Site icon Honors Info

গণতন্ত্রের মূলনীতি বা উপাদানসমূহ

গণতন্ত্রের মূলনীতি বা উপাদানসমূহ Basic Principles or Elements of Democracy

গণতন্ত্রের উপরিউক্ত সংজ্ঞা ও ধারণা হতে এর কতিপয় নীতি ও উপাদান তুলে ধরা যায়। নিম্নে সেসব নীতি ও উপাদান উল্লেখ করা হলো :

১. রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ;

২. জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করা ;

৩. প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ;

৪. সামাজিক ও রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা ;

৫. প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ;

৬. জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা ;

৭. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ;

৮. একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা :

৯. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ;

১০. সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা করা ;

১১. আইনসভার সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা :

১২. দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা ;

১৩. বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা ;

১৪. সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা ;

১৫. জনগণের কল্যাণ সাধন করা।

 

গণতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ Classification of Democracy

গণতন্ত্রে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও পরিধি বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, পৃথিবীর সর্বত্র গণতন্ত্রের স্বরূপ একরকম নয়। কেননা, সর্বত্র জনগণ সরাসরি শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে না। কোথাও প্রত্যক্ষভাবে, আবার কোথাও পরোক্ষভাবে জনগণ শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে। অর্থাৎ, শাসনকার্যে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গণতন্ত্রকে নিম্নলিখিত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় :

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র Direct Democracy

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে সেই শাসনব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে জনগণ প্রত্যক্ষ কিংবা সক্রিয়ভাবে শাসনকার্য পরিচালনা অংশ গ্রহণ করে। এ শাসনব্যবস্থায় সাধারণত নাগরিকগণ একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হয়ে আইন প্রণয়ন, শাসনতন্ত্র বিষয়ক নীতি নির্ধারণ, সরকারি আয়-ব্যয় ও কর্ম সম্পাদন করে। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণই প্রত্যক্ষভাবে দেশের শাসনভার পরিচালনা করে। প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স ও রোমে এ ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। তখনকার দিনে সেখানে নগর রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। তবে বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্যান্টনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সরকার পরিচালনায় এরূপ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত আছে । প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সুবিধা (Advantages of Direct Democracy) : প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেসকল সুবিধার কথা বলা হয় তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে যেহেতু জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে সেহেতু প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রই হলো প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ।

২. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বিধায় জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে রাষ্ট্র পরিচালনায় উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।

জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের জন্য এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ থাকে না। ফলে সরকার বিপ্লব কিংবা বিদ্রোহের আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে ।

৪. প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসন সহজ-সরল প্রকৃতির। এখানে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগীয় কাজকর্মের তেমন সুস্পষ্ট পার্থক্য থাকে না।

৫. অনেকের মতে, এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় শ্রেণি বিরোধের সম্ভাবনা তেমন থাকে না ।

৬. স্বল্প জনসংখ্যা ও ক্ষুদ্রায়তনবিশিষ্ট রাষ্ট্রের পক্ষে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র হলো আদর্শ শাসনব্যবস্থা ।

৭. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়।

৮. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে আর্থিক ব্যয় কম হয় । প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেসকল অসুবিধার কথা বলা হয় তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. বৃহৎ আয়তন ও জনবহুল রাষ্ট্রের পক্ষে এ ধরনের শাসনব্যবস্থা অনুপযোগী ।

২. রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত জ্ঞান ও দক্ষতা সাধারণ জনগণের থাকে না।

৩. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে যেহেতু স্বল্পসংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করে সেহেতু এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় গোষ্ঠী স্বার্থে শাসন পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. সাধারণ মানুষ অশিক্ষিত ও অজ্ঞ বিধায় প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র নিকৃষ্ট শ্রেণির শাসনে পরিণত হয়।

৫.. প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসন জরুরি অবস্থার উপযোগী নয়। দেশের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে এভাবে দ্রুত ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।

৬. প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি হলো জনগণ সহজে কোনো ইস্যুতে একমত হতে পারে না।


পরোক্ষ গণতন্ত্ৰ Indirect Democracy

পরোক্ষ গণতন্ত্র হলো প্রত্যক্ষ বা বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের বিপরীত অবস্থা। যে শাসনব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি রাষ্ট্রীয় শাসন পরিচালনায় অংশগ্রহণ না করে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসন পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে তাকে পরোক্ষ (Indirect Democracry) গণতন্ত্র বলে। এতে জনগণ সরাসরি শাসনকার্যে অংশগ্রহণ না করে পরোক্ষভাবে তাদের প্রেরিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। এ ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র (Representative Democracy) নামেও পরিচিত। পরোক্ষ গণতন্ত্রে জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট শাসনক্ষমতা ন্যস্ত করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ তাদের সম্পাদিত কার্যাবলির জন্য জনগণের নিকট দায়িত্বশীল থাকে। তারা জনগণ বা নির্বাচকের ইচ্ছানুযায়ী সরকারি নীতি নির্ধারণ এবং সেগুলোকে বাস্তবায়িত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ।

পরোক্ষ গণতন্ত্রের সুবিধা (Advantages of Indirect Democracy) :

পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের যে সমস্ত সুবিধা পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. জনগণ সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে।

২. পরোক্ষ গণতন্ত্রে সম্পাদিত কার্যাবলির জন্য সরকার নির্বাচকদের নিকট দায়িত্বশীল থাকে ।

৩. অনেক সময় গণসার্বভৌমিকতাকে বাস্তবায়িত করার জন্য পরোক্ষ গণতন্ত্রে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয় ।

প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলোর মধ্যে গণভোট, গণউদ্যোগ, পদচ্যুতি প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৪. দায়িত্বশীলতার পরিচয়দানের জন্য প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র অপেক্ষা পরোক্ষ প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি

পেয়েছে।

Exit mobile version