Table of Contents
Toggleএককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ
Characteristics of Unitary Government
১. ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ : এককেন্দ্রিক সরকারে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একটি কেন্দ্রের উপর ন্যস্ত থাকে। কোনো প্রদেশ বা রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন হয় না। কেন্দ্রকে কেন্দ্র করেই সকল ক্ষমতা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
২. কেন্দ্রিয় সরকারের প্রাধান্য : এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রিয় সরকারের প্রাধান্য সর্বতোভাবে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থায় সরকার পরিচালনার সুবিধার্থে কতগুলো আঞ্চলিক সরকারের সৃষ্টি করলেও সরকার পরিচালনার সকল প্রকার নীতিগত সিদ্ধান্ত একমাত্র কেন্দ্রিয় সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়। স্থানীয় সরকারগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে মাত্র ।
৩. কেন্দ্রিয় আইনসভার প্রাধান্য : ডাইসী (Diecy)-এর মতে, এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কেন্দ্রিয় আইনসভার প্রাধান্য। কেন্দ্রিয় আইনসভার কর্তৃত্ব সমগ্র দেশে পরিব্যাপ্ত থাকে এবং এই আইনসভা যে কোনো আইন পাস বা রদ করতে পারে। কে. সি. হুয়ার (K. C. Wheare ) বলেন, “In a unitary constitution, the legislature of the whole country is the supreme law making body in the country.”
৪. সংবিধানের প্রকৃতি : এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত বা অলিখিত যে কোনো প্রকৃতির হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার ধারা-উপধারাসমূহ লিখিত থাকে। যেমন— বাংলাদেশের সংবিধান। আবার, অলিখিত সংবিধানের দ্বারাও দেশ পরিচালিত হয়। যেমন— যুক্তরাজ্যের সংবিধান ।
৫. সুপরিবর্তনীয় সংবিধান : এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় সংবিধান সাধারণত সুপরিবর্তনীয় হয়। কারণ এই ব্যবস্থায় আইনসভা সাধারণ আইন পাসের নিয়মে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। অর্থাৎ, সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় না।
৬. দুর্বল বিচার বিভাগ : এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় বিচার বিভাগের প্রাধান্য তেমন স্বীকৃত হয় না। যে কারণে এ ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ দুর্বল ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য কম এবং কেন্দ্রিয় আইনসভার প্রাধান্য অধিক | ফলে আইনসভার নিয়ন্ত্রণাধীনে গড়ে ওঠা বিচার বিভাগ অতটা শক্তিশালী হতে পারে না।
৭. নমনীয়তা : নমনীয়তা এককেন্দ্রিক সরকারের অপর এক বৈশিষ্ট্য। প্রয়োজন ও পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো সিদ্ধান্ত বা বিশেষ দিক পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায়। অর্থাৎ, এ ধরনের শাসনব্যবস্থা সুপরিবর্তনীয়। যেমন- ব্রিটেনের উইনস্টন চার্চিল প্রধানমন্ত্রীরূপে চেম্বারলেন-এর স্থলাভিষিক্ত হন।
৮. একক নাগরিকত্ব : এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় একক নাগরিকত্ব স্বীকৃত হয়। অর্থাৎ, এ ব্যবস্থায় কোনো প্রকার দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত নয়। যে কারণে প্রদেশের জন্য পৃথক কোনো নাগরিকত্ব থাকে না ।
৯. স্থানীয় সরকার : এককেন্দ্রিক সরকার প্রশাসনিক সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার সৃষ্টি করে। যেমন— প্রদেশ বা রাজ্য, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রভৃতি। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গেটেল (Prof. Gettell) বলেন, “In unitary system central government gives some powers to local governments for bringing about efficiency in the government.”
১০. স্বায়ত্তশাসনহীনতা : এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকারগুলো স্বায়ত্তশাসন পায় না। ফলে এদের নিজস্ব কোনো এখতিয়ার থাকে না; তারা কেন্দ্রের অভিপ্রায়ে চলে ।
১১. ব্যয়ের স্বল্পতা : এককেন্দ্রিক সরকারের একটি বিশেষ দিক হলো ব্যয়ের স্বল্পতা। অন্যান্য সরকারের তুলনায় এ সরকারের ব্যয়ও কম হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারসহ অন্যান্য সরকারের ব্যয়ের মাত্রা বেশি। কিন্তু এককেন্দ্রিক সরকারের সেই পরিমাণ ব্যয় হয় না।
১২. সাংগঠনিক সরলতা ও সরকারের ঐক্য : এককেন্দ্রিক সরকারের ক্ষমতার সাংবিধানিক বিভাজন ঘটে না। যে কারণে শাসনব্যবস্থায় সাংগঠনিক সারল্য এবং নীতি প্রণয়নে ঐক্য দেখা যায়। নিম্নের ছকের মাধ্যমে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে :
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উল্লিখিত বিষয়সমূহ এককেন্দ্রিক সরকারের মূল বৈশিষ্ট্য। আর এ সকল বৈশিষ্ট্য দ্বারা এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রিয় সরকারের একক প্রাধান্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, এ ধরনের সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রিয় প্রশাসনকে কেন্দ্র করেই সকল কিছু আবর্তিত হয়।