ব্রিটেনের কেবিনেট ব্যবস্থা কী? কেবিনেট শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর ।

ব্রিটেনের কেবিনেট ব্যবস্থা কী? কেবিনেট শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর ।

 

কেবিনেটের গঠন Composition of the Cabinet

কেবিনেট গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কেবিনেটে কারা থাকবেন এবং থাকবেন না তা প্রধানমন্ত্রী নিজে স্থির করেন। রাজা বা রানী কমন্সসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সেই দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে রাজা বা রানী অন্যান্য মন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ইচ্ছেমতো মন্ত্রীদের সংখ্যা বাড়াতে পারেন না। রাজকীয় মন্ত্রী আইন ১৯৩৭ অনুযায়ী ১৮-২১ জন সিনিয়র মন্ত্রী নিয়োগ করা যাবে। ১৯৪১ সালের হার্বার্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬০ জনের বেশি মন্ত্রী নিয়োগ করা যাবে না। ১৯৫৭ সালের কমন্সসভা অযোগ্যতা আইন (The House of Commons Disqualification Act, 1957) অনুযায়ী ৯০ জনের বেশি মন্ত্রী নিয়োগ করা যাবে না। ১৯৬৪ সালের রাজকীয় মন্ত্রী আইন (The Minister of the Crown Act, 1964) অনুযায়ী মন্ত্রীদের সংখ্যা হবে ৯০-৯১ জন পর্যন্ত

 

ব্রিটেনে কেবিনেট ও মন্ত্রিসভার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। মন্ত্রিসভা বলতে সকল শ্রেণির মন্ত্রীদের বোঝায়। কিন্তু কেবিনেট বলতে উচ্চপদস্থ মন্ত্রীদের বোঝায়। এদের সংখ্যা ২৫-৩০ জনের বেশি হয় না। কেবিনেট মন্ত্রীগণ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন এবং তারাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে হ্যারল্ড উইলসনের মন্ত্রিসভায় ২৩ জন কেবিনেট মন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১০১ জন। সুতরাং মন্ত্রিসভার একটি অংশ হলো কেবিনেট। অগ এবং জিংক (Ogg and Zink) এর মতে, All cabinet members are ministers, but not all ministers are cabinet members, উল্লেখ্য, ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীর উপাধি-চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমঞ্জীর পদবি-সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অ্যাফেয়ার্স।

 

কেবিনেটের ক্ষমতা কার্যাবলি
Powers and Functions of the Cabinet

বর্তমানে কেবিনেট হলো ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার মধ্যমণি। ব্রিটেনে কেবিনেট হলো প্রকৃত শাসনকর্তা। আইভর জেনিংস (Ivor Jennings) ATITE, The cabinet is the core of the British constitutional system. It is the supreme directing authority. It integrates what would otherwise be a heterogenous collection of authorities exercising vast varieties of functions. It provides unity to the British system of government. ওয়াল্টার বেজহট (Walter Bagehot) – এর মতে, “কেবিনেট হলো এক প্রকার সংযোজক চিহ্ন যা শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগকে একত্রে বেঁধে দেয়।” (The cabinet is a hypen that joins the buckle that binds the executive and legislative departments together.)

পার্লামেন্ট কর্তৃক রচিত কোনো আইনের মাধ্যমে কেবিনেটের কার্যাবলি নির্দিষ্ট করা হয়নি। এর কার্যাবলি নিয়ন্ত্রিত হয় সাংবিধানিক প্রথা ও রীতিনীতির মাধ্যমে। ১৯১৮ সালে হ্যালডেন কমিটি (Haldane committee, 1918 ) তাঁর রিপোর্টে কেবিনেটের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলির কথা উল্লেখ করেছিল। যথা-

ক. পার্লামেন্টের কাছে পেশ করার জন্য চূড়ান্ত শাসন নীতি নির্ধারণ (The final determination of policy to be submitted to parliament)

খ. পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত নীতি অনুযায়ী শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ (The supreme control of the national executive in accordance with the policy agreed by parliament)

গ. সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্তৃত্বের সীমা নির্ধারণ ও তাদের সমন্বয় সাধন (The continuous co-ordination and delimitation of the authority of the several departments of state)

হার্ভে এবং ব্যাথার (Harvey and Bather) কেবিনেটের কার্যাবলিকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা-

ক. কেবিনেট দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করে;

খ. বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে;

গ. সরকারি নীতির খুঁটিনাটি সকল বিষয় স্থির করে;

ঘ. প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং

ঙ. ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা রচনা করে ।

যাই হোক, কেবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ক. নীতি নির্ধারণ : কেবিনেটের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা পর্যালোচনা করা এবং সেই সব বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করা। জেনিংস (Sir Ivor Jennings)-এর মতে, কেবিনেট হলো মূলত নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা। সাধারণত সরকারি দল তাদের ঘোষিত দলীয় নীতি অনুসারে সরকারি নীতি নির্ধারণ করে। নীতি নির্ধারণের সময় দলীয় প্রতিশ্রুতি এবং জনমতের সমর্থনের প্রতি নজর রাখা হয়। পররাষ্ট্র, যুদ্ধ ও শান্তি সংক্রান্ত চুক্তি, বৈদেশিক বাণিজ্য প্রভৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে ব্রিটেনের সরকারি নীতি কেবিনেট নির্ধারণ করে। এসব বিষয়ে কার্যসম্পাদনের জন্য বিভিন্ন বিভাগীয় মন্ত্রিরা আছেন, কিন্তু কেবিনেটই সরকারের মূলনীতি স্থির করে দেয়। পার্লামেন্টে রাজা বা রানী যে রাজকীয় বক্তৃতা দেন (Spech from the throne) কেবিনেটই তা তৈরি করে দেয় এবং এর মধ্যে সরকারের

 

মৌলিক নীতিসমূহ লিপিবদ্ধ থাকে। হারভে ও ব্যাথার (Harvey and Bather) বলেছেন, “The cabinet is the real policy forming body in the British constitution. It provides the dynamic impulses vital to progressive government.”

খ. আইন প্রণয়ন : সরকারি নীতি নির্ধারণের সাথে আইন প্রণয়নের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারি নীতিসমূহ আইনের মাধ্যমে বাস্তবে রূপায়িত হয়। কেবিনেটই আইনের প্রস্তাব প্রণয়ন করে, পার্লামেন্টে আইনের খসড়া উত্থাপন করে এবং পার্লামেন্টে তা পরিচালনার ব্যবস্থা করে। কেবিনেটের আইন প্রণয়নের জন্য উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহ পার্লমেন্টে সহজেই পাকা হয়ে যায় কারণ পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দই কেবিনেটের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা করতে সাধারণ সদস্যরা ভয় পায়। বর্তমানে পার্লামেন্টের পরামর্শ ও অনুমতি অনুযায়ী কেবিনেট যাবতীয় আইন প্রণয়ন করে থাকে। এ প্রসঙ্গে জগ ও জিঙ্ক (Ogg and Zink) বলেন “বর্তমানে পার্লামেন্টের অনুমতি ও পরামর্শক্রমে কেবিনেটই আইন প্রণয়ন করে।” (Now a days it is the cabinet that legislates, with the advice and consent of parliament.)

গ. পার্লামেন্টের কর্মসূচি নির্ধারণ : কেবিনেট পার্লামেন্টের কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। তত্ত্বগতভাবে রাজা বা রানী পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান করা, স্থগিত রাখা এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা ভোগ করেন। কিন্তু কার্যত এসব ক্ষমতা কেবিনেটই প্রয়োগ করে। কারণ নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজা বা রানী কেবিনেটের নেতা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী এসব ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। পার্লামেন্টে যে সব বিল পাস হয় তার প্রায় সবই মন্ত্রিগণ উত্থাপন করেন। কেবিনেট সমর্থন না করলে কোনো বেসরকারি বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। সুতরাং ব্রিটেনে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব বাস্তবে কেবিনেটের সার্বভৌমত্বে রূপান্তর হয়েছে। বর্তমানে কেবিনেটই পার্লামেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করে। অধ্যাপক জেনিংস (Ivor Jennings) বলেন, “The cabinet is regarded as having and accepts, ultimate responsibility for all political acts. If an act of a minister involves or may involve political issues of some magnitude, he ought to bring it before the cabinet.”

ঘ. শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ : তত্ত্বগতভাবে রাজা বা রানী শাসন বিভাগের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী। বাস্তবে কেবিনেটই শাসন বিভাগকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। রাজা বা রানীর নামে কেবিনেটই দেশ শাসন করে। পার্লামেন্ট প্রণীত আইন ও কেবিনেট প্রবর্তিত নীতিসমূহ যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কেবিনেটকে লক্ষ রাখতে হয়। বর্তমানে অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইনের সাহায্যে কেবিনেট শাসন বিভাগের উপর চরম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কেবিনেট পরিষদ রাজাদেশের মাধ্যমে আইনের বিষয়ে সাধারণ নীতি নির্ধারণ এবং যুদ্ধ ঘোষণা করে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এভাবেই ঘোষিত হয়েছিল। অগ এবং জিংক (Ogg and Zink) বলেছেন, “The cabinet is the principal custodian of executive power and co-ordinator of administrative action.” রামজে ম্যুর (Ramsay Muir) এর মতে, কেবিনেট হলো রাষ্ট্ররূপ জাহাজের চালনী চক্র। (The cabinet is the steering wheel of the ship of the state).

ঙ. বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সংহতি সাধন : কেবিনেট সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলি পরিচালনা এবং সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব পালন করে। সরকারের কোনো বিভাগের কার্যাবলি অন্য বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয়। এক বিভাগের নীতি ও কার্যাবলি অন্য বিভাগের নীতি ও কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে, তাই সমন্বয় সাধনের কাজ যথাযথভাবে সম্পাদিত না হলে শাসন বিভাগের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হলে বিভাগীয় মন্ত্রীগণ তা নিরসনের চেষ্টা করেন। ওয়াল্টার বেজইট (Walter Bagehot) এর মতে, “A cabinet is a combining committee, a hypen which joins, a buckle which fastens the legistative part of the state to the executive part of the state, In its origin it belongs to the one, in its functions it belongs to the other.”

চ. সংযোগসাধনমূলক কাজ : সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণকে সরকারি নীতি, সিদ্ধান্ত এবং কার্যাবলি সম্বন্ধে অবহিত রাখা। সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগের অভাব ঘটলে বিরোধী দল সেই সুযোগ গ্রহণ করে। বিরোধী দল পার্লামেন্টের ভেতরে এবং বাইরে জনমত সংগঠিত করে। এর ফলে পরবর্তী নির্বাচনে সরকারি দলের ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে সরকার তথ্য দপ্তর, বেতার, টেলিভিশন, পুস্তিকা, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পেশ করে। এই তথ্যের মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়।

 

ছ. বাজেট সংক্রান্ত ক্ষমতা : কেবিনেট সরকারের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বাজেট প্রণয়ন করে। অর্থমন্ত্রী খসড়া বাজেট তৈরি করেন এবং বার্ষিক বাজেট বিবৃতি আকারে তা কমথসভায় পেশ করেন। পার্লামেন্টে পেশ করার পূর্বে তিনি মৌখিকভাবে কেবিনেটে খসড়া বাজেট সম্পর্কে আলোচনা করেন। কেবিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হলে তা কমগসভায় পেশ করা হয়। কেবিনেট দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে কমথসভায় তা পাস করিয়ে নেয়। বাজেটের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের যৌথ দায়িত্বশীলতা ও গোপনীয়তা বজায় রাখার নীতি মেনে চলতে হয়।

জ. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা : ব্রিটিশ কেবিনেট নিয়োগ সংক্রান্ত কতিপয় ক্ষমতা ভোগ করে। সাধারণত নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় কেবিনেটের কাছে পেশ করা হয় না। কিন্তু দেশের ভেতরে এবং বাইরে সকল গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের দায়িত্ব কেবিনেটকেই গ্রহণ করতে হয়। অর্থ-দপ্তরের সচিব, কেবিনেটের পরিকল্পনা বিষয়ক অফিসার বা রাজপরিবারের কোনো ব্যক্তিকে গভর্নর জেনারেল পদে নিয়োগ প্রভৃতির ক্ষেত্রে কেবিনেটের সাথে পরামর্শ করতে হয়। রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, বিচারপতিগণ, বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ইত্যাদি পদে নিয়োগের মূল দায়িত্বও কেবিনেটের। এ সকল নিয়োগ রাজা বা রানীর নামে কার্যকর হয়।

ঝ. পরিকল্পনা প্রণয়ন করা : ব্রিটিশ কেবিনেট ভবিষ্যতে সমাজের গতি ও বিকাশ সম্পর্কে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। পারমাণবিক শক্তিকে সমাজ উন্নয়ন কাজে নিয়োগ, পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ এবং অন্যান্য বহুবিধ ক্ষেত্রে কেবিনেট পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। দলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা অসুবিধাজনক হয়ে পড়েছে তবে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বর্তমানে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে পরিকল্পনার মেয়াদ যাই হোক না কেন তা প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব বহন করে কেবিনেট।

ঞ. অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইন : বর্তমানে হস্তান্তরিত বা অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইন অনুযায়ী প্রশাসনের হাতে আইন প্রণয়নের ব্যাপক ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে। কেবিনেট কর্তৃক গৃহীত নীতি অনুযায়ী বিভাগীয় মন্ত্রীর নির্দেশে এসব আইন প্রণীত হয়। প্রতিটি বিভাগের রাজনৈতিক প্রধানের নেতৃত্বে বিভাগীয় আমলাগণ এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন। এর ফলে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেবিনেটের দায়িত্ব বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ট. পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ : ব্রিটিশ কেবিনেট পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করে। কেবিনেটে পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন স্বতন্ত্র মন্ত্রী থাকেন। কিন্তু বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী হলেন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ন্ত্রক। দেশ-বিদেশে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান রূপকার এবং প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চলতে হয়।

ঠ. নতুন নতুন সমস্যার মোকাবিলা : সমাজ জীবনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটছে এবং কেবিনেটের কাজ হলো সেই সমস্যার সমাধান করা। দক্ষিণ-আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া অথবা কমনওয়েলথভুক্ত কোনো দেশে সমস্যা দেখা দিলে প্রথম ধাক্কা আসে কেবিনেটে। ব্রিটিশ কেবিনেটকে সেই ধাক্কা সামলাতে হয়। কেবল নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে শীর্ষ সংস্থা কেবিনেট নয় । সমস্যার প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক সমাধানের জন্য কেবিনেট অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ।

কেবিনেটের উপযুক্ত ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে অনেকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি বলে উল্লেখ করেছেন। ক্রসম্যান (Crossman) বলেছেন, ব্রিটেনের বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে এখন আর কেবিনেট শাসিত সরকার না বলে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার বলে অভিহিত করা উচিত। এ ব্যবস্থার অধীনে যা রাষ্ট্রের আইন বিভাগকে শাসন বিভাগের সাথে সংযোগ করে তা একজন ব্যক্তিই করে থাকেন। (The post war epoch has bear the final transformation of cabinet Government into Prime-Manisterial Government under this system the hypen which joins, the buckle which fastens the legislative part of the state to the execetive part becomes one single man.) তবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পেলেও তিনি একা কিছুই করতে পারেন না। নিজ দল, পার্লামেন্ট ও কেবিনেট প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকলে তিনি প্রভূত ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন ।

 

কেবিনেট কমিটিসমূহ Cabinet Committees

কেবিনেটকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিভি কাউন্সিলের একটি কমিটি বলা হয়। আবার কেবিনেট হলো পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের একটি কমিটি বিশেষ। এ কেবিনেটই আবার এর কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বহু কমিটি নিয়োগ করে।

কেবিনেটের কার্যপদ্ধতির পরিবর্তন কেবিনেটের কার্যাবলি এবং দায়িত্বের ব্যাপকতা বৃদ্ধি, বিশেষকৃত জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা কেবিনেটের কার্য পদ্ধতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে যাতে কেবিনেটের কাজ-কর্ম পরিচালনা করা যায় তার জন্য কেবিনেট কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতি এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেই বিশেষভাবে এ ধরনের কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদ। বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে পরিকল্পিতভাবে কেবিনেট কমিটি গঠনর উদ্যোগ শুরু হয়। কেবিনেটের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ১৯০৪ সালে কমিটি অব ইমপেরিয়াল ডিফেন্স (Committee of Imperial Defence) গঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই কমিটিকে যুদ্ধকালীন কেবিনেটের সাথে যুক্ত করা হয়। যুদ্ধের পরে এই কমিটি আর পুনর্গঠিত হয় নি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী এই কমিটির চেয়ারম্যান। বিশের দশকের শেষে এবং ত্রিশের দশকের শুরুতে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য আধা-স্বাধীন অনেক উপদেষ্টা সংস্থা গঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ (১৯৩০), অর্থনৈতিক পরিকল্পনা পর্যদ (১৯৪৭), জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদ (১৯৬২), জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশন (১৯৬২) এবং মুখ্য ব্যয় ও আয় সংক্রান্ত জাতীয় পর্যদ (১৯৬২) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

স্থায়ী অস্থায়ী কমিটি : কেবিনেট কমিটিগুলোকে বর্তমানে স্থায়ী ও অস্থায়ী—এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। সাধারণত স্থায়ী প্রকৃতির সমস্যাগুলোর বিচার-বিবেচনার জন্য স্থায়ী কমিটি (Standing Committee) গঠিত হয়। অপরদিকে, অস্থায়ী প্রকৃতির কোনো বিশেষ বা জরুরি সমস্যা পর্যালোচনার প্রয়োজনে অস্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, আইন প্রণয়ন, আণবিক শক্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্থায়ী কেবিনেট কমিটি আছে, কেবিনেট কমিটির সদস্য সংখ্যা কত হবে এ বিষয়ে কোনো ধরনের বাধাধরা নিয়ম নেই ।

কমিটির গঠন : কেবিনেট কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উপর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়। কমিটির গঠন এবং তাদের সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটির সদস্যগণ ও চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করেন। কমিটির সদস্য ও চেয়ারম্যানের নাম গোপন রাখা হয়। চেয়ারম্যানগণ তাদের কাজের জন্য কেবিনেটের কাছে দায়িত্বশীল থাকেন। সাধারণত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী এবং কেবিনেটের অন্যান্য কিছু সদস্যের সমন্বয়ে প্রতিটি কেবিনেট কমিটি গঠিত হয়।

কেবিনেট কমিটির বৈঠক ও কার্যপদ্ধতি : কেবিনেট কমিটির সভা সপ্তাহে দু’বার, আবার ক্ষেত্র বিশেষে মাসে দু’বার হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো সময়ে কেবিনেট কমিটির সভা আহ্বান করা যায়। কেবিনেট সচিবালয় কেবিনেট কমিটির কার্যবিবরণী নথিভুক্ত করে। তাছাড়া সচিবালয় কমিটির যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মন্ত্রীদের অবহিত করে।

কমিটির গুরুত্ব : কেবিনেটের দায়িত্ব সম্পাদনের বিষয়টিকে কেবিনেট কমিটি বহুলাংশে সহজ করে দেয়। কমিটি মতৈক্যের ভিত্তিতে কোনো বিষয়ে সুপারিশ পেশ করলে সাধারণত সে বিষয়ে কেবিনেটে আর আলোচনা হয় না। আবার কোনো বিষয়ে কমিটি প্রাথমিকভাবে মতৈক্যে উপনীত হতে না পারলেও আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী স্তরে মতৈক্যে উপনীত হতে পারে। এ কারণে হারভে এবং ব্যাথার ( Harvey and Bather) বলেছেন, “কেবিনেট সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা হিসেবে ভূমিকা পালন করে না; বরং সরকারি কাজের ক্ষেত্রে ঐক্য বিধানের জন্য কেবিনেট বিভিন্ন কমিটির সিদ্ধান্তের সমন্বয় সাধনের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।”

 

কেবিনেট সচিবালয় Cabinet Secretariat

ব্রিটেনের সরকারি কাঠামোতে কেবিনেট সচিবালয় বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ ১৯১৬ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় কেবিনেট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্বে যখন কেবিনেটের সচিবালয় ছিল না, তখন কেবিনেটের কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধা হতো। তখন কোনো রকম কর্মসূচি থাকত না এবং যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো তাও কোনো দলিলপত্রে লিপিবদ্ধ করা হত না।

বর্তমানে কেবিনেট সচিবালয়ের অধীনে কতকগুলো বিভাগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বিভাগ, অর্থনৈতিক বিভাগ প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। হার্বার্ট মরিসন (Herbert Morrison) তাঁর “Government and Parliament” শীর্ষক গ্রন্থে বলেন, “বর্তমানে কেবিনেট সচিবালয় সরকারি কাঠামোতে একটি অপরিহার্য সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (The secretariat has now become an important element in the organisation of government)

বর্তমানে কেবিনেট সচিবালয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তবে কেবিনেট সেক্রেটারি (Cabinet Secretary) প্রধানমন্ত্রীর স্থায়ী কর্মসচিব হিসেবে কাজ করেন।

১৯৩৮ সালে কেবিনেট সচিবালয়ের নাম রাখা হয় কেবিনেট অফিস।

কেবিনেট অফিসের কার্যাবলি : কেবিনেট অফিসের কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো :

ক. কেবিনেট সংক্রান্ত কাগজপত্র, স্মারকলিপি ও অন্যান্য দলিলপত্র বিতরণ করা।

খ. প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কেবিনেটের আলোচ্যসূচির একটি তালিকা প্রস্তুত করা।

গ. কেবিনেট ও কেবিনেট অফিসের বৈঠক আহ্বান করা ।

ঘ. কেবিনেট ও কেবিনেট কমিটির সভায় যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সেগুলো নথিভুক্ত করা ।

ঙ. বিভিন্ন দপ্তরে এসব সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়া ।

চ. বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে, তা মীমাংসার ব্যবস্থা করা। .

ছ. মন্ত্রীদের প্রয়োজনীয় সংবাদ সরবরাহ এবং পরামর্শ প্রদান করা ৷

জ. বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা ইত্যাদি ।

 

কেবিনেটের একনায়কত্ব Cabinet Dictatorship

ঊনবিংশ শতাব্দিতে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব। কিন্তু বর্তমান শতাব্দিতে তার স্থান দখল করে কেবিনেটের একনায়কত্বের ধারণা। কালক্রমে পার্লামেন্টের হাত থেকে বিপুল ক্ষমতা কেবিনেটের হাতে চলে গেছে। বর্তমানে আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে বহুবিধ ব্যাপারে কেবিনেট নেতৃত্ব দান করে। কেবিনেট যেভাবে পার্লামেন্টকে পরিচালিত করে পার্লামেন্ট সেইভাবে চলে। তত্ত্বগতভাবে কেবিনেট পার্লামেন্টের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবার কথা, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কেবিনেট কর্তৃক পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই বর্তমানে কেবিনেটই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে এবং কেবিনেটের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সিডনি লো ( Sidney Low) -এর মতে, বর্তমানে ক্ষমতার বাহ্যিক আড়ম্বরের মধ্যেই পার্লামেন্ট সন্তুষ্ট থাকে, যারা ছিল পার্লামেন্টের ভৃত্য তারাই এখন তার প্রভুতে পরিণত হয়েছে।

কেবিনেটের একনায়কত্ব বলতে প্রকৃতপক্ষে তার ক্রমবর্ধমান প্রাধান্য এবং প্রভাব প্রতিপত্তিকে বোঝানো হয়েছে। কেবিনেটের অপ্রতিহত প্রাধান্যই হলো কেবিনেটের একনায়কত্ব। রামজে ম্যুর (Ramsay Muir) কেবিনেটের অপ্রতিহত ক্ষমতা বৃদ্ধিকে “কেবিনেটের একনায়কত্ব” (Dictatorship of the cabinet) বলে আখ্যায়িত করেছেন।

রামজে ম্যুর (Ramsay Muir) কেবিনেটের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “এই সংস্থার মতো যে সংস্থা এত বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাকে তত্ত্বগতভাবে সর্বশক্তিমান বলে বর্ণনা করা যায়। বাস্তবে ঐ শক্তি প্রয়োগ করতে সে যত অসমর্থই হোক না কেন, যখন তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে তখন তাকে একমাত্র প্রচারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত একনায়কত্বরূপে বর্ণনা করা যায়। দুটি প্রজন্মের তুলনায় এই একনায়কত্ব বর্তমানে আরও বেশি চরম আকার ধারণ করেছে।” (A body which wields such powers as these may right by described as omnipotent in theory, however in capable it may be in using its omnipotence. Its position, whereever it commands a majority, is a dictatorship until qualified by publicity. This dictartorship is for more absolute than it was two generations ago. (Ramsay Muir. How Britain is Governed) |

অধ্যাপক লাস্কি (Prof. Laski) বলেছেন, “কেবিনেটের কার্যকে সমর্থন করাই এখন পার্লামেন্টের প্রধান কার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে পার্লামেন্ট কেবিনেটের একটি অনুমোদন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “The house of commons is only formally a legistative assembly; in this context its real business is to act as the cabinets organ of registration.”

কেবিনেটের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার কারণসমূহ
Factors Behind the Dictatorship of the Cabinet

– বিভিন্ন কারণে ব্রিটেনে পার্লামেন্টের ক্ষমতা হ্রাস এবং কেবিনেটের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সব কারণের মধ্যে নিম্নলিখিত কারণগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

ক. সুশৃঙ্খল দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব : ব্রিটেনে দলীয় ব্যবস্থার উদ্ভব এবং দলীয় শৃঙ্খলার কঠোরতা পার্লামেন্টের প্রাধান্যের পরিবর্তে কেবিনেটের ক্ষমতা ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে। নির্বাচনি এলাকার বিশাল আয়তন, নির্বাচনে বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় প্রভৃতির জন্য দল নিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তির পক্ষে নির্বাচনে জয়লাভ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই দলীয় ছত্রছায়ায় তাদের বাধ্য হয়েই সমবেত হতে হয়। ব্রিটেনে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় যে দল নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দলই সরকার গঠন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দ কেবিনেটে স্থান লাভ করেন। ফলে শাসন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব দলীয় নেতাদের নির্দেশ ও সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কমন্সসভার সাধারণ সদস্যদের থাকে না। দলীয় নেতাদের নির্দেশ উপেক্ষা করলে সংশ্লিষ্ট সদস্যের রাজনৈতিক অপমৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। হার্ভে এবং ব্যাথার (Harvey and Bather) তাই বলেছেন, “বর্তমানে দলীয় শৃঙ্খলা কমন্সসভায় সরকারের পরাজয়কে অসম্ভব করে তুলেছে।”

খ. আইন প্রণয়নে কেবিনেটের ভূমিকা : তত্ত্বগতভাবে ব্রিটেনে আইন প্রণয়নের অধিকারী হলো পার্লামেন্ট, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পার্লামেন্টের এই ক্ষমতা আনুষ্ঠানিক সরকারের পিছনে কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের অকুণ্ঠ সমর্থনের নিশ্চয়তা থাকে। তাই কেবিনেট যে কোনো আইনের প্রস্তাব কমন্সসভায় সহজেই পাস করিয়ে নিতে পারে। কেবিনেটের সদস্যগণ হলো কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দ। তাই সাধারণ সদস্যরা কেবিনেটের প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারেন না, কেবিনেট সমর্থন না করলে সাধারণ সদস্যদের কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। একারণে বেসরকারি বিলের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে পার্লামেন্টে উত্থাপিত অধিকাংশে বিলই সরকারি বিল।

.

গ. আর্থিক বিষয়ে কেবিনেটের কর্তৃত্ব : সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকারি আয়-ব্যয়ের উপর পার্লামেন্টের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। কিন্তু ব্রিটেনে পার্লামেন্টের এই নিয়ন্ত্রণ আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আর্থনৈতিক বিষয়ে কেবিনেট তার কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কমসসভায় বাৎসরিক বাজেট পেশ করা হয়। কোনো সাধারণ সদস্য কমন্সসভায় আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন না। কমন্সসভা সরকারের ব্যয় বরাদ্দের দাবি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। কিন্তু কমন্সসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সমর্থন থাকায় তা সহজেই গৃহীত হয়। তাছাড়া আয়-ব্যয়ের প্রস্তাব আলোচনার জন্য যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়, সেই সময়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঐ প্রস্তাবের উপর আলোচনা করা সম্ভব নয়। কমন্সসভার সদস্যদের কলাকৌশলগত জ্ঞান না থাকায় তাঁরা ব্যাপক আলোচনা ছাড়াই বাজেট অনুমোদন করেন।

ঘ. কেবিনেটের যৌথ দায়িত্বশীলতা : ব্রিটেনে কেবিনেটের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মন্ত্রীদের যৌথ দায়িত্বশীলতা। সরকার কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলির জন্য সমগ্র কেবিনেটকেই কমন্সসভার কাছে যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ ভালোভাবেই জানেন যে, কমন্সসভায় কোনো একজন মন্ত্রীর পরাজয় সমগ্র মন্ত্রিসভার পতন ডেকে আনবে। তাই পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কেবিনেট ঐক্যবদ্ধভাবে সকল দায়িত্ব পালন করে। কমন্সসভার সদস্যদের মধ্যে এই রকম ঐক্য অনুপস্থিত। কেবিনেটের এই যৌথ দায়িত্বশীলতা ও ঐক্যবদ্ধ রূপই তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেছে।

 

৫. অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন : অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইনের মাধ্যমে কেবিনেটের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন প্রণয়ন পার্লামেন্টের কাজ হলেও নানা কারণে এ সংক্রান্ত দায়িত্ব পার্লামেন্ট শাসন বিভাগের হাতে অর্পণ করেছে। শাসন বিভাগ আদেশ নির্দেশ ইত্যাদি জারি করে কিংবা নিয়মকানুন, উপ-আইন ইত্যাদি প্রণয়ন করে পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত মূল আইনগুলোকে পরিপূর্ণতা দান করে। শাসন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত এসব আদেশ-নিদেশ, নিয়মকানুন উপ-আইন প্রভৃতিকে অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইন (Delegated Legislation) বলে। ব্রিটেনে প্রধানত চার প্রকার অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইনের অবস্থিতি লক্ষ করা যায়। যথা (ক) সপরিষদ রাজাদেশ (Orders-in-concil) (খ) আদেশ ( orders) নিয়ম-কানুন ইত্যাদি (গ) অস্থায়ী ও বিশেষ পদ্ধতিগত আদেশ (Provisional and special procedure orders) এবং (ঘ) উপ-আইন (By-laws) ।

চ. কেবিনেটের কমন্সসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কমসসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা কেবিনেটের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। কমথসভার সরকারি দলের মধ্যে সরকারি নীতি সম্পর্কে গুরুতর মতপার্থক্য দেখা দিলে প্রধানমন্ত্রী কমন্সসভা ভেঙে দেবার ভীতি প্রদর্শন করতে পারেন। এর ফলে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরকারি দলের সদস্যগণ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। আবার বিরোধী দল সর্বদা সাংগঠনিক ও মানসিক দিক থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকে না। ওয়াল্টার বেজহট (Walter Bagehot) বলেছেন, “কেবিনেট একটি প্রাণী হলেও অন্যান্য প্রাণীর মতো তাকে মনে করা যায় না। কারণ কেবিনেট তার স্রষ্টাকে ধ্বংস করতে পারে।” (The Cabinet is a creature but unlike other creatures, it has the power of destroying its own creator.) লাস্কি (Laski)-র মতে কমন্সনভা কেবিনেটকে প্রাণ দান করলেও কেবিনেটের যতদিন প্রাণশক্তি থাকে, ততদিনই মাত্র সে নিজে বেঁচে থাকতে পারে ।

ছ. প্রশাসনিক বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন : ব্রিটেনে প্রশাসনিক বিচারব্যবস্থার প্রবর্তনের ফলে কেবিনেটের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় বিংশ শতাব্দিতে বিভিন্ন বিভাগকে বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। পূর্বে এই সব বিভাগীয় বিচার কার্য সাধারণ আদালতে সম্পাদিত হতো। বর্তমানে বিভিন্ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণ বিভাগীয় বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কিছু বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। বিভাগীয় কর্তা ব্যক্তিদের হাতে বিভাগীয় বিরোধ মীমাংসার সাথে সাথে কিছু শাস্তি দানের ক্ষমতাও প্রদান করা হয়েছে। মূলত মন্ত্রীদের নির্দেশক্রমে ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমলারা প্রশাসনিক বিচার ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।

জ. নীতি নির্ধারণে কেবিনেটের ভূমিকা : ব্রিটিশ কেবিনেট নীতি নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কমন্সসভা হলো ব্রিটিশ জাতির প্রধান রাজনৈতিক মঞ্চ। কিন্তু এ মঞ্চের পক্ষে সরকারের সকল নীতি সম্পর্কে পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবকাশ নেই। কমন্সসভার সময় সীমিত। তাছাড় মন্ত্রীদের উত্থাপিত নীতি ও প্রস্তাব সরকারি দলের সদস্যগণ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সরকার নীতি নির্ধারক এবং কমন্সসভা নীতি অনুমোদনকারী সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

ঝ. জনমনে মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তার : ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থায় কমন্সসভার সদস্যগণ অপেক্ষা মন্ত্রীগণ জনমনে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির উদ্বোধন, বিভিন্ন মনীষীর মূর্তি ফলকের আবরণ উন্মোচন প্রভৃতির মাধ্যমে মন্ত্রিগণ জনমনে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। তাছাড়া বেতার, টেলিভিশন, সংবাদপত্র প্রভৃতিতে মন্ত্রীদের ভাষণ দান কেবিনেটের মান-মর্যাদা অনেকখানি বৃদ্ধি করেছে।

ঞ. কমন্সসভার সদস্যদের গুণগত মান হ্রাস : কমন্সসভার সাধারণ সদস্যদের গুণগত মান হ্রাসের ফলে কেবিনেটের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং স্বাধীন মনোভাবাপন্ন সদস্যগণ কমন্সসভার সদস্য নির্বাচিত হতেন। সরকারি নীতি প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা প্রভাব বিস্তার করতেন। কিন্তু বর্তমানে এই ধরনের স্বাধীন মনোভাবাপন্ন সদস্যের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

ট. কমন্সসভার সংযোগ সাধনের ক্ষমতা হ্রাস : পূর্বে কমন্সসড়া সরকার এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করত। বর্তমানে বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা ও চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদ্ভবের ফলে কমন্সসভার এই ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে। ঐ সব সংস্থা সরাসরি সরকারের সাথে নিজেদের সমস্যা ও দাবি নিয়ে আলোচনা করে। পূর্বে কমন্সসভা তথ্য প্রদানের উৎস হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে সরকারের তথ্য বিভাগ বিভিন্ন বিষয়ে জনগণকে তথ্য প্রদান করে। তার

 

ঠ. পার্লামেন্টের অক্ষমতা : অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দিতে কমগসভার যে ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ছিল বিংশ ও একবিংশ শতকে তার অবনতি ঘটেছে। পার্লামেন্ট তার অতীত গৌরব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এক সময় বিখ্যাত ব্যক্তিগণ পার্লামেন্টের সদস্য হতেন। তাই কমথসভাকে অবহেলো করা কেবিনেটের পক্ষে সম্ভব হতো না। কাপসভার আলোচনা ও বিতর্কের মান নেমে গেছে। ফলে কেবিনেটের সদস্যগণ সহজেই পার্লামেন্টের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

ড. কমন্সসভার বৃহদাকৃতি : কমন্সসভা বর্তমান আকৃতিগতভাবে বৃহৎ হওয়ার ফলে কেবিনেটকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রপ করতে পারে না। তাছাড়া বছরে মাত্র দুই একবার কমথসভার অধিবেশন বসে বলে সকল বিষয় পর্যালোচনার সময় পাওয়া যায় না। কমন্সসভায় বেশি সংখ্যক সদস্য থাকায় যে কোনো পুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চলাকালে অকারণ চিৎকার, চেঁচামেচি প্রভৃতি সভার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে দেয়। কমন্সসভার নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে কেবিনেটের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে।

ঢ. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে : আধুনিককালে অনেকে বলেন ব্রিটেনের সরকার প্রধানমন্ত্রীর সরকার। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অপরিসীম। তিনি একাধারে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান, কমথসভার নেতা এবং কেবিনেটের মধ্যমণি। তিনি সরকারের প্রধান হিসেবে প্রকৃত ক্ষমতা চর্চা করেন, কেবিনেটের একনায়কত্ব যেন ব্যক্তিত্ব গুণে প্রধানমন্ত্রীর একনায়কত্বে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একক ইচ্ছাই বর্তমানে কেবিনেটের ইচ্ছায় পরিণত হয়েছে।

ত. আন্তর্জাতিক পরিবেশ : কেবিনেটের প্রাধান্য এবং প্রভাব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো এর বাহ্যিক বা আন্তর্জাতিক পরিবেশ । প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জাতীয় নিরাপত্তার অভাববোধ, উপনিবেশের শাসিত জনগণের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম, ঔপনিবেশিক দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে ঊনবিংশ শতাব্দির তুলনায় খুব বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, ব্রিটেনে কেবিনেটের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ অভিযোগ অনেকে মেনে নিতে নারাজ। তাঁদের মতে, কেবিনেটের একানায়কত্ব কথাটির প্রয়োগ না করে কেবিনেটের সুদক্ষ ও শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায়। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings)-এর মতে, কেবিনেটের পক্ষে একনায়কের মতো ক্ষমতা প্রয়োগ কখনই সম্ভব নয়। কেবিনেটকে সবসময় নির্বাচকমণ্ডলীর দিকে নজর রাখতে হয়। তাঁর মতে, মন্ত্রিগণ পার্লামেন্টের ভৃত্য। প্রভুকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাছাড়া যতক্ষণ ব্রিটেনে বিরোধী দলের অস্তিত্ব আছে ততক্ষণ কেবিনেটের পক্ষে একনায়ক হওয়া সম্ভব নয়।

ব্রিটেনের কেবিনেট ব্যবস্থা কী? কেবিনেট শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর ।

Leave a Reply