Table of Contents
Toggleমন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার Parliamentary Government
আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকারকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তার কৃতকর্মের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের শাসন বিভাগ আইনবিভাগের নিকট দায়ী থাকে না। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় আইনসভা বা সংসদই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার Parliamentary Government
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বলতে এমন এক প্রকার সরকারকে বুঝায় যেখানে রাষ্ট্রের শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা একদল মন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত থাকে এবং মন্ত্রিপরিষদ তাদের সকল প্রকার নীতি ও কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের আইনসভার নিকট এরূপ ব্যক্তিগত ও যৌথ দায়িত্বশীলতার কারণে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থাকে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থাও বলা হয়ে থাকে। আবার মন্ত্রিপরিষদের সকল মন্ত্রীকে আইন পরিষদের মধ্য হতে মনোনয়ন করা হয় বিধায় এ শাসনব্যবস্থাকে পার্লামেন্টারি বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।
১. অধ্যাপক ডাইসি ( Prof. Diecy) বলেন, “মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগীয় ক্ষমতা একত্রীকরণের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে।”
২. অধ্যাপক হারম্যান ফাইনার (Prof. Harman Finer)-এর মতে, “মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এমন এক সংস্থা, যার সদস্যবৃন্দ আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা দলসমূহের মধ্যে থেকে নিয়োগ লাভ করেন এবং যারা সচরাচর ঐ সংস্থারই সদস্য এবং আইনসভার আস্থা লাভ সাপেক্ষে ক্ষমতাসীন থাকেন ও ক্ষমতা চর্চা করেন। জনগণ সরাসরি সরকারের স্থায়ী কর্মচারী কিংবা আইনসভার সংস্পর্শে আসেন না। রাজনৈতিক দলগুলো আইনসভাকে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও অনেকটা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
৩. অধ্যাপক গার্নার ( Prof. Garner)-এর মতে, “মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে প্রকৃত
শাসক বা মন্ত্রিপরিষদ আইনসভার নিকট দায়ী থাকে এবং একজন নামেমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন।”
৪. জে.এ. কোরি (J, A. Cory)-এর মতে, “The relation between the executive and legislature is the only way to know whether a government is parliamentary or presidential, if real executive is responsible to the legislature or the parliament, the form of government is parliament.”
৫. কে. সি. হুইয়ার (K. C. Wheare)-এর মতে, “Cabinet system is that system in which the cabinet enjoys the real powers of the government and it is under the control of parliament.”
অধ্যাপক লাস্কি (Prof. Laski)-এর মতে, “The Parliamentary government is a government by discussion.”
সুতরাং বলা যায় যে, মন্ত্রিপরিষদ বা সংসদীয় সরকার হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে সরকারের সকল ক্ষমতা মন্ত্রিপরিষদের উপর ন্যস্ত থাকে এবং নির্বাহী বিভাগ তার কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে।
সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ Characteristics of Parliamentary Government
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকারের কতিপয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যা নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান : মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান হলেন একজন নিম্ন তান্ত্রিক বা নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। আইনগতভাবে রাষ্ট্রের যাবতীয় শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে ন্যস্ত থাকলেও তিনি নিজে শাসনকার্য পরিচালনা করেন না। শুধুমাত্র তার নমে শাসনকার্য পরিচালিত হয়। যে কারণে তাকে আনুষ্ঠানিক শাসক বা নামসর্বস্ব শাসক বলা হয়ে থাকে। যেমন— ইংল্যান্ডে রাজা বা রানীর হাতে আইনগতভাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত থাকলেও বাস্তবে মন্ত্রিসভাই তার নামে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রপতিও ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীর ন্যায় নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান। কারণ তাঁরা রাষ্ট্রপ্রধান হলেও সরকার প্রধান নন। এরা সকলে জাতির প্রতীক হলেও জাতিকে শাসন করেন না। এদের পদমর্যাদা আছে কিন্তু কৰ্তৃত্ব নেই ।
২. মন্ত্রিসভার গঠন : মন্ত্রিসভার গঠন সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সাধারণ নির্বাচনের পর যে দল প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয় সে দল সরকার গঠন করে। রাষ্ট্রপ্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানকে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতাদের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করেন।
৩. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব : মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার আর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বদান। যে কারণে অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারকে মন্ত্রী শাসিত সরকার হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কারণ প্রধানমন্ত্রীই মন্ত্রিসভার প্রধান; তাঁর নেতৃত্বেই গোটা মন্ত্রিসভার সদস্য কর্তৃক দেশের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করা হয়, আবার তাঁর পরামর্শক্রমে মন্ত্রীদের বরখাস্ত করা হয়। অর্থাৎ, শাসনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব বিদ্যমান। সি.এফ. স্টং (C. F. Stong)-এর ভাষার, “If it is the party system which gives the cabinet its homogenity, it is position of the Prime Minister which gives it solidarity”.
৪. ক্যাবিনেটের প্রাধান্য : মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হর্তাকর্তা হলেও ক্যাবিনেট ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। জন ম্যারিয়ট (John Marriot) বলেছেন, “সংসদীয় ব্যবস্থায় ক্যাবিনেট হলো প্রধান স্তম্ভ যাকে কেন্দ্র করে সমগ্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়।” বেজহট (Begehot) বলেছেন, “ক্যাবিনেট হলো পার্লামেন্টের সৃষ্টি, কিন্তু এটি সৃষ্টিকারীকে খতম করতে পারে।” রামজে মুইর (Ramsay Muir)-এর মতে, “ক্যাবিনেট হলো রাষ্ট্র নামক জাহাজের দিক নির্ণায়ক যন্ত্র।”
৫. দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা : মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। আইনসভার আস্থাভাজন না হয়ে মন্ত্রিসভা শাসন ক্ষমতায় বহাল থাকতে পারে না। আইনসভা অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে যে কোনো সময় মন্ত্রিসভা তথা সরকারের পতন ঘটাতে পারে। অর্থাৎ, এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় পার্লামেন্টকে পাস কাটিয়ে শাসন বিভাগ চলতে পারে না। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ক্যাবিনেট কমন্সসভার আস্থা হারালে পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকেন। যে কারণে বলা হয়ে থাকে মন্ত্রীদের দায়িত্বশীলতা হলো ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৬. মন্ত্রিদের যৌথ দায়িত্বশীলতা : এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় আইনসভার প্রতি মন্ত্রিসভার সদস্যদের যৌথ দায়িত্বশীলতা বিদ্যমান। কেননা, এ ধরনের সরকারের শাসনকার্য পরিচালনার সকল দায়-দায়িত্ব মন্ত্রিসভার। মন্ত্রিসভার সকল সদস্য সরকারি নীতি ও কার্যাবলির জন্য আইনসভার নিকট যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকেন ।
৭. আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যকার সুসম্পর্ক : মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। এক বিভাগ অন্য বিভাগের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে। আইনসভার উচ্চ পর্যায়ের সদস্যবৃন্দই সাধারণত মন্ত্রিসভার সদস্য হয়ে থাকেন। যে কারণে তারা আইনসভায় নেতৃত্ব প্রদান করতে পারেন। আইনসভাও শীর্ষস্থানীয় এসব নেতার কথামত আইন পাস করে থাকে। যে কারণে দুটি বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা বর্তমান থাকে। কার্টার (Karter )-এর ভাষায়, “The prime characteristics of Parliamentary form of government is the fusion of executive and legislature.”
৮. পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয়। কেননা, শাসন বিভাগ পার্লামেন্ট বা আইনসভার অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কাজ করতে পারে না। এক্ষেত্রে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সার্বভৌম। কারণ এমন কোনো আইন নেই যা পার্লামেন্ট পরিবর্তন, সংশোধন বা সংযোজন করতে পারে না। যে কারণে একে পার্লামেন্টারি বা সংসদীয় সরকার বলা হয়ে থাকে। আলফ্রেড ডি গ্রেজিয়া বলেন, “অতীতে রাজনৈতিক প্রথার কুসংস্কার ছিল যে, রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে, বর্তমানকালের প্রধান কুসংস্কার হলো যে, পার্লামেন্ট তদ্রূপ ক্ষমতা প্রাপ্ত।” ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রবল ক্ষমতা দর্শন করেই তিনি একথা বলেছেন।
১. দলীয় ব্যবস্থা : সংসদীয় সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দলীয় ব্যবস্থা। এ ধরনের সরকারে দ্বিদলীয় বা বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকে। দলব্যবস্থা সংসদীয় সরকারকে প্রাণ শক্তি দান করে বিধায় দলব্যবস্থাই এর চালিকা শক্তি। দল ব্যতীত সংসদীয় সরকার পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
১০. শক্তিশালী বিরোধী দল : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় সুগঠিত ও শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি অপরিহার্য। আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ দলগুলো বিরোধী দল হিসেবে গণ্য হয়। তবে যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছাকাছি আসন লাভ করে সে দলটি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এরূপ শক্তিশালী বিরোধী দল মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সফলতার জন্য অপরিহার্য ।
১১. কোয়ালিশন সরকার : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের কোনো দল, আইনসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় না। কেননা, এরূপ অবস্থায় একাধিক দল একত্র হয়ে কোয়ালিশন গঠন করে একজনকে নেতা নির্বাচন করে। সে নেতাই হন প্রধানমন্ত্রী। প্রথা বা সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্ৰী নিয়োগ করে সরকার ব্যবস্থাকে সচল রাখেন। ব্রিটেন ও ভারতে বিভিন্ন সময়ে এরূপ কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছে।
১২. ছায়া সরকার : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় ছায়া সরকার ( Shadow Government) গঠিত হয়। নির্বাচনে পরাজিত বিরোধী দল তাদের দলীয় নেতাদের নিয়ে অনেক সময় ছায়া সরকার গঠন করেন। এর উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলে দ্রুততম সময়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে সরকার গঠন করা। কেননা, সংসদীয় সরকার অস্থিতিশীল। যে কোনো সময় আইনসভায় ভোটাভুটিতে সরকারের পতন হলে বিরোধী দল বিকল্প সরকার গঠন করে। ইংল্যান্ডে বিরোধী দলের ছায়া মন্ত্রিসভা আছে।
১৩. দ্বৈত দায়িত্ব : সংসদীয় সরকারে একজন মন্ত্রীকে দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে হয়। একদিকে তিনি যেমন নিজের দপ্তরের শাসন বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি অপরদিকে আইনসভার সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এ ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নেই বিদায় এ ধরনের দায়িত্ব পালনে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয় না।
১৪. নির্বাচন : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত সময়সীমার মধ্যে সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনেরও বিধান রয়েছে।
১৫. প্রতিনিধিত্ব : প্রতিনিধিত্ব সংসদীয় সরকারের একটি বিশেষ দিক। বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠিত হয়। সরকারের সদস্যগণ সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে এবং এলাকার সমস্যা পার্লামেন্টে তুলে ধরেন। ফলে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
১৬. নমনীয়তা : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার সাধারণত নমনীয় প্রকৃতির। পরিবর্তনশীলতা বা গতিশীলতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অধ্যাপক বেজহট (Bagchot) মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের এ বিশেষ দিকটির উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “এ ব্যবস্থায় জনগণ সময়োপযোগী শাসক নির্বাচন করে জাতির সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।” যেমন : ব্রিটেনে চার্চিল (Churchil) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেম্বারলেন (Chamberlain)-এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে জাতির সংকট দূরীভূত করতে বদ্ধ পরিকর হন।
১৭. গোপনীয়তা : সংসদীয় সরকারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো গোপনীয়তা। এ সরকার ব্যবস্থায় ক্যাবিনেট সভায় খোলাখুলি আলোচনা হয়। খোলাখুলি আলাপ-আলোচনার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ধরনের আলোচনায় পরস্পর বিরোধী মতামত ব্যক্ত হলেও গৃহীত সিদ্ধান্ত ও মতামত বাইরে প্রকাশ করা হয় না। অর্থাৎ, ক্যাবিনেট ব্যবস্থায় ঐক্য, সংহতি ও গোপনীয়তার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় ।
১৮. রাজনৈতিক সৌহার্দ্যতা : সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিগণ ক্যাবিনেটে একটি টিম হিসেবে কাজ করেন। কোনো মন্ত্রীই তাদের মধ্যকার মতপার্থক্য বা মতানৈক্য জনসমক্ষে প্রচার করেন না। সাধারণত দেখা যায় মন্ত্রীগণ একই দলের সদস্য হয়ে থাকেন। ফলে তাদের পক্ষে মিলেমিশে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা সম্ভব হয় ।
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে সাধারণত মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার গঠিত হতে পারে। তবে সকল দেশে সমভাবে একই সরকার কাঠামো গঠিত হয় না। এ জাতীয় সরকারে আইনসভার গঠন, শাসন বিভাগের প্রধানের ক্ষমতার ন্যায় বিচার বিভাগের ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক দলের সংখ্যায় তারতম্য রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ভারতে সংসদীয় সরকার, থাকলেও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এককেন্দ্রিক, কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। ভারতে বিচার বিভাগের হাতে বিচারের ক্ষমতা আছে, কিন্তু যুক্তরাজ্যে তা নেই। ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলেও যুক্তরাজ্যে মূলত দ্বিদলীয় ব্যবস্থা ক্রিয়াশীল ।