Table of Contents
Toggleবাংলাদেশের জন্য উপযোগী সরকারব্যবস্থা
Suitable Governmental System for Bangladesh
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের শাসন বা সরকার পদ্ধতি চালু রয়েছে। যেমন : গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, ঈশ্বরতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, এককেন্দ্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয়, সংসদীয় গণতন্ত্র, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রভৃতি। বাংলাদেশেও এক ধরনের সরকার চালু রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু রয়েছে। স্বাধীনতার পর পরই এদেশে সংসদীয় সরকার প্রবর্তিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান” কার্যকর হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধিত হয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন, একনায়কতন্ত্র/ স্বৈরতন্ত্র, প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার পদ্ধতিও প্রবর্তিত হয়েছে। তবে সার্বিক মূল্যায়নে বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পদ্ধতি অধিক উপযোগী। নিম্নে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. ঐতিহ্যগত সঙ্গতি : ঐতিহ্যগত দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য সংসদীয় সরকার পদ্ধতি উপযোগী। কেননা, এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সঙ্গতি রয়েছে। সুদূর ব্রিটিশ আমল থেকে এদেশে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুতেও এদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। আবার বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে সংসদীয় সরকার প্রবর্তন করা হয়।
২. দায়িত্বশীলতা : দায়িত্বশীলতার কারণেও বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানানো যায়। সংসদীয় সরকারের মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়িত্বশীল থাকে। আর দায়িত্বশীল সরকার জনগণের দুঃখ- দুর্দশা সহজে অনুধাবন করতে পারে। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে একটি দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। যে কারণে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির উপযোগিতা রয়েছে।
৩. ভৌগোলিক সামঞ্জস্যতা : ভৌগোলিক সামঞ্জস্যতার কারণে এদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা কার্যকর। কেননা বাংলাদেশের রয়েছে ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রয়েছে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিগত মিল। ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও ভাষা-সংস্কৃতিগত মিল সংসদীয় সরকারের অন্যতম একটি দিক। তাই ভৌগোলিক অখণ্ডতার ভিত্তিতে এদেশে সংসদীয় সরকারকে স্বাগত জানানো উচিত ৷
৪. নেতৃত্বের বিকাশ : বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিকাশের জন্য সংসদীয় সরকার অপরিহার্য। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও এদেশে অদ্যাবধি সুষ্ঠু নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে অগ্রসরের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নেতৃত্বের। আর সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা একটি নেতৃত্ব সৃষ্টিকারী শাসনব্যবস্থা ।
৫. বহুবিধ সমস্যার প্রেক্ষিতে : বহুবিধ সমস্যার প্রেক্ষিতে এদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা উপযোগী। কারণ বাংলাদেশে বহুবিধ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা বিদ্যমান। এসব বহুবিধ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সংসদীয় সরকার উপযোগী বিধায় এসব সমস্যার সমাধানকল্পে সংসদীয় সরকার প্রবর্তন করা জরুরি।
৬. গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : বর্তমান বিশ্ব গণতান্ত্রিক বিশ্ব। বর্তমানে সর্বত্র চলছে গণতন্ত্রের জয়গান। কারণ গণতন্ত্র নিরন্ন মানুষের কথা বলে। কিন্তু বাংলাদেশে আজও গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে। একমাত্র দায়িত্বশীল জবাবদিহিতামূলক সংসদীয় পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
৭. সহনশীলতা সৃষ্টি : বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে অসহযোগিতা বিদ্যমান থাকায় দ্বন্দ্ব ও সংঘাত লেগেই থাকে ।
যে কারণে বাংলাদেশে দলীয় ব্যবস্থায় সহনশীলতার প্রয়োজন অপরিহার্য। সংসদীয় ব্যবস্থার একটি অন্যতম গুণ হলো সহনশীলতা। যে কারণে সহনশীলতার প্রয়োজনে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ।
উল্লিখিত বিষয়সমূহের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা উপযোগী। সংসদীয় সরকারের চিন্তাচেতনা এবং দেশের মানুষের রাজনৈতিক চেতনার সাথে যথেষ্ট মিল রয়েছে। এ ধরনের সরকার ব্যবস্থার সার্থক বাস্তবায়ন এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। তবে বিশেষ প্রয়োজনে এদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এদেশে সংসদীয় সরকার যুক্তিযুক্ত ও সঙ্গতিপূর্ণ।