Table of Contents
Toggle. গণতন্ত্র চর্চায় রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পর্যালোচনা কর। Review the role of political party in the exercise of democracy.
রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ও কার্যাবলি Role and Functions of Political Party
বর্তমানকালে রাজনৈতিক দল বহুবিধ কার্যসম্পাদন করে। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি ও ভূমিকার উপর ব্যাপকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান কার্যাবলির মধ্যে দলীয় ব্যবস্থার অপরিহার্যতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি ও ভূমিকা আলোচনা করা হলো :
১. সমস্যা নির্ধারণ ও জনগণের কাছে উপস্থাপন : রাজনৈতিক দল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলো নির্ধারণ করে এবং সেগুলো জনগণের সম্মুখে উপস্থাপন করে। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যে রাজনৈতিক দল পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সাধারণ জনগণের পক্ষে কোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান আবশ্যক, তা বোঝা সম্ভব হয় না ৷ সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলই সমস্যা নির্ধারণের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।
২. দলীয় নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন : রাজনৈতিক দল দলীয় নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে। এটি একটি কার্য বিবরণী (Manifesto) আকারে তৈরি করা হয়। দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানকল্পে দলীয় নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় । দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের দ্বারা প্রণীত নীতি ও কর্মসূচি দলের সভায় গৃহীত ও অনুমোদিত হয়।
৩. রাজনৈতিক নেতা সংগ্রহ : সকল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো নেতা সংগ্রহের কাজ করে। নেতা তৈরির জন্য দলগুলো পদসোপান নীতি অনুসরণ করে। নেতা সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক সচ্ছলতা, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিবেচনা করে থাকে। যোগ্য, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নেতাই নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারে।
৪. নীতি বা মতাদর্শ প্রচার করা : প্রত্যেক রাজনৈতিক দল তার নীতি বা মতাদর্শ জনগণকে অবহিত করে। রাজনৈতিক দল নিজ নিজ মতাদর্শ প্রচার করে জনপ্রিয়তা লাভের চেষ্টা করে। প্রচারণার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দল পুস্তক, পুস্তিকা প্রকাশ করে এবং পত্র-পত্রিকায় ঘোষণাপত্র প্রচার করে। বিভিন্ন স্থানে মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশের আয়োজন করে। অধ্যাপক লাওয়েল (Lowell) যথার্থই বলেছেন, “রাজনৈতিক দল আদর্শের প্রচারক হিসেবে কাজ করে।” (Parties act as broker of ideas.)
৫. জনমত গঠন : রাজনৈতিক দল দলীয় নীতি ও কর্মসূচির সমর্থনে জনমত গঠন ও প্রকাশ করে। জনমত গঠনে প্রচারণার সকল মাধ্যমকে কাজে লাগায় রাজনৈতিক দল। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল বেতার, টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ সরকার গঠন করতে পারে আবার সরকারের পতন ঘটাতে পারে। সক্রিয়, সচেতন ও সদাজাগ্রত জনমত সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অনন্য। অধ্যাপক লাওয়েল (Lowell) বলেছেন, “জনমতকে সবার সামনে উপস্থাপন করে গণরায় আদায়ের জন্য উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করা রাজনৈতিক দলের অন্যতম লক্ষ্য।” (Their essential function and the true reason for their existence is bringing public opinion to a focus and framing issues for the popular verdict.)
৬. প্রার্থী মনোনয়ন ও নির্বাচনি প্রচারণা : রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার জন্য যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় এবং প্রার্থীর স্বপক্ষে ব্যাপক নির্বাচনি প্রচার কার্য পরিচালনা করে। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দান করে। রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমিতি, অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে ভোটারদের কাছে দেশের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে। নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা নির্ভর করে বহুলাংশে সঠিক প্রার্থী মনোনয়নের উপর ।
৭. সরকার গঠন : নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলের কাজ হলো সরকার গঠন ও শাসনকার্য পরিচালনা করা। রাজনৈতিক দল শাসনকার্য পরিচালনার সময় জনগণকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তৎপর থাকে। রাজনৈতিক দল দলীয় নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে। সাধারণত দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা বা নেত্রী দলীয় সদস্যদের নিয়ে সরকার গঠন করেন। সরকার জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হলে পরবর্তী নির্বাচনে এর খেসারত দিতে হয় ।
৮. জনগণ ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন : রাজনৈতিক দলগুলো জনগণ ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বৃহৎ আয়তন আধুনিক রাষ্ট্রের বিপুল জনসংখ্যার পক্ষে সরাসরি সরকারের সাথে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অভাব-অভিযোগের ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ সকল অভাব-অভিযোগের নিরসনের জন্য রাজনৈতিক দল সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
৯. রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার : রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটায়। জনগণকে রাজনীতি সচেতন করা ও তাদেরকে কাজে উদ্যমশীল করা রাজনৈতিক দলের কাজ। দলগুলো তাদের দলীয় কর্মসূচি ব্যাখ্যার পাশাপাশি অন্যান্য দলের কর্মসূচিকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। এর ফলে জনগণ বিভিন্ন দলের কর্মসূচি সম্পর্কে এবং রাষ্ট্রীয় সমস্যাবলি সম্পর্কে অবহিত হয়।
১০. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ : রাজনৈতিক দলই জনগণকে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ দান করে। রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিকরণে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা প্রশংসনীয়। রাজনৈতিক দল জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে অংশগ্রহণ প্রসারিত করে। অধ্যাপক ফাইনার (Finer)-এর মতে, “রাজনৈতিক দল জনগণকে রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যোগদান করতে উৎসাহ যোগায়।”
১১. সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ : রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ করে। বিরোধী দল সরকারি দলের কার্যকলাপ ও ত্রুটি-বিচ্যুতির উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে এবং সরকারের নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করে। বিরোধী দলের সমালোচনার ভয়ে সরকার সংযত আচরণ করে। সরকার যা খুশি তা করতে সাহসী হয় না। অধ্যাপক জেনিংস (Jennings) তাই বলেছেন, “If there is no opposition, there is no democracy.”
১২. শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ক্ষমতা পরিবর্তন : দলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় শান্তিপূর্ণভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন করা যায়। সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাত বদল হয়ে থাকে। সরকার পরিবর্তনের জন্য বিপ্লব বা কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির প্রয়োজন হয় না। কারণ, নির্বাচনে বিরোধী দল জয়লাভ করলে সরকার গঠনের সুযোগ পায়। ফলশ্রুতিতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়।
১৩. রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা আনে : রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রশাসনে সুশৃঙ্খল ও স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলে’। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নিজ নিজ মতাদর্শ অনুযায়ী নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে। দলগুলো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকেই বড় মনে করে বিধায় তাদের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত সংকীর্ণ স্বার্থপর মনোবৃত্তি গড়ে ওঠে না। অধ্যাপক অ্যালান বল (Alan R. Ball)-এর মতে, “রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ঐক্যবদ্ধ, সরলীকরণ ও স্থিতিশীল করা।” রাজনৈতিক দল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে।
- স্বদেশপ্রেম জাগ্রত করে : রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মধ্যে স্বদেশপ্রেম ও স্বজনপ্রীতি জাগ্রত করে। রাজনৈতিক দলগুলো দেশের বিশৃঙ্খলার মধ্যে শৃঙ্খলা আনে। জনগণের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সংকীর্ণতা দূর করে জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে দেশপ্রেম জাগ্রত করে। এতে জনগণের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়। দলগুলো দেশের সার্বিক : স্বার্থের কথাই প্রচার করে যা দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে সহায়তা করে ।
১৫. স্বার্থের সমষ্টিবদ্ধকরণ ও গ্রন্থিকরণ : রাজনৈতিক দল বহুমুখি স্বার্থের সমষ্টিবদ্ধকরণে ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন স্বার্থের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নিজেদের সমর্থনের ভিত্তিকে ব্যাপক ও মজবুত করে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো স্বার্থের গ্রন্থিকরণের কাজও করে। অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (Almond and Powell)-এর মতে, “বিভিন্ন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বা স্বার্থ গোষ্ঠীসমূহের দাবি-দাওয়াকে কার্যপদ্ধতিতে রূপান্তরিত করাই হলো স্বার্থের গ্রন্থিকরণ।” ওয়াজবি (S. Wasby) মন্তব্য করেছেন,“Parties articulate interests, in some cases repeating those of interest groups and in other cases stating new and independent ones.”
১৬. গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে : প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দল। বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন বলতে দলীয় শাসনকেই বোঝায়। গণতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব অপরিহার্য। রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে। অধ্যাপক ফাইনার (Finer)-এর মতে, গণতন্ত্র তার আশা- নিরাশা সমেত দল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। (Democracy rests in its hopes and doubts upon the party system. There lies political centre of gravity.) সুতরাং গণতন্ত্রকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
১৭. রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণে রাজনৈতিক দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক দলগুলো নতুন নতুন ভাবধারা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ সঞ্চালনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। দলগুলো নতুন নতুন ঐতিহ্য ও অভ্যাস গড়ে তোলে। সুতরাং রাজনৈতিক দল হলো রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের অন্যতম বাহক ।
১৮. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ : রাজনৈতিক দল হলো রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিগত ও আচরণগত পরিবর্তন সাধন করে রাজনৈতিক দল এর সদস্যদের আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সহায়তা করে। প্রত্যেকটি দল নিজের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা জনগণকে প্রভাবিত করে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সমর্থন অর্জন ও সংরক্ষণ করতে চায় এবং জনগণের মধ্যে নিজেদের পক্ষে জাগরণ সৃষ্টি করে।
১৯. রাজনৈতিক উন্নয়ন : রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাজনৈতিক দলগুলো গণঅংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দীক্ষা, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ, রাজনৈতিক যোগাযোগ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। বস্তুত রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক উন্নয়নের একটি আধুনিক বাহন ।
২০. রাজনৈতিক যোগাযোগ : রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যোগাযোগ কার্য সম্পাদনে রাজনৈতিক দল বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। এই যোগাযোগ প্রক্রিয়া তারা আলাপ-আলোচনা, সভা-সমিতি, মিছিল, মিটিং, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে সম্পাদন করে। রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল তাদের নীতি ও কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে। জনগণের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক যোগাযোগ কার্য সম্পাদন করে।
২১. গঠনমূলক সমালোচনা : যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়, তারা বিরোধী দল হিসেবে আইনসভার ভেতরে ও বাইরে কাজ করে। এসব বিরোধী দল সরকারি কার্যক্রমের উপর সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখে। তারা সরকারি নীতির সমালোচনা করে সরকারি দলের দোষ-ত্রুটি জনগণের সামনে তুলে ধরে। বিরোধী দলগুলোর গঠনমূলক সমালোচনার ভয়ে সরকার সংযত আচরণ করে।
২২. অন্যান্য কাজ : রাজনৈতিক দলগুলো যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, সুনাগরিক সৃষ্টি, দরিদ্র ও যোগ্য প্রার্থীদের সাহায্য, নিজ দলের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা, রাজনৈতিক পরিবর্তন, সরকারের স্থায়িত্ব, ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও ভোটদানে সহযোগিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
পরিশেষে বলা যায়, সকল দেশেই রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকলেও এদের কার্যাবলি ও ভূমিকা এক রকম নয় । গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো উপর্যুক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে গণতন্ত্রকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তোলে। অধ্যাপক ম্যাকাইভার (MacIver) বলেছেন, “Although party is often extraconstitutional, it is essential organ of every large scale democracy.” তাছাড়া সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থাসহ সকল আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা অনস্বীকার্য। অধ্যাপক অ্যালান বল (Alan R. Ball) এ প্রসঙ্গে বলেন, “It is difficult to imagine modern political systems without political parties.”