Table of Contents
Toggleব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি বর্ণনা কর।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি বর্ণনা কর।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী British Prime Minister
ব্রিটেনে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় প্রকৃত শাসনক্ষমতা মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকে। প্রধানমন্ত্রী হলেন এ মন্ত্রিসভার কেন্দ্রবিন্দু। তাকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা পরিচালিত ও আবর্তিত হয়। তিনি একাধারে সরকার প্রধান, কেবিনেটের চেয়ারম্যান, পার্লামেন্টের নেতা, নিজ দলের নেতা এবং ব্রিটিশ জাতির নেতা। এ কারণে ব্রিটেনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী বলতে প্রধানমন্ত্রীকেই বোঝায়। লর্ড মর্লি (Lord Morley) প্রধানমন্ত্রীকে ‘কেবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভ’ (Keystone of the cabinet arch) বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ব্রিটিশ কেবিনেটের মধ্যমণি, কেবিনেটের উত্থান-পতন, জীবন-মৃত্যু প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে আবর্তিত হয়। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings) তাই বলেছেন, “He is the sun around which planets revolve.” উইলিয়াম হারকোর্ট (William Harcourt) প্রধানমন্ত্রীকে কম গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্ররাজির মধ্যে চাঁদ হিসেবে আধ্যায়িত করেছেন। তাঁর ভাষায়, “Inter stellus Luna minors. He was a moon among lesser stars.” অধ্যাপক লাস্কির মতে, প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করেই কেবিনেটের গঠন, কার্যকাল এবং পতন ঘটে (The Prime Minister is central to its formation, central to its life and central to its death.) এসব কারণে বহু সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লেখক ব্রিটেনের সরকারি ব্যবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত শাসনব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । প্রধানমন্ত্রীর পদের উদ্ভব (Origin of the post of Prime Minister) : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ কোনো লিখিত সংবিধান বা পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের দ্বারা নির্ধারিত হয়নি। মূলত সাংবিধানের রীতিনীতি ও প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে এই পদের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বপ্রথম স্যার রবার্ট ওয়ালপোল (Sir Robert Walpole) (১৭২১-১৭৪২) প্রধানমন্ত্রীর মতো রাজার প্রধান পরামর্শদাতা, কমন্সসভার নেতা এবং কেবিনেটের নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। এই কারণে ওয়ালপোলকেই ব্রিটেনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৮৩২ সালের “সংস্কার আইনে” কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদটি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৭৮ সালে ডিজরেইলি (লর্ড বেকন্সফিল্ড) বার্লিন চুক্তির মতো
একটি সরকারি দলিলে মহামান্য সম্রাজ্ঞীর “ট্রেজারির ফার্স্ট লর্ড ও প্রধানমন্ত্রী” (First Lord of Her Majesty’s Treasury & the Prime Minister of England) হিসেবে স্বাক্ষর করেন। ১৯০৫ সালে রাজার এক আদেশনামায় প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ দেখা যায়। ১৯১৭ সালের চেকার্স স্টেট আইনেও (Chequers Estate Act) তাঁর নামের উল্লেখ আছে। এরপর ১৯৩৭ সালের রাজমন্ত্রী আইনে (Ministers of Crown Act) প্রধানমন্ত্রী ও রাজস্ব বিভাগের প্রথম লর্ড (The First Lord of Treasury) এর বেতন নির্ধারণের প্রসঙ্গে পদটিকে আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তাঁর বার্ষিক বেতন ১০,০০০ পাউন্ড ধার্য করা হয়। ১৯৭৫ সালে Ministerial and other salaries Act-এ উল্লেখ করা হয় প্রধানমন্ত্রী পেনসন পাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ (Appointment of the Prime Minister) : সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী ব্রিটেনের রাজা বা রানী কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু কমন্সসভায় কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে রাজা বা রানী স্ববিবেচনা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করতে পারেন। ১৯২৪ সালে এরূপ রাজনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হলে রাজা উদারনৈতিক দলের নেতা আসকুইথকে আহ্বান না করে শ্রমিক দলের নেতা ম্যাকডোনাল্ডকে মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য ডেকেছিলেন। বিংশ শতাব্দির পূর্ব পর্যন্ত লর্ডসভা বা কমন্সসভার সদস্যদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা যেত। ১৯০২ সালে লর্ড সলব্রেরীর (Lord Salisbury ) পদত্যাগের পর লর্ডসভা থেকে কোনো ব্যক্তিকে স্থায়ীভাবে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়নি। তবে ১৯৬৩ সালে লর্ডসভার সদস্য স্যার অ্যালেক ডগলাস হিউম (Sir Alec Doglus Hume)-কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হলেও পরে তিনি লর্ড উপাধি এবং লর্ডসভার সদস্যপদ ত্যাগ করেন এবং উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে কমন্সসভায় নির্বাচিত হন। সুতরাং বর্তমানে অন্যতম প্রথাগত বিধান হলো প্রধানমন্ত্রীকে কমন্সসভার সদস্য হতে হবে। উল্লেখ্য যে, ব্রিটেনের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মার্গারেট থ্যাচার (৪ মে ১৯৭৯-২৮ নভেম্বর, ১৯৯৭, কনজারভেটিভ পার্টি।)
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি
Powers and Functions of the Prime Minister
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক ক্ষমতা, প্রভাব ও প্রতিপত্তির অধিকারী। কিন্তু তাঁর ক্ষমতা ও কার্যাবলি লিখিত আইনের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। মূলত তার ক্ষমতা ও কার্যাবলি প্রথাগত ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। সাংবিধানিক রীতিনীতি ও প্রথাগত আইনই হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার উৎস। বিভিন্ন সময়ে পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা ও কার্যাবলি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
ক. মন্ত্রিসভা গঠন : নিয়োগ লাভের পর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং ক্ষমতা হলো মন্ত্রিসভা গঠন করা। তত্ত্বগতভাবে রাজা বা রানী মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ করলেও কার্যত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্বাচন করার সময় তিনি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিষয় বিবেচনায় আনেন। প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের জনপ্রিয় নেতা, অভিজ্ঞ ব্যক্তি, সুদক্ষ, সুবক্তা প্রমুখ যাতে মন্ত্রিসভায় স্থান লাভ করেন, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। এরপর তিনি দেখেন বিভিন্ন পেশা, শ্রেণি ও অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব আছে কি-না। তিনি পার্লামেন্টে নিজ দলের মধ্য থেকেই মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নিজ দলের তরুণ অথচ উদীয়মান নেতাদের তিনি সাধারণত পার্লামেন্টের অধস্তন কর্ম সচিব হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান দেন। তিনি মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন।
মন্ত্রিসভার পুনর্গঠন, নতুন মন্ত্রী নিয়োগ অথবা কোনো মন্ত্রীর অপসারণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কোনো মন্ত্রী যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন থাকেন ততক্ষণই তিনি স্বপদে আসীন থাকতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কোনো মন্ত্রীর মত- পার্থক্য দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পদত্যাগ করেন অথবা তাঁকে অপসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী রাজা বা রানীকে পরামর্শ দেন ।
খ. মন্ত্রিসভার নেতা : প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সভাপতি। তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেন ও বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। তাঁর নির্দেশে মন্ত্রিসভার কার্যক্রম নির্ধারিত হয়। মন্ত্রিসভার যাবতীয় নীতি নির্ধারণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধ সংক্রান্ত দপ্তর, পররাষ্ট্র দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগ তাঁর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকে। অন্যান্য মন্ত্রীগণ তাঁর সহকর্মী হলেও সব বিষয়ে তাঁর ক্ষমতা সবার চেয়ে বেশি ।
গ. মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া : প্রধানমন্ত্রী যেমন মন্ত্রিসভা গঠনে ভূমিকা পালন করেন, তেমনি মন্ত্রিসভা ভেঙে দিতে পারেন। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন এবং যে কোনো মন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন করতে পারেন। মন্ত্রীগণ তাঁর আস্থাভাজন থাকা পর্যন্ত স্বপদে আসীন থাকেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাজা বা রানী যেকোনো মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন। কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রী নিজে মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে পুনরায় মন্ত্রিসভা গঠন করেন। অধ্যাপক লাস্কি (Laski) তাই বলেন, “কেবিনেটের গঠন, জন্ম ও মৃত্যু সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে ঘটে।” (The Prime Minister is central to its formation central to its life and central to its
death).
ঘ. সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা : প্রধানমন্ত্রী হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। এই সুবাদে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টের ভেতরে এবং বাইরে দলের শৃঙ্খলা ও মর্যাদা বজায় রাখতে হয়। দলীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা প্রধানমন্ত্রীর মহান দায়িত্ব। হারভে ও ব্যাথার (Harvey and Bather) বলেন, “He must use his powers of leadership to preserve his party against splits, working out compromise solutions when necessary.” প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার উপর দলের শক্তি ও জনপ্রিয়তা অনেকাংশে নির্ভর করে। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings) যথার্থই বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা জনমত গঠনে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁকে জনপ্রিয় চিত্রতারকার মতো আচরণ করতে হয়।
ঙ. কমন্সসভার নেতা : প্রধানমন্ত্রী হলেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কমন্সসভার নেতা। কমন্সসভার অধিবেশন আহবান, অধিবেশনের সময়কাল, আলোচনার কর্মসূচি প্রভৃতি বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী দলীয় হুইপের মাধ্যমে নিজ দলের সদস্যদের আদেশ-নির্দেশ ইত্যাদি প্রদান করেন। তিনি বিরোধী দলের জন্য সময় বণ্টন ও সভার কাজ-কর্ম পরিচালনা করেন। কমসসভায় যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করানোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে বহন করতে হয়। সভার শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রক্ষার ব্যাপারে তিনি স্পিকারকে সাহায্য করেন। প্রয়োজন হলে তিনি কমন্সসভা ভেঙে দেওয়ার জন্য রাজা বা রানীকে পরামর্শ দিতে পারেন ।
চ. রাজা বা রানীর প্রধান পরামর্শদাতা : প্রধানমন্ত্রী হলেন রাজা বা রানীর প্রধান পরামর্শদাতা। তিনি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ ও সম্মানসূচক উপাধি বণ্টনে রাজা বা রানীকে পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী রাজা বা রানী রাষ্ট্রদূত, বাণিজ্যিক প্রতিনিধি এবং বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। রাজা বা রানী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান ও সমাপ্তি ঘোষণা করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুাযয়ী রাজা বা রানী কমন্সসভা ভেঙে দেন। তবে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি রাজা বা রানীকে পরামর্শ প্রদান করেন ।
ছ. রাজা বা রানী ও কেবিনেটের মধ্যে যোগসূত্র : প্রধানমন্ত্রী রাজা বা রানী এবং কেবিনেটের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ তিনি রাজা বা রানীকে অবহিত করেন। আবার সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাজা বা রানীর মতামত কেবিনেটে পেশ করেন। রাজা বা রানী কোনো বিষয় কেবিনেটের বিবেচনার জন্য পাঠাতে ইচ্ছুক হলে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে তিনি কেবিনেটকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া কোনো মন্ত্রী রাজা বা রানীর সাথে দেখা করতে পারেন না। অগ ও জিংক (Ogg and Zink) বলেছেন, “The Prime Mimister is the principal and at times the only channel of communication between the cabinet and the soverign.”
জ. নীতি নির্ধারণ ও বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধান : প্রধানমন্ত্রী দেশের চূড়ান্ত নীতি নির্ধারক। মন্ত্রিসভার সহকর্মী ও আমলাদের সহযোগিতায় সরকারি নীতি নির্ধারিত হয়। আবার এসব নীতি কার্যকর করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত। এ কারণে তিনি গোটা কেবিনেটকে পরিচালিত করেন। তিনি কেবিনেটের প্রধান হিসেবে বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কাজের সমন্বয় সাধন করেন । তাই অনেক সময় প্রধানমন্ত্রীকে শীর্ষ তদারককারী বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিভিন্ন বিভাগ পরিচালনার ব্যাপারে নির্দেশাবলি আসে। মন্ত্রিসভার যৌথ দায়িত্বশীলতা প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
ঝ. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা : প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপক ক্ষমতা ভোগ করেন। তত্ত্বগতভাবে রাজা বা রানী উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী, বিচারক, রাষ্ট্রদূত, যাজক প্রমুখ ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে পারলেও বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তিনি নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করেন। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের স্থায়ী কর্মসচিব ( Secretaries) ও অধঃস্তন কর্মসচিব (Under-secretaries) সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারী, ঊর্ধ্বতন বিচারপতি (Higher Judges) বিশপ, ডীন, ও ক্যানন প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজা বা রানী কর্তৃক নিযুক্ত হন।
ঞ. জাতির নেতা : প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ জাতির নেতা। জাতীয় সংকটের সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জাতীয় দুর্যোগের সময় জনগণ তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকে। এজন্য তাঁর করণীয় কাজ তিনিই নির্ধারণ করে থাকেন। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings ) তাই বলেছেন, “The Prime Minister has thus to be not only a close student of public opinion but also an expert in propaganda. He must know what to say, when to say it, and when not to say anything. তিনি জাতির নেতা হিসেবে নিজ দেশে ও বিদেশে নেতৃত্ব দান করেন।
ট. আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভূমিকা : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নীতি নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সকল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সম্পর্কে তাঁর দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন । আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই সরকারি বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
ঠ. প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ভূমিকা : যুদ্ধ ও শান্তির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। তিনিই কেবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা কমিটির সভাপতি। যুদ্ধ ঘোষণা, শান্তি স্থাপন, আন্তর্জাতিক বিরোধ সম্পর্কে আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে করা হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুদ্ধ বা সামরিক তৎপরতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়ী থাকেন।
ড. পররাষ্ট্রনীতির রূপকার : প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান রূপকার। পররাষ্ট্র দপ্তরের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রী থাকলেও দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে পররাষ্ট্র নীতির মুখ্য প্রবক্তা হিসেবে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। তিনি পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো কাজ করেন না। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings) তাই বলেন, “The foreign secretary is in close touch wih the Prime Minister.”
ঢ. কেবিনেটের কাজ-কর্ম পরিচালনা : কেবিনেটের সভায় সভাপতিত্ব করা প্রধানমন্ত্রীর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সভার আলোচ্য বিষয় তিনি নির্ধারণ করেন। আলাপ-আলোচনার পর তিনিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কেবিনেটের বৈঠকে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হলে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই শেষ ও চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। ক্রিক ও জেনকিন্সন (Crick and Jenkinson) এর মতে, “Formerly the whole cabinet discussed what decisions to take, but now a days a Prime Minister more often informs the cabinet of the decisions he has already taken.” অর্থাৎ কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে পূর্বে সমগ্র কেবিনেট তা আলোচনা করত। কিন্তু বর্তমানে প্রায়শ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী কেবিনেটকে সে সম্পর্কে অবহিত করেন।
উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বোঝা যায় যে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি অত্যন্ত ব্যাপক, বিস্তৃত ও গুরুত্ববহ। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও প্রভাবের এলাকা এতদূর প্রসারিত হয়েছে যে, ব্রিটেনে পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না, এই শাসনব্যবস্থাকে অনেকে তাই প্রধানমন্ত্রী শাসিত শাসনস্থা (Prime Ministerial form of Government) বলে অভিহিত করেছেন। হ্যারল্ড উইলসন (Harld Wilson) ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটকে বলেছেন, ‘Power house of ideas.’ বর্তমানে দল-ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ার কারণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সব কিছু স্থির হয়। দল নিয়ন্ত্রিত কেবিনেটে প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা Position of the Prime Minister
ব্রিটিশ সংবিধান অলিখিত হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট ধারণা নেই। বিভিন্ন সময়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞগণ নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্দেশ করেছেন। লর্ড মর্লি, হার্বার্ট মরিসন, লর্ড রোজবেরি প্রমুখ একদলের মতে, প্রধানমন্ত্রী হলেন “সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য” (Primus inter pares – First among equals)। জন মর্লি (John Morley) বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী হলেন কেবিনেট রূপী খিলানের মধ্যস্থলে অবস্থিত প্রস্তরখণ্ড।” (The Prime Minister is the keystone of the cabinet arch) কিন্তু রামজে ম্যুর, স্যার উইলিয়াম হারকোট, সিডনি ওয়েব, বিয়াট্রিশ ওয়েব প্রমুখ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে কেবল সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলে স্বীকার করে নিতে নারাজ। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক ও বহুমুখি ক্ষমতা তাঁকে একনায়কের পর্যায়ে উন্নীত করেছে। রামজে ম্যুর (Ramsay Muir) বলেছেন, “যিনি সহকর্মীদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করতে পারেন এমন একজন প্রবল পরাক্রমশালী ব্যক্তিকে সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলে অভিহিত করা সমীচীন নয়।” ম্যুর (Muir) বলেছেন, “The cabinet is the steering wheel of the ship of the state and the Prime Minister is the steer man. তত্ত্বগতভাবে না হলেও কার্যত তিনিই হলেন রাষ্ট্রপ্রধান। এত ব্যাপক ক্ষমতা তাঁর হাতে ন্যস্ত আছে যা মার্কিন রাষ্ট্রপতির হাতেও নেই। স্যার উইলিয়াম হারকোর্ট (Sir William Harcourt )-এর মতে, প্রধানমন্ত্রী হলেন ক্ষুদ্র তারকারাজির মধ্যে বিরাজমান চন্দ্ৰ (Inter stellus luna minors He was a moon among lesser stars). সিডনি ওয়েব ও বিয়াট্রিশ ওয়েবও অনুরূপ অভিমত পোষণ করেন। স্যার আইভর জেনিংস (Sir Ivor Jennings ) এর মতে, প্রধানমন্ত্রী হলেন সংবিধানের প্রধান স্তম্ভ (Keystone of the constitution)। শুধু তাই নয়, তাঁর মতে, সংবিধনের সকল পথই প্রধানমন্ত্রীর দিকে চলে গেছে। (All roads in the constitution lead to the Prime minister)। জেনিংস (Sir for Jenning) আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কেবল সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য নন, এমনকি তিনি ক্ষুদ্র তারকারাজির মধ্যে বিরাজমান চন্দ্রও নন। তিনি হলেন সূর্য স্বরূপ যার চতুর্দিকে গ্রহরাজি ঘুরে বেড়ায়।” (He is not merely a primus inter pares. He is not even inter stellas luna minors. He is, rather a sun around which planets revolve) | 1257 (Greaves) বলেছেন, “দেশের প্রভু হলো সরকার এবং এই সরকারের প্রভু হলেন প্রধানমন্ত্রী।” (The Government is the master of the country and the Prime Minister is the master of the Government )। আর এইচ এস ক্রসম্যান (R.H.S. Crossman) এর মতে, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কেবিনেট সরকার চূড়ান্তভাবে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার।” (Prime Ministerial Government)-এ পরিণত হয়েছে। কে সি হোয়ার (K.C . Wheare) বলেছেন, “তত্ত্বগতভাবে প্রধানমন্ত্রী সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেও বাস্তবে তিনিই সমগ্র সরকারের মূল শক্তি এবং প্রধান পরিচালক।” (In theory primus inter pares, he is in practice the motive force and directing head of the whole government.” অধ্যপক লাস্কি (llarold J. Laski) বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে কেবিনেটের গঠন, জন্ম ও মৃত্যু ঘটে।” (He is the central to its formation, central to its life and central to its death). অধ্যাপক লাস্কি (Laski) আরও বলেছেন, “অন্যান্য মন্ত্রী কোথায় থাকেন, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ মাথা ঘামায় না, কিন্তু ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের গুরুত্ব কতখানি তা ব্রিটেনের সর্বাপেক্ষা নির্বোধ ব্যক্তিও জানে।”
পদ ও ক্ষমতার ভিত্তি
যোগ্যতা
নির্বাচন
কার্যকাল
পদমর্যাদা
অফিস
এক নজরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্ৰী
প্রথাগত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ।
১. · যুক্তরাজ্যের নাগরিক হতে হবে।
২. পার্লামেন্টের সদস্য হতে হবে। তবে বর্তমানে প্রথাগতভাবে কেবলমাত্র কমন্সসভার
সদস্যগণ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
১. পরোক্ষ (Indirect) নির্বাচন পদ্ধতি
২. কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে রাজা বা রানী যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।
৫ বছর (কমন্সসভার আস্থা হারালে মেয়াদ পূর্তির পূর্বেই পদত্যাগ করতে হয়)
সরকার প্রধান
হোয়াইট হল ।
১. সম্মানী (বেতন)
২. আপ্যায়ন ভাতা
৩. ভ্রমণ ভাতা
পদ শূন্য
শূন্য পদ পূরণ
ক্ষমতা ও কার্যাবলি
৪. অবসর ভাতা
৫. ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়ি।
৬. বিপুল সংখ্যক কর্মচারী সুবিধা ।
৭. সরকারি বাড়ি ডাউনিং স্ট্রিটের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ । ৮. ‘ পর্যাপ্ত পরিবহন সুযোগ-সুবিধা ।
১. মৃত্যু হলে; ২. স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে; ৩. কমন্সসভার আস্থা হারালে ।
রাজা বা রানী বিদ্যমান কমথসভার কোনো সদস্য পদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আস্থা প্রমাণ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। অথবা কমথসভা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন দিতে পারেন।
১. শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা :
ক. মন্ত্রিসভা গঠন:
ঘ. মন্ত্রিসভার নেতা হিসেবে ভূমিকা ;
গ. মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা;
ঘ. রাজা বা রানীর প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে ভূমিকা;
ঙ. রাজা বা রানী ও কেবিনেটের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন;
চ. নীতি নির্ধারণ ও বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন;
ছ. জাতির নেতা হিসেবে ভূমিকা;
জ. যুদ্ধ ও শান্তির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রিয় ভূমিকা পালন করেন;
ঝ. জরুরি অবস্থায় ক্ষমতা;
ঞ. পররাষ্ট্র সংক্রান্ত ক্ষমতা;
ট. সন্ধি ও চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা;
ঠ. প্রধান প্রশাসক হিসেবে ভূমিকা;
২. আইন বিভাগীয় ক্ষমতা :
ক. কমন্সসভার নেতা হিসেবে ভূমিকা;
খ. কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে ভূমিকা;
৩. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা :
উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে রাজা বা রানীকে পরামর্শ প্রদান ।
৪. অন্যান্য ক্ষমতা :
ক. নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগ;
খ. সমন্বয় সাধনকারীর ভূমিকা;
গ. জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা;
ঘ. সরকার প্রধান হিসেবে ভূমিকা;
ঙ. দলীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা;
চ. জাতীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা;
ছ. আন্তর্জাতিক নেতা হিসেবে ভূমিকা ।
প্রধানমন্ত্রী পদের গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ
Facts behind increase of Importance and status of prime minister
প্রধানমন্ত্রীর পদের গুরুত্ব ও সাংবিধানিক মর্যাদা বৃদ্ধির কতকগুলো কারণ বিদ্যমান। এগুলো নিম্নরূপ-
ক. ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হলো তিনি সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় নেতা যাকে ভোট দিয়ে জনগণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে ।
খ. তিনি হলেন তাঁর দলের নেতা। দল পরিচালনা ও সরকার পরিচালনা তর ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
গ. বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত দলীয়ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠিত করেছে, সুসংহত দলীয় ব্যবস্থার কারণে তিনি পার্লামেন্টের সমর্থনের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করেন না।
তিনি কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। প্রধানমন্ত্রীর এ পরিচিতি তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বড় হাতিয়ার ।
তাঁর হাতে রয়েছে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শনের ক্ষমতা। তিনি যে কোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রী বা অন্য যেকোনো পদে নিয়োগ করতে পারেন ।
প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভার উত্থান-পতন ঘটে। মন্ত্রীদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর আনুকূল্যের উপর নির্ভরশীল। “প্রধানমন্ত্রী রাজা বা রানীর মাধ্যমে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হতে পারেন”-এই আশঙ্কায় পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যগণ সহসা প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করেন না।
জ. বর্তমানে কেবিনেট সচিবালয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দপ্তর হিসেবে কাজ করে। তাঁর ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ঝ. বেতার, টেলিভিশন প্রভৃতি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলো সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির
কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করেছে। প্রচার মাধ্যমগুলোতে জনগণ দিনরাত প্রধানমন্ত্রীকে দেখেন ।
ঞ. প্রধানমন্ত্রী কেবিনেটের সভাপতি হিসেবে কেবিনেট তথা সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী সমর্থন আদায় করতে পরেন । ট. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা এবং কেন্দ্রীভূত আমলাতন্ত্র প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে । ঠ. তাঁর ক্ষমতার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো বিচার বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা নির্ভর করে তার গুণগত যোগ্যতা, বিচক্ষণতা, ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তা, দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, দেশপ্রেম প্রভৃতির উপর। অধ্যাপক জেনিংস (Sir Ivor Jennings) বলেছেন “Personality undoubtedly play a great part in determining the pwoer of a Prime Minister.” গ্লাডস্টোন, ডিজরেইলী, লয়েড জর্জ, চার্চিল প্রমুখ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে ব্যক্তিগত প্রয়াসে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছেন। আবার রোজমেরী, চেম্বারলেন ও আসকুইথের মতো প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় অখ্যাত ছিলেন। লর্ড অক্সফোর্ড ও আসকুইথ (Lord
Oxford and Asquith), “The office of Prime Minister is what its holder chooses to make it.”