Table of Contents
Toggleক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব
Importance of Theory of Separation of Power
সরকারের ক্ষমতা পৃথকীকরণের জন্য ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এ ধরনের নীতির গুরুত্ব রয়েছে। যে কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব অনেক। নিয়ে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
ক্ষমতার পৃথকীকরণ : সরকারের বিভিন্ন প্রকার ক্ষমতার পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব সর্বাধিক। কেননা, এই নীতির দ্বারা সরকারের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন করা সম্ভব হয়। আর এর মাধ্যমে ক্ষমতার পৃথকীকরণ সম্ভব হয়। অর্থাৎ, উক্ত তিন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রভাবে ন্যস্ত করা সম্ভব হয়।
২. ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণ : ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তির মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। বিচার বিভাগ তাঁর প্রাপ্ত ক্ষমতা নিরপেক্ষভাবে চর্চা করে বিচার করতে পারলেই কেবল ব্যক্তির স্বাধীনতা সংরক্ষিত হতে পারে। আর এটি কেবলমাত্র ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণের মাধ্যমেই সম্ভব।
৩. স্বেচ্ছাচারিতা রোধ : শাসকবর্গ বা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের স্বেচ্ছাচারিতা রোধকল্পে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা, স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করার উদ্দেশ্যেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়। বিভিন্ন বিভাগের হাতে ন্যস্ত ক্ষমতা কোনো বিভাগই নিজ ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে না। ফলে শাসক বা সরকারের স্বৈরশাসনের পথ রুদ্ধ হয়।
৪. কর্মপরিধি স্থিরকরণ : ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির বলে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের কর্মপরিধি নির্ধারণ করা যায়। কেননা, এই নীতির দ্বারা প্রত্যেক বিভাগের স্ব স্ব ক্ষমতা, সীমানা ও কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সুতরাং বলা যায়, সরকারের বিভাগসমূহের কর্মপরিধি নির্ধারণে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভূমিকা রয়েছে।
৫. বিভাগসমূহের স্বতন্ত্র পরিচালনা ক্ষমতা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে সরকারের তিনটি বিভাগকে স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়। সেজন্য বিভিন্ন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাতে ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান থাকে। যেমন— শাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী/ রাষ্ট্রপতি ।
৬. কর্মের স্বাধীনতা : স্বাধীনভাবে কর্ম সম্পাদন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্বপূর্ণ দিক। অর্থাৎ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের কাজের স্বাধীনতা এ নীতির মূল বক্তব্য। এই নীতির আলোকে বিভাগসমূহ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করলে সকল বিভাগের স্বাধীনতা বহাল থাকবে।
৭. একক দায়িত্ব : ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতিতে কোনো এক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অপর কোনো বিভাগের দায়িত্ব প্রদান করা হয় না। অর্থাৎ, এক বিভাগের ক্ষমতাধরের হাতে অন্য বিভাগের ক্ষমতা প্রদান বা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ প্রদান করা হয় না। কেননা, কোনো একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাতে একাধিক বিভাগের ক্ষমতা প্রদান করলে ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে।
৮. ভারসাম্য বিধান : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিতে সরকারের তিন বিভাগের ক্ষমতার মধ্যে এক প্রকার ভারসাম্য বিরাজ করে। মন্টেস্কুর (Montesquieu) মতে, “ক্ষমতাই ক্ষমতার প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে।” তিনি আরও বলেন, “তিন বিভাগের ক্ষমতা অবশ্যই পৃথক হবে, বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা এমনভাবে অনুশীলিত হবে যাতে একে অপরের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বিধানে সক্ষম হয়।”
৯. জবাবদিহিতা : ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির দ্বারা সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। প্রতিটি বিভাগের কর্মপরিধি ও নিজ নিজ ক্ষেত্র নির্ধারণ করার পর প্রত্যেকের জবাবদিহিতা আদায় করা সহজ হয় । কেউ কারো উপর দোষ চাপাতে পারে না । ১০. সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি : সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব রয়েছে। কেননা, এই নীতির আওতায় প্রতিটি বিভাগের ক্ষমতার বণ্টন সুনিশ্চিত হলে সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আর সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
১১. প্রশাসনিক গতিশীলতা সৃষ্টি : প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কেননা, এই নীতির মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা বিভিন্ন বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হলে প্রতিটি বিভাগ স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। ফলে প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় ।
১২. গণতন্ত্রের সুরক্ষা : গণতন্ত্র সুরক্ষায় ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কার্যকর হলে জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা পায়। জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা পেলে গণতন্ত্রও সুসংহত হয়। তাই বলা যায় গণতন্ত্র সুরক্ষায় ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব অপরিসীম।
১৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভূমিকা রয়েছে। আর সরকারের স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এতে করে সরকারের স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়। বিভাগসমূহ
১৪. বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি : ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির যথার্থ প্রয়োগ ঘটলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ সৃষ্টিতে তা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা, এই নীতির ভিত্তিতে স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। তাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে অধিকতর পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং বিশেষজ্ঞ রূপে গণ্য হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। যে কারণে এই নীতির কতিপয় সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এই নীতির গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে এই নীতির মাধ্যমে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার রোধ, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র সুসংহত হয়। তাই বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।