যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য Characteristics of Federal Government

আইন শাসন বিভাগ এবং কেন্দ্র প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সরকারের একটি রূপ হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার। এককেন্দ্রিক সরকারের বিপরীত শাসনব্যবস্থা হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা। এককেন্দ্রিক সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে অপূর্ণ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় ক্ষমতা কেন্দ্র প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সংবিধানের বিধানানুসারে বণ্টন করা হয়ে থাকে। কেন্দ্র বা প্রদেশ কোনো সরকারই অপর সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না

 যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার Federal Government 

আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে ইংরেজি শব্দটি ল্যাটিন থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ ‘সন্ধি’ বা ‘মিলন’। সুতরাং উৎপত্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বলতে কতগুলো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মধ্যে সন্ধির ফলে যে নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় সেই রাষ্ট্রকে বুঝায়।

১. প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফাইনার (Finer) তাঁর “The Theory and Practice of Modern Government” গ্রন্থে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সরকারব্যবস্থা যেখানে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ আঞ্চলিক সংস্থায় ন্যস্ত হয় এবং অন্যান্য অংশ ঐসব আঞ্চলিক সংঘের সমবায়ে গঠিত কেন্দ্রীয় সংস্থায় ন্যস্ত থাকে ।”

২. এ. ভি. ডাইসি (A. V. Diecy)-এর মতে, “যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হলো জাতীয় ঐক্য ও অঙ্গরাজ্যের অধিকারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের একটি রাজনৈতিক কৌশল বিশেষ।”

৩. এলান আর. বল (Allan R. Ball)-এর মতে, “যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাঠামো এমন এক ব্যবস্থা যেখানে একটি কেন্দ্রিয় সরকার এর যুক্তরাষ্ট্রীয় ঐক্য গড়ে তোলার অংশ হিসেবে কিছু অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা বিভক্ত করে দেওয়া হয়।”

৪. অধ্যাপক গার্নার (Prof. Garner)-এর মতে, “যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাঠামো এমন এক ব্যবস্থা যেখানে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার একই সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থেকেও উভয়ে তাঁদের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। এ কর্তৃত্ব দেশের সংবিধান বা সংসদ কর্তৃক নির্ধারণকৃত এবং সংবিধান বা সংসদ কর্তৃক সৃষ্ট।”

৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের অন্যতম বিশেষজ্ঞ কে. সি. হুইয়ার (Prof. K. C. Wheare) তাঁর ‘Federal Government’ গ্রন্থে বলেন “By federal principle 1 can the method of dividing powers so that the central and regional governments are each, within a sphere, co-ordinate and dependent. “

৬. সি. এফ. স্ট্রং (C.F. Strong )-এর মতে, “A federal state is a state in which a number of co-ordinated

states united for certain common purpose.”

 ৭. মন্টেস্কু Montesquicu-এর ভাষায়, “Federal government is a convention by which several similar

states-agree to become in members of a large one. “

৮. জে.এ. কোরি (J.A. Corry) তাঁর “Democratic Government and Politics” গ্রন্থে বলেন, “Federalism is a

dual form of government in which calculated to reconcile unity with diversity.”

৯. হ্যামিলটন Hamilton-এর ভাষায়, “Federal government is an association state that form a new one.” ১০. সর্বাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন এ. এইচ. ব্রিক (A H. Brich)। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে একটি সাধারণ সরকার এবং কতগুলো আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা এমনভাবে বণ্টন করা হয় যে, তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং প্রশাসনিক প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে জনগণকে শাসন করে।”

পরিশেষে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা যাতে কতগুলো প্রদেশ নিয়ে গঠিত সাধারণ রাষ্ট্রে সংবিধানের ভিত্তিতে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টিত হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ বা কেন্দ্রিয় ও আঞ্চলিক সরকারগুলো স্ব স্ব এলাকায় স্বতন্ত্র ও স্বাধীন।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য

Characteristics of Federal Government

আধুনিক সরকার হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যেগুলো অপরাপর সরকারের প্রকৃতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পার্থক্য নির্দেশ করে। নিম্নে এসকল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :

১. দ্বৈত সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় দু’ধরনের সরকার বিদ্যমান।

যথা : কেন্দ্রিয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার / আঞ্চলিক সরকার। এক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় সরকার সমগ্র দেশে শাসনকার্য পরিচালনা করে, আর আঞ্চলিক সরকার নিজ নিজ অঞ্চলের শাসনকার্যে নিয়োজিত থাকে। উভয় সরকারই সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা লাভ করে এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও সমমর্যাদাসম্পন্ন।

লিখিত সংবিধান : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতা বণ্টনের লক্ষ্যে সংবিধান লিখিত হয়। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ক্ষমতার পরিধি, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রভৃতি বিষয় লিখিত অবস্থায় থাকে। এতে করে শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনোরূপ সমস্যা বা জটিলতা সৃষ্টি হয় না ।

৩. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনুসরণ হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের সংবিধান সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংশোধন করা যায় না বিধায় জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

৪. ক্ষমতার বন্টন: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো আঞ্চলিক ক্ষমতার বণ্টন। কেন্দ্রিয় সরকার ও আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকারগুলোর মধ্যে সংবিধানের আলোকে ক্ষমতা বণ্টিত হয়। কেন্দ্রিয় সরকারের দায়িত্বে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মুদ্রা সংক্রান্ত বিষয়, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পূর্ত, গৃহায়ন, খাদ্য ও সেবার ন্যায় আঞ্চলিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বে ন্যস্ত করা হয়। ফলে সংবিধান নির্ধারিত ক্ষমতার পরিধির মধ্যে থেকে উভয় প্রকার সরকারই নিজ নিজ শাসনকার্য পরিচালনা করে ।

প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি হলেও প্রাদেশিক সরকারগুলো সার্বভৌম থাকে না। বরং এগুলো সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। অর্থাৎ, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সংবিধান অনুসারে প্রাদেশিক সরকারগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে ।

সংবিধানের প্রাধান্য : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এককেন্দ্রিক সরকারে কেন্দ্রিয় সরকারের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে কেন্দ্রিয় বা আঞ্চলিক কোনো সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বরং সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্র বা রাজ্য উভয় সরকারই সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা লাভ করে এবং উভয়ে সংবিধান কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।

আঞ্চলিক সরকারের স্বতন্ত্র সংবিধান : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি কেন্দ্রিয় সংবিধান থাকে, যার আলোকে কেন্দ্রিয় সরকার পরিচালিত হয়। আবার অঙ্গরাজ্যগুলোর জন্য স্বতন্ত্র সংবিধান থাকে। আঙ্গরাজ্যগুলোর নিকট ন্যস্ত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের জন্য এ ধরনের স্বতন্ত্র সংবিধান অপরিহার্য ।

৮. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় সাধারণত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় আইনসভার নিম্নকক্ষ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। আর উচ্চকক্ষ যুক্তরাষ্ট্র গঠনকারী প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। সুইজারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এধরনের ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান ।

১. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত-এর উপস্থিতি। সংবিধানের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রিয় ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সম্ভাব্য বিরোধের মীমাংসা ইত্যাদি দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ আদালতের অস্তিত্বকে নীতিগতভাবে স্বীকার করা হয়। সংবিধানের আলোকে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত কেন্দ্রিয় ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে। মার্কিন সংবিধানে বলা হলো, “কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারসমূহের বিবাদ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতে মীমাংসিত হবে।”

১০. দ্বৈত নাগরিকত্ব : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে দ্বিনাগরিকতা পরিলক্ষিত হয়। এক্ষত্রে প্রত্যেক নাগরিক ফেডারেশন বা কেন্দ্রিয় সরকারের নাগরিকত্বের পাশাপাশি তাঁর নিজস্ব অঙ্গরাজ্যের নাগরিকত্বও লাভ করেন। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ এরূপ দ্বি-নাগরিকতা লাভ করলেও ভারতে এরূপ দ্বিনাগরিকতা স্বীকৃত নয় ।

১১. দ্বৈত আনুগত্য : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিক প্রথমে অঙ্গরাজ্যের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে জাতীয় রাষ্ট্রে কেন্দ্রিয় সরকারকে মান্য করে। অর্থাৎ, নাগরিকদেরকে উভয় সরকারের আইন ও নির্দেশনা মান্য করতে হয়। ১২. দ্বৈত আইন : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রিয় (Central) ও প্রাদেশিক (Provincial) — এই দুই ধরনের আইন বিদ্যমান। কেন্দ্রিয় ক্ষমতাবলে কেন্দ্রিয় আইনসভা আইন প্রণয়ন করে। আবার কেন্দ্রের প্রদত্ত ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রাদেশিক আইনসভা আইন প্রণয়ন করে। উভয় আইনই নাগরিকদের মান্য করতে হয়।

১৩. বিচার বিভাগের প্রাধান্য বিচার বিভাগের প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষতার পরিচয় দান করে। বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

১৪. কেন্দ্রমুখি কেন্দ্রবিমুখি প্রবণতার সমন্বয় : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় রাজ্য এবং আঞ্চলিক সরকারগুলোর মধ্যে দু’ধরনের প্রবণতার পরিচয় পাওয়া যায়। একদিকে আঞ্চলিক সরকারগুলো নিজস্ব সত্তা অক্ষুণ্ণ রেখে কেন্দ্রমুখি প্রবণতার; আবার কেন্দ্রের প্রতি আনুগত্য পোষণ করে বিকেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিচয় প্রদান করে। অর্থাৎ, রাজ্যসমূহ কেন্দ্রিয় সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, কিন্তু কেন্দ্রে বিলীন না হয়ে নিজেদের সত্তা বজায় রাখতে চায়। এ প্রসঙ্গে কে. সি. হুইয়ার (K.C. Wheare) বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাহ্যিক দিক থেকে একটি রাষ্ট্র, কিন্তু অভ্যন্তরে অনেক রাষ্ট্র।”

 ́১৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় মনোভাব : এ ধরনের সরকারব্যবস্থায় জনগণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় মনোভাব কাজ করে। তারা কেন্দ্রিয় সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে ও রাজ্য সত্তাকে অটুট রাখে। তাঁরা একই পরিবেশ ও সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করতে গিয়ে সমমনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। এর মতে, যুক্তরাষ্ট্র গড়তে হলে কিছু গতিময় আবেগের প্রয়োজন। এখানে শুধু সাংস্কৃতিক বৈপরীত্যের মধ্যে ভৌগোলিক সংলগ্নতা থাকলেই চলবে না। তাঁর কথায়, “Federalism must be based on some deeper emotion than mere geographic contiguity with cultural diversity”. W. H. Riker. এটাই হলো আনুগত্য প্রকাশের ভিত্তি এবং তা খুবই প্রয়োজনীয়।

১৬. সীমানা নামকরণ : যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর সম্মতি ব্যতীত তাদের সীমানা ও নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়। আদর্শ যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই আদর্শ যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত।

১৭. দ্বিবিধ ব্যয় : প্রশাসন পরিচালনার ব্যয় সংকুলানের জন্য উভয়বিধ সরকারের মধ্যে আয়ের খাত বণ্টন করা হয়। অন্যথায়  আঞ্চলিক সরকারগুলোর অস্তিত্ব রক্ষা হয় না। এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ের বিষয়ও নিজ নিজ সরকারের কর্তৃত্বাধীন থাকে ।

১৮. সমমর্যাদা : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অঙ্গরাষ্ট্র বা আঞ্চলিক সরকারগুলোর মধ্যে সমমর্যাদা বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ, প্রত্যেক রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকগণ কেন্দ্রিয় সরকারের নিকট সমমর্যাদা ও অধিকার পেয়ে থাকে। এসব ব্যাপারে কোনো প্রকার বৈরি মনোভাব পোষণ করা হয় না।

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে আলোচিত বৈশিষ্ট্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থার তাত্ত্বিক ও মৌলিক দিক। এসব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই অন্যান্য সরকারব্যবস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থাকে পৃথক করা হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থাকে সম্যকভাবে উপলব্ধি করার জন্য এসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গভীর ধারণা পোষণ করতে হবে।

Leave a Reply