Table of Contents
Toggleআইনসভার গুরুত্ব Importance of the Legislature
সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইনসভার মর্যাদা ও গুরুত্ব সর্বাধিক। আইনসভা বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই জাতির প্রধান ফোরাম হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে আইনসভার গুরুত্ব অনেকক্ষেত্রে সরকারের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। একনায়কতন্ত্রে বা অসীম রাজতন্ত্রে আইনসভার ভূমিকা নেহায়েত নগণ্য হলেও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইনসভা অপর দুই
বিভাগের তুলনায় অধিক গুরুত্বের অধিকারী। রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় আইনসভার ভূমিকা এতটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও বিশেষ করে সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় আইনসভার ভূমিকাই মুখ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালিত হয় বিধায় আইনসভা জনমতের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে এবং সমাজ পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতি রেখে আইন প্রণয়ন করে কিংবা প্রয়োজনে পুরাতন আইন সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনও করে থাকে। অর্থাৎ, যে কোনো ধরনের সরকার ব্যবস্থায় আইন প্রণয়ন কিংবা আইন সংশোধন আইনসভার প্রধান কাজ হলেও সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় আইনসভা শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা আদায়ের মাধ্যমে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইনসভা জাতীয় অর্থের নিয়ন্ত্রক ও তদারকের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কর ধার্য, কর আদায় ও অর্থ বায়ের জন্য আইনসভায় অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আইনসভায় অনুমোদন ব্যতীত সরকারি অর্থ আদায় বা ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এবং ভারতে Public Accounts Committee, Comptroller and Auditor General, Estimates Committee-এর মাধ্যমে আইনসভা সরকারি আয়-ব্যয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করে। এভাবে অর্থের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আইনসভা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আইনসভা কিছু কিছু বিচার সংক্রান্ত কাজও করে থাকে। রাজদ্রোহ, উৎকোচ গ্রহণ বা অন্য কোনো গুরুতর অপরাধ বা বিধি বহির্ভূত কাজের জন্য সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনসভা অভিসংশন (Impeachment) উত্থাপন করে। তাছাড়া আইনসভার সদস্যদের আচরণের বিচার, নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা প্রভৃতি আইনসভা করে থাকে। আইনসভা বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সরকারের অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, ভূমি, উপজাতি ইত্যাদি বিষয়ের অনুসন্ধান রিপোর্ট তৈরি করে থাকে। আইনসভা যে কোনো ইস্যুতে জনমত গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা, আইনসভায় নির্ধারিত বা অনির্ধারিত আলোচনা ও বিতর্ক ইলেকট্রনিক ও প্রেস মিডিয়ার মাধ্যমে সমগ্র দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে যায়। এভাবে আইন পরিষদ জনমত গঠন করে এবং দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
আইনসভা এভাবে বিভিন্ন সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করে জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি ও জ্ঞানবুদ্ধির বিকাশ সাধন করে। আইনসভা বিরোধ মীমাংসার মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টি করে।
তবে বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক বাস্তবতায় শাসন বিভাগের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলেও আইন বিভাগই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, যেখানে জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় ৷
এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি Arguments and against in Favour of the Uni-Cameral Legislature
জেরিমি বেন্থাম (Jeremy Bentham), আবে সিঁয়ে ( Abbe Siye ), লাস্কি (Laski), ফ্রাঙ্কলিন বেঞ্জামিন ( Benjamin Franklin) প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিরোধী এবং এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক। অপরদিকে, লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce), জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill), লেকী (Lecky), হেনরি মেইন (Henry Maine), লর্ড অ্যাকটন (Lord Acton), দ্যুগুই (Duguit), গেটেল (Gettell) প্রমুখ এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার নানা প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি উল্লেখ করে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি Arguments in favour of Uni-Cameral Legislature
এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যেসকল যুক্তি উপস্থাপন করা যায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. সহজ সরল গঠন : গঠন প্রকৃতির দিক থেকে এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা অত্যন্ত সহজ সরল প্রণালি অনুসরণ করে। ২. একটি মাত্র নির্বাচন পদ্ধতি : এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি মাত্র নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। ৩. দ্রুত আইন প্রণয়নের সুবিধা : এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় দ্রুত আইন প্রণয়ন সম্ভব হয়। কেননা, দ্বিতীয় কক্ষ না থাকার
কারণে আইন প্রণয়নে অযথা বিলম্ব ঘটে না।
–কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি Arguments for and against Bi-Cameral Legislature
আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হলে তার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দেয় না। আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হলে উভয় কক্ষকে সমান মর্যাদা ও ক্ষমতা দেয়া হবে কি না সে বিষয়ে সমস্যা দেখা দেয়। ভারত ও গ্রেট ব্রিটেনে নিম্ন কক্ষকে উচ্চ কক্ষের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতা ও মর্যাদা অর্পণ করা হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিম্ন কক্ষের তুলনায় উচ্চ কক্ষকে অধিক শক্তিশালী করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে যে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী উচ্চ কক্ষ। আবার সুইজারল্যান্ড ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে উভয় কক্ষকে সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
তবে আইনসভা এককক্ষ না দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হওয়া উচিত এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। জেরিমি বেছাম (Jeremy Bentham), আবে গিয়ে ( Abbe Siye ), লাস্কি (Laski), বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (Benjamin Franklin) প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিরোধী এবং এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক। অপরদিকে, লর্ড ব্রাইস, জন স্টুয়ার্ট মিল, লেকী, হেনরি মেইন, লর্ড অ্যাকটন, দ্যুগুই, গেটেল প্রমুখ এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার নানা প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি উল্লেখ করে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি/সুবিধাসমূহ Arguments/Advantages in favour of Bi-Cameral Legislature
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যেসকল যুক্তি উপস্থাপন করা যায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. নিম্ন কক্ষের স্বৈরাচারিতা রোধ : লর্ড ব্রাইসের মতে, অসংযত, স্বৈরাচারিতা ও দুর্নীতিপরায়ণতা প্রতিটি আইনসভার অন্ত নিহিত প্রবৃত্তি। এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য সমক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় কক্ষের প্রয়োজন। এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় স্বৈরাচারী আইন প্রণীত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে যদি কোনো আইনসভার দুটি কক্ষ থাকে তবে একে অপরের স্বৈরাচারিতা রোধ ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে। তাই লর্ড অ্যাকটন বলেছেন, আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হলো ব্যক্তিস্বাধীনতার একটি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ।
২. নিম্ন কক্ষের দায়িত্বভার লাঘব হয় : দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার উচ্চ কক্ষ নিম্ন কক্ষের দায়িত্বভার লাঘবে সহায়তা করে। এই পরিষদের হাতে সময়সাপেক্ষ বিশেষ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হলে নিম্ন কক্ষ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারে।
.
৩. সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন : এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ভাবাবেগ, সাময়িক উত্তেজনা কিংবা জনমতের চাপে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়ন করতে পারে। আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হলে উভয় কক্ষে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে সুচিন্তিত ও জনকল্যাণধর্মী আইন প্রণীত হতে পারে। লেকীর মতে, দ্বিতীয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণমূলক, সংস্কারমূলক এবং সংযতকারী ক্ষমতা একে অপরিহার্য করে তুলেছে।
৪. জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন সম্ভব : গণতন্ত্রে প্রতিনিয়তই জনমতের প্রতিফলন ঘটে। এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সদস্যদের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় বিধায় পরিবর্তিত জনমতের সাথে তা সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার দুটি কক্ষের নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয় বিধায় প্রবহমান জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন আইনসভার মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায়।
৫. সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করে ; দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বিশেষ স্বার্থ এবং শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করে। এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বেচ্ছাচারিতা এবং অবাঞ্ছিত প্রাধান্য রোধের জন্য দ্বিতীয় কক্ষের বিশেষ স্বার্থ এবং শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রয়োজন। গার্নার উল্লেখ করেছেন, আইনসভায় সমাজের রক্ষণশীল অংশের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিকতর পরিবর্তনকামি শক্তিকে প্রতিরোধ করা যায়। দ্বিতীয় কক্ষে সমাজের বিভিন্ন পেশা, ভাষা বা সংস্কৃতিগত সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্বের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। তাছাড়াও দ্বিতীয় কক্ষে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মনোনয়নের ব্যবস্থা করা যায়। ফলে সামাজিক ঐক্য সুদৃঢ় হয়। বিভিন্ন মতামতের প্রতিফলনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৬. সংখ্যালঘুদের স্বার্থের সংরক্ষণ : আইনসভায় সংখ্যালঘু স্বার্থের যথোপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা’ না থাকলে গণতন্ত্রে সাফল্য আসতে পারে না। এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রত্যক্ষ নির্বাচনভিত্তিক বিধায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনসভায় প্রতিনিধি প্রেরণ করতে বার্থ হয়। স্বাভাবিকভাবেই তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চ কক্ষ সাধারণত মনোনয়ন বা পরোক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে গঠিত হয় বিধায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক প্রতিনিধি সেখানে স্থান পান। যেকারণে দাগুই মন্তব্য করেছেন, সেই আইনসভা শ্রেষ্ঠ বলে পরিগণিত হবে যার এক কক্ষ সমগ্র জনগণের এবং অন্য কক্ষ বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করবে।
৭. বিজ্ঞ লোকের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ : আইনসভায় জ্ঞানী, গুণী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা যত বেশি থাকবেন, আইনসভার উৎকর্য ততই বৃদ্ধি পাবে। অনেক সময় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিড়ম্বনা ও ক্লেশ এড়াতে চান বিধায় জ্ঞানী, গুণী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না। এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রত্যক্ষ নির্বাচনভিত্তিক বিধায় আইনসভায় ঐসব যোগ্য ব্যক্তির স্থান হয় না । কিন্তু দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার উচ্চ কক্ষে মনোয়নের মাধ্যমে তাঁরা অতি সহজেই স্থান লাভ করেন। ৮. রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার : এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় প্রায় সমদৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিনিধিরা থাকেন বিধায় আইন সভায় বিতর্ক একরকম হয় না বললেই চলে। ফলে জনসাধারণের রাজনৈতিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না। কিন্তু দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার দু’টি কক্ষে আইন প্রণয়নের সময় যে আলাপ-আলোচনা ও তর্কবিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, তা সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশনের প্রভৃতির মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে।
৯. আইনসভার কার্য বৃদ্ধি : বর্তমানে আইনসভার কাজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি মাত্র কক্ষের মাধ্যমে যাবতীয় কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব উচ্চ কক্ষের হাতে অর্পণ করে নিম্ন কক্ষ কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন করতে পারে।
১০. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে অপরিহার্য : জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের উপর যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে। এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা সম্ভব হয় না। যে কারণে এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার পক্ষে অনুপযোগী। অপরপক্ষে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার নিম্ন কক্ষে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন। ফলে এরূপ আইনসভাকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে অপরিহার্য বলে মনে করেন।
১১. সুশাসন প্রবর্তন : গেটেলের মতে, আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হলে উভয় কক্ষই একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। শাসন বিভাগের উপর আইনবিভাগের মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শাসন বিভাগ স্বাধীনভাবে কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে সুশাসন প্রবর্তন করতে পারে। কিন্তু এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় এর বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়।
১২. সমাজতন্ত্রীদের যুক্তি : সমাজতন্ত্রীগণ বিশেষ ক্ষেত্রে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক হলেও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে যেসব কারণে আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষের প্রবর্তন করা হয়, তাঁরা তার তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁদের মতে, বহুজাতি সমন্বিত রাষ্ট্রে প্রতিটি জাতি যাতে নিজ নিজ জাতীয় ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারে সেজন্যই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রয়োজন ।