Table of Contents
Toggleসংসদীয় সরকারের সাথে অন্যান্য সরকারের তুলনা
Comparision between Parliamentary Government and Others Government
সুদূর প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থার বর্ণনা তুলে ধরলেও কোন প্রকারের সরকার সর্বোত্তম এ সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ঐকমত্য পোষণ করতে পারেন নি। আধুনিককালে সরকারের যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে তন্মধ্যে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কিন্তু এরূপ ব্যবস্থা যে সর্বোত্তম তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করলে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থাকে অন্যান্য সরকার ব্যবস্থার তুলনায় উত্তম বলে প্রতিপন্ন করা যায়। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার সাথে অন্যান্য সরকার ব্যবস্থার তুলনা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
১. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের সাথে তুলনা (Compare with Presidential Government) : রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি প্রযোজ্য হওয়ায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীন। এ শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ আইন পরিষদের নিকট দায়ী থাকে না। ফলে রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাচারি হয়ে উঠতে পারে। অপরদিকে, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকার ফলে আইন বিভাগ প্রণীত আইনগুলোকে শাসন বিভাগ যথাযথভাবে কার্যকরী করে। যে কারণে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না ।
২. একনায়কতন্ত্রের সাথে তুলনা (Compare with autocratic Government) : একনায়কতন্ত্রে যেহেতু একজন ব্যক্তিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেহেতু তিনি নিজ ইচ্ছানুযায়ী শাসন ক্ষমতা পরিচালিত করতে পারেন। এতে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে না। একনায়কতন্ত্র সাম্য ও স্বাধীনতার নীতিতে বিশ্বাসী নয়। এখানে জনগণের কোনো ভূমিকা নেই। একনায়কের নির্দেশই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। যেমন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জার্মানি ও ইতালিতে এরূপ একনায়কতান্ত্রিক শাসনের আবির্ভাব ঘটে। অপরদিকে, সংসদীয় সরকার সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার নীতিতে বিশ্বাসী। এতে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে সংসদীয় সরকার নিঃসন্দেহে উত্তম ও প্রশংসনীয় ।
৩. রাজতন্ত্রের সাথে তুলনা (Compare with Monarchy) : রাজতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে রাজা বা রানী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ইচ্ছা করলে একনায়কের ন্যায় শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারেন। অপরদিকে, সংসদীয় সরকারকে একটি সীমিত গণ্ডির মধ্য থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়। ফলে তিনি স্বৈরাচারি বা স্বেচ্ছাচারি হতে পারেন না । কাজেই এটি জনগণের জন্য কল্যাণকর ।
৪. সমাজতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার সাথে তুলনা (Compare with socialistics Government ) : সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে সকল কিছু পরিচালিত হয়। এখানে ব্যক্তির ইচ্ছা বা স্বাধীনতার কোনো মূল্য স্বীকৃত হয় না। রাষ্ট্র সব কিছু জাতীয়করণের মাধ্যমে তথা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ন্যায় সকল কিছু রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে যেমন থাকে না, তেমনি ব্যক্তির উপর রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগেরও কোনো ঘটনা ঘটে না। বরং সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে।
৫. পুঁজিবাদী সরকার ব্যবস্থার সাথে তুলনা (Compare with Bourgeoist Govenrment) : পুঁজিবাদী সরকার ব্যবস্থায় সমাজের শিল্পপতিদের হাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের চাবিকাঠি ন্যস্ত থাকে। এ ব্যবস্থায় উৎপাদন ও বণ্টন সব কিছুই পুঁজিপতিদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। কিন্তু সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্র যন্ত্রের সকল কিছুতে পুঁজিপতিদের অবাধ নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
উপরের আলোচনা হতে দেখা যায় যে, কোনো ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে জনগণের কল্যাণ সাধন করতে পারে না। মূলত এই সকল ব্যবস্থায় শ্রেণিবিশেষের স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারটি মুখ্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। কিন্তু সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় সমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ অর্জিত হতে পারে। এ ধরনের ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তথা মন্ত্রিসভার উপর আইনসভা তথা পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আরোপিত হয় বিধায় শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।