্ত্রের অন্যতম দুর্বলতা। পুঁজিবাদী শাসনের ব্যাপক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক অসাম্য রাজনৈতিক সাম্যকে নস্যাৎ করে দেয়। এ ব্যবস্থায় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অর্থায়ন করে। ফলে নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন সরকারি দলের নীতি নির্ধারণে ও আইন প্রণয়নে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করে। ফলে সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করতে পারে না। সুতরাং বলা যায়, পুঁজিবাদী প্রভাব গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর ।
১৭. জরুরি অবস্থায় অনুপযোগী : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যুদ্ধাবস্থার ন্যায় জরুরি অবস্থা মোকাবিলার উপযোগী নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয় বিধায় যুদ্ধকালীন সময়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। যেমন যুদ্ধ ঘোষণা কিংবা সেনা সমাবেশ করতে হলে পার্লামেন্ট বা আইন পরিষদের অধিবেশন ডাকতে হয়, আলাপ-আলোচনা ও ভোটাভুটি পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পাস করতে হয়। এরূপ প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি যা জরুরি অবস্থায় বা যুদ্ধকালীন সময়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে ।
গণতন্ত্রের দোষ-ত্রুটি আলোচনা পরবর্তীতে বলা যায় যে, গণতন্ত্রের দোষের চাইতে গুণই বেশি। তাছাড়া, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অধিকাংশ ত্রুটিই ভিত্তিহীন। তাই বলা যায়, সকল ধরনের সরকারের চাইতে গণতন্ত্রই উত্তম। লিপসন Lipson, “Of all forms of government known and tried, democracy is the wisest and the best.” সুতরাং বলা যায়, গণতন্ত্রই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা বা সরকার পদ্ধতি।