মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের উদ্ভব আলোচনা কর ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের উদ্ভব আলোচনা কর । 

Background of Framing of the American Constitution

রাষ্ট্র সমবায়ের অনুচ্ছেদে কোনো যুক্তরাষ্ট্রীয় বা এককেন্দ্রিক ধরনের শাসনব্যবস্থার বিধান করা হয় নি; বরং রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে একটি শিথিল রাষ্ট্র সমবায় বা কনফেডারেশন (Confederation) গঠনের বিধান করা হয়। কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতা বা কার্যকর শাসনক্ষমতা রাষ্ট্রগুলোর হাতেই বজায় রাখার বিধান করা হয়। এ ‘রাষ্ট্র সমবায়ের শাসনতন্ত্র’ যুদ্ধ ঘোষণাকারী ১৩টি ‘রাষ্ট্র’ (উপনিবেশ) দ্বারা অনুমোদিত (Ratified) হয়ে কার্যকর হয়। একেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রথম সংবিধান’ বলে গণ্য করা হয়। রাষ্ট্র সমবায়ের অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ‘কংগ্রেস’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এ কংগ্রেসকে যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি স্থাপনসহ বৈদেশিক বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করার পূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে রাষ্ট্রগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি এবং ‘অনুচ্ছেদ’ সংশোধন করতে হলে রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতি থাকার প্রয়োজন হতো। ‘রাষ্ট্র সমবায়ের শাসনতন্ত্র’ দ্বারা কোনো কংগ্রেসের অধীন স্বাধীনতা সংগ্রামের সফলতা এবং পরে কিছু সাংবিধানিক অগ্রগতি সত্ত্বেও ‘রাষ্ট্র সমবায়ের শাসনতন্ত্র’ এর সংশোধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কারণ ১৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক স্বার্থের সংঘাত ‘রাষ্ট্র সমবায়ের শাসনতন্ত্র’ এর সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলে। বাণিজ্যিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা ও পদ্ধতি না থাকার কারণে ১৭৮৫ সালে কিছু রাষ্ট্র মাউন্ট ভারননে এক সম্মেলন আহ্বান করে নিজেদের পারস্পরিক অসুবিধা দূর করার চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এ চুক্তিই আন্তঃরাজ্য সম্পর্ক এবং বাণিজ্যিক উন্নতির ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করে। ১৭৮৬ সালে ‘আন্নাপোলিস’ এ অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের উদ্যোগে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ‘রাষ্ট্র সমবায়ের শাসনতন্ত্র’ সংশোধন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। উক্ত রিপে’র্টে ‘রাষ্ট্র সমবায়ের শাসনতন্ত্র’ এর ত্রুটি- বিচ্যুতি উদঘাটন করা হয় এবং তা দূর করার জন্য আগামী বছর (১৭৮৭ সালে) ‘ফিলাডেলফিয়া’-তে এক সম্মেলনে মিলিত হবার জন্য সকল রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ।

প্রধানত স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য মার্কিনিদের ‘রাষ্ট্র সমবায়’ গঠিত হয়েছিল বলে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের পর ১৭৮৩ সালে আমেরিকায় শান্তি স্থাপিত হলে উপনিবেশিকদের নিকট এর দুর্বলতাগুলো বিশেষভাবে পরিস্ফুট হতে থাকে। মুনরো এর মতে, মার্কিনিদের আদি রাষ্ট্র সমবায়ের চারটি প্রধান দুর্বলতা বা চারটি প্রয়োজনীয় ক্ষমতার অভাব ছিল। এই রাষ্ট্র সমবায়ের কর ধার্য, ঋণ গ্রহণ, ব্যবসায় বাণিজ্যের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরক্ষার জন্য রক্ষীবাহিনী পোষণের ক্ষমতা ছিল না। ফলে রাষ্ট্র সমবায় ও এর শাসনযন্ত্র সম্পূর্ণভাবে রাষ্টগুলোর উপর নির্ভরশীল ছিল। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবোধ ও প্রতিযোগিতার ভাব ছিল অত্যন্ত প্রবল। রাষ্ট্রগুলো সংরক্ষণমূলক শুল্ক (Protective tariff) ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকের ফলে আন্তঃরাষ্ট্র বাণিজ্য (Inter-state commerce) বিশেষভাবে ব্যাহত হয়েছিল। উপরন্তু বিয়ার্ড (Beard)-এর মতে, “বৃহৎ রাষ্ট্রসমূহের বিত্তশালী এবং ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহের বিত্তহীন উপনিবেশিকদের মধ্যে শ্রেণি সংঘর্ষও ছিল বিশেষ প্রকট।”

উপরিউক্ত বিষয়গুলোর কারণে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐক্য সাধিত হতে পারে নি এবং মার্কিন জাতির জন্ম ঘোষিত হলেও প্রকৃতপক্ষে জাতির উদ্ভব ঘটে নি। এ প্রসঙ্গে জর্জ ওয়াশিংটন (George Washnigton) দুঃখ করে বলেছিলেন, “আমরা এখনও এক জাতি, কখনো বা ১৩টি সম্পূর্ণ পৃথক জাতি হিসেবে কার্য করছি।”

ফিলাডেলফিয়া সাংবিধানিক সম্মেলন, ১৭৮৭ এবং মার্কিন সংবিধানের অনুমোদন

The Philadelphia Constitutional Convention, 1787 and Ratification of the American Constitution

জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৮৭ সালে মে মাসে ফিলাডেলফিয়ায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যা ইতিহাসে “ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন’ নামে পরিচিত। একে ‘সাংবিধানিক সম্মেলন’ Constitutional Convention নামেও অভিহিত করা হয়। এ সম্মেলনে আমেরিকায় একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সে উদ্দেশ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন ও লিপিবদ্ধ হয়। ১৭৮৭ সালের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত সম্মেলনের অধিবেশন চলে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে ৭৪ জন নির্বাচিত হলেও সম্মেলনের শুরুতে ৫৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত হন এবং শেষ পর্যন্ত

উপস্থিত থাকেন মাত্র ৪২ জন প্রতিনিধি। তবে চূড়ান্ত সংবিধানে স্বাক্ষর করেন মাত্র ৩৯ জন। একমাত্র রোড আইল্যান্ড ব্যতীয় অন্যান্য রাষ্ট্র সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। জর্জ ওয়াশিংটন ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি ছাড়াও মার্কি সংবিধান প্রণয়নে উদ্যোগ ও নেতৃত্বে ছিলেন জেমস ম্যাডিসন, আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রমুখ। প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানের বিষয়বস্তু নিয়ে বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারকে কী পরিমাণ ক্ষমতা প্রদান করা হবে- সে প্রশ্নে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিগণ এক দীর্ঘ ও জটিল বিতর্কে লিপ্ত হন। কোনো কোনো রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ সংবিধানে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তনে আগ্রহী ছিলেন। আবার বৃহৎ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ রাষ্ট্রগুলোর অধিকার সংরক্ষ করতে চান এবং একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তনে আগ্রহী ছিলেন। আবার বৃহৎ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মধ্যেকার পরস্পর বিরোধী স্বার্থের বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুতর মতবিরোধের সৃষ্টি করে। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিগণ দাবি করে যে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের তুলনায় তাদের রাষ্ট্রগুলোকে কংগ্রেসে অধিকতর পরিমাণে প্রতিনিধিত্ব প্রদান করতে হবে। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ তাদের রাষ্ট্রের জন্য কংগ্রেসে সমান প্রতিনিধিত্বের দাবি করেন। সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটনের দৃঢ় প্রচেষ্টার ফলে এ দুটি পরস্পর বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা সম্ভব হয়। উক্ত সম্মেলনের প্রতিনিধিগণ শেষ পর্যন্ত তাঁদের মতানৈক্যের প্রধান প্রধান বিষয়গুলো মীমাংসা করে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন।

১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ সংবিধান, ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয় মার্কিন ইতিহাসের খ্যাতনামা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ সেই দেশের সংবিধান রচনা করেছিলেন। এসকল ব্যক্তিগণ মার্কিন সংবিধান প্রণয়নে এমন নৈপুণ্য এবং দক্ষতার পরিচয় রেখেছিলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কখনো এমন প্রতিভাধর মানুষের একত্র সমাবেশ ঘটে নি ।

ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে গৃহীত সংবিধান কার্যকর হওয়ার পূর্বে এর স্বপক্ষে অঙ্গরাজ্যসমূহের অনুমোদন লাভের প্রয়োজন হয় এবং সম্মেলন শেষ হওয়ার পরই সংবিধান অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সংবিধান অনুমোদন প্রশ্নে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো রাষ্ট্র নতুন সংবিধানের বিরোধিতা করে প্রচারণা চালায়। ফলে হ্যামিল্টন, ম্যাডিসন ও জন রে সংবিধান বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দানের জন্য এবং নতুন সংবিধানের গুণাবলি জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য একটি পত্রগুচ্ছ প্রকাশ করে। এসকল পত্রে তাঁরা সমসাময়িক সমস্যা ও নতুন শাসন কাঠামোর উপযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং প্রস্তাবিত সংবিধান গ্রহণের জন্য জোরালো আহ্বান জানান। অবশেষে অনেক বিরোধিতার পর মার্কিন সংবিধান প্রথমে ১২ এবং শেষে ১৩টি ‘রাষ্ট্র’ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ডেলাওয়ার, নিউ জার্সি, জর্জিয়া, কানেকটিকাট প্রভৃতি রাষ্ট্র দ্রুত সংবিধান অনুমোদন করলেও নর্থ ক্যারোলিনা এবং রোড আইল্যান্ড সকলের শেষে সম্মতি জ্ঞাপন করে। ১৩টি সদস্য রাষ্ট্রের দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার পর ১৭৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কার্যকারিতা লাভ করে। ১৭৮৯ সালের মার্চ মাসের ‘প্রথম বুধবার’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’ হিসেবে স্থির হয়। নতুন সংবিধানের বিধানমতো মার্কিন “নির্বাচনি কলেজ’ (Electoral College) জর্জ ওয়াশিংটনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করায় ১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। নতুন সংবিধান চূড়ান্তভাবে ১৩টি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করায় প্রথমে ১৩টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০টি। এ ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৯টি উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত এবং বাকিটি হলো হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ। ১৭৮৯ সালে প্রণীত প্রথম মার্কিন সংবিধান একটি প্রস্তাবনা এবং ৭টি অনুচ্ছেদসহ গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ক্রমবিকাশের ধারায় এ সংবিধান বর্তমান রূপ লাভ করেছে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের উদ্ভব আলোচনা কর । 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিকাশ সম্প্রসারণ

Development-Growth of the Constitution of the United States of America

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধানের উৎস ও অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনায় এটা পরিলক্ষিত হয় যে, কোনো দেশের সংবিধানই দীর্ঘকালব্যাপী কোনো অপরিবর্তনীয় আইনের গণ্ডিতে আবদ্ধ দলিলে পরিণত হয় নি। পরিবর্তনশীল সমাজের পরিবর্তিত অবস্থার ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে তাদের কাঠামো, আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন সাধিত হয়। কেননা, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে যে নতুন সামাজিক শক্তির বিকাশ ঘটে তার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে চলা সংবিধানের অন্যতম

উদ্দেশ্য। বিভিন্নভাবে এ সঙ্গতি রক্ষার কাজ অব্যাহত থাকে কখনো আইনসিদ্ধ আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে, কখনো আইনের কাঠামোর বাইরে পরিবেশ ঘটিত উপাদান ও শক্তির প্রভাবে সংবিধানের পরিবর্তন, বিকাশ ও সম্প্রসারণ ঘটে থাকে। মার্কিন সংবিধানও এর ব্যতিক্রম নয় ।

১৭৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচনাকালীন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি বিন্যাস ও তাদের চাহিদার সাথে বর্তমানের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বিন্যাস, পরিবেশ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার চরিত্র সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। সামাজিক জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য সংবিধানের পরিবর্তন ও সম্প্রসারণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দেখা দেয়। একটি পুরনো দলিলকে প্রায় ২০০ বছরের সদ্য পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় অন্ধভাবে প্রয়োগ করা যায় না এবং করা সম্ভবও নয়। তাই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও পরিবর্তিত সময়ের দাবি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়ে সংবিধান নিজস্ব সজীবতা ও গতিশীলতা বজায় রেখেছে। যান্ত্রিকতা নয়, ক্রমবিবর্তনই মার্কিন শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি। ১৭৮৭ সালে সংবিধান প্রণেতাগণ কেবলমাত্র মার্কিন সংবিধানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের বংশধরগণ এর সাথে দেয়াল, স্তম্ভ, বারান্দা সংযুক্ত এমন একটি সংহত কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন যা এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পরিগ্রহ করে নি

মার্কিন সংবিধান প্রকৃত অর্থেই একটি গতিশীল সংবিধান। সংবিধান প্রবর্তনের ২০০ বছরের ইতিহাসে এ সংবিধান বর্তমান পর্যন্ত মাত্র ২৬ বার সংশোধিত হয়েছে। সংবিধান কার্যকর হওয়ার অব্যবহিত পরেই ১৭৯১ সালে সংবিধানের প্রথম দশটি সংশোধনী পাস হয়। অর্থাৎ মার্কিন সংবিধান ক্রমশ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়। তবে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন ঘটে নি। সুতরাং বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ পরিবর্তন আনুষ্ঠানিক সংশোধনীর মাধ্যমে হয় নি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মার্কিন সংবিধানের ক্রমবিবর্তন বা বিকাশে সাহায্য করেছে। এ বিকাশ কোনো একটি বিশেষ উপাদান বা শক্তির একক ভূমিকায় সম্ভব হয় নি। নিম্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিকাশ ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যম বা উপাদানের প্রভাব আলোচনা করা হলো :

ক. সংবিধান সংশোধন (Constitutional Amendment) : সংবিধান সংশোধন বলতে এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও সম্প্রসারণ সব কিছুকেই বোঝায়। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এর বিদ্যমান আইনের যেমন পরিবর্তন করা হয় তেমনি নতুন নিয়মকানুনও সংযুক্ত হয়। ফলে পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রক্ষার্থে সংবিধান সংশোধন অপরিহার্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী এই সংবিধানের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সম্প্রসারণে সাহায্য করেছে। মার্কিন সংবিধান বর্তমান পর্যন্ত ২৬ বার সংশোধিত হয়েছে। এসকল সংশোধনীর অনেকগুলোই সামগ্রিক ক্ষেত্রে ও শাসন প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন সাধন করে।

মার্কিন সংবিধানের ২৬টি সংশোধনীর মধ্যে প্রথম দশটি সংশোধনী কংগ্রেস কর্তৃক ১৭৮৯ সালে প্রস্তাবিত এবং ১৭৯১ সালে গৃহীত হয়। সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় এর যে সমালোচনা করা হয় তার প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ এসকল সংশোধনী একই সাথে গৃহীত হয়। এদেরকে অনেকে ‘মূল সংবিধানেরই অংশ বিশেষ’ হিসেবে গণ্য করতে প্রবৃত্ত হন। এদের মধ্যে প্রথম আটটিতে ‘নাগরিক অধিকার’ (The citizen right) এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়। নবম সংশোধনীতে বলা হয় সংবিধানে বর্ণিত কতগুলো অধিকারকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হবে না, যাতে জনগণের হাতে সংরক্ষিত অন্যান্য অধিকার অস্বীকৃত বা ক্ষুণ্ণ হয় । দশম সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধান মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্রকে অর্পণ করা হয় নি অথবা রাষ্ট্রগুলোর জন্য নিষিদ্ধ করা হয় নি, এমন সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রগুলোর হাতে বা জনগণের হাতে সংরক্ষিত থাকবে। একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীগুলোকে ‘প্রাক-গৃহযুদ্ধকালীন সংশোধনী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। সংবিধানের ত্রয়োদশ, চতুর্দশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীগুলোকে ‘গৃহযুদ্ধ প্রসূত সংশোধনী’ বলা হয়। কারণ নিগ্রোদের মর্যাদা সম্পর্কে উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে যে গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয় এসকল সংশোধনী তার তাৎক্ষণিক ফলস্বরূপ। ষোড়শ সংশোধনী মার্কিন কংগ্রেসকে ফেডারেল আয়কর আরোপ করার কার্যকর ক্ষমতা প্রদান করে। সপ্তদশ সংশোধনী দ্বারা ভোটারগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সিনেট সদস্য নির্বাচনের বিধান করা হয়। অষ্টাদশ সংশোধনী দ্বারা ‘নেশাজাতীয় পানীয়ের উৎপাদন, বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। ঊনবিংশতিম সংশোধনী সর্বজনীন মহিলা ভোটাধিকার প্রবর্তন করে। বিংশতিতম সংশোধনীতে কংগ্রেসের নির্বাচন এবং তার প্রথম অধিবেশনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান তেরো মাস থেকে হ্রাস করে দুই মাস করা হয়। একবিংশতিতম সংশোধনী অষ্টাদশ সংশোধনীকে বাতিল করে। দ্বাবিংশতিতম সংশোধনী রাষ্ট্রপতি পদে পর পর দু’বারের অধিক নির্বাচিত হবার অধিকার বাতিল করে। ত্রয়োবিংশতিতম সংশোধনী ওয়াশিংটন ডি.সি.

এর অধিবাসীগণকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানের অধিকার প্রদান করে। চতুর্বিংশতিতম সংশোধনী দ্বারা ভোট প্রদানের অধিকারের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কর প্রদানের যোগ্যতা বাতিল করা হয়। পঞ্চবিংশতিতম সংশোধনীতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির মৃত্যু হলে, পদত্যাগ করলে বা অপসারিত হলে উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হবেন; রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে উপ-রাষ্ট্রপতি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্য পরিচালনা করবেন এবং উপ-রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের অনুমোদনসাপেক্ষে উপ-রাষ্ট্রপতির উত্তরাধিকারী মনোনীত করবেন। ষড়বিংশতিতম সংশোধনী জাতীয় সকল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৮ বছর হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। এক কথায়, ষোড়শ হতে ষড়বিংশতিতম সংশোধনীগুলোকে ‘বিংশ শতাব্দিকালীন সংশোধনী’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এসব আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে যে, আনুষ্ঠানিক সংশোধন সংবিধানের পরিবর্তন ও সম্প্রসারণে সাহায্যে করেছে।

খ. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত (Judicial Decision) : মার্কিন সংবিধানের বিকাশ ও সম্প্রসারণে মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কারো কারো মতে, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সংবিধানের সঙ্গতি রক্ষার ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট সহযোগিতা করেছে। সুপ্রিমকোর্ট বিভিন্ন সময়ে দেশের মৌলিক আইন বা সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান করেছে যার দ্বারা সংবিধান সম্প্রসারিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ১৮০৩ সালে মারবারি বনাম ম্যাডিসন মামলার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে। ঐ মামলায় সুপ্রিমকোর্ট কংগ্রেস প্রণীত আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতার গুরুত্ব তুলে ধরে। ঐ মামলায় সংবিধানকে ব্যাখ্যা করে সুপ্রিমকোর্ট নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। কোনো মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো আইনের সাংবিধানিকতা বিচার করেই সুপ্রিমকোর্ট ক্ষান্ত হয় নি, প্রয়োজনে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অংশেরও ব্যাখ্যা দিয়েছে। এছাড়া মার্কিন সংবিধান লিখিত ও সংক্ষিপ্ত হওয়ায় বহু বিষয় অলিখিত ও অবর্ণিত থাকায় এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সুপ্রিমকোর্ট এর উপর। অনেকের মতে, সুপ্রিমকোর্টের সাংবিধানিক আইনের ব্যাখ্যা সংবিধানের সম্প্রসারণ ঘটায়। সংবিধান ব্যাখ্যায় সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা সম্পর্কে বিচারপতি হিউজেস বলেন, “We are under the constitution but the constitution is what the judges say it is.” যে কারণে মার্কিন সংবিধানকে ‘বিচারকদের রচিত সংবিধান’ (Judges made constitution) বলা হয়। এছাড়া সুপ্রিমকোর্টের ‘বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা’ “ Judicial Review” ক্ষমতা রয়েছে যার দ্বারা সুপ্রিমকোর্ট কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন বা শাসন বিভাগের কোনো সিদ্ধান্ত সংবিধান বহির্ভূত বলে বাতিল করে দিতে পারে। এ ক্ষমতার জন্য সংবিধানের সম্প্রসারণ ঘটেছে। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের এ ক্ষমতা অর্জিত, সংবিধান প্রদত্ত নয়। যে কারণে মার্কিন সংবিধানের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের এ সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রসঙ্গে উড্রো উইলসন অভিমত দেন যে, সুপ্রিমকোর্ট হলো ‘এক ধরনের নিরবিচ্ছিন্ন সাংবিধানিক সম্মেলন’।

সংবিধান ব্যাখ্যায় মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের এ ভূমিকার সমস্যা ও সীমাবদ্ধতাও বিদ্যমান। বিচারপতিদের সামাজিক অঙ্গীকার, রাজনৈতিক চিন্তাধারা, অর্থনৈতিক স্বার্থ, তাঁদের ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণা প্রভৃতি সংবিধানের ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করা স্বাভাবিক। এতে করে পরিবর্তিত অবস্থাকে প্রভাবিত করা হয়, যা প্রগতির প্রতিবন্ধক। এর পরও মার্কিন সংবিধান যেসব কারণে সম্প্রসারিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের ব্যাখ্যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যূনতম ।

গ. কংগ্রেস প্রণীত আইন (Congressional Legislation) : মার্কিন কংগ্রেস প্রণীত আইন মার্কিন সংবিধান সম্প্রসারণের অন্যতম উপাদান। সংবিধান প্রণেতাগণ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে সংবিধান তৈরি করেছিলেন এবং এতে জাতীয় সরকারের সংগঠন ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই উল্লেখ ছিল না। মার্কিন কংগ্রেস প্রণীত আইন সংবিধানের এ শূন্যতা পূরণ করে। কার্যত কংগ্রেসই বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর গঠন করে। কেননা, কংগ্রেস প্রণীত আইনই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের গঠন কাঠামো ও ক্ষমতার উৎস হিসেবে কাজ করে। কংগ্রেস ১৮৪২ ও ১৮৬৬ সালে আইন প্রণয়ন করে সিনেট ও প্রতিনিধি সভার সদস্যদের নির্বাচনের ব্যাপারে বিস্তারিত বিধিবিধান তৈরি করে। মূল সংবিধানে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও নির্বাচন পদ্ধতি, স্থান ও সময় প্রভৃতি পরবর্তীতে কংগ্রেস কর্তৃক রচিত হয়। এছাড়া কংগ্রেস প্রণীত আইনের দ্বারা প্রতিরক্ষা, সামরিক, কূটনৈতিক ও বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়াদি নির্ধারিত হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে ১৭৮৭ সালের ঐতিহাসিক ফিলাডেলফিয়ার দলিলে সরকারের সাধারণ কাঠামো ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিধি ব্যবস্থার উল্লেখ রয়েছে। এভাবে মার্কিন সংবিধানের ক্রমবিকাশের নতুন অর্থ ও নতুন দিগন্ত উন্মোচনে কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ।

ঘ. শাসন বিভাগীয় কার্যকলাপ (Executive Activities) : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কার্যকলাপও মার্কিন সংবিধানের বিকাশ ও সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি তাঁর শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, যার ফলে বিভিন্ন সাংবিধানিক সমস্যার সমাধান হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে স্বয়ং তাঁর ক্ষমতার ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি সংবিধানের বিধান মোতাবেক দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত আইনের ব্যাখ্যাও প্রদান করেন। ক্ষমতা প্রয়োগের সময় তিনি এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যার মাধ্যমে সাংবিধানিক বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে অথবা সংবিধানের সাথে এমন বাক্যও সংযুক্ত করেছেন যা আগে কখনো করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির ব্যাখ্যা ও কার্যকলাপ কেবলমাত্র হোয়াইট হাউসের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে না, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রসারিত হয়। প্রাত্যহিক কার্য পরিচালনার জন্য বিভাগীয় প্রধান বা অন্যদের বিষয়ে এমন সব ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আদেশ জারির প্রয়োজন হয়, যা বহু ক্ষেত্রেই সংবিধানের সাথে নতুন ব্যাখ্যা যোগ করতে সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক যেসকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিজ ক্ষমতার ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হয়েছে কংগ্রেসের পূর্বানুমতি ব্যতীতই এসব ক্ষেত্রে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। সুপ্রিমকোর্টের মতে, রাষ্ট্রপতির এ ধরনের ক্ষমতা শাসন বিভাগীয় কার্য পরিচালনার অন্তর্গত।

৫. সাংবিধানিক রীতিনীতি প্রথা (Conventions of the Constitution and Customs) : ব্রিটেনের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিকাশ ধারার ক্ষেত্রেও সাংবিধানিক রীতি-নীতি ও প্রথা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । সাংবিধানিক রীতি- নীতি ও প্রথা সংবিধানকে নমনীয় করে তুলে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার প্রসার ঘটায়। যেসব রীতি-নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে তা হলো রাষ্ট্রপতির কেবিনেট, কংগ্রেসের কমিটি ব্যবস্থা, দলীয় ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে সিনেটের সৌজন্যবিধি, প্রতিনিধি সভায় অর্থ বিল ও বাজেট উত্থাপন, রাজনৈতিক দল, প্রতিনিধি সভার সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে নিজ জেলার বাসিন্দা হওয়া প্রভৃতি। জিংক ও অন্যান্য লেখকদের মতে, “সাংবিধানিক রীতিনীতি ও প্রথা সাংবিধানিক বিধানের অবর্তমানেই শুধু কাজ করে না; এমনকি এগুলো সংবিধানের কোনো আনুষ্ঠানিক বিধানের সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন সাধনেও সক্ষম। তবে সাংবিধানিক রীতিনীতি ও প্রথা ততদিনই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ থাকে যতদিন পর্যন্ত এ থেকে অনুসরণ করা হয়।”

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন সংবিধান বিগত প্রায় দু’শ বছরের ইতিহাসে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত, কংগ্রেস রচিত আইন, শাসন বিভাগীয় কার্যকলাপ, সংবিধান সংশোধন, প্রথা ও সাংবিধানিক রীতিনীতির মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। মূল সংবিধানের পরিধির সাথে বর্তমান সংবিধানের ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। মার্কিন সংবিধান ধীরে ধীরে এবং নিশ্চিতভাবে পরিবর্তিত হয়, নতুন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয় এবং ক্রমশ সম্প্রসারিত ও বিকশিত হয় ।

Leave a Reply