যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক প্রবণতা

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক প্রবণতা Recent Trends of Federal Government

যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার মূলনীতি হলো আঞ্চলিক সরকারগুলো নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বিসর্জন না দিয়েও একটি শক্তিশালী কেন্দ্রিয় সরকারের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়। সংবিধান অনুসারে উভয় প্রকার সরকার নিজ নিজ শাসন প্রয়োগ করে। কিন্তু বিগত পঞ্চাশ বছর যাবৎ যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামো ও কার্যগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, কানাডা প্রভৃতি যুক্তরাষ্ট্রে উত্তরোত্তর কেন্দ্রিয় সরকার অত্যধিক পরিমাণে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সরকারগুলোর স্বাতন্ত্র্য ও অস্তিত্ব বহুলাংশে এর ফলে ক্ষুণ্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রবণতাকে কেন্দ্রপ্রবণতা বলে আখ্যা দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রবণতা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বিভিন্ন উপাদান ও শক্তির সমন্বয়ে এর পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কে. সি. হুইয়ারের (K.C.. Wheare) মতে, এ প্রবণতার প্রধান কারণ হলো যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট, রাষ্ট্রের সমাজ সেবামূলক কার্যের সম্প্রসারণ এবং পরিবহন ও শিল্পের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক বিপ্লব ।

 রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লিপসন (Lipson)-এর মতে, সমঅধিকারের রাজনৈতিক দাবি, আর্থিক বাজারের সম্প্রসারণ, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থায়িত্বের দাবি, সামরিক প্রস্তুতিজনিত শব্দা এবং জেট বিমান, মহাকাশচারী রকেট ও পারমাণবিক যুগে যুদ্ধের কলা-কৌশলগত পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে বর্তমান বিশৃঙ্খলাপূর্ণ রাজনীতির সঙ্গে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের নীতি অসঙ্গতিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, কার্যত বর্তমান সমাজের সকল প্রধান প্রধান শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এককেন্দ্রিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক প্রবণতা বা কেন্দ্রপ্রবণতার কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. যুদ্ধ সংঘাত : সংবিধানের আলোকে যুদ্ধের সময় যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ, যুদ্ধ পরিচালনা, যুদ্ধের ব্যয় নির্ধারণ, জনগণের অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন ও আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি বিষয়ের ক্ষমতা কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে ন্যস্ত। লিপসন যুদ্ধময় পরিস্থিতিকে কেন্দ্রিয়করণের একটি বড় উপাদান বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রিয় সরকার রাজ্য সরকারের উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। এতে করে কেন্দ্রের অত্যধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. অর্থনৈতিক মন্দা : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কেন্দ্রিয় প্রবণতার অন্যতম কারণ হলো অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দাবস্থা। কেননা, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, মুদ্রাস্ফীতি, শেয়ার বাজার পতন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আর্থিক মন্দা প্রভৃতি কারণে যে অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয় তা দূর করার জন্য কেন্দ্রিয় সরকার ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পায়। কেননা, আঞ্চলিক সরকারগুলো সীমিত সম্পদের কারণে অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময় কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কেন্দ্রিয় সরকার কেবলমাত্র অনুদানই প্রদান করে না বরং ব্যয়ের শর্তও নিরূপণ করে। এ প্রসঙ্গে ১৯২৯ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা ও তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের ‘New Deal’ তত্ত্বের কথা বলা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সেইট বলেন, “দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে কেন্দ্রিয় সরকারের তৎপরতা বৃদ্ধি পায় । কেন্দ্রিয় সরকার এ সংকট মোকাবেলায় উপযুক্ত পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রাদেশিক সরকারগুলোকে নির্দেশ দিতে পারে।”

৩. যোগাযোগ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি : বর্তমানে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। এ উৎকর্ষের সুবাধে আঞ্চলিকতা ও সংকীর্ণতা দূরীভূত হয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের পথ সুগম হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে কৃষি, শিল্প, আর্থিক লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আমদানি রপ্তানির যেমন ব্যাপক প্রসার ঘটছে, তেমনি বিভিন্ন ধরনের আন্তঃপ্রাদেশিক সাংস্কৃতিক সংস্থার সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের পথ সুগম করছে। এতে কেন্দ্রিয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪. জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা : আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর জনকল্যাণমূলক কার্যাবলির পরিধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে – যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রিয় সরকার কর্তৃক নাগরিকদের জন্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ, জীবন মান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য মোচনসহ বহুমুখি কল্যাণমূলক কার্যাবলি গ্রহণের ফলে আঞ্চলিক সরকারের ক্ষমতা অনেকটা সংকুচিত হচ্ছে। অপরদিকে কেন্দ্রিয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫. কেন্দ্রিয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : অতি সম্প্রতি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাথে সামাজিক দিক অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সুষম পরিকল্পনা প্রণীত হচ্ছে, যা উন্নয়ন পরিকল্পনা নামে পরিচিত। আর এ জাতীয় পরিকল্পনা স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রণয়ন করা সম্ভব নয় বিধায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য অনেক সময় কেন্দ্রিয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উপরন্তু পরিকল্পনা ব্যতীত জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব নয়। ফলে একটি দেশের সব অঞ্চলের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রিয়ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন হয়।

৬. যুগ্ম তালিকাভুক্ত ক্ষমতায় কেন্দ্রের প্রাধান্য : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় যুগ্ম তালিকার ব্যবস্থা আছে। এরূপ তালিকাভুক্ত বিষয়ে কেন্দ্রিয় ও প্রাদেশিক উভয় সরকারই ক্ষমতা চর্চা করতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে উভয় সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সাংবিধানিকভাবেই কেন্দ্রিয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় কেন্দ্রের পক্ষে রায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় যে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় কেন্দ্রিয় সরকারের অনুকূলে কাজ করে। অর্থাৎ, কেন্দ্রিয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে কোনোরূপ স্বপ্ন দেখা দিলে কেন্দ্র যেমন এসকল বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করে তেমনি আবার বিচার বিভাগ সাধারণত কেন্দ্রের পক্ষে রায় প্রদান করে। এতে করে কেন্দ্রিয়, সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮২৪ সালে গ্লিকন বনাম অগডেন প্যাট মামলায় এবং ১৯৩৩ সালে ‘New Deal’ সংক্রান্ত মামলায় যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত কেন্দ্রের পক্ষে রায় প্রদান করে।

আঞ্চলিক সরকারের ব্যর্থতা : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি বা কেন্দ্র প্রবণতা রুখতে রাজ্য সরকারগুলো বাধা দিতে সচেষ্ট হলেও বাস্তবে কেন্দ্রিয় সরকারের এ ক্ষমতা বৃদ্ধিকে রাজ্য সরকারগুলো প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। কারণ বিভিন্ন কারণে কেন্দ্রের প্রতি আঞ্চলিক সরকার নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতাই কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

৯. সংবিধান সংশোধন : যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্র প্রবণতার অন্যতম কারণ সংবিধান। কেননা, আদি সংবিধানের বিভাজিত ক্ষমতাকে সংশোধন করে কেন্দ্রকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হচ্ছে। আর এভাবে কেন্দ্রিয় সরকারের দাঁতে ক্ষমতার পাতা সুষ্মিভূত হয়ে কেন্দ্রিয়করণের সৃষ্টি হয়েছে।

১০. দলব্যবস্থা : আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আর গণতন্ত্র মানেই দলব্যবস্থা। তাই কেন্দ্র সে দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যেও সেই দলীয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে কেন্দ্রিয় নেতৃত্বই প্রাধান্য পায় / বিধায় কেন্দ্রপ্রবণতা সম্প্রসারিত হয়।

১১. আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি : প্রদেশের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির কারণে কেন্দ্রিয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব দরবারে সুপরিচয় এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রিয় সরকার একক ভূমিকা পালন করে। এটা সমগ্র দেশের জন্য জনকল্যাণকর ও মর্যাদাপূর্ণ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। এই মর্যাদা শুধু কেন্দ্রিয় সরকার একাই ভোগ করে না, বরং রাজ্য সরকারসমূহ সমান অংশীদার।

১২. স্নায়ুযুদ্ধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বকে দুটি শিবিরে ভাগ করে দেয়। ফলে দেখা দেয় সামরিক অভ্যুত্থান, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং সৃষ্টি হয় নিরাপত্তা সমস্যার। এ সমস্যা ও সংকট কেন্দ্রিয় সরকারকে শক্তিশালী করেছে।

১৩. বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে কেন্দ্রিয় সরকারের ক্ষমতাও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রতিরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রিয় সরকারের উপর অর্পিত থাকায় সরকার এ সুবাধে প্রাদেশিক সরকারের দাবি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আবার প্রাদেশিক সরকারও সর্বদা ন্যায্য দাবি নিয়ে কেন্দ্রিয় সরকারের সামনে উপস্থিত হয়ে দৃঢ়তার সাথে তা তুলতে পারে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে বহুবিধ মারণাস্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশরক্ষার প্রয়োজনে এসকল অস্ত্র কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় কেন্দ্রিয় সরকার অপর কোনো বৃহৎ রাষ্ট্রের সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতার হুমকি দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ছোট একটি প্রদেশ কোনো সময়ে স্বীয় ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে কেন্দ্রিয় সরকারের নিকট প্রতিবাদ করতে পারে না ।

১৪. মতাদর্শ : মতাদর্শের কারণেও ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ হয়। কেন্দ্রিয় সরকার তাদের মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে ক্ষমতায় আসে। ফলে জনগণের যেমন তাদের উপর আস্থা থাকে, তেমনি জনগণের উপরও তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে। জনগণের উপর এ নিয়ন্ত্রণ তারা মতাদর্শের কারণে লাভ করে। ফলে কেন্দ্রীয়করণ সম্ভব হয়।

১৫. সামাজিক নিরাপত্তা আর্থিক স্থায়িত্বের দাবি : জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা ও আর্থিক স্থায়িত্বের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্র প্রবণতার একটি অন্যতম দিক। জনগণের এ দাবি পূরণ করা এককভাবে অঙ্গরাজ্যগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। যে কারণে তারা কেন্দ্রিয় সরকারের উপর নির্ভরশীল। জনগণও এ কারণে কেন্দ্রিয় নেতৃত্বের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। ফলে স্বভাবতই কেন্দ্রিয় সরকারের ক্ষমতার প্রসার ঘটে এবং বিপরীতে অঙ্গরাজ্যগুলোর ক্ষমতা ও প্রভাব হ্রাস পায়। এ ধরনের প্রবণতা সাম্প্রতিককালে সকল যুক্তরাষ্ট্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

 

১৬. একচেটিয়া কারবারের উদ্ভব : পুঁজিবাদ প্রসারের ফলে একচেটিয়া কারবারের উদ্ভব হয়। এটি কেন্দ্রিয় উৎপাদন ও বণ্টনকে প্রভাবিত করে। এভাবে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের সাথে সাথে কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ সাধিত হয়।

১৭. আন্তর্জাতিক সমস্যা। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে কলহ-বিবাদ প্রায়শ লেগেই থাকে। ফলে একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের পক্ষে, এসবের মোকাবিলা করা যত সহজ ক্ষুদ্র কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই নিজেদের রক্ষার জন্য রাজ্য সরকার বা প্রদেশসমূহ সকল ক্ষমতা কেন্দ্রিয় সরকারের নিকট অর্পণ করে। জাতীয় দুর্যোগকালেও কেন্দ্রিয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দা যেসব সমস্যার জন্য দেয় সেগুলোর আশু সমাধানের জন্য কেন্দ্রিয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার প্রয়োজন হয়। কেন্দ্রিয় সরকারের পরিপূর্ণ সহযোগিতা ব্যতীত এর সমাধান সম্ভব নয়।

উপরে আলোচিত বিষয়গুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক বাধা। এগুলোর ফলে আঞ্চলিক সরকারের কর্মপরিধি ও প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন্দ্রিয় প্রবণতা। উইলোবী (Willoughby)-এর মতে, “Many critics are of the views that in the long run federalism will vanish and unitary government will take it place”. তবুও অদ্যাবধি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুরুত্ব, আত্মসচেতনতা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা আজও দৃঢ়। কেননা, আজও বিশ্ব নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার।

Leave a Reply